ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) অননুমোদিত স্টিকারযুক্ত, ফিটনেসবিহীন ও অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। ডিএমপির আটটি ট্রাফিক বিভাগ গত ১২ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত ৩ হাজার ১৭৪টি যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে ৩৬৩টি অননুমোদিত স্টিকার, ৪৬১টি ফিটনেসবিহীন ও ২ হাজার ৩৫০টি অবৈধ যানবাহন।
রবিবার (৫ মে) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের যুগ্ম কমিশনার এস এম মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার স্টিকারের অবৈধ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা করছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এ অভিযান চলমান থাকবে। ব্যক্তিগত গাড়িতে পুলিশসহ জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত স্টিকার ব্যবহার করলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার গাড়ি ডাম্পিং করা হয়েছে।
ঢাকায় নিরাপত্তা ও যানজট সম্পর্কে মেহেদী হাসান বলেন, ঢাকা মহানগরের নিরাপত্তা ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক সচেতনতা বৃদ্ধি, ট্রাফিক প্রসিকিউশন ব্যবস্থাপনা, সময়োপযোগী ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনয়ন এবং ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগকল্পে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত রবিবার মার্চ মাসের অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘রাস্তায় পুলিশের স্টিকার লেখা কোনো গাড়ি দেখলে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য অবশ্যই যাচাই করবেন। গাড়িতে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে বা ডিএমপির লোগো লাগিয়ে সন্ত্রাসীদের চলাফেরার তথ্য পাওয়া গেছে। যদি যাচাই করে দেখা যায় সেটা পুলিশের গাড়ি নয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। ডিএমপির ক্রাইম ও ট্রাফিক বিভাগ এ বিষয়টির প্রতি নজর রাখবে।’
অনেকে গাড়িতে পুলিশ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সাংবাদিক, আইনজীবী ও চিকিৎসকের স্টিকার ব্যবহার করছেন। গাড়িগুলোতে যিনি স্টিকার ব্যবহার করছেন, সেই স্টিকারের পদধারী ব্যক্তি যদি গাড়িতে উপস্থিত না থাকেন অথবা উপস্থিত থেকে যদি আইডি কার্ড দেখাতে ব্যর্থ হন সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভুয়া স্টিকার ব্যবহার করে কেউ যেন আইন প্রয়োগে প্রভাব দেখাতে না পারে এবং ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত করতে না পারে সে জন্য অভিযান চালাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে ডিএমপি।
বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি জনগণের মধ্যে ট্রাফিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের সঙ্গে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ ও ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব পালনে জনগণের সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরছে।
ডিএমপির আটটি বিভাগের পরিসংখ্যান তুলে ধরে ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের যুগ্ম কমিশনার বলেন, গত ১২ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত ট্রাফিক রমনা বিভাগ অননুমোদিত স্টিকারের বিরুদ্ধে ৪০টি এবং ৭৪টি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ ছাড়া ১৮৮টি অবৈধ যানবাহন ডাম্পিং করা হয়েছে।
ট্রাফিক মতিঝিল বিভাগ অননুমোদিত স্টিকারের বিরুদ্ধে ১৬৪টি এবং ৪৬টি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ ছাড়া তিনটি অবৈধ যানবাহন ডাম্পিং করা হয়েছে। ট্রাফিক লালবাগ বিভাগ অননুমোদিত স্টিকারের বিরুদ্ধে ৯টি এবং ২০টি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ ছাড়া ২০৭টি অবৈধ যানবাহন ডাম্পিং করা হয়েছে।
ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগ অননুমোদিত স্টিকারের বিরুদ্ধে ৪৪টি এবং ৪২টি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ ছাড়া ২১৫টি অবৈধ যানবাহন ডাম্পিং করেছে ওয়ারী বিভাগ। ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগ অননুমোদিত স্টিকারের বিরুদ্ধে ৩৪টি মামলা করেছে। ৫৩টি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ডাম্পিং করা হয়েছে ২০৪টি অবৈধ যানবাহন।
এ ছাড়া ট্রাফিক গুলশান বিভাগ অননুমোদিত স্টিকারের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা করেছে। ৬১টি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া ১২৩টি অবৈধ যানবাহন ডাম্পিং করা হয়েছে। ট্রাফিক উত্তরা বিভাগ অননুমোদিত স্টিকারের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা করেছে। ৯৪টি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া ৭৬টি অবৈধ যানবাহন ডাম্পিং করা হয়েছে।
ট্রাফিক মিরপুর বিভাগ অননুমোদিত স্টিকারের বিরুদ্ধে ৪২টি মামলা করেছে। ৭১টি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া ডাম্পিং করা হয়েছে ১ হাজার ৩৩৪টি অবৈধ যানবাহন।
যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসান আরও বলেন, চলমান তাপপ্রবাহে কর্তব্যরত ট্রাফিক, সাধারণ মানুষ, পথচারী, রিকশাচালকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষদের একটু স্বস্তি দিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমানের উদ্যোগ সুপেয় পানি ও খাওয়ার স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে।