আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী, ঘনিষ্ঠজনদের দুর্নীতি, লুটপাট লুকিয়ে রাখার জন্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদেরকে প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধ কেন? ব্যাংকে কত টাকা লুট হয়েছে? এই লুটকারীরা হচ্ছে বর্তমান সরকারের এমপি, মন্ত্রী, নাহলে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠজন। এই লুটপাট ও দুর্নীতি তথ্য যাতে সাংবাদিকরা না পায়, এই কারণে ব্যাংকে সাংবাদিকদেরকে ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কারণ যারা অপরাধী তারা পাপকে লুকিয়ে রাখতে চায়।’
রবিবার (২৮ এপ্রিল) নয়াপল্টন বিএনপির কার্যলয়ের সামনে সাবেক ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আয়োজনে বেগম খালেদা জিয়া, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী শক্তির লোকজন, যারা সত্যের পথে কথা বলে তারা আজ কারাগারে। যারা ব্যাংক ডাকাতি করছে লুটপাট করছে, নদী-নালা, খাল-বিল, দখল করছে, অন্যায় অবিচার দুর্নীতি করছে, তারা আজ দোর্দণ্ড প্রতাপে সারাদেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এটা প্রমাণিত।’
এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের জনগণের ঘর বাড়িও বিক্রি করে দেবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই সরকার দুর্নীতি-লুটপাটের সরকার। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত যে যেখানে আছেন সেখান থেকেই সবাইকে জোরালো কন্ঠকে আরও জোরালো করতে হবে, যাতে এই সরকারের হৃৎকম্পন শুরু হয়।’
‘পাকিস্তানও আমাদের প্রশংসা করে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বন্ধ করে রেখেছে পার্শ্ববর্তী একটা দেশে। তো বাংলাদেশ নিয়ে পাকিস্তান একটি প্রশংসামূলক কথা বলেছে এই জন্য ওবায়দুল কাদের খুবই আনন্দিত। সেটি নিয়ে জোর গলায় কথা বলছেন। আর বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে নাকি পিরিত’। বিএনপি যা বলে সত্যের পক্ষে স্পষ্ট। আর ওরা (আওয়ামী লীগ) বলে তলে তলে। ওরা তলে তলে পিরিত সবার সাথে করে রাখেন। কারণ ওরা অবৈধ। ওরা সত্য বলতে পারে না। ওদের কোনো আদর্শ নেই, ওদের আদর্শ হচ্ছে সন্ত্রাস, ব্যাংক লুট। যাদের আদর্শ নেই তারা যে কোন কাজ করতে পারে।’
রাজবাড়ীর দুই সহোদর শ্রমিকের হত্যার ঘটনা তুলে ধরে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘দুইজন শ্রমজীবী মানুষকে হত্যা করার পর সরকারই বাধ্য হয়েছে একজন চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করতে। তিনি হলেন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান। প্রত্যেকটি জায়গায় সমস্ত দুর্বৃত্তপনা, সন্ত্রাস, রক্তপাত করছে সরকারের লোকজন। এদেরকে দিয়েই তো গণতন্ত্রকামী মানুষের মিছিলে হামলা করানো হয়েছে। এরা ফ্রি লাইসেন্স পেয়ে গেছে মানুষ হত্যার, টাকা লুটের।’
এর আগে 'বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল ও সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল।
বিক্ষোভ মিছিলটি কেন্দ্রীয় অফিসের বিপরীত সড়ক (ভিআইপি) টাওয়ারের সামনে থেকে শুরু হয়ে জোনাকি সিনেমা হলের সামনে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর সেখান থেকে মোড় নিয়ে চায়না টাউনের সামনে দিয়ে নয়া পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে এসে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, যুবদলের সহসভাপতি জাকির হোসেন সিদ্দিকী, ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি রফিক হাওলাদার, আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম সম্পাদক সওগাত উল ইসলাম সগির, আশরাফ উদ্দিন রুবেল, ইলিম মো.নাজমুল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আজিজুর রহমান মুসাব্বির, যুবদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত, ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি তারেক উজ জামান তারেক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান আউয়াল, সহ-সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক জিয়নসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মী।
শফিকুল ইসলাম/ইসরাত চৈতী/