![মঙ্গলবাড়িয়া লিচু গ্রামে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন লিচু চাষ, বিক্রি ৩ কোটি](uploads/2024/05/22/kishorganj-1716363547.jpg)
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার একটি প্রসিদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী গ্রামের নাম মঙ্গলবাড়িয়া। এই গ্রামে পাঁচ হাজারের বেশি লিচু গাছ আছে। সব মৌসুমে গ্রামটিতে প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়। তবে চলতি মৌসুমে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, শিলাবৃষ্টি ও ঝড় বাতাসে লিচু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ৪০ বছরের মধ্যে এমন পরিস্থিতি কখনো দেখেননি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লিচু চাষিরা। এবার তারা সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান।
গ্রামের স্থানীয় লিচু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি বিভাগের পরামর্শ মেনে যারা ভালো যত্ন করেছেন তারা এবার লিচু গাছে রাখতে পেরেছেন। যারা খরার সময় লিচু গাছের পরিচর্যা করেননি তাদের গাছের লিচু ঝরে যাচ্ছে। প্রায় ১০০ বছর আগে গ্রামের কয়েকজন মানুষ রাস্তার দুই পাশে লিচু গাছ রোপণ করেছিলেন। এরপর থেকেই এখানকার লিচুর ফলন ও স্বাদের কারণে সারা দেশে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচুর সারা দেশে ভালো সুনাম রয়েছে। প্রতি বছর এই গ্রামের লিচু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।
মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের মো. আলাউদ্দিনের ছেলে বায়তুল্লাহ বলেন, ‘এ বছর চাচার কাছ থেকে ৪৫টি লিচু গাছ দুই লাখ টাকা দিয়ে লিজ নিয়েছিলাম। কিন্তু ১ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারব কি না জানি না। গতবার ৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকার লিচু বিক্রি হয়েছিল। এ বছর রোদ আর ঝড়ে সব লিচু ঝরে গেছে। গতবারের তুলনায় এবার লিচু খুবই কম ধরেছে। তবে যেটুকুই ধরেছে তাও ঝরে যাচ্ছে।’
মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ডা. নজরুল ইসলামের ছেলে সাইফুল্লাহ তারেক বলেন, ‘দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে আমরা লিচু বিক্রি করে আসছি। দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এসে লিচু কিনে নিয়ে গেছেন। এ বছর যখন মুকুল ধরেছে তখনই শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এরপর আবার খরা এসেছে। খরায় আমরা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ৪০ বছরের মধ্যে এমনভাবে লিচু ঝরে যাওয়া আগে আর দেখিনি। আমার নিজের বর্তমানে ৬০টি গাছ আছে। এর মধ্যে ৪০টি গাছে ফলন এসেছে। ভেবেছিলাম তিন লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারব, তবে এ বছর সম্ভব হবে না।’
একই এলাকার বজলু মাস্টারের ছেলে মামুন মিয়া বলেন, ‘এ বছর সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়াতে আমি বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। অন্য বছরে ৪০টি গাছ থেকে দুই লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারতাম, কিন্তু এ বছর ৭০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করেছি।’
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নূর-ই-আলম বলেন, ‘মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর কারণেই পাকুন্দিয়া সারা বাংলাদেশে পরিচিত। মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু পরিচিতির কারণ হলো এই লিচু মিষ্টি বেশি এবং এর মধ্যে সুন্দর ঘ্রাণ রয়েছে। যার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লিচুপ্রেমীরা স্বাদ নিতে এখানে ছুটে আসেন। চলতি মৌসুমে অতি খরার কারণে পাকুন্দিয়ায় আমরা কাঙ্ক্ষিত ফলন পাইনি। মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের পাশাপাশি হোসেন্দি, নারান্দি, পাটুয়াভাঙ্গা প্রচুর লিচুর ফলন হয়। গাছ থেকে কৃষকরা পর্যাপ্ত পরিমাণ লিচু বিক্রি করেন এবং তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকেন। এ বছর প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে আমাদের লিচু বাগানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কৃষকরা লিচু বাগান থেকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রার লাভ করতে পারবেন না। প্রতি বছর সাধারণত ৭ থেকে ৮ কোটি টাকার বিক্রি করে থাকি। তবে চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবেন চাষিরা।’