ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ০৩ জুন ২০২৪

নির্বাচনের জন্য ইসির প্রস্তুতি আগামী সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০২:১৫ পিএম
আগামী সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা এবং ভোট অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সম্প্রতি ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চলতি মাসের প্রথমার্ধেই তারা সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে চান। এ লক্ষ্যে আগামী ৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। ওই দিন দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাদের দেখা করার কথা রয়েছে।

এর আগে গত ১ নভেম্বর সংসদ ভোটের ক্ষণ গণনা শুরুর দিন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা। সংসদ ভোটের আগে ইসির সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে খবরের কাগজের কথা হয় নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটের তারিখ রেখে নভেম্বরের প্রথমার্ধে/মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এরই মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ৯০ দিনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দিক থেকে প্রস্তুতিমূলক সব কাজ প্রায় শেষের দিকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানরা ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব, অধিদপ্তর/সংস্থার কর্ণধারদের সঙ্গেও সভা করা হয়েছে। সবাইকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের সবাই আমাদের সব ধরনের সহযোগিতার ব্যাপারে আশ্বাসও দিয়েছেন। বিগত ৪ নভেম্বর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে ইসির প্রস্তুতি অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি দলগুলোর পরামর্শ এবং মতামত কমিশনও শুনেছে।’ 

আহসান হাবিব খান আরও বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে যা যা করা দরকার, আমাদের পক্ষ থেকে সবই করা হচ্ছে। সবাইকে ভোটে অংশ নেওয়ার আহ্বান থাকছে সব সময়। ভোটারদের জন্য নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে কমিশন আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং শেষ দিন পর্যন্ত করে যাবে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান থাকবে- মতভেদ, মতানৈক্য নিরসন করে ভোটে আসুন। নির্বাচন কমিশন সম্মানিত ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণে সব সময়ই গুরুত্ব দিয়ে আসছে এবং ইনশাহআল্লাহ সবার সহযোগিতায় সুন্দর একটা নির্বাচন উপহার দিতে পারব।’ 

সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ইসির প্রস্তুতির ধরন কী- এ বিষয়ে জানতে কথা হয় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি হলেন নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক অভিভাবক। এ জন্যই সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে তার সঙ্গে দেখা করবেন এটাই নিয়ম। প্রয়োজনে স্পিকারের সঙ্গেও দেখা করে এ বিষয়ে তারা কথা বলতে পারেন। তবে এসব বিষয়ে আইনে কিছু উল্লেখ করা নেই। বিগত দিনে রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে এমন সময়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের কয়েক দিনের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে দেখা গেছে। 

সাবেক এই সিইসি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর কমিশনের মিটিংয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে তফসিলের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়। তারপর সেই সিদ্ধান্ত বিটিভিতে ভাষণের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষকে জানাবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সাধারণত সিইসির এই ভাষণ বিটিভিতে রেকর্ড করার পর সম্প্রচার করা হয়। আমার সময় তাই হয়েছিল।’ সেই ভাষণে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের সহযোগিতা এবং জনসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা চাইবেন সিইসি।

বিগত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে সাবেক এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সব জাতীয় নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক উত্তেজনা থাকে, এবারও এর ব্যতিক্রম দেখছি না। তবে প্রত্যাশা করি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কার‌ণ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় ইসিতে সময়মতো ভোট করার বিকল্প নেই। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যেই সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও ভোট শেষ করতে হবে।’

এদিকে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসির নির্বাচনী ম্যানুয়াল তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে আসনভিত্তিক চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ইসির চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, সারা দেশে এবার মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। তার মধ্যে নতুন ভোটার রয়েছেন ৫ লাখ ৪০ হাজার ১৯৩ জন। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ আর নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২।

সিডনি হারবারের আদলে ব্রিজ হবে ময়মনসিংহে

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৪, ০৯:২৯ এএম
সিডনি হারবারের আদলে ব্রিজ হবে ময়মনসিংহে
ময়মনসিংহ নগরের কেওয়াটখালী এলাকায় আর্চ সেতু নির্মাণের কাজ চলছে/ খবরের কাগজ

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবারের আদলে ময়মনসিংহে দৃষ্টিনন্দন আর্চ স্টিল সেতু নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এই সেতুর কাজ শেষ হলে নগরীর যানজট সমস্যা নির্মূল হবে। পাশাপাশি জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ছাড়াও কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের মানুষের যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। সেই সঙ্গে প্রসার ঘটবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের।

এখন চলছে সেতু নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ। একে একে প্রকল্প এলাকায় আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন ধরনের ব্লকসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। পাইলিংয়ের কাজও চলছে। ময়মনসিংহবাসীর বহুল প্রত্যাশিত সেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে চলায় খুশি সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

এর আগে ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ‘ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর উন্নয়ন’বিষয়ক সভায় নতুন শহরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের এই সেতুসহ তিনটি সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে নতুন সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই বছরের ২ নভেম্বর নগরীর সার্কিট হাউস ময়দানে জনসভার আগে কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে স্টিল আর্চ সেতুটির কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ‘ময়মনসিংহে কেওয়াটখালী সেতু নির্মাণ’ নামের প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।

স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানায়, ‘চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ এবং ‘স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ’- এ দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সমন্বয় করে সেতুর কাজ করছে। নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ১ হাজার ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণ করতে প্রায় তিন বছর সময় লাগবে। 

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাইপাস মোড় থেকে শুরু হবে মূল সেতুর সংযোগ সড়ক, যা সেতুর অন্য প্রান্ত চায়না মোড় পর্যন্ত ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। সংযোগ সড়ক মূল সেতুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগেই পড়বে ২৫০ মিটার রেলওয়ে ওভারপাস। এর পরই সংযোগ সড়ক মিলবে ৩২০ মিটার দীর্ঘ মূল স্টিল সেতুর সঙ্গে। সেতুতে ২০২ মিটার র‌্যাম্পসহ ভারী যান চলাচলের জন্য চার লেন এবং মোটরসাইকেল ও হালকা যান চলাচলের জন্য দুটি লেন থাকবে। মূল সেতুসংলগ্ন একটি টোল প্লাজা ও বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হবে। ব্রিজ হেলথ মনিটরিং সিস্টেমের জন্য একটি ওয়াচ টাওয়ার থাকবে। এর বিশেষত্ব হলো- নদের মাঝে কোনো পিলার থাকবে না। দুপাড়ে দুটি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে সেতুটি। দৃষ্টিনন্দন স্টিল আর্চ সেতুর নিচ দিয়ে কোনো বাঁধা ছাড়াই চলবে জাহাজ, স্বাভাবিক থাকবে পানিপ্রবাহ।

নগরীর কেওয়াটখালী এলাকায় রেলসেতু ঘেঁষেই নির্মাণ হচ্ছে স্টিল আর্চ সেতু। মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে মূলত এই সেতুর দৃশ্যমান কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। ১১ মার্চ ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে মাটির গভীরে বসানো হয়েছে ১.৫ মিটার ব্যাস ও ৪১.৫ মিটার দীর্ঘ আর্চ স্টিল সেতুর প্রথম পাইল। মূলত এ রকম পাইলের ওপরেই দাঁড়িয়ে থাকবে কলাম, স্প্যানসহ সম্পূর্ণ সেতুটি। এ রকম ছয়টি টেক্স পাইল বিভিন্ন পয়েন্টে হবে। এর পর মোট ১ হাজার ২৩২টি সাব-পাইল হবে। যার ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকবে ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষের জন্য নির্মিত হতে চলা স্বপ্নের আর্চ স্টিল সেতু।

ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি শংকর সাহা খবরের কাগজকে বলেন, শম্ভুগঞ্জ সেতু পারাপার হয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন ময়মনসিংহ নগরীতে প্রবেশ করে। এ ছাড়া সরু সড়কসহ যানবাহনের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ায় দিন দিন যানজটও তীব্র হচ্ছে। এতে সড়কে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় জ্বালানি খরচ বাড়ার পাশাপাশি পরিবহন করা পণ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমন অবস্থায় আর্চ স্টিল সেতুর নির্মাণ শেষ হলে এসব ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলবে এবং সুফল পাবে ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী কে বি এম সাদ্দাম হোসেন বলেন, সেতুটি নির্মাণ হলে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর মাঝে যোগাযোগব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। ময়মনসিংহ অঞ্চলে অবস্থিত স্থলবন্দর, ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ স্থাপন সুগম করবে। নতুন নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি উন্মোচিত হবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বার। এর মাধ্যমে প্রসার ঘটবে এ অঞ্চলের পর্যটন খাত।

আজিজের দুর্নীতি তালাশে দুদক গোয়েন্দারা মাঠে

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৪, ০৯:২৮ এএম
আজিজের দুর্নীতি তালাশে দুদক গোয়েন্দারা মাঠে
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহে মাঠে নেমেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা। তারা গোপনে ঢাকা, চাঁদপুর সদর ও মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গোপনে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। গোয়েন্দা সদস্যরা মূলত আজিজের অবৈধ সম্পদ, অর্থপাচারসহ তার ভাইদের আর্থিক দুর্নীতি, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট জালিয়াতির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। এ বিষয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের একজন পরিচালকের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের গোয়েন্দা টিম কাজ করছে। 

এদিকে, আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ আমলযোগ্য কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক)। বিশেষ করে আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় আসা প্রতিবেদন এবং একজন আইনজীবীর দেওয়া অভিযাগপত্রের তথ্য-উপাত্ত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাবাকের সুপারিশ ও গোয়েন্দা টিমের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। এ ব্যাপারে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ গত বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগটি যাচাই করে দেখা হবে সেটি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের মধ্যে পড়ে কি না। অভিযোগ আমলযোগ্য হলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগটি যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

দুদকের কর্মকর্তারা খবরের কাগজকে জানান, সাধারণত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের অনুসন্ধান শুরুর আগে দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিটের মাধ্যমে গোপনে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। এসব তথ্য-উপাত্ত ও যাবাকের সুপারিশের ভিত্তিতে কমিশন অনুসন্ধান শুরু করার নির্দেশ দিয়ে থাকে। কমিশন অনুমোদন দিলে অনুসন্ধানের জন্য পৃথক কমিটি গঠন করা হয় এবং সেই কমিটি প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরু করে। প্রকাশ্যে অনুসন্ধানই মূলত দুদকের মূল অনুসন্ধান। আজিজ আহমেদের ক্ষেত্রে তেমনটাই হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য গোয়েন্দা সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। আগে এ ধরনের তথ্য সংগ্রহের জন্য সাধারণত মাসখানেক সময় পাওয়া যেত। কিন্তু এবার এই সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই কমিটির প্রতিবেদনের জন্য ১৫ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আগামী ১৫ জুনের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করার তাগিদ রয়েছে। 

গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান দুদকের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাহিদ।

এই টিমের অন্যতম সদস্য হলেন- মানিলন্ডারিং শাখার পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী, বিমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানবিষয়ক শাখার উপ-পরিচালক ফারুক আহমেদ, বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-৩-এর উপ-পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি, উপ-পরিচালক মো. নাজমুল হুসাইন, উপ-পরিচালক তানজির হাসিব সরকার ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নূর আলম সিদ্দিকী। প্রয়োজন হলে আরও কর্মকর্তাকে এই টিমে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। 

২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর সেনাপ্রধান ছিলেন আজিজ আহমেদ। ২০১২ সাল থেকে চার বছর সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেনাপ্রধান থাকাকালে তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে দুর্নীতিসংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিকে অবসরের পর গত ২০ মে ‘তাৎপর্যপূর্ণ দুর্নীতিতে’ জড়িত থাকার অভিযোগে আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয় যুক্তরাষ্ট্র। 

দুর্নীতি ছাড়াও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ২০১৪ সালে তার ভাই হারিছ আহমেদকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাইয়ে দেন। ওই ছবি পরিবর্তনের সুপারিশ করেছিলেন জেনারেল আজিজ। জেনারেল আজিজ ২০১৯ সালে নিজের এনআইডিতেও ছবি পরিবর্তন করেন। তার আরেক ভাই তোফায়েল আহমেদ জোসেফের নামে নিয়েছেন দুটি এনআইডি। এর একটি তানভির আহমেদ তানজীল নামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে করা হয়েছে। অন্যটি নিয়েছিলেন তোফায়েল আহমেদ জোসেফ নামে। তার তিন ভাই হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এ ছাড়া আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে জেনারেল আজিজের অবৈধ সম্পদের তদন্ত চেয়ে গত বুধবার দুদকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান। আবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির অভিযোগে জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। জাতিসংঘের শান্তি মিশনেও দেশের সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে প্রচণ্ডভাবে। দেশের সেনাবাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। দুদক এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হবে।

দুদকের গণশুনানি: পরিকল্পনা গত বছরের, বাস্তবায়ন এ মাসেই

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৪, ১১:৩৭ এএম
দুদকের গণশুনানি: পরিকল্পনা গত বছরের, বাস্তবায়ন এ মাসেই

সরকারি সেবা পেতে হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার ব্যক্তি এবং অভিযোগসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দায়িত্বশীলের বক্তব্য শুনে আইনের আলোকে তাৎক্ষণিক ও দ্রুততম সময়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে সময়ে সময়ে গণশুনানির ব্যবস্থা করে আসছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রায় ১০ বছর ধরে চলা এ কার্যক্রমে কখনো ভাটা পড়েছে, আবার কখনো জোরদার করতে দেখা গেছে। চলতি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের চারটি জেলায় দুদকের গণশুনানি। 

এই শুনানির পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছিল গত বছর। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে এই কর্মসূচি একাধিকবার স্থগিত করা হয়। সেই স্থগিত গণশুনানিগুলো চলতি মাসে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। এরই অংশ হিসেবে আজ রবিবার কুড়িগ্রাম সদর পৌরসভার শেখ রাসেল অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে গণশুনানি। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ জেলার বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানরা এতে অংশ নেবেন।  

এ ব্যাপারে শনিবার (১ জুন) দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘দুদকের ব্যাপক জনপ্রিয় কার্যক্রমের অন্যতম হলো গণশুনানি। এ কার্যক্রম গত বছরের শেষ দিকে এবং চলতি বছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। স্থগিত করা সেই গণশুনানি এ মাসেই কুড়িগ্রাম জেলাসহ চারটি জেলায় অনুষ্ঠিত হবে।’

রবিবার কুড়িগ্রামে, সোমবার ঠাকুরগাঁও, ৬ জুন নারায়ণগঞ্জ এবং ১২ জুন চাঁদপুরে গণশুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। গত বছর জুলাই মাসে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১১টি গণশুনানির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫টি গণশুনানি ওই বছর সম্পন্ন হয়। স্থগিত করা হয়েছিল ৬টি শুনানি। স্থগিত করা শুনানির মধ্যে গোপালগঞ্জ ও নওগাঁয় ইতোমধ্যে গণশুনানি সম্পন্ন হয়েছে। কুড়িগ্রামে গত বছর ১৬ নভেম্বর এবং ২১ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে শুনানি ধার্য ছিল। সবশেষ গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুরে গণশুনানি হওয়ার কথা ছিল। দুদকের কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছর গণশুনানির জন্য নতুন পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। আগামী মাসে (জুলাই) এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।

৪ মে দেশ ছাড়েন বেনজীর, এখন দুবাইয়ে

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৪, ১০:৪৭ এএম
৪ মে দেশ ছাড়েন বেনজীর, এখন দুবাইয়ে
বেনজীর আহমেদ

এক সময়ের প্রতাপশালী আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর নানামুখী চাপে রয়েছেন তিনি। দেশের গণমাধ্যমগুলোতে তার নামে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় নানা আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। এর মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে, তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুলিশের ইমিগ্রেশন শাখার এক কর্মকর্তা জানান, বেনজীর আহমেদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন। গত ৪ মে রাত পৌনে ১০টায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে করে তিনি সিঙ্গাপুরে গেছেন। ফ্লাইটে ওঠার আগে তিনি বিমাবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ চামিলি লাউঞ্জে কিছুক্ষণ ছিলেন। তার সঙ্গে তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে গেছেন। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য নয়, ব্যক্তিগত ভ্রমণে তিনি সেখানে গেছেন। 

শনিবার (১ জুন) সন্ধ্যায় বেনজীর আহমেদের সাবেক এক ব্যক্তিগত পিএস জানান, সিঙ্গাপুরে কিছুদিন থাকার পর তিনি এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। সেখানে তার এক বন্ধুর বাসায় তিনি রয়েছেন বলে জানা গেছে। দুবাইয়ে তার একাধিক ব্যবসা রয়েছে। সপরিবারে গেছেন তিনি। জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। ঢাকার বোটক্লাবসহ একাধিক ক্লাবে তিনি নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তবে জানা গেছে, দুদক ও আদালতে তিনি আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কনটেন্ট আকারে দেওয়ার জন্য তার একদল যুবক কাজ করছেন বলে জানা গেছে। শিগগিরই সেগুলো তার ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়াসহ বিভিন্ন গ্রুপভিত্তিক ফেসবুক পেজে দেওয়া হবে। সেগুলোতে তার আগের মতো বক্তব্য থাকবে। 

গত ৩১ মার্চ দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর তার বক্তব্য জানার জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যম যোগাযোগ করলে তিনি কোনো তথ্য দেননি। গত ২০ এপ্রিল তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগই মিথ্যা বলে দাবি করেন। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ২৫ মিনিটের এক ভিডিওবার্তায় এ দাবি করেন বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত কেউ যদি সেই তথ্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তবে সেই সম্পত্তি সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে হাসিমুখে লিখে দেবেন।

বিমানবন্দরের পুলিশের ইমিগ্রেশন শাখার এক কর্মকর্তা শনিবার জানান, একটি কালো কাচের গাড়িতে তিনি গত ৪ মে আসেন। তার সঙ্গে তার পরিবার ছিল। তবে তিনি ভিআইপি লাউঞ্জ চামেলিতে বেশিক্ষণ অবস্থান করেননি। ফ্লাইট ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে বিমানবন্দর এসেছিলেন। তার সঙ্গে যাতে কেউ কথা বলতে না পারেন এ জন্য তার দেহরক্ষীরা তৎপর ছিলেন। 

তার সাবেক পিএস জানান, তিনি দু-একদিনের মধ্যেই দেশে ফিরবেন। আইনি লড়াইয়ের জন্য তিনি একটি আইনজীবী প্যানেল গঠন করেছেন। আইনজীবীরা তার জন্য কাজ করছেন। আগামী ৬ জুন বেনজীর আহমেদকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তলব করা হয়েছে। আর ৯ জুন তার স্ত্রী ও তিন সন্তানকে ডেকেছে দুদক। 

হজযাত্রার শুরু ভালো হলেও নির্বিঘ্ন হলো না শেষটা

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৪, ১০:৩২ এএম
হজযাত্রার শুরু ভালো হলেও নির্বিঘ্ন হলো না শেষটা
হজ এজেন্সিগুলোর কঠোর অবস্থানের পরও শেষ সময়ে দেখা দিচ্ছে নানান জটিলতা ও অনিশ্চয়তা। ছবি: খবরের কাগজ

শুরু থেকেই হজ এজেন্সিগুলোর বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থেকে এবার অনেকটাই লাগাম টানা গেছে হজযাত্রীদের হয়রানি, ভোগান্তি আর প্রতারণার। কিন্তু শেষ সময়ে এসে এখনো কিছু হজযাত্রীর ভিসা না হওয়ায় তাদের সৌদি যাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, শেষ সময়ে ভিসা পাওয়া হজযাত্রীদের টিকিট পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ অনুবিভাগ) মো. মতিউল ইসলাম শনিবার (১ জুন) বিকেলে খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা গত বৃহস্পতিবার যে ৯ এজেন্সিকে চিঠি দিয়েছিলাম, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং চাপ দিচ্ছি, যেন তারা দ্রুতই নিবন্ধিত বাকি হজযাত্রীদের ভিসা আবেদনের কাজ শেষ করেন। তারা আমাদের জানিয়েছে, ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু যে বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তিত, তা হলো শেষ সময়ে ভিসা পেলেও তখন তাদের টিকিট পাওয়াটা অনিশ্চিত হবে।’

এ অবস্থায় আগামী ১২ জুন শেষ হচ্ছে হজ ফ্লাইট। কিন্তু এখনো নিবন্ধিত হজযাত্রীদের মধ্যে ২১০ জনের ভিসা হয়নি। গতকাল শনিবার রাজধানীর বিমানবন্দরস্থ আশকোনা হজ অফিস থেকে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, এ বছর গাইডসহ ৮৫ হাজার ১৮৫ জন নিবন্ধিত হজযাত্রীর মধ্যে ৮৪ হাজার ৯৭৫ জনের ভিসা হয়েছে। অর্থাৎ এখনো ভিসা হয়নি ২১০ জনের।

হজ অফিসের পরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভিসা হয়নি এমন কেউ আমাদের এখানে এখনো অভিযোগ করেননি। তবে তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছেন এবং মন্ত্রণালয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে।’ 

তবে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম খবরের কাগজকে বলেন, কিছু হজযাত্রী অসুস্থতা, মৃত্যু এবং অন্যান্য গুরুতর সমস্যার কারণে যাত্রা করবেন না। তাদের সংখ্যা কত, তা এখন বলা যাচ্ছে না। কিন্তু তারা এই ২১০ জনের মধ্যে পড়বেন। 

এ বছরের নিবন্ধিতরা ছাড়াও হজে পাঠানোর নামে ২০২৩ সালে ৪৪ জন হজযাত্রীর কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল ‘সাজিদ হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। টাকা নিয়ে ওই বছর প্রাক-নিবন্ধন করলেও চূড়ান্ত নিবন্ধন না করেই তারা আত্মগোপনে চলে যায়। যার কারণে হজযাত্রীরা আর হজে যেতে পারেননি। এরপর ভুক্তভোগীদের মামলায় গ্রেপ্তার হন এজেন্সি মালিক। পরে সেসব হজযাত্রীকে চলতি বছর (২০২৪) হজে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে জামিনে তিনি বের হন। কিন্তু বের হয়ে ফের পলাতক রয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় এজেন্সি মালিককে গ্রেপ্তার এবং ওই হজযাত্রীদের হজে পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে মতিউল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর অভিযোগের ভিত্তিতে এই এজেন্সির বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। কিন্তু ভুক্তভোগীরা পরে এজেন্সি মালিকের সঙ্গে সমঝোতা করায় ওই এজেন্সি মালিক ছাড়া পান। ফলে এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। তারা আবার আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে হয়তো আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর শুরু থেকেই আমাদের একটাই লক্ষ্য, যেন সব নিবন্ধিত হজযাত্রী নির্বিঘ্নে হজে যেতে পারেন। সে জন্য আমরা শুরু থেকেই সবকিছু নজরে রাখছি। এবার সব প্রক্রিয়া অনলাইনে হওয়ায় আমাদের মনিটরিং করতে সুবিধা হচ্ছে। তাই যখন যার ত্রুটি ধরা পড়ছে, তাকে আমরা নোটিশ করছি। পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থা নিতে সবাইকে চিঠির মাধ্যমে নোটিশ করা হচ্ছে। যাতে তারা না মানলে পরে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’ 

পবিত্র হজ পালন করতে শনিবার (১ জুন) রাত আড়াইটা পর্যন্ত সৌদি পৌঁছেছেন ৫৩ হাজার ১৮০ জন হজযাত্রী। মোট ১৩৬টি ফ্লাইটে তারা দেশটিতে পৌঁছান। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ৭৪৭ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী ৪৯ হাজার ৪৩৩ জন। আবেদন করা শতভাগ ভিসা ইস্যু করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার রাত ২টা ৩০ মিনিটে প্রকাশিত ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজবিষয়ক বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এয়ারলাইনস, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হজ অফিস ঢাকা এবং সৌদি আরব সূত্রে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হেল্প ডেস্ক এ তথ্য জানিয়েছে।

হেল্প ডেস্কের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত মোট ১৩৬টি ফ্লাইটের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৬৮টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ৪৩টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ২৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। গতকাল পর্যন্ত মোট ফ্লাইটের ৬৪ দশমিক ১ শতাংশ ফ্লাইট আর মোট হজযাত্রীর মধ্যে ৬৪ শতাংশ সৌদি পৌঁছেছেন। হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত আটজন মারা গেছেন। 

উল্লেখ্য, গত ৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদির উদ্দেশে যাত্রা করে। এর মাধ্যমেই চলতি বছরের হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। হজের শেষ ফ্লাইট যাবে ১২ জুন। সৌদি আরবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী হজ এজেন্সির সংখ্যা ২৫৯। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট ২০ জুন, আর শেষ ফিরতি ফ্লাইট ২২ জুলাই।