সম্প্রতি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ওই সংবাদে বলা হয়, মানবসেবার আড়ালে মিল্টন সমাদ্দারের ‘নির্মম ও বর্বরোচিত’ চিত্র ফুটে উঠেছে। এদিকে এই ঘটনায় আসল রহস্য কী, সেটা তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
পুলিশ সূত্র জানায়, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গোয়েন্দারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তারা সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করছে। তথ্যপ্রমাণ সঠিক হলে তাকে আটক করা হতে পারে।
অবশ্য এসব বিষয় নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেছেন, ‘মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সেসব সংবাদ প্রচার হয়েছে, সেটি যদি সত্যি হয় অথবা কোনো অভিযোগ আসে তাহলে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।’
এদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এই বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে কমিশন তদন্তের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। কমিশন থেকে সংস্থা দুটিকে দ্রুত তদন্ত শেষে আগামী ৩০ মের মধ্যে কমিশন বরাবর প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে।
ইউশা রহমান জানান, গত ২৫ এপ্রিল দৈনিক পত্রিকাগুলোতে ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে আসে। গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালে না নিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে আটকে রাখা, ভুয়া ডাক্তার কর্তৃক মৃত্যুর সার্টিফিকেট তৈরি করা কিংবা লাশের শরীরে কাটাছেঁড়ার যে তথ্য প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত মর্মে কমিশন মনে করে। এ অবস্থায় অভিযোগের বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক দ্রুত কমিশনে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য ডিএমপি কমিশনারকে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বলা হয়েছে। আগামী ৩০ মে প্রতিবেদনের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, মিল্টন সমাদ্দার ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের বৃদ্ধাশ্রম গড়ে রাস্তা থেকে অসুস্থ কিংবা ভবঘুরেদের কুড়িয়ে সেখানে আশ্রয় দেন। সেসব নারী, পুরুষ ও শিশুকে নিয়ে ভিডিও তৈরি করে প্রায়ই তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়। মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তাদের জন্য বিত্তবানদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তার আবেদনে সাড়া দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। মানবিক কাজের জন্য এখন পর্যন্ত তিনটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার। কিন্তু মানবিকতার আড়ালে তিনি ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন বলে সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
খাজা/