ইসলামে নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের একমাত্র বৈধ পন্থা বিবাহ। এ জন্য আল্লাহতায়ালা পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ তৈরি করে দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষের কাছে সুশোভিত করা হয়েছে নারী, সন্তান, স্তূপীকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যভাণ্ডার, চিহ্নযুক্ত অশ্বরাজি, গৃহপালিত পশু এবং শস্যক্ষেত্র, এসব পার্থিব জীবনের সম্পদ, আর আল্লাহ; তাঁরই কাছে রয়েছে উত্তম আশ্রয়স্থল।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৪)
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘হে মানবজাতি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদের একটি মাত্র ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সেই দুজন থেকে বহু নারী-পুরুষ ছড়িয়ে দিয়েছেন। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। যাঁর নামে তোমরা পরস্পর পরস্পরের কাছে (অধিকার) চেয়ে থাকো এবং সতর্ক থাক আত্মীয়-স্বজন সম্পর্কে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১)
মানুষের যৌবিক চাহিদা পূরণ, পরিবার গঠন, সংরক্ষণ ও বংশবিস্তারের হালাল উপায় বিয়ে। বিবাহ মানুষের চরিত্রকে সুন্দর করে। চোখকে সংযত রাখে ও লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে। নানাবিধ উপকার এবং ইসলামি শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ এই বিধান সম্পাদনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু নীতিমালা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো কুফু বা সমতাবিধান। বিবাহের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে দ্বীন, শিক্ষা-দীক্ষা, সামাজিক মর্যাদা, বংশমর্যাদা, পারিবারিক জীবনাচার পদ্ধতি, রূপ সৌন্দর্য। তবে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে ধর্মশিক্ষা বা ধর্মীয় প্র্যাকটিস। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘চারটি গুণ দেখে নারীকে বিবাহ করা হয়; তার ধন-সম্পদ, বংশমর্যাদা, রূপ-সৌন্দর্য এবং তার দ্বীন-ধর্ম। তুমি দ্বীনদার পাত্রী লাভ করে সফলকাম হও (অন্যথায় তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে)।’ (বুখারি, হাদিস: ৫০৯০)
বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারি এবং সচ্চরিত্র প্রাধান্য দিতে হবে। বর-কনে অর্থে দুর্বল হলেও সেদিকে লক্ষ না রেখে লক্ষ রাখতে হবে দ্বীনদারি ও চরিত্রের দিকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কাছে কোনো পাত্র বিয়ের প্রস্তাব দেয়, যদি দ্বীনদারি ও চরিত্র তোমাদের পছন্দ হয়, তাহলে তার সঙ্গে বিয়ে সম্পন্ন করো। অন্যথা জমিনে বড় বিপদ দেখা দেবে এবং সুদূরপ্রসারী বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১০৮৪-৮৫)
সর্বোপরি বর-কনের রুচি, চাহিদা, বংশ, যোগ্যতা সবকিছু সমান সমান বা কাছাকাছি হতে হবে। সমতাবিধান মেনে চলতে হবে। অন্যথায় পরে এসব অবস্থানের মিল না হলে দাম্পত্য জীবনে কলহ বৃদ্ধি পেতে থাকে। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু হয়; তা বিষাদের রূপ নেয়।
উচ্চবিত্ত ছেলেমেয়েদের চাহিদা আর নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তদের চাহিদার ভিন্নতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। একইভাবে প্র্যাকটিসিং মুসলিম এবং নামমাত্র মুসলিমের চালচলন, ধর্মীয় আচরণ-অনুষ্ঠান পালন—এগুলো ভিন্নতা হবে এটাই তো স্বাভাবিক। ফলে এগুলো আমলে না নিলে পরবর্তী সময়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। আল্লাহ বলেন, ‘দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযুক্ত।’ (সুরা নুর, আয়াত: ২৬)। আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী পুরুষ যেন ব্যভিচারী বা মুশরিক নারী ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। আবার ব্যভিচারী নারী যেন ব্যভিচারী পুরুষ বা মুশরিক পুরুষ ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। মুমিনদের জন্য এ ধরনের চরিত্রের নারী-পুরুষকে হারাম করা হয়েছে।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বার্থে উত্তম নারী গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফু) বিবেচনায় বিয়ে করো। বিয়ে দিতে সমতার প্রতি লক্ষ রাখো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৯৬৮)
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গভীর ভালোবাসা ও দাম্পত্য জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি লাভ করাই কুফুর মুখ্য উদ্দেশ্য। কনে যদি দ্বীনদার ও পবিত্র চরিত্রের হয় আর বর যদি বেদ্বীন-চরিত্রহীন হয়, তাহলে অন্য সব দিক দিয়ে সমতা হলেও সে মিল শরিয়তের দৃষ্টিতে কাম্য নয়। তেমনি এ ধরনের বিয়ে স্থিতিশীল নাও হতে পারে। হলেও সে দাম্পত্য জীবন হতে পারে তিক্ত ও বিষাক্ত। তাই বিবাহে কুফু বা সমতাবিধান নিশ্চিত করা জরুরি।
লেখক: খতিব, বঙ্গভবন জামে মসজিদ