প্রতিবছরই উদীয়মান তরুণ উদ্যোক্তা, সংগঠক ও উদ্ভাবকদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে বিশ্বখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) প্রকাশিত হয়েছে এ বছরের এশীয়দের তালিকা। ‘ফোর্বস ৩০ আন্ডার ৩০ এশিয়া-২০২৪’ শিরোনামের নবম সংস্করণের এই তালিকায় কলা, প্রযুক্তি, গণমাধ্যম, বিপণন, বিজ্ঞাপন ও সামাজিক প্রভাব বিভাগে জায়গা করে নিয়েছেন ৯ বাংলাদেশি তরুণ।
ফোর্বস জানিয়েছে, এই তালিকায় ১০টি বিভাগে ৩০ বছরের কম বয়সী ৩০০ তরুণ উদ্যোক্তা, নেতা ও উদ্ভাবককে তুলে ধরা হয়েছে, যারা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে পরিবর্তন আনছেন এবং উদ্ভাবন করে যাচ্ছেন।
২০১১ সাল থেকে সাময়িকীটি এ তালিকা প্রকাশ করছে। গেল কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশি তরুণরা ধারাবাহিকভাবে এ তালিকায় স্থান করে নিচ্ছেন।
এ বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য স্বীকৃতি পাওয়া ৯ বাংলাদেশি হলেন- আনুশা আলমগীর (কালার্স ঢাকা), মেহেদী স্মরণ (হ্যালো টাস্ক), রেদোয়ান আহমেদ (ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক), মো. শহিদুল ইসলাম, আবদুল গাফফার সাদী এবং মো. তুষার (দ্রুত লোন), সুলতান মনি, মুমতাহিনা আনিকা (জাতিক) ও ফাহাদ আহমেদ (উইন্ড ডট অ্যাপ)।
আনুশা আলমগীর
অনলাইন থ্রিফ্ট স্টোরের ‘কালার্স ঢাকা’ প্রতিষ্ঠাতা আনুশা আলমগীর আর্ট ক্যাটাগরিতে এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। ২০২৩ সালে ভেনিস দ্বিবার্ষিক ১৮তম আন্তর্জাতিক স্থাপত্য প্রদর্শনীতে একমাত্র বাংলাদেশি নারী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব আর্ট থেকে স্থাপত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আনুশা আলমগীর।
মুসলিম নারীদের পর্দানশীলতা প্রথার ওপর ভিত্তি করে তৈরি আনুশার ‘পর্দা’ চলচ্চিত্রটি বেশ আলোচিত হয়। তিনি ভাস্কর্য, চিত্রাঙ্কন ও ফটোগ্রাফিতেও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন, যেখানে বাংলাদেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো যেমন, নারীদেহের চিত্র এবং তথাকথিত পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে। লন্ডনের ‘ঐতিজ-জো কালেকটিভ’, লস অ্যাঞ্জেলেসের ‘লা-লা ল্যান্ড গ্যালারি’তে এবং ঢাকার ‘দৃক পিকচার লাইব্রেরি’তে তার কাজগুলো প্রদর্শন করেছে।
মেহেদী স্মরণ
হ্যালো টাস্কের সহপ্রতিষ্ঠাতা মেহেদী কনজ্যুউমার টেকনোলজি তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। হ্যালো টাস্ক এমন একটি অ্যাপ, যা গৃহকর্মীদের নিয়ে কাজ করে। সংস্থাটি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিনিয়োগ পেয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংক ও অক্সফামের অনুদানও পেয়েছে। হ্যালো টাস্কের লক্ষ্য, ২০২৫ সালের মধ্যে ১ লাখ গৃহকর্মীকে তাদের প্ল্যাটফর্মে অন্তর্ভুক্ত করা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করা।
রেদোয়ান আহমেদ
রেদোয়ান আহমেদ একজন পুরস্কার বিজয়ী ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তিনি গণমাধ্যম, মার্কেটিং ও বিজ্ঞাপন বিভাগে ফোর্বসের এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। রোহিঙ্গা সংকট ও পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ওপর শোষণ নিয়ে তৈরি প্রতিবেদন তার উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। স্থানীয় সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য কাজ করা ‘বাংলাদেশি জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা রেদোয়ান আহমেদ।
আবদুল গাফফার সাদী, মো. শহিদুল ইসলাম এবং মো. তুষার
আবদুল গাফফার সাদী, মো. শহিদুল ইসলাম এবং মো. তুষার গড়ে তুলেছেন ‘দ্রুতলোন’। এ কাজের জন্য ফাইন্যান্স অ্যান্ড ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিভাগের তালিকায় জায়গা পেয়েছেন তারা।
ঢাকাভিত্তিক এই স্টার্টআপ কাগজপত্র মূল্যায়ন করে সহজে ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যবসায়ীদের ঋণ পেতে সহায়তা করে। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ‘দ্রুতলোন’ ২০ লাখ ডলারের বেশি ঋণ বিতরণ করেছে।
মুমতাহিনা আনিকা ও সুলতান মনি
ফাইন্যান্স অ্যান্ড ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ক্যাটাগরিতে আরও জায়গা করে নিয়েছেন ‘জাতিক’ এর সহপ্রতিষ্ঠাতা মুমতাহিনা আনিকা ও সুলতান মনি। ‘জাতিক’ ছোট কোম্পানিগুলোকে অ্যাকাউন্টিং পরিচালনা করতে সাহায্য করার জন্য সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সমাধান দেয়। কোম্পানিটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করে। গত আগস্টে ‘জাতিক’ ১৬ লাখ ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে।
ফাহাদ আহমেদ
‘উইন্ড ডট অ্যাপ’ এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহাদ আহমেদও ফাইন্যান্স অ্যান্ডভেঞ্চার ক্যাপিটাল ক্যাটাগরিতে ফোর্বসের এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। উইন্ড ডট অ্যাপ দ্রুত এবং খুবই কম খরচে ক্রস-বর্ডার রেমিট্যান্স সুবিধা দেয়। স্টার্টআপটি ৩৮ লাখ ডলার তহবিল পেয়েছে। ‘উইন্ড ডট অ্যাপ’ এর আগে ফাহাদ আহমেদ ‘পাঠাও’ এর প্রতিষ্ঠাতা দলের একজন ছিলেন এবং সেখানে তিনি বিভিন্ন পরিষেবা চালু করেছিলেন।