এনডিএ-ইন্ডিয়া জোটের লড়াই । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

এনডিএ-ইন্ডিয়া জোটের লড়াই

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০২ পিএম
এনডিএ-ইন্ডিয়া জোটের লড়াই

ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে আজ। শেষ হবে ১ জুন। সাত ধাপের এই নির্বাচনের ফল বলে দেবে কার হাতে যাচ্ছে দিল্লির মসনদ। প্রায় ১০০ কোটি ভোটার এবারের নির্বাচনে ভোট দেবেন। আর নির্বাচনও হচ্ছে সবচেয়ে বেশি সময় নিয়ে। ফলে এ নির্বাচন হতে চলেছে বিশ্বের এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় নির্বাচন। এ ছাড়া এই ভোট ভারতের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গণতান্ত্রিক কাঠামো ও বৈশ্বিক গণতান্ত্রিকধারার জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হওয়ার আশা করছেন। তিনি ৪০০-এর বেশি আসন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন। সাম্প্রতিক জরিপও বলছে, মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও এর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে জয়ী হবে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একাই ৩০৩টি আসন পেয়েছিল। আর এনডিএ জোট পেয়েছিল ৩৫২টি আসন। 

এবারের নির্বাচনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ বৃহত্তম বিরোধীদল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষ থেকে। মোদির বিজেপিকে ঠেকাতে এবার বিরোধী ২৬টি দল জোট গঠন করেছে। প্রায় এক বছর আগে গড়া হয়েছে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) নামের ওই জোট। এটি গঠনের পর ভারতের রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মোদি বিরোধীদের মধ্যে এটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ইন্ডিয়া জোট গঠনের পর কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে সফলও হয়েছে বিরোধীরা।

ইন্ডিয়া জোট
২০২৩ সালের জুলাইয়ে ভারতের সব বিরোধী দল মিলে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ইন্ডিয়া জোট’ গঠিত হয়। সেই জোটে সর্বভারতীয় কংগ্রেস, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস, বিহারের জেডিইউ, আরজেডি, মহারাষ্ট্রের শারদ পাওয়ারের এনসিপি, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা, দিল্লির ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টি, তামিলনাডুর-এএমএমকে, বামপন্থি সিপিআইএম, সিপিএম, টিডিএস, ওয়াইএসআরসহ সর্বভারতীয় ও আঞ্চলিক দলগুলোকে নেওয়া হয়।

এই জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আছেন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে, দুই ভাইবোন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা ব্যানার্জি, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বর্তমানে কারাবন্দি অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রমুখ।
ইন্ডিয়া জোটের মাধ্যমে বিরোধী শিবির আশা জাগানোর মতো একটি প্ল্যাটফর্ম পেয়েছিল। তবে অল্প কিছু দিনের মধ্যে জোটে ভাঙন দেখা দেয়। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতিশ কুমার যিনি ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, তিনি ইন্ডিয়া জোট ছেড়ে তার পুরনো মিত্র বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএতে যোগ দিয়েছেন এবং পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তার রাজ্যে ইন্ডিয়া জোটকে অকার্যকর ঘোষণা করেন। এতে করে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট বড় ধাক্কা খায় এবং জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা হতাশা ব্যক্ত করেন।

ইন্ডিয়া জোটের এই ধাক্কা খাওয়ার জন্য কংগ্রেস তথা রাহুল গান্ধীকে দায়ী করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্ব মোদির সঙ্গে টিকে উঠতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসের উচিত আঞ্চলিক দলগুলোকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া। তাহলে এই জোট একটি শক্ত ভূমিকা রাখতে পারবে।

সর্বভারতীয় দল হিসেবে কংগ্রেস যদি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে এবং সেক্যুলার ধারার সব রাজনৈতিক দল ও আঞ্চলিক দলগুলোকে এক ছাতার নিচে এনে উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিপরীতে আদর্শিক লড়াইয়ে শামিল হতে পারে এবং গান্ধী পরিবার যদি নেতৃত্বের দক্ষতা দেখাতে পারে, তবেই কেবল ব্র্যান্ড মোদিকে আটকানো যেতে পারে।

রাজ্য ভেদে ভোট বিশ্লেষণ
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৪ শতাধিকে জয় পাবে। 

তবে বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে গত বুধবার আল জাজিরার এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা এনডিএর মুখ মোদির ম্যাজিকের ধার অনেকটা কমে গেছে। এবারের নির্বাচনে এনডিএর সাফল্য আর শুধুই নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তির ওপর নির্ভর করছে না। ফলে নির্বাচনি প্রচারে মোদি ‘এবার ৪০০ পার’ করার ডাক দিলেও ভোটাররা সাড়া দেবেন সেই লক্ষ্য পূরণের ম্যাজিক আর মোদির হাতে নেই! এনডিএর ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে দক্ষিণের রাজ্যগুলো। যদিও গত নির্বাচনে ৩৫৪ আসন পেয়েছিল এনডিএ। এর মধ্যে শুধু বিজেপিই পেয়েছিল ৩০৩। এবার নির্বাচনে বিজেপির টার্গেট ৩৭০।

লোকসভা নির্বাচনের ইতিহাসে একক দল হিসেবে কংগ্রেস ৪০০ আসনের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। ১৯৮৪ সালের নির্বাচনে সেটি সম্ভব হয়েছিল মূলত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকাণ্ডের ফলস্বরূপ জনগণের সহানুভূতির কারণে। কিন্তু এবার কংগ্রেসের অবস্থা এতটাই নাজুক যে বিজেপির সামনে ন্যূনতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান অনেক বিশ্লেষক। 

তবে কংগ্রেস যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন, হিন্দু জাতীয়তাবাদ পুঁজি করা বিজেপি এবারের নির্বাচনে ৪ শতাধিক আসন পাবে কি না সেটিই বড় প্রশ্ন। বিশ্লেষকদের মতে, এই বিষয়টি নির্ধারণ করে দেবে দক্ষিণ ভারত। কারণ, বিজেপির হিন্দুত্ব মন্ত্র দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে মোটেও কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। উত্তর ভারতে রাম স্লোগান যথেষ্ট প্রশংশিত হলেও দক্ষিণ ভারতে এর অতটা কদর নেই।

ভারতের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বাস দক্ষিণ ভারতের পাঁচ রাজ্য- তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্র প্রদেশ, কেরালা ও তেলেঙ্গানায় এবং কেন্দ্রশাসিত পদুচেরি ও লাক্ষাদ্বীপে। এই অঞ্চলটিই অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতে সবচেয়ে সমৃদ্ধ। ভারতের জিডিপিতে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোর অবদান ৩০ শতাংশের বেশি। 

মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ভারতে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিলেও ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এই অঞ্চলের ১৩১ আসনের মধ্যে মাত্র ৩০টি পেয়েছিল। যার অধিকাংশই ছিল কর্ণাটকে। বাকি চার রাজ্যে বিজেপি সে অর্থে কোনো জায়গা পায়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি অবশ্যম্ভাবী। 

সর্বশেষ লোকসভায় বিজেপি ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৩০৩টিতে জিতেছিল, যার অধিকাংশই উত্তর ভারতে। দেশের এই অঞ্চল ঐতিহাসিকভাবেই বিজেপির অনুকূলে। কিন্তু লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের যে আকাঙ্ক্ষা, তা বিজেপি পায়নি কেবল দক্ষিণের রাজ্যগুলোর কারণেই। 

নয়াদিল্লিভিত্তিক থিংকট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি অ্যানালাইসিসের চেয়ারম্যান মোহন গুরুস্বামী বলেন, ‘অন্ধ্র প্রদেশ ও দক্ষিণের অন্যান্য রাজ্যে বিজেপি খুবই অজনপ্রিয়। আসলে, এই অঞ্চলে যারাই বিজেপির সঙ্গে জোট করবে, তারাই এ নির্বাচনে খারাপ করবে।’ 

একই সুর অর্থনীতিবিদ ও বিজেপি সরকারের বর্তমান অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের স্বামী পারাকালা প্রভাকরের কথায়ও। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে ভোটের বাক্সে ‘উত্তর-দক্ষিণের’ বিভাজনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। 

দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে বিজেপির এই খাবি খাওয়া নতুন নয়। উত্তর ভারতের তুলনায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সব সূচকেই দক্ষিণের রাজ্যগুলো এগিয়ে। একই সঙ্গে এই অঞ্চলে ধর্মীয় রাজনীতির প্রভাব কম। বিজেপির রাজনীতির ঐতিহ্যই ধর্মকেন্দ্রিক। 

উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতের আর্থসামাজিক তুলনা টানা যেতে পারে কেরালা ও উত্তর প্রদেশের মধ্যে। কেরালায় নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে মাত্র ৬, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সমান। অথচ একই দেশের উত্তর প্রদেশে নবজাতক মৃত্যুর হার হাজারে ৪৮, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের সমান। মূলত এই তুলনামূলক অবস্থার কারণেই দক্ষিণ ভারতে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি কখনোই হালে পানি পায়নি বলেই মনে করেন পারাকালা প্রভাকর। 

ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও তেলেগু দেশম পার্টির সাবেক নেতা কিশোর চন্দ্র দেও বলছেন, ‘উত্তর ভারতে মানুষকে ধর্মের ছাতার নিচে আনা সম্ভব হলেও দক্ষিণ ভারতে এটি সম্ভব নয়।’ কিছুদিন আগে, তেলেগু দেশম পার্টি ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোট করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কিশোর দল থেকে পদত্যাগ করেন। 

তামিলনাড়ুর তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল পরিষেবাবিষয়ক মন্ত্রী পালানিভেল থিয়াগা রাজনও কিশোর চন্দ্র দেওয়ের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণে কয়েক শ বছর আগে থেকে সব ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতিমূলক সহাবস্থানের ঐতিহ্য আছে। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের প্রচেষ্টা অবশ্যই দক্ষিণে বুমেরাং হবে।’ 

বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিপরীতে দক্ষিণ ভারতের সেক্যুলার অবস্থান টিকবে কি না তা আসন্ন নির্বাচনেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। তবে নির্বাচনের আগে, বিজেপি এবং মোদি অবশ্যই চেষ্টা করেছেন, দক্ষিণ ভারতে অবস্থান শক্ত করার। আর এ লক্ষ্যে মোদি বেছে নিয়েছিলেন তামিলনাড়ুকে, যেখানে লোকসভার ৩৯টি আসন রয়েছে। 

পুরো তামিলনাড়ুতেই ১৯ এপ্রিল ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে, মোদি এই রাজ্যে অন্তত ছয়বার সফর করেছেন। এমনকি নিজের তামিল ভাষার অজ্ঞতা ঢাকতে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্য নিয়ে সমাবেশে হিন্দি ভাষণ তামিল ভাষায় শুনিয়েছেন। চেষ্টা করেছেন, তামিল ভোটারদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে ভোটার টানতে।

ভোটের পাল্লা ভারী করতে মোদি তামিল জনগণকে বিভাজিত করতে ৫০ বছর আগে নির্ধারণ হয়ে যাওয়া কাচ্চাথিভু দ্বীপের বিষয়টি হাজির করেছেন। তার সরকারের দাবি, তৎকালীন ভারত সরকার ইচ্ছা করে ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার দূরের দ্বীপটি শ্রীলঙ্কাকে উপহার দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তিনি মূলত তামিলদের মধ্যে সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী আবেগ জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। 

কাচ্চাথিভু ইস্যুতে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের প্রতি তোপ দাগার পাশাপাশি মোদি তামিলনাড়ুর ক্ষমতাসীন দল দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাঝাগাম বা ডিএমকের বিরুদ্ধে হিন্দুবিরোধী মনোভাবের অভিযোগ তুলেছেন। গত বছরে সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের ছেলে ডিএমকে নেতা উদয়ানিধি স্ট্যালিন হিন্দু তথা সনাতন ধর্মকে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি মূলত হিন্দুধর্মে বর্ণপ্রথার সমালোচনা করতে গিয়ে এই মন্তব্য করেছিলেন। 

এই অবস্থায় দিল্লিভিত্তিক কিছু জরিপ সংস্থা বলছে, বিজেপি হয়তো সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ভোট বাগাতে পারবে। তবে আসনসংখ্যা খুব বেশি হবে বলে মনে হয় না। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপির জন্য বিষয়টি ‘বলা সহজ, করা কঠিন’- প্রবাদের মতোই। 

তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে কয়েক দশক ধরেই ব্রাহ্মণ্যবাদবিরোধী মনোভাব প্রবল। জাতীয়তাবাদী যেকোনো ধারণাই দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে দীর্ঘকাল ধরেই সন্দেহের চোখে দেখা হয়েছে। এই মনোভাবের কারণে, তামিল রাজনৈতিক নেতা রামাস্বামী নাইকার- যিনি পেরিয়ার নামেই বেশি পরিচিত- নিজের দল কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। তার অভিযোগ ছিল, কংগ্রেসের উচ্চপর্যায় ব্রাহ্মণদের নিয়ে গঠিত। 

বিজেপি নেতারা প্রায়ই পেরিয়ারের সমালোচনা করেন। তবে ডিএমকে ও প্রতিদ্বন্দ্বী অল ইন্ডিয়া আন্না ডিএমকে (এআইএডিএমকে) উভয়ই পেরিয়ারের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বহনের অঙ্গীকার করেছে। ফলে কংগ্রেসই যেখানে ছাড় পায়নি, সেখানে বিজেপি ঘাঁটি গেড়ে বসবে- এমনটা ভাবা অমূলকই। 

তবে কর্ণাটকে বিজেপির অবস্থান তুলনামূলক রমরমাই বলা চলে। বিগত দুই দশকে দক্ষিণ ভারতে বিজেপির জন্য অনেক বেশি উর্বর ভূমি ছিল রাজ্যটি। ২০০৮ থেকে ২০১৩ এবং ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাজ্যটি বিজেপি শাসিত ছিল। এমনকি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যটির ২৮ আসনের মধ্যে ২৫টিই জিতেছিল বিজেপি। তবে সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরেছে। ফিরেই লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ‘অন্যায়’ ও ‘বঞ্চনার’ অভিযোগ তুলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, কংগ্রেসের এই কৌশল কাজে দেবে। এ বিষয়ে ‘দক্ষিণ বনাম উত্তর: মহাবিভাজন’ বইয়ে লেখক আর এস নীলাকান্তন বলেন, ‘উত্তরের তুলনায় এই দক্ষিণের রাজ্যগুলোর জনগণ গড়ে যে পরিমাণ কর দেয়, সেই তুলনায় কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ থেকে খুব সামান্যই পায়।’

নির্বাচনে বড় ইস্যুগুলো কী?
প্রধানমন্ত্রী মোদি দাবি করতেই পারেন যে, ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কারণে বিশ্বে দেশটির অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চায় চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে তাদের মিত্রদেশ করে রাখতে।

সম্প্রতি মোদি ভারতের ৮০ কোটি গরিবের জন্য একাধিক উদার কল্যাণমূলক কর্মসূচি চালু করেছেন। এর মধ্যে বিনামূল্যে শস্য সরবরাহ এবং কম আয়ের পরিবারের নারীদের মাসে ১ হাজার ২৫০ রুপি ভাতা দেওয়ার মতো বিষয় রয়েছে।

এদিকে, কংগ্রেস তাদের ইশতেহারে বলেছে, ভারতে এখন বেকারত্বের হার অনেক। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। ইশতেহারে বাড়তি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীদের ভাতা বৃদ্ধি এবং কলেজ উত্তীর্ণদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ভারতকে স্বৈরাচারের পথ থেকে সরিয়ে আনা হবে এমন প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে কংগ্রেস।

সংখ্যালঘুদের অভিযোগ, তারা প্রায়ই বৈষম্য ও হামলার শিকার হন। মোদির শাসনামলে তারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে বিজেপি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আন্তর্জাতিক নাগরিক অধিকার সংস্থা ফ্রিডম হাউজ বলেছে, বিজেপি সরকারের সমালোচনা করা ব্যক্তিদের, বিশেষ করে সাংবাদিকদের হয়রানি করার ঘটনা বাড়ছে। সংস্থাটি ভারতকে ‘আংশিকভাবে স্বাধীন’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করে।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে এনডিএ জোট। আর প্রধানমন্ত্রী হন তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেদ্র মোদি। তবে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদি দেশ ও বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হন। জাতিসংঘ, আমেরিকা এবং ইউরোপ নরেন্দ্র মোদিকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এক প্রকার দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েন মোদি। কিন্তু এই প্রতিকূলতা কাটানোর জন্য মোদি নজর দেন গুজরাটের আর্থ-সমাজিক উন্নয়নের ওপর এবং সেই উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে একধিকবার তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সেই সঙ্গে জাতীয় রাজনীতিতে নিজের অত্যাবশ্যকীয়তা প্রমাণ করেন।

এরপর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের এক বছর আগে অনুষ্ঠিত হয় তিন রাজ্য- রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ে বিধানসভা নির্বাচন। ওই সব রাজ্য বিধানসভায় বিজেপি পরাজিত হয়। কিন্তু তার এক বছর পর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ওই সব রাজ্যে ব্যাপক ব্যবধানে জয় লাভ করে।

তখন রাজনৈতিক বিশ্বেষকরা মনে করেন, মোদির জন্যই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একচেটিয়াভাবে জয়লাভ করে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আবার মোদি বিজেপিকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে দিতে সক্ষম হন।
মোদি এত জনপ্রিয় কেন?

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় মোদি গুজরাটে ব্যাপক বিদেশি বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হন এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে গুজরাটকে শিল্পবাণিজ্যে সমৃদ্ধ করেন। পাশাপাশি গেরুয়া রাজনীতিতে নিজের অবস্থান সু-সংহত করতে থাকেন। 

২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মোদি ভারতের রাজনৈতিক কৌশল পাল্টানোর জন্য তার অত্যন্ত আস্থাভাজন অমিত শাহকে গুজরাট থেকে দিল্লি নিয়ে এসে বিজেপির সভাপতি করেন। অমিত শাহের রাজনৈতিক কৌশলের কাছে বিরোধীদলগুলো ধরাশায়ী হতে থাকেন এবং অমিত শাহকে বলা হয় বর্তমান ভারতের রাজনীতির চাণক্য।

বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটি প্রতিটি রাজ্য এবং সরকারে নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতা একচ্ছত্র হতে থাকে। কারণ, পুরো পার্টির নিয়ন্ত্রণ অমিত শাহের হাতে। আর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নরেন্দ্র মোদির হাতে চলে আসে। পাশাপাশি পুরো ভারতে গেরুয়াকরণের জন্য হিন্দুত্ববাদকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং এতে ব্যাপক সফলতা আসে।

জাত-পাত, ধর্মীয় বিভাজনের কঠিন সমীকরণ ডিঙ্গিয়ে ভারতজুড়ে মোদি হিন্দুত্ববাদের একক অপ্রতিরোধ্য নেতাতে পরিণত হন। বাবরি মসজিদের স্থলে রামন্দির নির্মাণ বিজেপির রাজনৈতিক এজেন্ডা ছিল। মোদি সেটার বাস্তবায়ন করেছেন এবং রামমন্দির ইস্যুতে সংখ্যালঘুদের আবেদন অগ্রাহ্য করে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের সমর্থন নিজের দিকে নিতে সমর্থ হন।

প্রকান্তরে একসময় ভারতের উচ্চবর্ণের হিন্দুরা ব্যাপক হারে বিজেপিকে ভোট দিত। কিন্তু মোদি উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ-দলিত সব সম্প্রদারের বৃহৎ অংশের সমর্থন নিজের দিকে নিতে পেরেছেন। এটাকে মোদির অন্যতম বড় রাজনৈতিক সফলতা বলে বিশ্বাস করেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। 

২০২৩ সালে জি-২০ আয়োজন করে তা সফলভাবে সমাপ্ত করার কারণে মোদির কূটনৈতিক সফলতা পরিলক্ষিত হয়। পাশাপাশি ব্রিকসকে শক্তিশালীকরণ- আমেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে মোদির কূটনৈতিক সফলতা এবং রাশিয়া-আমেরিকা ভারসম্যের কূটনীতি মোদি খুব দক্ষতার সঙ্গে সামলান। এতে করে বিশ্বব্যাপী মোদির একটি ভালো কূটনৈতিক ইমেজ তৈরি হয়, যা তাকে ভোটের মাঠে যোজন যোজন এগিয়ে রেখেছে। সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি।

লোকসভা নির্বাচন আজ ভাগ্য পরীক্ষা রাহুল, রাজনাথ, স্মৃতি, রচনা, লকেটের

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম
আজ ভাগ্য পরীক্ষা রাহুল, রাজনাথ, স্মৃতি, রচনা, লকেটের
প্রতীকী ছবি

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আজ সোমবার (২০ মে)। ছয়টি রাজ্য এবং দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৪৯টি আসনে হবে এই পর্বের ভোট গ্রহণ। এর মধ্যে উত্তর প্রদেশ রাজ্যে ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৪টিতে, মহারাষ্ট্রের ৪৮টি আসনের মধ্যে ১৩টি, পশ্চিমবঙ্গের ৪২টির মধ্যে ৭টি, বিহারের ৪০টির মধ্যে ৫টি, ওড়িশায় ২১টির মধ্যে ৫টি, ঝাড়খন্ডের ১৪টির মধ্যে ৩টিতে ভোট হবে আজ।

পশ্চিমবঙ্গের আরামবাগ, বনগাঁ, ব্যারাকপুর, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, শ্রীরামপুর ও হুগলিতেও ভোট হবে এই পর্বে।

কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের পাঁচটি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে একটি এবং লাদাখের একমাত্র আসনটিতেও আজ ভোট গ্রহণ হবে পঞ্চম দফায়। 

এদিন ভাগ্য নির্ধারণ হবে ভারতের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, বিজেপি নেতা প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও নারী ও শিশু উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানির। এই নেতাদের মধ্যে ভাগ্য পরীক্ষার মুখে থাকা সবচেয়ে বড় নাম রাহুল গান্ধী। কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীর প্রতিদ্বন্দ্বী যোগী আদিত্যনাথ সরকারের প্রাদেশিক মন্ত্রী দীনেশপ্রতাপ সিংহ। উত্তর প্রদেশের রায়বেরেলি থেকে এবার প্রার্থী হয়েছেন রাহুল। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ (লক্ষ্ণৌ), স্মৃতি ইরানি (আমেথি) এবং পীযূষ গয়াল (মুম্বাই উত্তর)।

অন্যদিকে বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ আসনে কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর, হুগলিতে দুই অভিনেত্রী রচনা ব্যানার্জি ও লকেট চট্টোপাধ্যায়ের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন ভোটাররা।

লোকসভার সাত দফার ভোট পর্ব শুরু হয় গত ১৯ এপ্রিল। ২৮ রাজ্য ও ৮ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেরে ৯৭ কোটি ভোটারের কাছ থেকে সুষ্ঠু ভোট নিতে নির্বাচন কমিশন সাত দফায় ভোটের আয়োজন করেছে। লোকসভার চতুর্থ পর্বের ভোট হয় গত ১৩ মে। লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে চার দফায় ভোট নেওয়া হয়েছে ৩৭৯ আসনে। বাকি ১৬৪ আসনের মধ্যে আজ ৪৯ আসনের ভোট শেষ হলে বাকি থাকবে ১১৫টি আসন, যা পরবর্তী দুই দফায় সম্পন্ন হবে।

পরীক্ষায় রাহুল, মোদির নতুন চ্যালেঞ্জ কেজরিওয়াল
আজ ভাগ্য নির্ধারণ হবে ভারতের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিং ও স্মৃতি ইরানির। এই নেতাদের মধ্যে ভাগ্য পরীক্ষার মুখে থাকা সবচেয়ে বড় নাম রাহুল গান্ধী।

রাহুলের মা সোনিয়া গান্ধী ছেলের নামে ভোটারদের কাছে ভোট দেওয়ার আকুল আবেদন জানিয়েছেন। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছি। আপনারা যেভাবে আমাকে আপনাদের করে নিয়েছেন, তেমনি দয়া করে তাকেও আপনাদের একজন করে নিন। সে আপনাদের হতাশ করবে না।’ 

এই দফার ভোটে মোদির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিহাড় জেল থেকে বেরিয়েই শনিবার পুরোদস্তুর ভোটের প্রচারে নেমে পড়ে তিনি নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছেন।

অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে জেল থেকে বেরোনোর পর জনতার দরবারে হাজির হন কেজরিওয়াল। তাকে স্বাগত জানাতে উপচে পড়েছিল আম আদমি পার্টির (আপ) কর্মী-সমর্থকদের ভিড়। সবার মাঝে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের মন থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। আপনাদের কাছে আমার একটাই আবেদন, আমাদের সবাইকে একজোট হয়ে দেশেকে বাঁচাতে হবে। দেশকে একনায়কতন্ত্র থেকে বাঁচাতে হবে। আমি সর্বশক্তি দিয়ে এই একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়ছি।’

এক বছর আগেও যা অভাবনীয় ছিল, তাই করে দেখিয়েছেন কেজরিওয়াল। একসময় একে অপরের শত্রু হিসেবে বিবেচিত হলেও কংগ্রেস প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে দিল্লিতে তিনি রোড শো করছেন।

কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিজেপিবিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি। বিশ্লেষকরা বলছেন, তার প্রচার বিরোধী দলকে চাঙা করবে। যদিও তাতে মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে তারা বড় কোনো জয় হাসিল করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় আছে।

কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি রাজধানী দিল্লি এবং উত্তরের রাজ্য পাঞ্জাবের ক্ষমতায় আছে। দুইয়ে মিলে লোকসভায় ৫৪৩ আসনের মধ্যে তাদের আসনসংখ্যা মাত্র ২০।

এ ক্ষেত্রে কেজরিওয়াল হয়তো সহমর্মিতাকে কাজে লাগিয়ে কিছু ভোট আদায় করতে পারেন। কিন্তু তা ভোটের ফল উল্টে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে বলেই মনে করেন ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষক রাহুল বর্মা। তবে তারপরও কেজরিওয়াল বিজেপিকে বিব্রত করতে সক্ষম। জেল থেকে বেরোনোর পর জোর প্রচারে নেমে তিনি সরাসরি বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আক্রমণ করে তার এই সক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছেন।

দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কেজরিওয়াল কারাগারে থাকার সময় কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোটের নেতারা দিল্লিতে বিশাল প্রতিবাদ সভা করেছেন। আর এখন কেজরিওয়াল কংগ্রেসের প্রার্থীদের জন্য প্রচার চালাচ্ছেন। এক হাতে কংগ্রেস, অন্য হাতে আম আদমি পার্টির প্রতীক নিয়ে তিনি হরিয়ানায় রোড শো করেছেন। আর কেবল দিল্লি বা হরিয়ানাই নয়, ইতোমধ্যে তিনি উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবেও প্রচার চালিয়েছেন।

আম আদমি পার্টির নেতারা জানিয়েছেন, ঝাড়খন্ড, মহারাষ্ট্র ও বিহার থেকেও ইন্ডিয়া জোটের নেতারা কেজরিওয়ালকে প্রচারে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্টসহ সব আরোহী নিহত

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ১০:৩০ এএম
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্টসহ সব আরোহী নিহত
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও বিধ্বস্ত হেলিকপ্টার। ছবি: সংগৃহীত

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সব আরোহী নিহত হয়েছেন।

সোমবার (২০ মে) ইরানের আধাসরকারি বার্তা সংস্থা মেহর নিউজ অ্যাজেন্সি ও আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মেহর নিউজ বলছে, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানসহ সব যাত্রী ‘শহিদ’ হয়েছেন।

আল-জাজিরা জানায়, ইরানি কর্তৃপক্ষ বলছে, কিছু মরদেহ এমনভাবে পুড়েছে যে, শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

হেলিকপ্টারটিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমাতি এবং একই প্রদেশের ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেমের প্রতিনিধি, প্রেসিডেন্ট গার্ডের প্রধান মেহেদি মুসাভি, হেলিকপ্টারের পাইলট, কো-পাইলট ও ক্রু ছিলেন।

রাইসি এবং তার সঙ্গীরা আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের একটি অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ফিরে আসার সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে।

এর আগে সকালে দুর্ঘটনাস্থলের ছবি দিয়েছে রয়টার্স। তাতে দেখা যাচ্ছে, কুয়াশাঘেরা পাহাড়ের বুকে হেলিকপ্টারটি ভেঙে পড়েছে। এটি আগুনে পুড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হেলিকপ্টারটির কেবিন। 

৬৩ বছর বয়সী রাইসি ২০২১ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ও তার সঙ্গীদের বহনকারী হেলিকপ্টারটি গতকাল রবিবার পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের ভারজাকান ও জোলফা শহরের মাঝামাঝি ডিজমার জঙ্গলে বিধ্বস্ত হয়। এমন সময় এ দুর্ঘটনা ঘটল, যখন গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে।

> ইরানের প্রেসিডেন্টের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই!
> ইরানের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত

অমিয়/

ইরানের প্রেসিডেন্টের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই!

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ১০:০২ এএম
ইরানের প্রেসিডেন্টের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই!
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি ও বিধ্বস্ত হেলিকপ্টার। ছবি: সংগৃহীত

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে সেখানে ‘জীবিত কাউকে এখনও দেখা যায়নি’ বলে জানাচ্ছে ইরানের সংবাদমাধ্যম। ফলে ইরানের প্রেসিডেন্টের বেঁচে থাকার আশা আরও ক্ষীণ হয়ে গেছে।

সোমবার (২০ মে) সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, প্রেসিডেন্ট রাইসি যে হেলিকপ্টারে ছিলেন সেটি পাওয়া গেছে। 

দুর্ঘটনাস্থলের ছবিও দিয়েছে রয়টার্স। তাতে দেখা যাচ্ছে, কুয়াশাঘেরা পাহাড়ের বুকে হেলিকপ্টারটি ভেঙে পড়েছে। এটি আগুনে পুড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হেলিকপ্টারটির কেবিন। হেঁটে দুর্ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।

হেলিকপ্টারটিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ছাড়াও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমতি এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনির মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেম ছিলেন বলে জানা গেছে।

অমিয়/

কাশ্মীরে হামলায় বিজেপি নেতা নিহত, আহত পর্যটক দম্পতি

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ০৮:৫৪ এএম
কাশ্মীরে হামলায় বিজেপি নেতা নিহত, আহত পর্যটক দম্পতি
নিহত বিজেপি নেতা আইজাজ আহমাদ শেখ

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে পৃথক দুটি জঙ্গি হামলায় এক বিজেপি নেতা নিহত ও রাজস্থানের জয়পুর থেকে ঘুরতে যাওয়া এক দম্পতি আহত হয়েছেন।

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে স্থানীয় এক আসনে ভোটগ্রহণের দুই দিন আগে গত শনিবার এসব হামলার ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার (১৮ মে) রাতে প্রথমে পহেলগাঁওয়ে একটি পর্যটক ক্য়াম্পে হামলা চালায় জঙ্গিরা। হামলায় গুরুতর আহত হন জয়পুর থেকে বেড়াতে যাওয়া তাবরেজ এবং তার স্ত্রী ফারহা। এরপর রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ দ্বিতীয় হামলাটি হয় সোপিয়ানে বিজেপি নেতার বাড়িতে। 

জঙ্গিদের গুলিতে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় আইজাজ আহমাদ শেখ নামে ওই বিজেপি নেতার।

ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজ্যের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতি। দলীয় নেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বিজেপি।

ভারতে ছয় সপ্তাহব্যাপী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাত পর্বের এ নির্বাচনে চার পর্বের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে, আরও তিন পর্ব বাকি আছে। আজ পঞ্চম দফার ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৪ জুন ভোট গণনার পর ফলাফল প্রকাশ করা হবে। সূত্র: রয়টার্সের

গৃহযুদ্ধের ১৫ বছর পূর্তিতে তামিলদের স্মরণসভা

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ০৮:৪৫ এএম
গৃহযুদ্ধের ১৫ বছর পূর্তিতে তামিলদের স্মরণসভা
ছবি : সংগৃহীত

শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘু তামিল সম্প্রদায় একটি আবেগঘন স্মরণসভার মাধ্যমে গৃহযুদ্ধ সমাপ্তির ১৫ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে। দেশটির কর্তৃপক্ষের স্মরণসভা বানচালের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও সফলভাবে আয়োজন সম্পন্ন করেছে তারা।

বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী তামিল টাইগার্সকে উদ্দেশ করে এই সভার আয়োজন করা হয়েছে যারা একটি সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক যুদ্ধ করেছিল। কর্তৃপক্ষ এই ধরনের সভাগুলো অবৈধ হিসেবে গণ্য করে বিধায় তারা এদিন পুরোনো স্মৃতিসৌধগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল।

সাবেক যুদ্ধ অঞ্চলগুলো এই ধরনের স্মরণসভাগুলো অনেক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে পণ্ড এবং অংশগ্রহণকারীদের ধরপাকড় করে আসছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কড়া নজরদারি এবং ব্যাপক ভয়ভীতি প্রদর্শন সত্ত্বেও শনিবার সভার আয়োজন করা হয়।

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে ভুক্তভোগীদের স্মরণ করতে এই আয়োজন করা হয় বলে জানায় তামিলরা। 

টাইগার্সদের সর্বশেষ দুর্গে সামরিক হামলার মাধ্যমে ২০০৯ সালে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। 

জাতিসংঘের ধারণামতে, যুদ্ধের শেষ মাসে কমপক্ষে ৪০ হাজার বেসামরিক লোকের প্রাণহানি ঘটে। বেসামরিক লোকদের ওপর নির্বিচারে বোমা হামলার জন্য এই সামরিক অপারেশনটি আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দিত হয়েছিল।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ৪১ বছর বয়সী এক তামিল কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগের দিন এখানে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়, এখানে অসংখ্য আহত মানুষ সাহায্যের জন্য কাঁদছিল, দৃশ্যটি আমাকে সারা জীবন তাড়িত করবে।’ 

‘সম্মিলিত ব্যর্থতা’
কয়েক হাজার তামিল যুদ্ধকবলিত গ্রামগুলোতে সফর করে মৃতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন করে। এই বছর এই স্মরণসভায় অংশ নেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক প্রধান আগনেস ক্যালামার্ড, যিনি এই ধরনের সভায় অংশ নেওয়া সর্বোচ্চ উচ্চপদস্থ বিদেশি। তিনি তামিলদের পর চলা এই নিধনযজ্ঞকে শ্রীলঙ্কান কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করেন। 

এ ছাড়া আল-জাজিরাকে পাঠানো এক মেইল বার্তায় তিনি তিন দশক ধরে চলা এই সশস্ত্র সংঘাতে ভুক্তভোগীদের স্বপক্ষে সুষ্ঠু বিচারের জন্য শ্রীলঙ্কান কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।