অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-৯. ক্র্যাক-ডাউনের রাতের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতকেই ‘রেইনকোট’ গল্পে ক্র্যাক-ডাউনের রাত বলা হয়েছে; যে রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক নিরীহ বাঙালি জাতির ওপর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল, শুরু হয়েছিল ৯ মাসব্যাপী গণহত্যা এবং বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ।
পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাঙালি শোষণ-নির্যাতনের শিকার হতে থাকে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে তা চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। এ সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকার নিরস্ত্র মানুষের ওপর ভয়াবহ গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করে। সে রাতের ভয়াবহতা বোঝাতে ‘রেইনকোট’ গল্পে ‘ক্র্যাক-ডাউনের রাত’ কথাটি বলা হয়েছে।
‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সে কালরাতের বর্ণনা দিয়েছেন।
প্রশ্ন-১০. ‘রাশিয়ায় ছিল জেনারেল উইন্টার, আমাদের জেনারেল মনসুন’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘রেইনকোট’ গল্পে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বর্ষা ঋতুর সহায়ক ভূমিকার বিষয়টি এভাবে প্রতীকী তাৎপর্যে প্রকাশিত হয়েছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রচণ্ড শীতের কবলে পড়ে জার্মান বাহিনী রাশিয়ায় পরাজিত হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্ষা ঋতুর কারণে পাকিস্তানি বাহিনী একইভাবে পর্যুদস্ত হয়েছিল। বাংলার প্রবল ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে হানাদার বাহিনীর পরিচয় ছিল না। ফলে তাদের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বর্ষা ঋতুর সঙ্গেও লড়তে হয়েছিল। ‘রেইনকোট’ গল্পে বর্ষা ঋতুকে তাই রাশিয়ার জেনারেল উইন্টারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। যুদ্ধে প্রকৃতির যে তাৎপর্যময় প্রভাব সেটিই এখানে প্রতীকী তাৎপর্যে উদ্ভাসিত হয়েছে।
প্রশ্ন-১১. নুরুল হুদার কাছে চাবুকের বাড়ি ‘স্রেফ উৎপাত’ বলে মনে হয়েছিল কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘রেইনকোট’ গল্পে পাকিস্তানি মিলিটারির নির্যাতন নুরুল হুদার কাছে ‘স্রেফ উৎপাত’ বলে মনে হয়েছিল; কারণ ততক্ষণে ভীরুতা থেকে তিনি সাহসী এক মুক্তিযোদ্ধায় রূপান্তরিত হয়েছিলেন তিনি।
‘রেইনকোট’ গল্পে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা কলেজের সামনে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার ধ্বংস করে দেয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কলেজের শিক্ষকদের তলব করে এবং তাদের মধ্যে নুরুল হুদা ও আবদুস সাত্তার মৃধাকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করে। মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট পরার ফলে নুরুল হুদার মাঝে ইতোমধ্যে সাহস ও দেশপ্রেমের সঞ্চার ঘটে। মিলিটারিরা তার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করলে নুরুল হুদা এসব কিছু না করেও গর্ব অনুভব করেন। তিনি চেয়েছিলেন নিরপেক্ষ থাকতে; অথচ হানাদার বাহিনী তাকেই ধরে এনে পেটাচ্ছে। তিনি ততক্ষণে জাগ্রত হন বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায়। অনুভব করেন মুক্তিযোদ্ধা হওয়াই গৌরবের। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আঁতাত রাখার উত্তেজনায় পাকিস্তানি সেনাদের চাবুকের বাড়ি তার কাছে ‘স্রেফ উৎপাত’ বলে মনে হয়- যেন এটা কোনো ব্যাপারই না। কারণ তিনিও যে একজন মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত হয়েছেন।
প্রশ্ন-১২। ‘যেন বৃষ্টি পড়ছে মিন্টুর রেইনকোটের ওপর।’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘রেইনকোট’ গল্পে মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর রেইনকোটটি পরে ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার ভেতরে যে সাহসী চেতনা সঞ্চারিত হয়েছিল, সে প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা শ্যালক মিন্টুর রেইনকোটটি পরার পর থেকেই ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার মাঝে সঞ্চারিত হয় সাহস ও দেশপ্রেমের এক বিচিত্র অনুভূতি। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নুরুল হুদার সংযোগ থাকার সন্দেহে তাকে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে তথ্য বের করার চেষ্টা চালায় পাকিস্তানি সেনা অফিসার। কিন্তু রেইনকোটটির কারণে তার মাঝে যে প্রেরণার সৃষ্টি হয়েছিল, তা যেন চাবুকের আঘাতকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। নুরুল হুদার কাছে চাবুকের আঘাতের ব্যাপারটি রেইনকোটের ওপর বৃষ্টি পড়ার মতোই স্বাভাবিক লাগছিল। তিনি আসলে অনুভব করেছিলেন কোনো প্রকৃত বাঙালির অধিকার ছিল না ১৯৭১ সালে নিরপেক্ষ থাকার। একজন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার মানসিক অনুভূতিতে নুরুল হুদা যুদ্ধ না করেও শুধু চেতনায় তা ধারণ করে সাহসী হয়ে ওঠেন। ফলে চাবুকের আঘাতের দিকে তার আর মনোযোগ ছিল না।
সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা
কলি