
শিশুর প্রথম স্কুল নিয়ে কৌতূহল আর উচ্ছ্বাসের সঙ্গে নানা ভীতিও কাজ করে। এ ছাড়া শিশুকে প্রথম স্কুলে ভর্তি করানোর সময় এগিয়ে আসতে শুরু করলে বাবা-মায়েরও দুশ্চিন্তা ও ভয় বাড়তে থাকে। শিশুদের প্রথমবার বিদ্যালয়ে পাঠানোর আগে কিছু প্রস্তুতি থাকা জরুরি। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে জন্য শিশুকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
কিছু পড়া আগে থেকে শিখিয়ে নিন
একাডেমিক শিক্ষা শুরু হওয়ার আগে থেকেই আস্তে আস্তে বিভিন্ন রং, বাংলা ও ইংরেজি বর্ণের সঙ্গে শিশুদের পরিচিত করানো উচিত। বাজারে শিশুদের জন্য নানা ধরনের ছবিসহ বই পাওয়া যায়। সেগুলো দিয়েই শিশুদের বিভিন্ন ফল, ফুল, পশু, পাখির সঙ্গে পরিচয় করানো যেতে পারে। শিশুর সঙ্গে বেশি বেশি কথা বলতে হবে। তাহলে তার কথা বলার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। আগে থেকে কিছু ধারণা থাকলে প্রথম প্রথম স্কুলে গিয়ে বুঝতে সমস্যা হবে না।

মানসিক প্রস্তুতি
নতুন পরিবেশের কারণে বেশির ভাগ শিশুই প্রথমে স্কুলের পরিবেশ মেনে নিতে পারে না। নতুন পরিবেশ, অচেনা শিক্ষক ও শিশুদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয় তারা। এ জন্য স্কুল শুরুর আগেই বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের সবাই শিশুকে স্কুলের জন্য মানসিকভাবে তৈরি করতে সময় দিতে হবে।
বিদ্যালয় নির্বাচনে
বিদ্যালয়ে নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিবেশ, নিরাপত্তা ও দূরত্বের বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানের প্রথম বিদ্যালয়ে বাড়ির কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করুন। এর আগে বিদ্যালয়ে সম্পর্কে আগেভাগেই জেনে নিন। বিদ্যালয়ের পাঠদান পদ্ধতি, শিক্ষকমণ্ডলী এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নিতে হবে। কারণ, বিদ্যালয়ে প্রথম দিকের দিনগুলোকে শিশুর জন্য উপভোগ্য করে তোলা খুবই জরুরি। শিশু যেন বিদ্যালয়ে গিয়ে আনন্দ পায় এবং বাসা থেকেও বিদ্যালয়ে যেন আনন্দের জায়গা হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রথম দিকের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা শিশুকে বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে।
সুন্দর জিনিসপত্র কিনে দিন
বিদ্যালয়ের যাওয়ার আগে শিশুকে নিয়ে মার্কেটে নিয়ে যেতে পারেন। তার পছন্দ অনুযায়ী স্কুলের ব্যাগ, টিফিন বক্স, পানির বোতল, পেন্সিল, রাবার, পেন্সিল বক্স ইত্যাদি কিনে দিন। তাহলে শিশু প্রথম বিদ্যালয়ে যাওয়ার দিনে এগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হবে এবং বিদ্যালয়ের যাওয়ার ভয় কিছুটা কমে যাবে। এ ছাড়া কয়েক দিন আগেই শিশুকে স্কুলড্রেস পরিয়ে অভ্যাস করানো যেতে পারে। শিশুকে নিজে নিজে স্কুল ড্রেস পরা এবং স্কুলব্যাগ গোছাতে উৎসাহ দিতে পারেন।
শিশুকে স্কুলের সঙ্গে পরিচয় করানো
ভর্তির আগেই শিশুকে সঙ্গে নিয়ে স্কুল পরিদর্শনে যাওয়া উচিত। এতে শিশুর মধ্যে বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। বর্তমানে শিশুরা মোবাইল ফোন বা টিভিতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য থাকে। ইউটিউব থেকে স্কুল, ক্লাস ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপ শিশুকে দেখাতে পারেন। তাহলেও স্কুল এবং ক্লাসের পরিবেশ সম্পর্কে শিশুর একটা ধারণা হবে।
ক্লাসের জন্য প্রস্তুতি করানো
পরিবারের সদস্যরা গল্পের ছলে শিশুকে প্রথম বিদ্যালয়ে সম্পর্কে আগেই জানিয়ে রাখতে পারেন। ভর্তির পর থেকেই শিশুকে খেলা বা গল্পের ছলে বলতে থাকুন- তুমি বড় হয়েছ, এবার স্কুলে যাবে, নতুন অনেক বন্ধু হবে, সেখানে বাবা-মা কিংবা ভাইবোন থাকবে না। এমন বিভিন্ন উপায়ে উৎসাহিত করার চেষ্টা করুন। খেয়াল রাখতে হবে কোনো অবস্থাতেই যেন শিশুমনে স্কুল নিয়ে কোনো নেতিবাচক ধারণা তৈরি না হয়।

শিশুর রুটিন পরিবর্তন করুন
বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই শিশুকে বিদ্যালয়ে রুটিনে অভ্যস্ত করতে চেষ্টা করুন। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে সকালে শুরু হয়। তাই শিশুকে রাতের খাবার খাইয়ে দেওয়ার পর ঘুমের অভ্যাস করাতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠতে শিশুর কষ্ট কম হবে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে মানিয়ে নেওয়ার জন্য মন ভালো থাকা খুব জরুরি। শিশুদের মন ভালো বা খারাপ থাকা নির্ভর করে পেট ভরা থাকার ওপর। তাই শিশুকে সকালে ঘুম থেকে উঠে পুষ্টিকর নাশতা খাওয়ার অভ্যাস করাতে হবে। তা না হলে খালি পেটে স্কুলে গেলে কিছুক্ষণ পরই শিশুর মেজাজ খিটখিটে হতে শুরু করবে।
ক্লাস শুরু হলে
শুরুর কিছুদিন সম্ভব হলে সন্তানের সঙ্গে স্কুলে যাওয়া-আসা ও স্কুলে অবস্থান করুন। প্রথম দিন স্কুলে শিশু কিছুটা অস্বস্তিতে থাকতে পারে। তাকে সাহস জোগাতে নতুন সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। স্কুলে তার সুবিধা-অসুবিধাগুলোর বিষয়ে তাকে আগেই জানিয়ে রাখুন। স্কুলের বাথরুম চিনিয়ে দিন। প্রয়োজনে ক্লাসের বাইরে থেকে মাঝে মাঝে দেখা করুন। চেষ্টা করুন বন্ধু তৈরিতে সাহায্য করতে।
জরুরি প্রয়োজনে
কিছু তথ্য সন্তানকে আগেভাগেই শিখিয়ে রাখুন। তার নাম, মা-বাবার নাম, বাড়ির নম্বর, ফোন নম্বর মুখস্থ করিয়ে দিন। যদি মুখস্থ করা না হয়, তবে তার নোটবুকে এ তথ্যগুলো লিপিবদ্ধ করে দিতে পারেন, যা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শিশু কাজে লাগাতে পারবে।
পুরস্কারের কথা বলা
শিশুকে ভালো কাজের জন্য পুরস্কার দিতে পারেন। পুরস্কার লাভের আশায় শিশু কাজে কর্মে উৎসাহী হয়ে ওঠে। আপনার সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন যে সে প্রথম সপ্তাহে কান্নাকাটি না করে মন দিয়ে স্কুল করলে তাকে তার পছন্দের কিছু উপহার দিবেন। তাহলে সে আগ্রহ নিয়ে স্কুলে যাবে এবং এভাবে এক সপ্তাহ পরে এমনিতেই তার স্কুল ভীতি কেটে যাবে। এত কিছুর পরেও শিশু স্কুলে যেতে না চাইলে বকাবকি না করে বুঝিয়ে বলুন।
কলি