শিক্ষার্থীদের মেধা ও সৃজনশীলতার বিকাশে বিশেষ করে মুখস্তবিদ্যায় নির্ভরতা কমাতে পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার (১১ মে) সকালে গণভবনে ডিজিটালভাবে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষা-২০২৪ এর ফলাফল প্রকাশের সময় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শুধুমাত্র মুখস্তবিদ্যা শিখবে না, একটা শিশুর ভেতর যে মেধা ও মনন থাকে তাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া। তার এ মেধা দিয়েই যেন সে এগিয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের শিক্ষা কারিকুলাম এবং শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ সময় বাচ্চাদের হাতে খেলনার মাধ্যমেই অনেক কিছু তৈরি করা বা অনেক কিছু শেখার সুযোগ রয়েছে। তাদের কেবল বই দিয়ে বসিয়ে না রেখে খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া যেমন- ফ্লোরে যদি একটি মানচিত্র থাকে যেখানে মহাদেশ ও মহাসগর থাকলো, সেখানে বাচ্চাদের শেখানো যে একটা জায়গা থেকে আর একটা জায়গায় তোমরা লাফ দিয়ে যাও। তাহলে খেলতে খেলতেই সে ওই নামগুলোও জেনে যাবে। কাজেই খেলার মাধ্যমে তাদের শিক্ষা যেন প্রাথমিক পর্যায়ে আসে সেটা করে দেওয়া যায়। তা করলে আমার মনে হয় তাদের কতগুলো মহাদেশ আর মহাসাগর তা মুখস্ত করতে হবে না।’
তিনি বলেন, ‘প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা আওয়ামী লীগ সরকারই শুরু করেছে। গত ১৫ বছরে ৫ হাজার ৯৭টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ আমরা প্রণয়ন করেছি। সেই সঙ্গে শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ সবধরণের সুযোগ-সুবিধা আমরা সরকারে আসার পর দিয়েছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই বলে গেছেন; শিক্ষায় যে অর্থ ব্যয় হয় সেটা বিনিয়োগ। আমরা বিনিয়োগ করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, শুধু সাধারণ বিএ-এমএ পাস নয়, সঙ্গে সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, তথ্য প্রযুক্তিসহ সার্বিকভাবে শিক্ষিত হওয়ায় জন্য যা যা দরকার সে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশ্ব পরিমণ্ডলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো শিক্ষা ব্যবস্থাই আমরা প্রবর্তন করতে চাই।
৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে এমনও দেখা গেছে, মাসের পর মাস ফল প্রকাশ হয়নি। তবে আমরা এটাকে একটি নিয়মের মধ্যে নিয়ে এসেছি। এমনকি কোভিড-১৯ এর নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সময়মতো ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছিল।
তিনি বলেন, এখন থেকে উদ্যোগ নিতে হবে, কী কারণে আমাদের ছাত্র কমে যাচ্ছে। পাশের হারের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরাই অগ্রগামী। সেটা খুব ভাল কথা, তারপরও অমি বলবো এক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্যদের পাশাপাশি তাদের বাবা-মা, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও অভিনন্দন জানান।
যারা কৃতকার্য হতে পারেনি তাদের মন খারাপ না করতে বলেন।
তিনি বলেন, কারও জীবনে একবারের জন্য এমন ঘটনা আসতে পারে। তবে তারা যদি উদ্যোগ নেয় এবং মনযোগী হয় তাহলে আগামীতে পাশ করতে পারবে। কাজেই সেই আস্থা নিয়েই তাদের চলতে হবে।
শিক্ষার চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষিত জাতি ছাড়া কোনো জাতির দারিদ্র বিমোচন সম্ভব নয়। এটা আমি বিশ্বাস করি। আজকের ছেলে-মেয়েরাই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সিটিজেন হবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশের সৈনিক হিসেবে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের কল্যাণ এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার।
এর আগে শিক্ষামন্ত্রী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সম্মিলিত ফলাফলের পরিসংখ্যান প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
এরপর নয়টি সাধারণ, একটি মাদরাসা বোর্ডসহ ১০টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং কারিগরি বোর্ডের মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজ নিজ বোর্ডের ফলাফলের পরিসংখ্যান হস্তান্তর করেন। সূত্র: বাসস
পপি/