বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যারা সাউন্ড গ্রেনেড ভয় পায় না, পুলিশের হুইসেল শুনে ভয়ে দৌড়ে পালাবে না, গুলির ভয়ে পালাবে না- এমন তরুণ, যুবক ও ছাত্রনেতা তৈরি করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যারা ভয়ে পালাবে না, এই ধরনের সাহসী নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে।
সোমবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস’ উপলক্ষে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও স্বাধীনতা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে জোর করে একটা দখলদারি শাসকগোষ্ঠী জনগণের ওপর চেপে বসে আছে। এদের কোনো নৈতিকতা নেই, এদের কোনো সাংবিধানিক অধিকার নেই চেয়ারে বসে থাকার, দেশ শাসন করবার। এরা ১৯৭৫ সালে বাকশাল শাসন চালু করেছিল, এখন ভিন্ন কায়দায় আবারও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, দেশের মালিক জনগণ। কিন্তু ৫২ বছর পর দেশের মানুষ তার মালিকানা হারিয়ে ফেলেছে। আজকে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সংবিধান কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। সংবিধানের তিনটি ধারা কখনো পরিবর্তন করা যাবে না। সেখানে একটি পরিবার ও একটি দলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, সেই আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। আমাদের গণমানুষেরা নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে ভোটের মাধ্যমে। শান্তিতে বসবাস করতে পারবে, কথা বলতে ও লিখতে পারবে স্বাধীনভাবে। সেই আশা ও ভরসা নিয়ে দেশের মানুষ যুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ ধুলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেরা নির্বাচন নাটক করেছে- মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে কেউ অংশ নেয়নি। ২০১৮ সালে রাতে নির্বাচন করেছে। আর এবার এক নাটকীয় মাধ্যমে ডামি প্রার্থী দিয়ে নিজেরাই ভোট করেছে। দেশের ভেতরে-বাইরে কেউ এ নির্বাচন গ্রহণ করেনি। জোর করে ক্ষমতা দখল করে দেশের মানুষের বুকের ওপর বসে আছে তারা। ১৯৭৫ সালে দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছিল আওয়ামী লীগ, এখন ছদ্মবেশে গণতন্ত্রের লেবাস ধরেছে।’
একটি শাসকগোষ্ঠী দেশের মানুষের বুকের ওপর চেপে ধরে বসে আছে- মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই, শাসনতন্ত্র ও সাংবিধানিক অধিকার নেই চেয়ারগুলোতে বসে থাকার, শাসন করবার।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আজকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো লুটপাট করে অর্থনীতি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে রাজপথে নামতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে প্রতিরোধের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলুন।’
২৫ মার্চ প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ‘সেদিন রাত পর্যন্ত আওয়ামী লীগ অপেক্ষা করেছিল, পাকিস্তানের সঙ্গে রফাদফা করতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেনি। ২৫ মার্চ রাতে অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল।’
সভাপতির বক্তব্যে মেজর হাফিজ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। যুদ্ধ করেছে সাধারণ মানুষ কিন্তু কৃতিত্ব নিতে চায় আওয়ামী লীগ। গণতন্ত্রের চেতনা নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান আমলে কোনো ভোট কারচুপি ছিল না। ৭৩ সালে তারা গণতন্ত্র হাইজ্যাক করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের চেতনা আগেও ছিল না এখনো নেই। এখনো নির্বাচনের নামে প্রহসন করছে। ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। অবৈধভাবে ভোট কারচুপির মাধ্যমে যেহেতু ক্ষমতায় এসেছে সেহেতু এই সরকার অবৈধ সরকার। সুতরাং বিএনপির আন্দোলনে ছাত্র-যুব সমাজসহ দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘আগে বলেছেন তলে তলে সব হয়ে গেছে। আর এখন আপনার গায়ে ব্যথা। এখন ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা শুনে আপনার গায়ে জ্বালা ধরেছে।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম মজনু, সদস্য ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল হাসান রাকিব প্রমুখ।
শফিকুল/সালমান/