ভারতের বন বিভাগের কর্মকর্তা সুরিয়া সেনের মূল দায়িত্ব শহরের চিড়িয়াখানার দেখভাল করা। তবে লোকসভা নির্বাচনের এ সময়টিতে ভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে তাকে। তিনি এখন অনলাইনে ভুল তথ্য সরানোর কাজে নিয়োজিত, খুঁজে বের করছেন বিতর্কিত সব পোস্ট। ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে ভারতের নির্বাচন। এবারের ভোটে অংশ নিচ্ছেন প্রায় শতকোটি ভোটার। পুরো নির্বাচন চলছে সাত দফায়। প্রথম দফা শেষ হয়েছে গত সপ্তাহে। আজ হবে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ। এসবের মধ্যেই অনলাইনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ভুল তথ্য। এসব ভুল তথ্য থেকে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের কোনো তাণ্ডব। ফলে তা ঠেকাতে পুরো ভারতেই কাজ করছেন সুরিয়া সেনের মতো অনেকে। তারা একদম ঘড়ি ধরে নজর রাখছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
সেন বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যম ভুল তথ্য ছড়ানোর মূল একটি উৎস।’ সেন মোট দুটি দল নিয়ে কাজ করছেন। এর একটি হলো- বাহ্যিক এক সংস্থা। সে সংস্থায় আরও ৩০ জনের মতো রয়েছেন। তারা ভুল তথ্য নির্ণয়ে ব্যবহার করছেন কিওয়ার্ড ট্র্যাকিং সফটওয়্যার। এগুলো দিয়ে পরিচিত প্রভাবক বা ইনফ্লুয়েন্সারদের ওপরও নজর রাখছেন তারা।
অন্যদিকে সেনের সঙ্গে রয়েছে ৪০ সদস্যের একটি দল। তারা রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক পোস্ট খতিয়ে দেখছে। কোনো বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বা ভুয়া খবর নির্বাচনি নীতিমালা লঙ্ঘন করছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ব্যস্ত সময় পার করছে ওই দলটি।
গত সপ্তাহেই দুজন খ্যাতনামা বলিউড তারকার ডিপফেক ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল। সে ভুয়া ভিডিওতে তাদেরকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি দুই তারকাকে দেখা গেছে জনসাধারণের উদ্দেশে কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাতেও। ভিডিও দুটি ভাইরাল হয়ে যায়। মোট পাঁচ লাখের মতো ভিউ পেয়েছিল সেগুলো।
ভিডিওগুলোকে পুরোপুরিভাবে মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি। এখনো অনলাইনে আছে ওই ডিপফেক ভিডিও। সেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেখান যে তার হোয়াটসঅ্যাপে ক্রমাগত মেসেজ আসছে। কোন কোন ধরনের কনটেন্ট বিঘ্ন ঘটাতে পারে, সেগুলোর ব্যাপারে অবহিত করা হচ্ছে তাকে। বাহ্যিক যে সংস্থার সঙ্গে সেন কাজ করছেন, সেটির নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
সেন বলেন, ‘এ কাজ আমাদের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের ওই দক্ষতা ও সম্পদ নেই। এটি অত্যন্ত কঠিন কাজ।’ সন্দেহজনক পোস্টের ব্যাপারে তারা জ্যেষ্ঠ নির্বাচনি কর্মকর্তাকে অবহিত করেন এবং পরে সেসব কনটেন্ট সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ফেসবুক ও এক্সের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত শুধু কর্ণাটকেই এ রকম ৩৬টি কনটেন্ট পাওয়া গেছে।
২০১৯ সালের তুলনায় ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। এখন প্রায় ৮২ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে দেশটিতে।
ভারতের উত্তরপ্রদেশেও সেনের কার্যালয়ের মতো একটি দপ্তর দেখেছে রয়টার্স। সেখানেও দুজন ব্যক্তিকে ল্যাপটপ নিয়ে অনলাইন পোস্ট ট্র্যাক করতে দেখা গেছে। উত্তরপ্রদেশ ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য। ফলে সেখানে ভোটারও বেশি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে রাজ্যের নির্বাচন কমিশনকে ট্যাগ করে যত পোস্ট করা হচ্ছে, সেগুলোর সবই খতিয়ে দেখতে দেখা গেছে তাদেরকে। প্রতি ২০ মিনিটে কি-ওয়ার্ড সার্চ চালানো এবং গুগল ইমেজের মতো টুল ব্যবহার করে যাচাই করার মতো কাজও করছিলেন তারা। এ রকমই একজন হর্ষ বর্ধন সিং বলেন, ‘আমাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ বা বিশেষ সফটওয়্যার দেওয়া হয়নি। আমরা প্রতিটি পোস্টে নজর রাখছি।’ সূত্র: রয়টার্স