ছবি: সংগৃহীত
ঠিক একশ বছর আগে চীনের আধুনিক সাহিত্যের জনক লু স্যুন লিখেছিলেন সমাজ বাস্তবতাকে ব্যবচ্ছেদ করে গুরুত্বপূর্ণ ছোটগল্প ‘দ্য ওয়াইজ, দ্য ফুল অ্যান্ড দ্য স্লেভ’। এর নাট্যরূপ দিয়েছেন অমল রায়। নাটকের নাম দিয়েছেন ‘ক্রীতদাস কথা’। গত ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘ক্রীতদাস কথা’ মঞ্চস্থ করেছে। পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন শাহীন রহমান।

বিস্মিত হয়েছি প্রায় পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহ দেখে। কর্মদিবসে মানুষ কাজ সেরে নাটক দেখতে এসেছেন! এত মানুষ! নগরের পরিচয় তার সাংস্কৃতিক পরিবেশে। যখন থিয়েটারে দর্শক খরার কথা বলা হচ্ছে, তখন ঢাকা শহরের মানুষ ভিড় করে থিয়েটার হলে গিয়ে নাটক দেখছেন, তা অবশ্যই আনন্দিত হওয়ার মতো ঘটনা।
কোরাস ফর্মে মিউজিক্যাল ড্রামার আদলে সাজানো হয়েছে নাটক। এর সেট, প্রপস, কস্টিউম ছিল মানানসই। থার্ড থিয়েটারের আঙ্গিকে এ নাটক প্রসেনিয়াম থেকে উন্মুক্ত গণমানুষের মাঝে গিয়েও উপস্থাপন করা সম্ভব। খানিক সে দাবিও রয়েছে।
নাটকে কয়েকটি ডাইমেনশন আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কীভাবে আমাদের ভাবনায় দাস মানসিকতা জিইয়ে রেখে শাসন-শোষণ অব্যাহত রাখা যায়, সেই কথা। একশ বছর পরও যা এখন আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রাসঙ্গিক হয়ে আছে। তাই ‘ক্রীতদাস কথা’ হয়ে উঠেছে এ সময়ের নাটক।

রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাজতন্ত্রের নামে পরিবারতন্ত্র জিইয়ে রাখে শোষণ। আর শোষণ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে নিশ্চিত করার প্রয়োজন পড়ে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং স্বমতের আধিপত্য বিস্তার। যা করা হয় আমলা আর কিনে নেওয়া বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে। ব্যবহার করা হয় ধর্ম, গণমাধ্যম ও বাইরের শক্তি। মুক্ত মানুষ মানেই অন্যায় মেনে না নিয়ে প্রতিবাদ করা মানুষ। তাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করা এক হীন পরিক্রমা। ‘ক্রীতদাস কথা’ সেসব কথা খুব স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করেছে।
বিশেষভাবে ভালো লেগেছে নাটকের সমাপ্তি। দর্শক যেমন প্রত্যাশা করেন, নাটক সাধারণত সেভাবে শেষ হয়। নাটকে দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ হয়ে গেলে দর্শক রিলিফ ফিল করেন। প্রশান্তির নিশ্বাস ছেড়ে থিয়েটার হল থেকে বেরিয়ে আসেন।
‘ক্রীতদাস কথা’ সেভাবে শেষ হয়নি। এ যেন এক অসমাপ্ত কাহিনি। ঘটনার পরিসমাপ্তি রইল দর্শকের হাতে। ‘ক্রীতদাস কথা’ শেষ হয়েছে অতৃপ্তি নিয়ে, মাথার ভেতর ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্ন আর অস্বস্তি নিয়ে। যে অস্বস্তি দর্শকের মনে জন্ম দেয় ক্রোধ। নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে নিজেকে প্রশ্ন করতে বাধ্য করে। সচেতন করে তোলে দেশের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে করণীয় সম্পর্কে।
মিউজিক, লাইট, অভিনয়ে প্রত্যেকে যতখানি দেওয়া সম্ভব তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। শুভকামনা বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। সারাদেশে নিয়মিত নাটক মঞ্চে আসুক। মানুষ ভিড় করে থিয়েটার হলে যাক নাটক দেখতে।
/শাকিল