ঢাকা ৭ ফাল্গুন ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১

বাংলাদেশে কৃষি ব্যবস্থাপনায় বড় চ্যালেঞ্জ আগাছা

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৩২ পিএম
বাংলাদেশে কৃষি ব্যবস্থাপনায় বড় চ্যালেঞ্জ আগাছা
কৃষিবিদ ড. আসাদুজ্জামান আসাদ আগাছ পর্যবেক্ষণ করছেন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থাপনায় ফসলের আগাছা নিরোধ একটি বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। আধুনিক উন্নত বিশ্ব এ চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করছে ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় কী? এসব প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানে খবরের কাগজ আগাছা ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বিশিষ্ট গবেষক ও অস্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টুয়ার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কৃষিবিদ ড. আসাদুজ্জামান আসাদের মুখোমুখি হয়েছে।

ড. আসাদ আপনি অস্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টুয়ার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন এবং আগাছা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গবেষণা করছেন। আগাছা সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।

যে গাছগুলো ফসল নয় কিন্তু ফসলের জমিতে জন্মে ফসলের ক্ষতি করে সেগুলোকে আগাছা বলে। এগুলো জমি থেকে ফসলের পুষ্টিগুণ শোষণ করে ফসলের উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। আমাদের দেশের কৃষি ব্যবস্থাপনায় কৃষকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রথাগত পদ্ধতি অর্থাৎ হাত দিয়ে আগাছা তুলে থাকেন। তবে বর্তমানে শ্রমিক মজুরি বেশি হওয়ায় এ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। তাই কৃষকরা আগাছা দমনে বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করেন।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকায় কৃষকরা কেমিক্যালগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন না। এতে করে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়, যা ফসল উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ও পরিবেশের ক্ষতি করে। আসলে আগাছা এমনভাবে ফসল বা ফসলের জমির ক্ষতি করে, যা খালি চোখে দেখা যায় না বা এর ক্ষতির মাত্রা উপলব্ধি করা যায় না। তাই আধুনিক উন্নত বিশ্ব এই আগাছাকে ফসলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে সরকার, কৃষক ও গবেষকের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আগাছা দমন করে থাকে।

ফসলের আগাছা দমন বিষয়ে উন্নত বিশ্ব বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া কোন ধরনের ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করে থাকে? সে বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা যদি শেয়ার করেন-

উন্নত বিশ্বের একটি দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণানির্ভর কৃষি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছে। দেশটির সমগ্র কৃষি ব্যবস্থাপনা একটা উন্নত সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। একজন সাধারণ কৃষকও এই সিস্টেম অনুসরণ করেন। যেমন সেখানকার প্রত্যেক কৃষক প্রতি বছর তাদের জমিতে কোন ধরনের আগাছা হয় তার একটা নিজস্ব রেকর্ড রাখেন। শুধু তাই নয়, তারা প্রতি বছর কোন জমিতে কী পরিমাণ কেমিক্যাল, কোন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করেছেন তার একটা রেকর্ড রাখেন। এই তথ্যগুলো তারা সরকারের কেন্দ্রীয় ডেটাবেজে শেয়ার করেন। তার ওপর ভিত্তি করে সরকার অনেকগুলো পলিসি ডেভেলপ করে। অর্থাৎ কোন কেমিক্যাল তাদের জমির জন্য উপকারী বা সঠিকভাবে কাজ করছে না- এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে সরকার বিদেশ থেকে কেমিক্যাল আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপের কিছু দেশ এখন আগাছা দমনের ক্ষেত্রে শুধু কেমিক্যালের ওপর নির্ভরশীল না। কারণ কেমিক্যালের একটা খারাপ দিকও আছে। সেটা হচ্ছে আগাছার ভেতরে প্রতিরোধ তৈরি হওয়া, যেটাকে আমরা টেকনিক্যালি বলি হার্বিসাইড রেজিস্ট্যান্স গ্রো করা। এতে করে আগাছাকে আর কেমিক্যাল দিয়ে প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এজন্য কেমিক্যাল একমাত্র সমাধান নয়। এ কারণে তারা মাল্টিপল সলিউশন নিয়ে কাজ করে। যেমন- ক্রপ রোটেশন করে। অর্থাৎ এক বছরে একটা ফসল চাষ করার পরের বছর একই জমিতে অন্য একটা ফসল চাষ করা। এ ছাড়া তারা কিছু উন্নত টেকনোলজি ব্যবহার করা শুরু করেছে। যেমন ফার্মে তারা ড্রোন ব্যবহার করেন। ড্রোন দিয়ে তারা আগাছার অবস্থান ম্যাপ করে নিয়ে আসেন। তারপর সেই ম্যাপ অনুযায়ী যেখানে আগাছা আছে, ঠিক সেখানেই কেমিক্যাল স্প্রে করেন। এতে করে পুরো জমিতে কেমিক্যাল স্প্রে করতে হয় না। কেমিক্যালেরও খরচ অনেক কমে যায়, যা উৎপাদন খরচ কমায়। একই সঙ্গে উৎপাদন বেড়ে যায়। 

শুধু তাই নয় উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগাছার বিষয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য একটা নির্দিষ্ট বিভাগ থাকে। আমি আমেরিকাতে দেখেছি ওখানে আগাছার জন্য নির্দিষ্ট স্কুল বা বিভাগ আছে। অস্ট্রেলিয়াতেও আছে। তবে বাংলাদেশে এরকম কোনো বিভাগ নাই। উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কৃষিতত্ত্ব নামে একটা বিভাগ থাকে। তার অধীনে আগাছা বিষয়ে শিক্ষাদান করা হয় বা গবেষণা করা হয়। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া বা ডেভেলপ কান্ট্রিতে প্রচুর বিনিয়োগ করা হয় আগাছার বিষয়ে গবেষণার জন্য। তারা ছাত্রদের, শিক্ষকদের ও এক্সটেনশন অফিসারদের আগাছা বিষয়ে গবেষণা এবং প্রচার চালানোর জন্য উৎসাহিত করে।

অস্ট্রেলিয়াতে আমি দেখেছি প্রত্যেকটি কাউন্সিল বা পৌরসভায় একজন করে উইড অফিসার বা আগাছাবিষয়ক অফিসার থাকেন। তার কাজ হচ্ছে শহরের রাস্তার পাশে জন্মানো আগাছাগুলোকে সঠিক সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা। এ ক্ষেত্রে সরকার থেকে প্রচুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কৃষকরাও এতে সহযোগিতা করেন। মজার বিষয় হচ্ছে, নতুন কোনো আগাছা যদি কোনো মাঠে বা রাস্তাঘাটে দেখা যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তারা নিকটবর্তী যে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস আছে, সেখানে তারা রিপোর্ট করেন। তারা সেটার রেকর্ড রাখে ও এটা তাদের ডেটাবেজে যুক্ত করেন, যেন ভবিষ্যতে এটি নিয়ে তারা গবেষণা বা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এটা নিয়ে তারা কাজ করতে পারেন। 

এই ডেটাবেজগুলো কৃষি উন্নয়নে বা সরকারের পলিসি গ্রহণে কীভাবে কাজ করে?

এক্ষেত্রে ডেটাবেজের একটা সেন্ট্রাল হাব আছে। সেই হাবের ভেতরে অনেকগুলো উপাদান থাকে। সেখানে সরকারের পলিসি, কৃষকের অভিজ্ঞতা ও ব্যক্তিগত ডেটা শেয়ার করা হয়। এ ছাড়া এই হাবে স্টেট গভর্নমেন্টের কিছু বিনিয়োগ থাকে, রিসার্চ থাকে ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কাজ করে। যেখানে ছাত্ররা গবেষণা করে, সেই তথ্যগুলো সেখানে থাকে। এর মানে একটা হাবের অধীনে সব তথ্য একটার সঙ্গে একটা যুক্ত থাকে। এতে করে সরকারে পক্ষ থেকে কোন পলিসি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে খুব সহজ হয়। কোন পলিসির পরিবতর্ন হলে সেই পরিবতর্ন দ্রুত কৃষকের কাছে পৌঁছে যায়। যদি কোনো কৃষক লক্ষ করে, সে গত ১০ বছর ধরে আগাছা দমন করার জন্য একটা কেমিক্যাল ব্যবহার করছে। কিন্তু দেখা গেল কোনো একটা আগাছাকে কেমিক্যাল দিয়ে দমন করা যাচ্ছে না। তখন সে সেটা তার নিকটবর্তী কৃষি অফিসারকে রিপোর্ট করে। তখন এই রিপোর্টটা ধীরে ধীরে উপর লেভেলে চলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ বিষয়ে গবেষণা শুরু হয় ও একটা সময় সরকারে কাছে পৌঁছে যায়। তখন সরকার ওই নির্দিষ্ট কেমিক্যালটা আমদানি করবে কি না, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে। তারপর তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পলিসি বাস্তবায়ন করে।

ড. আসাদ আপনি বাংলাদেশের সন্তান। আপনি বাংলাদেশের শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। এখানে অনেক দিন কাজ করেছেন। এই আগাছা ব্যবস্থাপনায় উন্নত বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশে কৃষি ব্যবস্থাপনার মধ্যে আপনি কোন ধরনের পার্থক্য প্রত্যক্ষ করেন?

সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের দেশে আগাছাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আমাদের দেশে ফসলের রোগ বা পোকামাকড়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্দিষ্ট বিভাগ রয়েছে। আমি কৃষিতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ছিলাম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে ওই বিভাগের অধীনে একটা অংশ হিসেবে আগাছা ব্যবস্থাপনা পড়ানো হয়। কিন্তু ফসল উৎপাদনে আগাছার গুরুত্ব অনেক বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে আগাছার আক্রমণের কারণে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ফসলের ফলন কমে যায়। যেটা একটা পোকার আক্রমণের চেয়েও বেশি বা রোগের আক্রমণের চেয়েও বেশি। তবে গুরুত্ব কম দেওয়া হচ্ছে আগাছা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে।

দ্বিতীয় যে প্রশ্নটা আসে, আমাদের দেশে কৃষকরা আগাছা দমনের জন্য সঠিক তথ্য পান না। তারা অধিকাংশ ক্ষেত্র প্রথাগত পদ্ধতি তথা হাত দিয়ে বা ম্যানুয়ালি আগাছা দমন করেন। এটার অনেকগুলো সুবিধা ও অসুবিধা আছে। সুবিধাগুলো হচ্ছে, এতে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। যেটা ভালো। অসুবিধা হচ্ছে এটা অনেক মজুরি খরচ বাড়ায়। আমাদের দেশে এখন শ্রমিক পাওয়া যায় না। এটা একটা বড় সমস্যা। তাই অনেক সময় তারা সঠিক সময়ে আগাছা দমন করতে পারেন না। আবার কিছু ক্ষেত্রে আগাছা দমনের জন্য যে কেমিক্যাল তারা ব্যবহার করেন, তার সঠিক ব্যবহার তারা জানেন না। আগাছা দমনের ক্ষেত্রে শুধু কয়েকটি কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। আমি নিজেই গবেষণা করছি, যদি কোনো ফসলের জমিতে একই কেমিক্যাল কয়েক বছর ব্যবহার করা হয় তাহলে আগাছার মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় বা রেজিস্ট্যান্স গ্রো করে।

এটা আসলেই খারাপ একটা বিষয়। আরেকটা বিষয় হলো আমাদের দেশে কেমিক্যালের ব্ল্যাক মার্কেট আছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন দেশ থেকে কেমিক্যাল আমদানি করেন। আমাদের দেশের কৃষকরা কিছুটা অসহায় বা কিছুটা হলেও অসচেতন হওয়ায় তাদের কাছে এই কেমিক্যালগুলো বিক্রি করে। তারা কৃষককে পরামর্শ দেয়, তুমি এটা নিয়ে যাও। এই পরিমাণ তুমি স্প্রে করে দাও। আমাদের সহজ-সরল কৃষক সেটাই করেন। তবে সেটা আসলে সঠিক কি না, সেটা তারা জানের না। কারণ, কেমিক্যালের পরিমাণ নির্ভর করে ফসলের আগাছা কী অবস্থায় আছে ও কোন গ্রোথ স্টেজে আছে তার ওপর। অর্থাৎ একটা অনুমাননির্ভর পদ্ধতির মধ্য দিয়ে তারা এই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এতে করে আমরা হয় খুব বেশি কেমিক্যাল ব্যবহার করি, আর না হয় খুবই কম। দুটোরই অসুবিধা রয়েছে। খুব বেশি বা কম কেমিক্যাল ব্যবহার করলে দীর্ঘ সময় পর ওই আগাছা রেজিস্ট্যান্স গ্রো করে। ফসলের জমিতে মাইক্রো অর্গানিজম থাকে, বেশি কেমিক্যাল ব্যবহারে উপকারী মাইক্রো অর্গানিজমের ওপর একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। 

বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনায় আগাছা দমনে গবেষণা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?

আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগাছা বিষয়ে গবেষণা বাড়ানো উচিত। এ বিষয়ে আমি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের চার্লস স্টুয়ার্ট ইউনিভার্সিটি এ বিষয়ে সাহায্য করার জন্য খুবই পজিটিভ। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তারা এ বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করতে চায়। আমাদের এবিষয়ে বিশেষজ্ঞ আছেন। বাংলাদেশ যদি চায় সেগুলো ব্যবহার করতে পারে এবং একটা হাব তৈরি করতে পারে। এই হাবের মাধ্যমে কৃষকদের জন্য ডিজিটাল ডেটাবেজ তৈরি করা যায়। সেখানে প্রশিক্ষণের একটা ব্যবস্থা থাকতে পারে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিকুলামে একটু আপগ্রেড করা প্রয়োজন। দেশের প্রতিটি  কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত একটি করে হার্বিসাইড রেজিস্ট্যান্ট টেস্টিং সেন্টার তৈরি ও মনিটর করা উচিত। সরকারের পলিসিতে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসা উচিত। যেমন কেমিক্যাল আমদানির ক্ষেত্রে সরকারে নজর দেওয়া উচিত।

আমাদের দেশে আধুনিক পদ্ধতিতে আগাছা নিরোধ করার জন্য অস্ট্রেলিয়ার ক্রোফড ফান্ড থেকে একটি প্রকল্প নিয়ে এসেছেন। এ বিষয়ে যদি কিছু বলতেন?

আধুনিক পদ্ধতিতে আগাছা দমন করার জন্য অস্ট্রেলিয়ার কৃষি গবেষণাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্রোফড ফান্ডের একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঠাকুরগাঁও শহরে ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হবে। এই ওয়ার্কশপে আমার সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন আরও তিনজন অস্ট্রেলিয়ান গবেষক যারা গত বুধবার বাংলাদেশে এসেছেন। আমি লিড ফ্যাসিলেটর হিসেবে কাজ করছি এই প্রজেক্টে। আগাছা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জড়িত কৃষক, কৃষি কেমিক্যাল আমদানিকারক ডিলার, কৃষি অফিসার, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের নিয়ে এসব ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে আমরা একটা সচেতনতা তৈরি করতে চাই। বিশেষ করে, কৃষকরা যেন সঠিক জ্ঞান পান। তারা যেন সঠিকভাবে ও সময়মতো কেমিক্যাল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া সময়মতো আগাছা দমন করতে পারেন। দিনশেষে যেন তারা বেশি উপকৃত হয় আগাছা দমনের মাধ্যমে, সে বিষয়টিকে ওয়ার্কশপে গুরুত্ব দেওয়া হবে। 

আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে কৃষি ব্যবস্থাপনায় আগাছা দমনে অস্ট্রেলিয়ার সেন্ট্রাল হাবের কথা বলছিলেন। বাংলাদেশে কি এ ধরনের কোনো হাব নির্মাণ করা সম্ভব? যেখানে তথ্য, তত্ত্ব ও অভিজ্ঞতার বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেশে একটি আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যাবে?

আমি অস্ট্রেলিয়াতে থাকা অবস্থায় দুটি ফান্ডিং বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, যারা ডেভেলপিং কান্ট্রিতে গবেষণার জন্য বিশেষ করে এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে গবেষণার জন্য ফান্ডিং করে থাকে। তারা বলেছে, যদি বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় আগ্রহী হয় তাহলে তারা বাংলাদেশেও ফান্ডিং করতে আগ্রহী আছেন। সেক্ষেত্রে তারা একটা বড় অ্যামাউন্ট কন্ট্রিবিউশন করতে চায় দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার জন্য। কিন্তু অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারকেও সে ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। হয়তো একটা নির্দিষ্ট অংশ বাংলাদেশ সরকার বা কৃষি মন্ত্রণালয়কে বিনিয়োগ করতে হবে।

সে ক্ষেত্রে সাধারণত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ অর্থ ফান্ডিং বোর্ডই করে থাকে। বাকি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ইন কান্ট্রি বা যে দেশ এ ধরনের হাব তৈরি করতে চায় তাদের দিতে হয়। আমি একটা উদাহরণ দিতে পারি- আমরা সম্প্রতি লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ায় এরকম একটা হাব তৈরি করার জন্য কাজ করছি। তাদের সরকার স্বেচ্ছায় ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে চায়। আমরা অস্ট্রেলিয়ান ফাউন্ডিং বডিকে বলেছি, তারা যেন ৭০ শতাংশ বিনিয়োগ করে। যদি করে, তাহলে আমরা সেখানে এই প্রজেক্টটি চালু করব। যেহেতু আমি জানি, বাংলাদেশে আগাছা দমন অনেক সমস্যা রয়েছে। তাই এখানে অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

/আবরার জাহিন

আজ থেকে আকাশে দেখা যাবে মহাজাগতিক দৃশ্যের মেলা

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪৫ পিএম
আজ থেকে আকাশে দেখা যাবে মহাজাগতিক দৃশ্যের মেলা
আকাশ তুলনামূলক পরিষ্কার থাকায় নক্ষত্রপুঞ্জ, গ্রহ ও অন্যান্য মহাজাগতিক ঘটনা সহজে পর্যবেক্ষণ করা যায়। ছবি: সংগৃহীত

ফেব্রুয়ারি মাসের রাতের আকাশ মহাজাগতিক নানা চমক নিয়ে হাজির হয়েছে। এ সময় আকাশ তুলনামূলক পরিষ্কার থাকায় নক্ষত্রপুঞ্জ, গ্রহ ও অন্যান্য মহাজাগতিক ঘটনা সহজে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। চলতি সপ্তাহে আকাশে কী কী দেখা যাবে, তা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।

১৫ ফেব্রুয়ারি: গ্রহের মেলা 
আজ সন্ধ্যায় আকাশে একসঙ্গে বুধ, শুক্র, মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহ দেখা যাবে। সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত বুধ গ্রহ দৃশ্যমান থাকবে, যদিও এটি স্বল্প সময়ের জন্য দেখা যাবে। শুক্র গ্রহ দেখা যাবে রাত ৮টা ৪৮ মিনিট পর্যন্ত, আর মঙ্গল গ্রহ ভোর ৪টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। বৃহস্পতি গ্রহ সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১টা ৩৭ মিনিট পর্যন্ত আকাশে থাকবে। আজ আকাশে ক্যাসিওপিয়া নামের তারকাপুঞ্জও দেখা যাবে। তবে শনি, নেপচুন ও ইউরেনাস গ্রহ দেখতে বেশ কষ্ট হবে।

১৬ ফেব্রুয়ারি: শুক্র, মঙ্গল ও বৃহস্পতি 
এদিন সন্ধ্যার পর শুক্র, মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহ একসঙ্গে দেখা যাবে। সন্ধ্যার পর থেকে শুক্র গ্রহ স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। গ্রহ তিনটি সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দেখা যাবে। তবে শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহ পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হবে। যারা টেলিস্কোপ বা বাইনোকুলার ব্যবহার করবেন, তারা ক্যামেলোপারডালিস তারকাপুঞ্জও দেখতে পারবেন। 

১৭ ফেব্রুয়ারি: উজ্জ্বল শুক্র গ্রহ 
শুক্র গ্রহ এই দিনে ২৫ শতাংশ বেশি উজ্জ্বল দেখা যাবে অন্যান্য দিনের তুলনায়। দৃশ্যত গ্রহটির আপাত ব্যাস বর্তমানে ৪০ আর্ক সেকেন্ড। আকাশে খুব ছোট কোণ পরিমাপ করতে জ্যোতির্বিদ্যায় একক হিসেবে আর্ক সেকেন্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দিনের বেলায় ভার্গো তারকামণ্ডলের স্পিকা তারার কাছাকাছি থাকবে চাঁদ, যদিও দিনের আলোয় তা দেখা সম্ভব হবে না। 

১৮ ফেব্রুয়ারি: চাঁদের দূরত্ব 
এই দিনে চাঁদ পৃথিবী থেকে ৪ লাখ ৪ হাজার ৮৮২ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করবে, যা মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ দূরত্ব। পাশাপাশি শুক্র, মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহও মধ্যরাত পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যাবে। 

২০ ফেব্রুয়ারি: তারকাসংঘ 
রাত ১১টার দিকে ক্যানসার তারকামণ্ডলের এম৪৪ নামের তারকাসংঘ দেখা যাবে। সাধারণ বাইনোকুলার দিয়ে এটি পর্যবেক্ষণ করা যাবে। এদিন সন্ধ্যা ৬টা ৩৬ মিনিটে বৃহস্পতি গ্রহ সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল থাকবে। 

২১ ফেব্রুয়ারি: রাতের আকাশে মঙ্গল 
এই দিনে চাঁদ থাকবে বৃহৎ লাল তারা অ্যান্টারেসের কাছে, যদিও এটি দিনের বেলায় দেখা সম্ভব হবে না। তবে রাত ৯টা ৭ মিনিটে মঙ্গল গ্রহ আকাশের মাঝখানে অবস্থান নেবে, যা স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। 

এই মহাজাগতিক দৃশ্যগুলো খালি চোখে বা টেলিস্কোপের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। তবে আকাশ পরিষ্কার থাকলে এসব দৃশ্য স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। সূত্র: বিবিসি স্কাই অ্যাট নাইট ম্যাগাজিন ও স্কাই ম্যাপস।

/আবরার জাহিন

দা ভিঞ্চি ও মন্দ্রিয়ানের শিল্পকর্মে লুকানো গাণিতিক রহস্য

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৫ এএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩০ পিএম
দা ভিঞ্চি ও মন্দ্রিয়ানের শিল্পকর্মে লুকানো গাণিতিক রহস্য
ভারতের আহমেদাবাদে ১৬ শতকে নির্মিত সিদি সাইয়্যেদ মসজিদে শিল্পকর্ম। ছবি: সংগৃহীত

বিখ্যাত চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ও পিট মন্দ্রিয়ানের আঁকা গাছের ছবিতে প্রকৃতির স্বাভাবিক শাখা-প্রশাখার বিন্যাসে গাণিতিক নিয়ম লুকিয়ে আছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষকরা বলছেন, এই গোপন গাণিতিক বিন্যাস আমাদের শিল্পকর্মে গাছ চেনার সক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। গবেষণাটি সম্প্রতি ‘পিএনএএস নেক্সাস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।  

প্রকৃতির ফ্র্যাক্টাল বিন্যাস  
গাছের শাখা-প্রশাখা বিস্তারে একটি স্বাভাবিক বিন্যাস অনুসরণ করে, যাকে ‘ফ্র্যাক্টাল’ বলা হয়। এতে গাছের গঠন ছোট থেকে বড় আকারে একই ধরনের বিন্যাসে বারবার পুনরাবৃত্তি হয়। 

নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা গাছের চিত্রকর্ম বিশ্লেষণ করে শাখার পুরুত্বের মাত্রা গাণিতিকভাবে পরীক্ষা করেছেন। তারা শাখা-প্রশাখার ব্যাসের মধ্যে অনুপাত ও বিভিন্ন ব্যাসের শাখার আনুমানিক সংখ্যা নির্ধারণের জন্য গাণিতিক নিয়ম তৈরি করেছেন।

গবেষকরা জানিয়েছেন, ‘আমরা গাছের চিত্রকে ফ্র্যাক্টাল কাঠামো হিসেবে বিশ্লেষণ করেছি এবং চিত্রকলার সঙ্গে জীববিজ্ঞানের শাখার গঠনসংক্রান্ত তত্ত্ব তুলনা করেছি।’  

লিওনার্দো দা ভিঞ্চির গাছের স্কেচ এই নীতিটি তুলে ধরে যে, গাছের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্মিলিত পুরুত্ব একই থাকে। ছবি: সংগৃহীত

দা ভিঞ্চির পর্যবেক্ষণ  
ইতালীয় চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি লক্ষ্য করেছিলেন যে, গাছের শাখাগুলো যখন বিস্তৃত হয়, তখন তাদের সম্মিলিত পুরুত্ব মোটামুটি একই থাকে।  তিনি ‘α (আলফা)’ নামের একটি গাণিতিক প্যারামিটার ব্যবহার করে বিভিন্ন শাখার ব্যাসের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করতেন। তিনি দেখিয়েছিলেন, যদি কোনো শাখার সামগ্রিক পুরুত্ব তার দুটি ছোট শাখার পুরুত্বের সমান হয়, তা হলে প্যারামিটার আলফার মান ২ হবে।
 
গবেষকরা ভারতের আহমেদাবাদের ১৬ শতকের সিদি সাইয়্যেদ মসজিদ, এডো যুগের জাপানি চিত্রকর্ম এবং ২০ শতকের বিমূর্ত শিল্পসহ বিশ্বের বিভিন্ন অংশের শিল্পকর্মে গাছ বিশ্লেষণ করেছেন। তারা দেখেছেন, এই শিল্পকর্মগুলোতে আলফার মান ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৮ পর্যন্ত, যা প্রকৃত গাছের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। 

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ‘আমরা ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৮-এর মধ্যে আলফার মান খুঁজে পাই, যা প্রাকৃতিক গাছের সীমার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’

পিট মন্দ্রিয়ানের ১৯১২ সালের ‘গ্রে ট্রি’ এর বিমূর্ত চিত্রকর্ম

বিমূর্ত শিল্পেও প্রভাব  
গবেষকরা জানিয়েছেন, পিট মন্দ্রিয়ানের ১৯১২ সালের ‘গ্রে ট্রি’-এর মতো বিমূর্ত চিত্রকর্মে দৃশ্যত গাছের মতো রঙ দেখায় না। যদি আলফার বাস্তবসম্মত মান ব্যবহার করা হয়, তবে গাছ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। 

গবেষকরা বলেন, ‘যদি আলফার মান প্রকৃত গাছের মতো হয়, তবে বিমূর্ত চিত্রকর্মেও গাছ চিনতে পারা যায়। তবে একই চিত্রকর্মে আলফার মান পরিবর্তন করলে এটি আর গাছ বলে বোঝা যায় না।’  

শিল্প ও বিজ্ঞানের সংযোগ  
গবেষকরা মনে করেন, এই গবেষণা গাছের সৌন্দর্য উপলব্ধি ও পুনর্গঠনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনে দেয়। এটি তুলে ধরে শিল্প ও বিজ্ঞান উভয়ই প্রাকৃতিক এবং মানবজগৎ সম্পর্কে পরিপূরক দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারে।

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা গ্রহাণু আছড়ে পড়তে পারে চাঁদে

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:১০ এএম
পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা গ্রহাণু আছড়ে পড়তে পারে চাঁদে
পৃথিবীকে পাশ কাটিয়ে চাঁদে আঘাত হানতে পারে ‘২০২৪ ওয়াইআর৪’ নামের গ্রহাণু। ছবি: সংগৃহীত

একটি বিশাল গ্রহাণু ২০৩২ সালে পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল, তবে সেটি হয়তো পৃথিবীকে পাশ কাটিয়ে চাঁদে আঘাত হানতে পারে বলে নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে। 

নাসার সেন্টার ফর নিয়ার আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজ (সিএনইওএস)-এর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ‘২০২৪ ওয়াইআর৪’ নামের গ্রহাণুটি ২০৩২ সালে পৃথিবীতে আঘাত হানার আশঙ্কা ১ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে। তবে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডেভিড র‍্যাঙ্কিনের নতুন হিসাব অনুযায়ী, ৯০ মিটার প্রশস্ত এই গ্রহাণুটির চাঁদে আঘাত হানার ০ দশমিক ৩ শতাংশ আশঙ্কা রয়েছে।

চাঁদে বায়ুমণ্ডল না থাকায় সেখানে গ্রহাণু আঘাত করলে কয়েকশ মিটার চওড়া গর্ত তৈরি এবং মহাকাশে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, যদি ২০২৪ ওয়াইআর৪ গ্রহাণুটি চাঁদে আঘাত হানে, তবে কিছু ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারে। এটি বড় কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না বলে মনে করেন গবেষক ডেভিড র‍্যাঙ্কিন। তিনি নিউ সায়েন্টিস্টকে বলেন, ‘এতে কিছু উপাদান পৃথিবীর দিকে ফিরে আসতে পারে, তবে তা গুরুতর কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে বলে মনে হয় না।’

প্রথমবার ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর শনাক্ত হওয়া এই গ্রহাণুর কক্ষপথ নিয়ে এখনো কিছু অনিশ্চয়তা রয়েছে। নাসা বলছে, অতীতেও এমন অনেক গ্রহাণু ছিল, যেগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে পর্যবেক্ষণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো খুব একটা ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে জানা গেছে ।  

নাসা জানিয়েছে, ‘নতুন তথ্যের ভিত্তিতে এই গ্রহাণুর ঝুঁকি সূচক শূন্যতে নেমে আসতে পারে।’

বিশ্বের বিভিন্ন মহাকাশ সংস্থা ‘সিটি-কিলার’ গ্রহাণুর হুমকি মোকাবিলার উপায় নিয়ে গবেষণা করছে। এর মধ্যে রয়েছে মহাকাশযানকে সরাসরি গ্রহাণুর ওপর আছড়ে ফেলা বা পরমাণু বিস্ফোরণের মাধ্যমে এর গতিপথ পরিবর্তনের মতো পদ্ধতি।  

সম্প্রতি চীনও এই প্রচেষ্টায় যোগ দিয়েছে। চীনের সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট সম্প্রতি জানিয়েছে, দেশটি মহাকাশ প্রকৌশল গবেষণার জন্য একাধিক পদে লোকবল নিয়োগ দিচ্ছে। চীনের ন্যাশনাল স্পেস সায়েন্স সেন্টারের গবেষক লি মিংতাও বলেন, ‘আমাদের গ্রহাণু প্রতিরক্ষায় নিবেদিত বিশেষজ্ঞ দল গড়ে তুলতে হবে এবং পৃথিবী রক্ষায় চীনের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও সক্ষমতা কাজে লাগাতে হবে।’  

২০২৩ সালে চীন একটি গ্রহাণু পর্যবেক্ষণ ও মহাকাশযান দিয়ে সেটির গতিপথ পরিবর্তনের ধারণাগত পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল। ২০৩০ সালের দিকে এই মিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে তাদের।  

২০২৪ ওয়াইআর৪ গ্রহাণুটি ২০২৮ সালে আবারও পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে। তখন বিজ্ঞানীরা আরও নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করতে পারবেন, ২০৩২ সালে এটি পৃথিবীতে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে কি না।

বৃহস্পতির চাঁদে সৌরজগতের সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০৫ এএম
বৃহস্পতির চাঁদে সৌরজগতের সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি
বৃহস্পতি গ্রহের চতুর্থ বৃহত্তম চাঁদ হিসেবে পরিচিত ‘আইও’। ছবি: সংগৃহীত

বৃহস্পতি গ্রহের চতুর্থ বৃহত্তম চাঁদ হিসেবে পরিচিত ‘আইও’তে সৌরজগতের সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির সন্ধান পাওয়া গেছে। সম্প্রতি নাসার পাঠানো ‘জুনো’ মহাকাশযান সেখানে এক বিশাল অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা শনাক্ত করেছে, যা বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করেছে।

জুনো মহাকাশযানের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে আশপাশে প্রায় ৮০ ট্রিলিয়ন ওয়াট তাপশক্তি উৎপন্ন হয়েছে, যা পৃথিবীর সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট শক্তি উৎপাদনের ছয়গুণ বেশি। 

জুনো মহাকাশযানটির জোভিয়ান ইনফ্রারেড অরোরাল ম্যাপার (জির‍্যাম) যন্ত্রের মাধ্যমে আগ্নেয়গিরির অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অগ্ন্যুৎপাতের এলাকা প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার, যা আইও চাঁদের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরির কাঠামো বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

নাসার জুনো মিশনের প্রধান গবেষক স্কট বোল্টন বলেন, অগ্ন্যুৎপাতের তীব্রতা আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি ছিল। জুনোর পাঠানো সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এটি সৌরজগতের অন্যতম শক্তিশালী আগ্নেয়গিরি।’ 

জুনো মহাকাশযান আইও চাঁদে অগ্ন্যুৎপাতের বেশ কিছু চিত্র ধারণ করেছে। যেখানে দেখা গেছে, চাঁদটির বিশাল অংশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। ধারণা করা হচ্ছে, অগ্ন্যুৎপাতের ফলে লাভায় ঢেকে যাওয়ায় চাঁদটির বড় অংশ অন্ধকারে ঢেকে গেছে।

আইওতে এই অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা সৌরজগতের আগ্নেয়গিরি-সংক্রান্ত গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পৃথিবীর বাইরের আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ সম্পর্কে আরও বিশদভাবে জানতে এই পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সূত্র: গ্যাজেটস৩৬০

ধূমপান না করেও ফুসফুস ক্যানসার: কারণ বায়ুদূষণ

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৫ এএম
ধূমপান না করেও ফুসফুস ক্যানসার: কারণ বায়ুদূষণ
বিশ্বব্যাপী ধূমপান না করেও ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী ধূমপান না করেও ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ রোগের অন্যতম কারণ হতে পারে বায়ুদূষণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ক্যানসার গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (আইএআরসি) মতে, কখনো সিগারেট বা তামাক সেবন না করেও ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এখন ঘটছে। ফুসফুসের ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী ক্যানসারজনিত মৃত্যুর পঞ্চম সর্বোচ্চ কারণ।

বায়ুদূষণ ও অ্যাডেনোকার্সিনোমা বাড়াচ্ছে ঝুঁকি 
ধূমপান না করা ব্যক্তিদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যাডেনোকার্সিনোমা নামে এক ধরনের ক্যানসার দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে এই ক্যানসার ক্রমশ বাড়ছে। সম্প্রতি ল্যানসেট রেসপিরেটরি মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত আইএআরসির গবেষণা অনুসারে, ২০২২ সালে বায়ুদূষণের কারণে প্রায় ২ লাখ মানুষ অ্যাডেনোকার্সিনোমায় আক্রান্ত হয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এশিয়ার দেশগুলো, বিশেষ করে চীনে বায়ুদূষণের কারণে অ্যাডেনোকার্সিনোমার হার সবচেয়ে বেশি ছিল। 

ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্ত ও ঝুঁকি কমানোর তাগিদ 
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক সাক্ষাৎকারে আইএআরসির ক্যানসার সার্ভিল্যান্স শাখার প্রধান ও গবেষণা দলের প্রধান ড. ফ্রেডি ব্রে বলেন, এই ফলাফল ফুসফুসের ক্যানসারের পরিবর্তিত ঝুঁকির কারণ পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। যেসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধূমপানকে ফুসফুসের ক্যানসারের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, সেখানে বায়ুদূষণের মতো সম্ভাব্য কারণগুলো চিহ্নিত করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, ‘ধূমপানের হার কমে যাওয়ার ফলে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ধূমপান করেন না এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্তের হার বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ কতটা সফল হবে, তার ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যতে অ্যাডেনোকার্সিনোমার প্রকোপ কমবে কি না।’

বিশ্বজুড়ে ফুসফুসের ক্যানসার এখনো সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর কারণ হিসেবে রয়ে গেছে। ২০২২ সালে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। তবে সাম্প্রতিক দশকে ক্যানসারের ধরনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। 

নারীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের হার বাড়ছে 
আইএআরসি জানিয়েছে, ফুসফুসের ক্যানসারের চারটি প্রধান উপপ্রকারের মধ্যে অ্যাডেনোকার্সিনোমা পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে।

২০২২ সালের তথ্যমতে, বিশ্বে পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ ও নারীদের মধ্যে ৫৯ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল অ্যাডেনোকার্সিনোমা। ২০২০ সালে এই হার যথাক্রমে ৩৯ শতাংশ ও ৫৭ দশমিক ১ শতাংশ ছিল। আইএআরসি জানিয়েছে, অ্যাডেনোকার্সিনোমা ধূমপান না করা ব্যক্তিদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।

যদিও গত ৪০ বছরে বেশির ভাগ দেশে পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের হার কমেছে, তবে নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা উল্টো বাড়ছে। বর্তমানে পুরুষদের মধ্যে ক্যানসারের হার বেশি হলেও, ২০২২ সালে ৯ লাখ নারী এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ২০২৩ সালে দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, কীভাবে যুক্তরাজ্যে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা প্রথমবারের মতো পুরুষদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের এখন স্তন ক্যানসারের মতো ফুসফুসের ক্যানসার নিয়েও সতর্ক হওয়া উচিত। 

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কৌশল 
ধূমপানের ধরন ও বায়ুদূষণের মাত্রা ক্যানসারের ঝুঁকিকে সরাসরি প্রভাবিত করছে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, বায়ুদূষণের সঙ্গে অ্যাডেনোকার্সিনোমার সংযোগ রয়েছে। তবে ধূমপান ছাড়া বিশ্বব্যাপী ঠিক কত শতাংশ ফুসফুসের ক্যানসার বায়ুদূষণের কারণে হচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে প্রমাণ থেকে জানা যায় এটি বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ সম্পর্কে আরও জানার জন্য চেষ্টা করছেন। বিজ্ঞানীরা এখন আরও গভীরভাবে গবেষণা করছেন, ধূমপান ছাড়াও কী কী কারণ এ রোগের জন্য দায়ী। 

গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘বায়ুদূষণকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আংশিকভাবে অ্যাডেনোকার্সিনোমার ক্রমবর্ধমান প্রাধান্যকে ব্যাখ্যা করে, যা বিশ্বব্যাপী ধূমপান না করা ব্যক্তিদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের ৫৩ থেকে ৭০ শতাংশের জন্য দায়ী।’

ব্রে বলেন, কীভাবে ফুসফুসের ক্যানসার এবং অন্তর্নিহিত ঝুঁকির কারণগুলো বিকশিত হচ্ছে? আমরা কীভাবে বিশ্বব্যাপী ফুসফুসের ক্যানসারকে সর্বোত্তমভাবে প্রতিরোধ করতে পারি সে সম্পর্কে সূত্র সরবরাহ করে এই গবেষণা।’

গবেষকরা মনে করেন, ফুসফুসের ক্যানসার ও এর ঝুঁকির পরিবর্তনশীল ধরন বোঝার মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। ড. ব্রে বলেন, ‘ধূমপানের অভ্যাস পরিবর্তন ও বায়ুদূষণের মাত্রা কমানো- এ দুটি কৌশল ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীতিনির্ধারকদের এখন উচ্চ ঝুঁকির জনগোষ্ঠীর জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ ও বায়ুদূষণ প্রতিরোধ নীতিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান