
গল্প : প্রত্যুপকার
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: ‘যদি তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের অবসর পাই, তা হলে, মৃত্যুকালে আমার কোনও ক্ষোভ থাকে না।’ বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: বাগদাদবাসী আলী ইবনে আব্বাসের হাতেই সমর্পিত হন দামেস্কের অতিথিপ্রিয় সজ্জন। প্রাণদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত সেই সজ্জনের কাছে আলী দামেস্কের অতিথিপ্রিয় সেই সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোকের আন্তরিক আতিথেয়তার কথা বলেন। আলী তার প্রাণরক্ষাকর্তা সেই সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ খুঁজছিলেন। জীবনকালে সেই দয়ালু ভদ্রলোকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে পারলে আলী যেন ধন্য হয়ে যান। এমন কৃতজ্ঞতা জানাতে পারলে মৃত্যুকালেও আলীর কোনো ক্ষোভ থাকত না বলে তিনি মনে করতেন। এই কৃতজ্ঞতার ভাষাই ওপরের অংশে ব্যক্ত হয়েছে।
প্রশ্ন: ‘আমি এত নীচাশয় ও স্বার্থপর নই যে, যে প্রাণের রক্ষা করেছি আপন প্রাণরক্ষার্থে, সেই প্রাণের বিনাশের কারণ হবো।’ কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: দামেস্কবাসী আশ্রয়দাতা জেনে আলী ইবনে আব্বাস খলিফার দেওয়া প্রাণদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত বন্দিকে নিজের প্রাণকে পণ রেখে মুক্ত করেন এবং রাহা খরচ বাবদ একথলি স্বর্ণমুদ্রা দেন। কিন্তু প্রাণদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত আশ্রয়দাতা আলী সেই মুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন। কেননা নিজের স্বার্থে স্বার্থপরের মতো তিনি যে আলীর প্রাণ রক্ষা করেছিলেন সেই আলীরই প্রাণহরণ করতে পারবেন না। মূলত উপর্যুক্ত অংশে বন্দি গভীর মহানুভবতা ও সততা প্রদর্শন করেছেন।
প্রশ্ন: ‘যে ব্যক্তি এমন দয়াশীল, পরোপকারী, ন্যায়পরায়ণ ও সদ্বিবেচক, তিনি কখনই দুরাচার হন না।’ বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: আলী ইবনে আব্বাসকে দামেস্কের মহান আশ্রয়দাতা ও প্রাণরক্ষাকর্তা কার্যকারণসূত্রে বাগদাদের খলিফার আদেশে বন্দি হন, প্রাণদণ্ডপ্রাপ্ত হন এবং ঘটনাচক্রে আলী ইবনে আব্বাসের হেফাজতেই তিনি চলে আসেন। আলী তার আশ্রয়দাতার প্রাণ বাঁচাতে খলিফার সামনে কতকগুলো অকাট্য যুক্তি পেশ করেন এবং খলিফার সদ্বিবেচনায় ও মহত্ত্বে তার আশ্রয়দাতার প্রাণ রক্ষা পায় ও তিনি সম্মানের সঙ্গে মুক্তি পান। আলোচ্যাংশে আশ্রয়দাতার প্রতি আলী ইবনে আব্বাসের গভীর কৃতজ্ঞতাবোধের প্রকাশ ঘটেছে।
আরো পড়ুন : প্রত্যুপকার গল্পের ৭টি অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর, ১ম পর্ব, নবম শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র
প্রশ্ন: ‘প্রত্যুপকার’ রচনায় আলী ইবনে আব্বাসের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে?
উত্তর: ‘প্রত্যুপকার’ রচনায় আলী ইবনে আব্বাসের চরিত্রে কৃতজ্ঞতা, দয়াশীলতা এবং নৈতিক সাহসের মতো মহৎ গুণাবলি ফুটে উঠেছে। আশ্রয়দাতার পরিচয় জানার পর তিনি তাকে মুক্তি দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন, যদিও এতে তার নিজের জীবন ও অবস্থান হুমকির মুখে পড়ে। তিনি খলিফার রোষ উপেক্ষা করে বন্দি ব্যক্তির পক্ষে দাঁড়ান এবং তার মুক্তির জন্য আন্তরিকভাবে সুপারিশ করেন। এতে বোঝা যায়, আলী ইবনে আব্বাস শুধু ন্যায়পরায়ণই নন, বরং উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে প্রতিদান দেওয়ার মানসিকতাও তার চরিত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
প্রশ্ন: গল্পে বন্দি ব্যক্তি কেন আলী ইবনে আব্বাসের বাড়িতে অন্তরীণ ছিলেন এবং তিনি কীভাবে মুক্তি পান?
উত্তর: খলিফা মামুনের নির্দেশে বন্দি ব্যক্তিকে আলী ইবনে আব্বাসের বাড়িতে অন্তরীণ করা হয়েছিল। বন্দি ব্যক্তি আসলে আলী ইবনে আব্বাসের সেই আশ্রয়দাতা ছিলেন, যিনি একসময় তার জীবন রক্ষা করেছিলেন। যখন আলী ইবনে আব্বাস তার প্রকৃত পরিচয় জানতে পারেন, তখন তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খলিফার কাছে বন্দি ব্যক্তির মুক্তির জন্য আবেদন করেন। প্রথমে খলিফা রুষ্ট হলেও আলী ইবনে আব্বাসের আন্তরিকতা ও যুক্তি শুনে খলিফা তার মুক্তি মঞ্জুর করেন।
প্রশ্ন: আশ্রয়দাতা বন্দি অবস্থায় আলী ইবনে আব্বাসের কাছে কীভাবে শনাক্ত হন এবং তখন তার প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
উত্তর: বন্দি ব্যক্তির কথা ও আচরণ থেকে আলী ইবনে আব্বাস তার প্রকৃত পরিচয় শনাক্ত করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, এই ব্যক্তি সেই মহান মানুষ, যিনি একসময় বিপদের মুখে তাকে আশ্রয় দিয়ে তার জীবন রক্ষা করেছিলেন। এই সত্য আবিষ্কার করার পর, আলী ইবনে আব্বাস গভীরভাবে কৃতজ্ঞ হন এবং নিজের অবস্থান ও জীবন হুমকির মুখে থাকা সত্ত্বেও তাকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেন। এতে তার আশ্রয়দাতা অভিভূত হন এবং আলী ইবনে আব্বাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা
কবীর