প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা-মাছের ডিম সংগ্রহে এখন অপেক্ষা করছেন ৬৫০ জন মৎস্যজীবী। এ ছাড়া সংগৃহীত ডিম থেকে পোনায় রূপান্তরের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৬৮টি কুয়া। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সরকারি ৪টি হ্যাচারি। গতকাল সোমবার রাতেই ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে গত ৩ মে ডিম সংগ্রহকারীদের জালে পাওয়া যায় অল্পসংখ্যক মা-মাছের নমুনা ডিম। এরপর থেকেই শুরু হয় অপেক্ষার পালা। যেকোনো সময় মা-মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন মৎস্যজীবীরা।
এদিকে সোমবার দিনভর চট্টগ্রামের ১২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রাম পতেঙ্গা কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাথ তঞ্চঙ্গ্যা খবরের কাগজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের জেলা-উপজেলায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। হালদার উজানে কিছু কিছু খালে পাহাড়ি ঢল নেমেছে। নগরের বেশ কিছু এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।’
অন্যদিকে হালদা বিষেজ্ঞরা জানান, সোমবারের বৃষ্টি হচ্ছে হালদার মোক্ষম সময়। এ বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত ছিল। এতেই মা-মাছরা ডিম ছাড়ে। তাই বিপুল পরিমাণ ডিম পাওয়ার আশা ডিম সংগ্রহকারীদের।
রাউজান উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ডিম সংগ্রহের জন্য ৩৫০টি নৌকা, ৪০০টি জাল ও ৬৫০ জন ডিম সংগ্রহকারী প্রস্তুত রয়েছেন। এ ছাড়া সরকারিভাবে পোনা তৈরিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে অঙ্কুরীঘোনা মৎস্য বিভাগের হ্যাচারি। মৎস্যজীবীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৬৮টি মাটির কুয়া তৈরি করেছেন।
পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকার মৎস্যজীবীরা জানান, পূর্ণিমার সময় টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হালদায় কার্প জাতীয় মা-মাছ ডিম ছাড়ে। যেহেতু নমুনা ডিম ছেড়েছে, তাই মা-মাছ যেকোনো সময় ডিম ছাড়তে পারে।
হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুক ময়েদুজ্জামান বলেন, ‘মৎস্য অধিদপ্তরের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। পোনা তৈরির জন্য ৪টি হ্যাচারি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নদীতে বালুবাহী যান্ত্রিক বোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আশা করছি, গতবারের চেয়ে বেশি ডিম পাওয়া যাবে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, এপ্রিল-জুনে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটার যেমন: পানির তাপমাত্রা, স্রোত, পানির স্তর, তড়িৎ পরিবাহিতা, টারবিডিটি, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ ইত্যাদির মিথস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা-মাছ ডিম ছাড়ে।
গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে মা-মাছের ডিম ছাড়ার প্রক্রিয়া। তবে সোমবার রাতে ডিম ছাড়ার একটি যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। হালদার উজানে পাহাড়ি ঢল নেমেছে বলে জানতে পেরেছি। মা-মাছের ডিম ছাড়ার অধিক সম্ভাবনা রয়েছে রাতে। এ ছাড়া মঙ্গলবার দিনভরও ডিম পাওয়া যেতে পারে। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় এটা আমাদের ধারণা।’
এদিকে ডিম ছাড়ার মৌসুম ঘিরে হালদা নদীর দুই পাড়ে প্রতিবছরের মতো নৌকা ও ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে সংগ্রহকারীরা নিষিক্ত ডিম ধরার অপেক্ষায় আছেন।
বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী হালদা, যেখান থেকে কার্প জাতীয় মাছের সরাসরি নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। হাটহাজারী-রাউজান-ফটিকছড়ি উপজেলা সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদার পোনা হ্যাচারি পোনার চেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল। ডিম সংগ্রহকারীরা হ্যাচারির কুয়া ও স্থানীয়ভাবে মাটির কুয়া তৈরি করে অপেক্ষায় থাকেন, মা-মাছ কখন ডিম ছাড়বে। নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে তা থেকে রেণু ফুটিয়ে বাজারজাতের মাধ্যমে টাকা আয় করেন আহরণকারীরা। রেণু বিক্রি ও মাছ চাষের মাধ্যমে পুরো বছর জীবিকা নির্বাহ করেন ডিম সংগ্রহকারীরা।