দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা এবং ভোট অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সম্প্রতি ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চলতি মাসের প্রথমার্ধেই তারা সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে চান। এ লক্ষ্যে আগামী ৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। ওই দিন দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাদের দেখা করার কথা রয়েছে।
এর আগে গত ১ নভেম্বর সংসদ ভোটের ক্ষণ গণনা শুরুর দিন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা। সংসদ ভোটের আগে ইসির সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে খবরের কাগজের কথা হয় নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটের তারিখ রেখে নভেম্বরের প্রথমার্ধে/মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এরই মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ৯০ দিনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দিক থেকে প্রস্তুতিমূলক সব কাজ প্রায় শেষের দিকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানরা ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব, অধিদপ্তর/সংস্থার কর্ণধারদের সঙ্গেও সভা করা হয়েছে। সবাইকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের সবাই আমাদের সব ধরনের সহযোগিতার ব্যাপারে আশ্বাসও দিয়েছেন। বিগত ৪ নভেম্বর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে ইসির প্রস্তুতি অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি দলগুলোর পরামর্শ এবং মতামত কমিশনও শুনেছে।’
আহসান হাবিব খান আরও বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে যা যা করা দরকার, আমাদের পক্ষ থেকে সবই করা হচ্ছে। সবাইকে ভোটে অংশ নেওয়ার আহ্বান থাকছে সব সময়। ভোটারদের জন্য নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে কমিশন আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং শেষ দিন পর্যন্ত করে যাবে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান থাকবে- মতভেদ, মতানৈক্য নিরসন করে ভোটে আসুন। নির্বাচন কমিশন সম্মানিত ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণে সব সময়ই গুরুত্ব দিয়ে আসছে এবং ইনশাহআল্লাহ সবার সহযোগিতায় সুন্দর একটা নির্বাচন উপহার দিতে পারব।’
সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ইসির প্রস্তুতির ধরন কী- এ বিষয়ে জানতে কথা হয় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি হলেন নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক অভিভাবক। এ জন্যই সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে তার সঙ্গে দেখা করবেন এটাই নিয়ম। প্রয়োজনে স্পিকারের সঙ্গেও দেখা করে এ বিষয়ে তারা কথা বলতে পারেন। তবে এসব বিষয়ে আইনে কিছু উল্লেখ করা নেই। বিগত দিনে রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে এমন সময়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের কয়েক দিনের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে দেখা গেছে।
সাবেক এই সিইসি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর কমিশনের মিটিংয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে তফসিলের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়। তারপর সেই সিদ্ধান্ত বিটিভিতে ভাষণের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষকে জানাবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সাধারণত সিইসির এই ভাষণ বিটিভিতে রেকর্ড করার পর সম্প্রচার করা হয়। আমার সময় তাই হয়েছিল।’ সেই ভাষণে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের সহযোগিতা এবং জনসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা চাইবেন সিইসি।
বিগত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে সাবেক এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সব জাতীয় নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক উত্তেজনা থাকে, এবারও এর ব্যতিক্রম দেখছি না। তবে প্রত্যাশা করি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কারণ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় ইসিতে সময়মতো ভোট করার বিকল্প নেই। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যেই সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও ভোট শেষ করতে হবে।’
এদিকে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসির নির্বাচনী ম্যানুয়াল তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে আসনভিত্তিক চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ইসির চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, সারা দেশে এবার মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। তার মধ্যে নতুন ভোটার রয়েছেন ৫ লাখ ৪০ হাজার ১৯৩ জন। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ আর নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২।