![পারিবারিক সহযোগিতা পেলে সফলতা আসবেই](uploads/2024/03/02/1709374550.led-jab3.jpg)
নারী দিবসের বিশেষ আয়োজনে ‘ফ্যাশন প্লাস’-এর কভার হয়েছেন বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএরসির ব্রান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স ডিপার্টমেন্টের ইনচার্জ এবং নিউজ টোয়েন্টি ফোর চ্যানেলের প্রেজেন্টার নাজিয়া খানম কণা । নারী দিবস উপলক্ষে এক আড্ডায় তিনি বলেছেন নিজের সফলতার গল্প ও আগামর স্বপ্নের কথা। সেই সঙ্গে মেয়েদের জন্য দিয়েছেন সফলতার পরামর্শও। এই সফর নারী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কথোপকথনে ছিলেন ফিচার সম্পাদক খালেদ আহমেদ। সেই আলাপচারিতার চুম্বকীয় অংশ তুলে ধরা হলো।
সফলতার গল্প
ছোটবেলা থেকেই আমি এমন কিছু করতে চাইতাম যেন সবাই আমাকে আমার নামে চিনতে পারে। ফিন্যান্সিয়ালি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাওয়ার মনোভাবের কারণে পড়াশোনার প্রতি বেশ মনোযোগী ছিলাম। আমার বেড়ে ওঠা কিন্তু একেবারেই গ্রামে। এইচএসসি পরীক্ষার পরপরই আমার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যাই। তারপর আমার সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান জন্মের পরই আমি ভর্তি পরীক্ষা দেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর শুরু হলো আমার সংগ্রাম। যেকোনো অবস্থায়ই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়েছি। পড়াশোনা কীভাবে চালিয়ে নেওয়া যায় সেই চেষ্টা করেছি এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিল যে, এটা করবই। এরপর শুরু হয় আমার সন্তানকে নিয়ে পড়াশোনা। আমি যখন স্নাতক তৃতীয় বর্ষে তখন আমার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলাম। ও তখন নার্সারিতে পড়ে আর আমি স্নাতকে পড়ি। স্নাতক পাস করার পরই আমার ইচ্ছা হয় নিউজ প্রেজেন্টার হওয়ার। সেই আগ্রহ থেকেই নিউজ প্রেজেন্টারের ওপর কোর্স করি এবং নিউজ টোয়েন্টি ফোর চ্যানেলে নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে যোগদান করি।
সফলতা প্রসঙ্গে বলতে চাই যে, আসলে আমি জানি না কতটা সফল হয়েছি। কিন্তু আমার কাছে যেটা মনে হয় প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ অবস্থানে যা হতে চেয়েছে, যতটুকু হতে পেরেছে সেটা অর্জন করতে পারাটাই সফলতা। একজন গৃহিণীও সফল হতে পারেন তার কাজের মাধ্যমে। আমি একই সঙ্গে সংসার করেছি, সন্তান লালন পালন করেছি, পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি এবং নিজের ক্যারিয়ারও গড়েছি। আমি যেহেতু খুব ভালো ছাত্রী ছিলাম, তাই আমাকে আমার শিক্ষকরা অনুপ্রেণিত করেছিল বিসিএস দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমার মোটেও আগ্রহ ছিল না, তাই কখনো সেদিকে চেষ্টা করিনি। যাই হোক, আমার জায়গা থেকে আমি যতটুকু করেছি সেটাই আমার সফলতা। আমি বর্তমানে ব্যাংকার পেশার পাশাপাশি নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে কাজ করছি নিউজ টোয়েন্টি ফোর চ্যানেলে।
এটার পাশাপাশি আমার আরেকটি পরিচয় হলো আমি একজন মা। মা হিসেবে আমার একটা বড় দায়িত্ব আছে। এটা আমার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। আমি একজন মা হিসেবে সফল হতে বেশি পছন্দ করব। তবে সব জায়গাই আমি সফল হতে চাইব।
আরেকটি কথা বলতে চাই, পরিবারের সমর্থন ছাড়া আসলে কোনো নারী এগিয়ে যেতে পারে না। তবে পরিবারের সমর্থনের আলাদা, ধরন আছে, অনেকে যা ইচ্ছা করে তাতে কোনো কেউ বাধা দেয় না। বলে না এটা করতে পারবে না, এটা হতে পারবে না। আরেকটা হচ্ছে আপনাকে উৎসাহ দিচ্ছে যে তুমি এগিয়ে যাও, আমরা তোমার সঙ্গে আছি। ওই উৎসাহটা হয়তো আমি সেভাবে পাইনি, কিন্তু খুব বড় ধরনের বাধা যে এসেছে সেটাও না। তবে অনেক বাধা এসেছে সেটাকে আমি বাধা মনে করিনি, আমার জন্য যেটা বরাদ্দ ছিল সেটাই হয়েছে, আমি কী পায়নি সেটা না ভেবে যেটা পেয়েছি সেটা নিয়ে আসলে ভেবেছি।
নারীর উন্নতির পথে বাধাগুলো
প্রথমে একজন নারীকে বিশ্বাস করতে হবে নিজের ওপর। আপনি যা চান, আপনি তা করতে পারবেন।
নারীর উন্নয়নে বড় বাধা হলো নারীর মানসিকতা। নারীকে আগে তার মানসিকতা পরির্বতন করতে হবে। সবকিছু করার মানসিকতা থাকতে হবে। সমাজ কী ভাববে, পরিবার সমর্থন দেবে কি না- এগুলো না ভেবে আগে নিজেকে সমর্থন করতে হবে।
আপনি যতক্ষণ নিজেকে সমর্থন না করবেন, দুনিয়ার কেউই আপনার ওই কাজটাতে সফল করে দিতে পারবে না।
নারীর উন্নতির ক্ষেত্রে সমাজেরও একটা বড় ভূমিকা আছে। তবে তার আগে পরিবার, কারণ সমাজের সমর্থনটা তখনই পাওয়া যায় যখন পরিবার আপনাকে সমর্থন করবে। আমাদের পরিবার যদি আমাদের সমর্থন করে তাহলে নারীর জন্য কাজটা আরেকটু সহজ হয়ে যায়।
অনেক সময় নারীর অনেক কাজকে ইতিবাচকভাবে দেখা হয় না। অনেক রকম বাধা সৃষ্টি হয় কিংবা একজন কর্মজীবী নারীর দোষও সমাজ ভালো চোখে দেখে না।
একজন নারীর জন্য কিন্তু আরেকজন নারী বাধা তৈরি করে। সে একটি নেতিবাচক কথা দিয়ে নারীর চলার পথে বাধা তৈরি করে।
আমরা নারীরা সমালোচনা বেশি করি। এ ছাড়া হিংসা জিনিসটাও নারীর মধ্যে বেশি। এটা যে সব নারীর ক্ষেত্রে হয় সেটা বলব না, তবে অধিকাংশ নারীর মধ্যে রয়েছে। হয়তো এটা আমাদের স্বভাবগত প্রকৃতি। তাই কোনো নারী সফল হতে গেলে নারীরাই তার পেছনে লাগে, এতে ওই নারীর সফল হওয়াটা খুবই কষ্টকর হয়।
পুরুষদেরও হয়তো এতটা পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব নেই, যতটা নারীদের মধ্যে থাকে। কিন্তু একটা নারী হয়ে আরেকজন নারীকে সমর্থন করাটা খুবই জরুরি, নারীরা নিজেরা নিজেদের সমর্থন বা উৎসাহ জোগায় তাহলেই সব বাধা পেরিয়ে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যাব।
আগামীর স্বপ্ন
ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আসলে খুব বেশি ভাবি না। আমি আজকে যেখানে সেটা নিয়েও আমি আগে কখনো ভাবিনি। যেমন- আমি এখানে কাজ করব, এটা হব, কোনো কিছু নিয়ে আমার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তবে সব সময় আমি কাজের ওপর বিশ্বাস রেখেছি। যে কাজটি করব মনোযোগ দিয়ে করব এবং করে যাব। সব সময় জীবনে একটা অবস্থানে পৌঁছাতে চেয়েছি। আগামীকাল কি হবে জানি না, তবে আমি আমার আজটা সুন্দর করতে চাই। আমি বর্তমান বিশ্বাস করি। কখনোই আমি অতীত নিয়ে ভাবিনি, ভবিষ্যৎ নিয়ে আবর্ত হয়ে থাকতে চাইনি। আমি চেয়েছি আমার সামনে যে আজটা আছে সেটা নিয়ে বাঁচতে, তো আমার সব ভাবনা আজকে নিয়ে। আজকে ভালোভাবে বেঁচে থাকাই আমার স্বপ্ন।
নারীদের জন্য পরামর্শ
সফলতা মানে হচ্ছে তৃপ্তি। আপনি যে অবস্থানে আছেন সেখানে আত্মতুষ্ট থাকেন বা আপনি তৃপ্ত থাকেন তাহলেই আপনি সফল।
প্রত্যেক নারীর প্রতি আমার একটা উপলব্ধি করা শেয়ার করতে চাই, তা হলো- অবশ্যই একটা নারীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হতে হবে।
অর্থনৈতিকভাবে কারও ওপর যখন নির্ভরশীল হয়ে যাবেন তখন আপনি চাইলেও আপনার মন মতো কিছু করতে পারবেন না। চাইলেও সম্ভব না কারণ আপনি আরেকজনের ওপর নির্ভরশীল। তার মতামতের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তার দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো অর্থ আপনার থাকতে হবে। তাই বলব, খুব ধনী বাবার মেয়ে হোন কিংবা খুব পয়সাওয়ালা ব্যক্তির স্ত্রী হোন না কেন, আপনার নিজের একটা পরিচয় থাকতে হবে। নিজের একটা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বা টাকা আয় করার মানসিকতা অনেক বেশি জরুরি।
নারীদের পড়াশোনা কখনো ছেড়ে দেওয়া যাবে না। জীবনে আপনি যদি লেগে থাকেন, তাহলে সফলতা আসবেই। তাই আমি মেয়েদের এই কথাই বলব পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন। অর্থনৈতিকভাবে অবশ্যই স্বাধীন হবেন।
নিজের আত্মসম্মানের সঙ্গে কখনোই আপস করবেন না। যে কাজটাই করবেন, সেটাই শতভাগ একাগ্রতা এবং সততার সঙ্গে করুন। তাহলেই সফলতা আসবে।