![মধুপিঠা](uploads/2024/04/05/1712302115.Modhu-pitha.jpg)
সুতরাং মাসাকিসি দুই থাবা ভরে মধু নিয়ে নিল। এত বেশি মধু সে নিজে খেতে পারবে না। সে জন্য সে একটা বালতিতে রাখল তার মধু। এরপর সোজা পর্বত থেকে নেমে সারা রাস্তা বালতিটা বয়ে নিয়ে চলল শহরের দিকে। তার উদ্দেশ্য হলো, শহরে মধু বিক্রি করবে।
ভালুকদের আবার বালতি থাকে নাকি? সালা জিজ্ঞেস করল।
জুনিপেই ব্যাখ্যা করে বলল, ঘটনাক্রমে মাসাকিসি একটা পেয়েছিল। রাস্তার পাশে একটা বালতি পড়ে থাকতে দেখে কুড়িয়ে নিয়েছিল যাতে কখনো কাজে লাগে।
তারপর সত্যিই সেদিন কাজে লেগে গেল, তাই না?
ঠিক বলেছ। তারপর মাসাকিসি শহরের একটা মোড়ে একটা বসার জায়গাও পেয়ে গেল। সেখানে একটা সাইনবোর্ড খাঁড়া করে দিল: সুস্বাদু মধু!
একদম প্রাকৃতিক। দাম: এক কাপ ২০০ ইয়েন।
ভালুকরা কি টাকা গুনতে পারে?
অবশ্যই পারে। মাসাকিসি বাচ্চা বয়সে তো মানুষের সঙ্গেই থাকত। তারাই ওকে কথা বলা এবং টাকা গোনা শিখিয়েছিল। মাসাকিসি ছিল একটা বিশেষ ধরনের ভালুক। সে কারণে যে ভালুকরা তার মতো বিশেষ ছিল না, তারা মাসাকিসিকে এড়িয়ে চলতে থাকে।
এড়িয়ে চলতে থাকল?
হ্যাঁ, এড়িয়েই তো চলল তারা। বড়জোর ভাব দেখানো একটা-দুটো কথা বলল: আরে, আমাদের বিশেষ ভালুক মশাইয়ের কেমন চলছে দিনকাল? এই ধরনের কথা বলে তারা শুধু এড়িয়েই চলল তাকে। ওদের মধ্যে খুব কঠিন স্বভাবের একজন ছিল। তার নাম টনকিসি। সে মাসাকিসিকে আসলেই খুব ঘৃণা করত।
বেচারা মাসাকিসি!
ঠিক বলেছ। মাঝখান থেকে মানুষজন বলা শুরু করল, ও আচ্ছা, সে তো দেখি গোনাগুনি করতে পারে, মানুষের সঙ্গে কথাও বলতে পারে। কিন্তু তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে বোঝা যায়, সে আসলে একটা ভালুকই। সুতরাং মানুষের এসব কথা থেকে বোঝা গেল, সে আসলে মানুষের জগতের কেউ নয়, ভালুকদের জগতেরও কেউ নয়।
তার কোনো বন্ধু ছিল না?
একজনও ছিল না। জানো তো, ভালুকরা স্কুলে যায় না। কাজেই বন্ধু তৈরি করার মতো কোনো জায়গা তাদের নেই।
তোমার বন্ধু আছে না, জুন? ‘অঙ্কল জুনপেই’ কথাটা সালার কাছে বেশ দীর্ঘ মনে হয়। এ জন্য সে শুধু জুন বলে ডাকে জুনপেইকে।
বহু বহু দিন আগে থেকে তোমার বাবা আমার সবচেয়ে সবচেয়ে ভালো বন্ধু। সেই সূত্রে তোমার মাও আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।
ভালো। বন্ধু থাকা ভালো।
জুনপেই বলল, ঠিক বলেছ। বন্ধু থাকা ভালো।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে সালা গল্প শোনে। তার জন্য জুনপেই নতুন নতুন গল্প বানায়। কোনো বিষয় বুঝতে না পারলে সালা তার কাছে জিজ্ঞেস করে। তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় ভেবেচিন্তে দিতে হয়। সালার প্রশ্নগুলো বেশির ভাগই তীক্ষ্ণ এবং কৌতূহলে ভরা। তার প্রশ্নের প্রসঙ্গে ভাবতে ভাবতে বলতে থাকা গল্পের মধ্যে নতুন বাঁক জুড়ে দেয় জুনপেই।
সালা বলল, জুনপেই আমাকে ভালুক মাসাকিসির গল্প বলছে। মাসাকিসি হলো সার্বক্ষণিকভাবেই মধু পাওয়া ভালুক। কিন্তু তার কোনো বন্ধু নেই।
সেওকো জিজ্ঞেস করল, তাই না কি? মাসাকিসি কি খুব বড় ভালুক?
সালা জুনপেইয়ের দিকে অধৈর্য চাহনিতে তাকাল, মাসাকিসি কি খুব বড়?
জুনপেই বলল, খুব বেশি বড় নয়। ছোটর দিকেই হবে তার আকার। অনেকটা তোমার সমান। খুব মিষ্টি মেজাজের অধিকারী সে। গান শুনতে চাইলে সে রক, পাঙ্ক কিংবা ওই রকমের কোনো গান শোনে না। সে একা একা সুবার্ট শোনে।’
সালা জিজ্ঞেস করল, সে গানও শোনে? তার কি সিডি প্লেয়ার জাতীয় কিছু আছে?
সে এক দিন একটা বুমবক্স পেয়েছিল। কুড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে বক্সটা।
খানিকটা সন্দেহের চোখে সালা জিজ্ঞেস করল, এত কিছু সে রাস্তায় পড়ে পায় কীভাবে?
ঠিক আছে, তাহলে শোনো। ওই পর্বতটা খুব খাঁড়া। যারা ওখানে ওঠে তাদের অনেকের মাথা ঘুরে যায়। কেউ কেউ দুর্বল হয়ে পড়ে। খুব বেশি প্রয়োজন না থাকলে অনেক কিছুই তারা ফেলে দেয়। ক্লান্ত হয়ে তারা বলতে থাকে, আরে ভাই, এটা আমার দরকার নেই! এই বালতিটা টানতে টানতে আমার জান শেষ! এই বুম বক্সটা আমার আর দরকার নেই! ইত্যাদি বলে তারা।
সেওকো বলল, ‘আমি জানি, তাদের কেমন লাগে। মাঝে মাঝে তুমিও এমন করে সবকিছু ফলে দিতে চাও।
সালা বলল, আমি এ রকম করি না।
জুনপেই বলল, তুমি তো অনেক ছোটো। তোমার অনেক শক্তি। এবার তাড়াতাড়ি দুধটুকু খেয়ে ফেল। তাহলে গল্পের বাকিটা বলি।
উষ্ণ গ্লাসের চারপাশটা আঙুল দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে সাবধানতার সঙ্গে দুধ পান করে জিজ্ঞেস করল, ঠিক আছে। মাসাকিসি মধুপিঠা বানিয়ে বিক্রি করে না কেন? আমার মনে হয়, শুধু মধুর চেয়ে মধুপিঠা বেশি পছন্দ করবে শহরের লোকেরা।
মিষ্টি হেসে সেওকো বলল, চমৎকার বুদ্ধি! মধুপিঠা বানিয়ে বেচলে মাসাকিসির মুনাফা অনেক বেশি হবে।
জুনিপেই বলল, নতুন নতুন বাজার দেখতে দেখতে একসময় এই মেয়েটা সত্যিকারের উদ্যোক্তা হয়ে উঠবে।
রাত তখন প্রায় ২টা বাজে। সালা বিছানায় ফিরে গেল। জুনিপেই এবং সেওকো তার ঘুমিয়ে পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে লাগল। তারপর তারা রান্নাঘরের টেবিলে একটা বিয়ারের ক্যান খুলে বসল। সেওকোর পানীয়ের প্রতি তেমন টান নেই। জুনিপেইকেও গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে।
সেওকো বলল, তোমাকে মাঝরাতে এত দূর টেনে আনার জন্য দুঃখিত। বিকল্প কিছু আমার মাথায় আসেওনি। আমি ওকে নিয়ে একদম শ্রান্ত-ক্লান্ত। শুধু তুমিই ওকে শান্ত করতে পার। কোনো উপায় না দেখে আমি তাকাতসুকিকে ডাকতে যাচ্ছিলাম।
মাথা ঝাঁকিয়ে জুনিপেই আরেক চুমুক বিয়ার পান করে বলল, আমাকে নিয়ে ভেব না। সূর্য না ওঠা পর্যন্ত আমি জেগেই থাকব। রাতের এই প্রহরে রাস্তাও একেবারে ফাঁকা। জরুরি আসতে হলে আসব। ব্যাপার না।
নতুন গল্প নিয়ে কাজ করছিলে?
জুনিপেই মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল।
লেখালেখি কেমন চলছে?
অন্য সময়ের মতোই। আমি লিখে যাচ্ছি। প্রকাশকরা প্রকাশ করছেন। কেউ পড়ছে না।
আমি তোমার লেখা পড়ি। তোমার সব লেখাই পড়ি।
ধন্যবাদ। তুমি চমৎকার মানুষ। তবে ছোটগল্প গ্লাইড রুলের মতো নিজস্ব গতিতে চলে। আমরা বরং সালার কথা বলি: আগেও এ রকম করেছে নাকি সালা?
সেওকো মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয়।
খুব বেশি?
অনুবাদ: দুলাল আল মনসুর