‘আমার এ ঘটনা সত্য বলে মনে হচ্ছিল না।’ অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের ২২ বছর বয়সী ছাত্রী আলিশবা জাভাইদ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে এভাবেই মুহূর্তটির বর্ণনা করছিলেন, যখন ৩০ জন রাজ্য পুলিশ ক্যাম্পাসের ভেতরে হাঁটছিলেন। ঘটনাটি ২৪ এপ্রিলের, সে সময় গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন করে জাভাইদ ও তার কয়েক শ সহপাঠী ৯৪ মিটার লম্বা চুনাপাথরের টাওয়ারের ছায়ায় অবস্থান করছিলেন।
আন্দোলনকারীরা আশা করছিলেন, তাদের ইউনিভার্সিটি হয়তো ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। কিন্তু বাস্তবে এমনটি হয়নি। এর পরিবর্তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ক্যাম্পাসে উপস্থিত হতে শুরু করেন। পরে জানা যায়, ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষই পুলিশকে ক্যাম্পাসে আসতে বলে। একই সঙ্গে তারা আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় অ্যাম্বুলেন্সকেও খবর দেয়।
পরে জাভাইদ জানান, তার গণনায় কমপক্ষে ৫০ জন পুলিশ কর্মকর্তা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঘিরে অবস্থান নেন। সবাই দাঙ্গা পুলিশের পোশাক পরা ছিলেন। প্রতিবাদটি শান্তিপূর্ণ হওয়ার পরও পুলিশের আচরণ ছিল মারমুখী। তারা ছাত্রদের দিকে অগ্রসর হওয়া অব্যাহত রাখে।
জাভাইদ জানান, তাদের অগ্রযাত্রা দেখে এই প্রথম তিনি ভয় পান।
এরপর পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা শুরু করেন। এ সময় অনেকেই আহত হন। কয়েক ডজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরানো সম্ভব হয়নি। পরে ২৯ এপ্রিল পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পিপার স্প্রেও ছোড়ে।
পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের ফুটেজ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে, যা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদের চিত্রের সঙ্গে মিলে যায়। গতকালও টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত ছিল।
টেক্সাসের ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, সেখানকার ক্ষমতায় অতি-ডানপন্থি রাজ্য সরকার। যারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে সীমিত করতে চেয়েছিল। কারণ ২০১৭ সালে গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট এমন এক আইনে স্বাক্ষর করেছিলেন, যা ইসরায়েলকে বয়কট করে এমন কোম্পানির সঙ্গে সরকারি সংস্থার কাজ করা নিষিদ্ধ করে। তারা সেই আইনটিকে আরও কঠোর করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
অ্যাবট বর্তমান বিক্ষোভকেও ইহুদিবিরোধী ও ঘৃণায় পূর্ণ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তবে টেক্সাসের আন্দোলনরত ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গাজা ইস্যু ছাড়াও তাদের ক্যাম্পাসে জাতিবিদ্বেষ (জেনোফোবিক) রয়েছে। টেক্সাস ইউনিভার্সিটির মুসলিম শিক্ষার্থী ফারুকির মতে, টেক্সাসে সংখ্যালঘুদের দমনের জন্য সংঘাত নতুন কিছু নয়। গাজার ইস্যুটি কেবল এ বিষয়টিকে আবারও সামনে এনেছে। সূত্র: আল-জাজিরা