ঢাকা ৮ চৈত্র ১৪৩১, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
English

২০ কোটি বই সরবরাহ বাকি শিখন ঘাটতির ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ এএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম
শিখন ঘাটতির ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা
ছবি: সংগৃহীত

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রায় ২০ কোটি বই এখনো ছাপা ও বাঁধাই করা বাকি। শিক্ষাবর্ষ শুরুর মাস পার হলেও দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে সব বই সরবরাহ করা যায়নি। অনলাইনে পিডিএফ ভার্সনের বই পাওয়া গেলেও প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এর সুফল পাচ্ছে না। আবার পিডিএফ থেকে পড়াতে গিয়েও শিক্ষকরা নানান ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কম থাকায় তৈরি হচ্ছে শিখন ঘাটতি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানুয়ারির মধ্যে সব বই দেওয়ার টার্গেট নিলেও সেটি এখন ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাঁধাইকারক না থাকায় বই সরবরাহ করতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘মোটামুটি ২৩-২৪ কোটি বই চলে গেছে। ৩-৪ কোটি বই প্রিন্ট হয়েছে। প্রকাশকদের ব্যাংক লোন, কাগজ আমদানিসহ সবক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা করেছি। এখন নতুন সংকট শুরু হয়েছে। বাঁধাইকারক পাওয়া যাচ্ছে না। তারা নোট-গাইড বই বাঁধাইয়ের কাজ করছেন। এ কারণে আমরা কয়েক জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। এই কাজও এনসিটিবিকে করতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বই ছাপার ক্ষেত্রে কোনো সংকট হতো না, যদি আমরা বিগত বছরের মতো কোয়ালিটির দিক থেকে কমপ্রোমাইজ করতাম। আমরা মানের দিক থেকে কোনো ছাড় দেব না। খারাপ কাগজ দিচ্ছি না বলে তাদের (প্রকাশকদের) মনে কষ্ট। তারা যেকোনো মূল্যে সংকট সৃষ্টি হলে সুযোগ নেওয়ার জন্য তৈরি থাকেন। এবার না পেরে তারা প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করছেন।’

শিখন ঘাটতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘কারিকুলাম, মূল্যায়ন পদ্ধতির কারণে আগেই শিখন ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। এরপরে জুলাই আন্দোলন। বার্ষিক পরীক্ষায় আমরা পরিবর্তন এনে কিছুটা দূর করার চেষ্টা করেছি। বেশি ঘাটতিতে ছিল দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। তাই তাদের জন্য আলাদা করে আর্মি প্রেস দিয়ে এক কোটি বই সরবরাহ করেছি। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি এবং ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নবম শ্রেণির বই দেওয়ার টার্গেট রয়েছে। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করছি।’

এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৩৪ লাখ। তাদের জন্য এনসিটিবি ৪০ কোটির বেশি বই ছাপার পরিকল্পনা নেয়। কারিকুলাম পরিবর্তন, বই পরিমার্জন, ওয়ার্ক অর্ডারসহ নানা কারণে বই ছাপার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর সময় এনসিটিবি জানুয়ারির মধ্যে সব বই ছাপা ও বিতরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু মাস পার হলেও সব বই সরবরাহ করা যায়নি।

এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক আবু নাসের টুকু গত বুধবার খবরের কাগজকে বলেন, প্রাথমিকের ৮০ শতাংশ বই ছাপা হয়েছে। অর্থাৎ ৯ কোটি ১৯ লাখ বইয়ের মধ্যে ৭ কোটি ৬৩ লাখ বই ছাপা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিতরণ নিয়ন্ত্রক হাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘মঙ্গলবার পর্যন্ত মাধ্যমিকের ১২ কোটি ১০ লাখ বই ছাপানো হয়েছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বই সরবরাহ করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা জানা গেছে, পাঠ্যবই না পেয়ে তাদের মধ্যে পড়ালেখার প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে এখনো একটি বইও পায়নি এ রকম শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষকরা ক্লাসে পিডিএফ দেখে পড়াচ্ছেন। কিন্তু তাতে শিক্ষার্থীরা খুব একটা মনোযোগ দিচ্ছে না। অনেক শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ছে তারা।

রাজধানীর কুর্মিটোলা হাইস্কুলের একজন অভিভাবক খবরের কাগজকে বলেন, অনলাইন কপির চেয়ে হার্ডকপির বইয়ে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বেশি থাকে। শুরুতে পাঠ্যবই না পাওয়ায় তারা পিছিয়ে পড়ছে।

খেলাপি ঋণের ৭১ শতাংশই শীর্ষ ১০ ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪০ এএম
আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ১১:১৬ পিএম
খেলাপি ঋণের ৭১ শতাংশই শীর্ষ ১০ ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কয়েকটি ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি বড় খেলাপির কাছেই আটকে রয়েছে মোটা অঙ্কের ঋণ। অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি মাত্র কয়েকটি ব্যাংকেই রয়েছে খেলাপি ঋণের সিংহভাগ। ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৭০ দশমিক ৮৪ শতাংশই রয়েছে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের কাছে। খেলাপি ঋণে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের কাছে রয়েছে মোট খেলাপির ৫০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে’ এই তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনটি সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তথ্য নিয়ে করা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক ডিসেম্বর প্রান্তিকের খেলাপি ঋণের তথ্যও প্রকাশ করেছে। সেখানে খেলাপি ঋণের আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে যা বেড়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা হয়েছে। এটা মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক সেপ্টেম্বর শেষে এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের সময়ে কয়েকটি ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যার বেশির ভাগই এখন খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বাড়লে প্রভিশনের পরিমাণ বাড়ে। এটা যদি মুনাফা থেকে মেটানো না যায়, তাহলে মূলধনের ওপর প্রভাব পড়ে। অর্থাৎ মূলধন কমে যায়। তখন ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো ডিভিডেন্ড দিতে পারে না। ফলে শেয়ারের দাম কমে যায়। খেলাপি ঋণের নতুন নিয়ম কার্যকর হলে এর পরিমাণ আরও বাড়বে, যা ৩০-৩৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে খেলাপি ঋণে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের কাছে রয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। যা মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকের বেশি বা প্রায় ৫১ শতাংশ। বাকি ৫৬টি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ রয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭১০ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকের কম বা ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ। এদিকে খেলাপি ঋণের শীর্ষে ১০ ব্যাংকে রয়েছে ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ৭০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। বাকি ৫১টি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ রয়েছে ৮৩ হাজার ৮৭ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ২৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মানদণ্ড অনুযায়ী, ঝুঁকি কমাতে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ তাদের মোট ঋণের ৫ শতাংশের কম থাকতে হবে। এর বেশি থাকলে ওই ব্যাংককে ঝুঁকিপূর্ণ শনাক্ত করা হয়। এদিকে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩ শতাংশের বেশি হলেই তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মানদণ্ডে খেলাপি ঋণের দিক থেকে ৪১ ব্যাংকই ঝুঁকিতে, বর্তমানে ৫০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে ৭টি ব্যাংকে। আলোচ্য সময়ে মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে ৮২ শতাংশই আদায় অযোগ্য মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। ফলে এসব ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা কম।

এদিকে সম্পদের গুণগত মান কমার কারণে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বেড়ে গেছে। মাত্রাতিরিক্ত হারে এ সম্পদ বাড়ায় এর বিপরীতে নির্ধারিত হারে প্রভিশন রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতের ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েটেড অ্যাসেট রেশিও (এআরএআর) বা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ মূলধন সংরক্ষণের অনুপাত বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে কমপক্ষে ১৬টি ব্যাংক। যদিও জুন প্রান্তিক শেষে এমন ব্যাংকের সংখ্যা ছিল ১১টি। এতে সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে এআরএআর ৭ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে অন্তত ১০ শতাংশ এআরএআর রাখতে হয়। 

এআরএআর একটি ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা পরিমাপ করে, যেখানে মূলধনকে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এটি নিশ্চিত করে যে, ব্যাংক সম্ভাব্য ক্ষতি সামাল দিতে এবং আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতের সামগ্রিক এআরএআর ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমেছে, যা জুন প্রান্তিক শেষে ছিল ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সেগুলোর বিপরীতে প্রভিশন বেশি রাখতে হচ্ছে। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের রিস্ক ওয়েটেড অ্যাসেটের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। অন্যদিকে এসব অ্যাসেট ব্যাংক খাতের পুঞ্জীভূত ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে, যেটি আদতে মূলধনকে কমিয়ে দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, খেলাপি ঋণের পাশাপাশি সম্পদও গুটিকয়েক ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর শেষে মোট সম্পদের ৩১ দশমিক ৩৯ শতাংশ শীর্ষ ৫ ব্যাংকের হাতে রয়েছে। শীর্ষ ১০ ব্যাংকের হাতে রয়েছে ৪৬ দশমিক ১০ শতাংশ সম্পদ। মূলত এই কয়েকটি ব্যাংকেই গ্রাহকের আস্থা বেশি। ফলে এসব ব্যাংকে সম্পদের পরিমাণও বাড়ছে। 

আগে বছরে একবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে এটি তিন মাস অন্তর প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে আর্থিক খাতের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে ঝুঁকির মাত্রা ও এগুলো মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

প্রিয়জন নেই, তবুও কিনছেন নতুন পোশাক

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪৩ পিএম
প্রিয়জন নেই, তবুও কিনছেন নতুন পোশাক
রাজধানীর বঙ্গবাজার এলাকায় একটি মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা। ছবি: খবরের কাগজ

করোনাভাইরাস মহামারিতে মা লাবণী আক্তারকে হারিয়েছেন মোহাম্মদ শাওন। এর দুই বছর পর কন্যাসন্তান নদীও মারা যায় দুরারোগ্য ব্যাধিতে। ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আজহা; কোনো ঈদই তাই আর তার ঘরে বিশেষ আনন্দ বয়ে আনে না। তবুও শাওন তার প্রয়াত মা ও কন্যাসন্তান স্মরণে ঈদে নতুন পোশাক কিনতে আসেন সদরঘাটের চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের গ্রেটওয়েল শপিং সেন্টারে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শাওন শোনালেন তার এই গল্প। 

মা ও মেয়ের স্মরণে প্রতিবছর কোনো একটি বৃদ্ধাশ্রম ও এতিমখানায় অন্তত দুজন বৃদ্ধা মা বা অনাথ দুই কন্যাকে নতুন কাপড় উপহার দেন তিনি। শাওন বলেন, মা ও মেয়েকে তো ফিরে পাব না। আমার ঘরে তাই কখনো ঈদ আসে না। বৃষ্টি হোক বা না হোক, প্রতি ঈদেই আমার ঘর ভাসে চোখের জলে। তাই এ মনকে শান্ত করতে আমি বৃদ্ধা মায়েদের কাছে যাব এবার।

কথা বলতে বলতে শাওনের গলা ধরে আসে। হাফ সিল্কের শাড়ি দেখাচ্ছিলেন বিক্রেতা আফজাল হোসেন। শাওনের সঙ্গে আলাপের সময় কয়েকবার শার্টের আস্তিনে চোখ মুছেছেন তিনি। ফিরে যখন আসছিলাম তখন আফজাল বলেন, ‘ভাই আমারও মা নেই পাঁচ বছর। আমার ঘরেও ঈদ আসে না। ঈদের সকালে ঘরে সবাই নতুন কাপড় পরবে। কিনেও দেব। বউয়ের কথায় আমিও একটা পাঞ্জাবি পরব। কিন্তু যাকে দেখালে সবচেয়ে খুশি হতেন, সেই মা-ই যে নেই আমার।’ 

গুমোট কান্না নাকি সংক্রমিত হয়। তাই উঠে পড়তে হলো। গেলাম সাউথ সিটি শপিং কমপ্লেক্সে। 

বিক্রেতাদের জিজ্ঞাসা করলাম, এবার ঈদে ট্রেন্ড কী? কোন দেশি পোশাক চলছে বেশি? অরুণ রায় নামে এক তরুণ ব্যবসায়ী বলেন, এবার ঈদে কোনো নাটুকে পোশাক রাখিনি আমরা। এর আগেও রাখিনি। আমাদের এখানে ছোট্ট মেয়েদের ফ্রক, থ্রি-পিস যা কিছু দেখবেন, সবই দেশি দর্জির হাতে তৈরি। ক্রেতাকে বোকা বানানোর ব্যবসা করি না আমরা।

এ মার্কেটে ঈদের পোশাক কিনতে এসেছেন সানজিদা ইসলাম লাবণ্য। দু-তিনটি দোকান ঘুরছিলেন জামদানি শাড়ি কিনবেন বলে। কথা হতে তিনি বলেন, এই মার্কেট থেকেই কেনাকাটা করি সব সময়। কিন্তু দেখুন এই ঈদের আগে এরা এত টাকা দাম চাইছে, বাজেটে কুলাচ্ছে না। 

তার কথার প্রতিবাদ করে উঠলেন দোকানি। মধ্যবয়স্ক বিক্রেতা আজানুলম্বিত দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বলেন, ‘আপায় যে কী কন! এ ঈদে একটু লাভের মুখ কি আমরা দেখব না আপা?’ 

ক্রেতা, বিক্রেতার তর্কাতর্কির মধ্যেই দোকানটি থেকে কাতান শাড়ি কিনে নিলেন লিপি আক্তার। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লিপি জানালেন, এ শাড়িটি তিনি কিনেছেন নতুন ভাবির জন্য। গত সপ্তাহে তার ভাই বিয়ে করেছেন। তিনি বলেন, ‘শুধু শাড়ি না, ভাবির জন্য অনেক কসমেটিকসও কিনতে হবে।’

এবার একটু অন্য মার্কেটে গেলাম। বাকল্যান্ড বেড়িবাঁধ রোডে যে কাপড়ের দোকানগুলো রয়েছে, সেখানেও বেশ জমজমাট বিক্রি। ক্রেতাদের সবাই যে নিম্নবিত্ত, তাও নয়। অনেক মধ্যবিত্ত ক্রেতাও কম দামে কিছু পোশাকের খোঁজে এসব মার্কেটে আসেন। বিক্রেতা মো. রবিউল আলম বলেন, ‘আমাদের এ এলাকার দোকানগুলো বিকেল হতেই জমে ওঠে। লঞ্চে করে বাড়ি ফেরার পথে অনেক মানুষ কেনাকাটা করেন। এখানে গজ কাপড় থেকে শুরু করে থান কাপড়, লুঙ্গি, স্যান্ডো গেঞ্জি, হাফ প্যান্ট, এক কথায় প্রতিদিন পরার কাপড় সবকিছু পাওয়া যায়। দামেও একটু সস্তা। তাই অনেকে গাড়ি নিয়ে কিনতে আসেন আমাদের দোকানে।’ 

সদরঘাট থেকে ফিরছি যখন ঘড়ির কাঁটায় বেলা ৩টা। জনসন রোড, প্যারিদাস রোড, ইংলিশ রোডে অস্থায়ী দোকানগুলোতে তখন ভিড় লেগে আছে। কেউ কিনছেন জুতা, কেউ লুঙ্গি বা গামছা। ক্রেতাদের অধিকাংশই শ্রমিক। রিকশাযোগে ফিরছিলাম চানখাঁর পুলে।  বংশালের মকিম বাজার এলাকায় আসতেই যানজট লেগে গেল। রিকশাচালক বাবুল মিয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম কেনাকাটা করেছেন কি না। চোখ-মুখের ঘাম মুছে তিনি বলেন, ‘বাবার জন্য নতুন লুঙ্গি কিনছি আর মায়ের জন্য একটি শাড়ি। ঈদে বাড়ি গেলে কিছু খরচাপাতি আছে। এখনো টাকার ব্যবস্থা হয়নি। টানাটানির সংসার মামা। পেটেভাতের চিন্তা করতেই আর টাকা জমাইতে পারি না। ঈদ এলে তাই টেনশন বাড়ে।’ 

যানজট ছেড়ে রিকশা এগিয়ে চলে। বাবুল মিয়ার মতো অগণিত শ্রমিক ঘরে ফিরবেন আরও সপ্তাহখানেক পরে। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবেন। তবে সবার হাতে কি থাকবে নতুন পোশাক?

হঠাৎ আলোচনায় ‘উগ্রবাদ’

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০২:৫৯ পিএম
আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:০১ পিএম
হঠাৎ আলোচনায় ‘উগ্রবাদ’
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

ধর্মীয় উগ্রবাদ নিয়ে দেশের ভেতরে-বাইরে নানা আলোচনা থাকলেও বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসছেন। পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, নির্বাচন সামনে রেখে এই বক্তব্যের নানামুখী তাৎপর্য রয়েছে। তারা বলছেন, তারেক রহমান নিজে ‘কথার কথা’ হিসেবে এই বক্তব্য দেননি। বরং বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই এই বক্তব্য দিয়েছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং পশ্চিমা বিশ্বের মনোভাব বিবেচনায় নেওয়ার পাশাপাশি দেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য এমন কথা বলেছেন।

গত বুধবার এক ইফতার মাহফিলে তারেক রহমান বলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা ও চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হলে তাদের সঙ্গে নিয়ে পরাজিত অপশক্তি দেশে ফের গণতন্ত্রের কবর রচনা করবে।

হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ধর্মীয় উগ্রবাদ নতুন করে আলোচনায় আসছে। বিভিন্ন স্থানে মাজার ভাঙা, একটি জাতীয় দৈনিকের সামনে গরু জবাই করে ‘জিয়াফত’ নামে খাবারের আয়োজন করা, নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের মিছিল এবং তৌহিদি জনতার নামে ইসলামপন্থিদের তৎপরতা বেড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের টানাপোড়েন থাকায় সে দেশের মিডিয়াও এসব ঘটনা সামনে নিয়ে আসছে। ছড়ানো হচ্ছে অপতথ্যও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, এক্সেও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ইসলামপন্থি দল হিসেবে পরিচিত জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতসহ বিভিন্ন ইসলামপন্থি দলের তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো। দেশে এমন আলোচনা ও গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে- দেশ আবার ডানপন্থিদের হাতে চলে গেল কি না। আদর্শিক ও নীতিগত কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের বিরোধও স্পষ্ট হয়েছে।

অনেকের মতে, বাংলাদেশে সংঘটিত ঘটনাগুলোর সূত্র ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড এসব কথা বলার সুযোগে পেয়েছেন। বিএনপি এবং তারেক রহমান মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকলে একদিকে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হবে; যাতে নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে ‘উগ্রবাদে’র ট্যাগ দেওয়া হতে পারে বলে বিএনপি মনে করছে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ খবরের কাগজকে বলেন, যেকোনো ধরনের উগ্রবাদ, চরমপন্থা কোনো গণতান্ত্রিক সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশে উগ্রবাদ বা চরমপন্থা রাজনীতির প্রধান ধারা নয়। এগুলো হচ্ছে রাজনীতির মধ্যে বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্ন ধারা। তবে তাদের কণ্ঠস্বর অনেক উঁচু এবং তাদের কথা বেশি শোনা যায়। সে জন্য তাদের একটা প্রবল শক্তি হিসেবে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় চরিত্র হচ্ছে মডারেশন বা মধ্যপন্থা। এখানে সেই ধরনের তৎপরতা বাড়ার আশঙ্কা নেই। যদি করতে থাকে, সেটাকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করা উচিত। সমাজের মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা উচিত।

তারেক রহমানের এই বক্তব্য দেওয়ার কয়েকটি কারণ আছে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্রথমত এখানে ভারতের একটা ডিজাইন আছে। তুলসী গ্যাবার্ড আসার পর নতুন মাত্রা পেয়েছে। তাকে নিয়ে একটা কনট্রোভার্সি বা বিতর্ক হয়েছে। বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনও নাকি উদ্বিগ্ন। আমাদের দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ক্রমান্বয়ে প্রোপাগান্ডা করে যাচ্ছে ভারতের মিডিয়া। বাংলাদেশে উগ্রবাদীরা ব্যাপক সক্রিয় প্রমাণ করতে পারলে দুটি দেশের (ইউএসএ ও ইসরায়েল) শর্তহীন সমর্থন পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে ইসলামি শক্তির একটা তৎপরতা বেড়েছে। তার জন্য ভারত চিন্তা করে, তাদের আশপাশে মুসলমান আছে। পশ্চিমবঙ্গে এবং আসামে। মাঝখানে বাংলাদেশ। এ জন্য তারা মনে করে, এখানে তাদের সমস্যা হতে পারে।’ 

দ্বিতীয়ত, বিজেপির মধ্যে একটা চিন্তা আছে। তৃতীয়ত, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দ্বন্দ্ব চলছে। এটাও একটা কারণ। 

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক খবরের কাগজকে বলেন, উগ্র ধর্মবাদে তো গণতন্ত্রের স্থান নেই। মুসলিম মৌলবাদ যদি বলেন, আফগানিস্তান, ইরানে যার উদারহণ আছে। এসব দেশে তো পশ্চিমা অর্থে গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রকে তো তারা বিশ্বাস করে না। আলেম-ওলামারা মজলিসে শুরার মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করবেন। আমার মনে হয়, ওই অর্থেই বলেছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র হলো ২০০ বছরের ব্যাপার। তার আগে গণতন্ত্র তো কোথাও ছিল না। তার আগে যে সমাজ-রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিল, সেটা তো গণতান্ত্রিক ছিল না। যদি পুরোনো চিন্তাতেই দেশ চলে, সেটায় তো গণতন্ত্র থাকবে না। আমার মনে হয়, তারেক রহমান ওই অর্থে বলেছেন। আগে রাজা-বাদশাহ-সম্রাট ছিল, সেখানে তো গণতন্ত্র ছিল না। তারা যদি বলেন, মুঘল সাম্রাজ্য যেভাবে চলছে, সেটা ভালো ছিল, আমরা সেভাবেই দেশ চালাব। তাহলে স্বাভাবিকভাবে গণতন্ত্রের স্থান চলে যায়।’

অন্যদিকে বাংলাদেশে ভারতের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্ব ধর্মীয় উগ্রবাদ দেখতে চায় না। সাম্প্রতিক সময়ে তুলসীর বক্তব্য থেকে এ রকম আভাস পাওয়া গেছে। যদিও তুলসীর বক্তব্যটা নিজ থেকে ছিল না, প্রশ্নের উত্তরে ছিল। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। 

বিএনপি সব সময়ই ‘ডানের বামে এবং বামের ডানে’ এমন অবস্থান স্পষ্ট করে বলছে, তারা মধ্যপন্থি দল। দলটির নেতাদের ভাষায় বিএনপি একটি ‘আধুনিক মধ্যপন্থি দল’। ফলে দলটি কিছুতেই মৌলবাদ বা উগ্রপন্থার দায় নিতে রাজি নয়। দলটির নেতাদের পাশাপাশি শুভান্যুধায়ীরা মনে করেন, জামায়াত ও ইসলামপন্থিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে গত ১৭ বছর তাদের ক্ষমতার বাইরে থাকতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পর পরই বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে। কিন্তু দলটি তখন ওই ঘটনার তাৎপর্য ঠিকমতো বুঝতে পারেনি বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন।

নাইন-ইলেভেন নামে পরিচিত ওই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ছিল পৃথিবী থেকে মৌলবাদকে নির্মূল করা। এ জন্য তারা মধ্যপ্রাচ্যে, আফগানিস্তানে আক্রমণ করেছে। ইরাকে আক্রমণ করেছে। ইসরায়েল ও গোটা পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থনের পাশাপাশি ওই ঘটনার পর ভারতকে তারা মিত্র হিসেবে পায়। আর ভারতের সমর্থন পেয়ে আওয়ামী লীগ তখন এর সুবিধা লাভ করে এবং বিনা ভোটে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার সুযোগ লাভ করে। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, নাইন-ইলেভেনের তাৎপর্য বিএনপি বুঝতে সক্ষম হয়নি। কিন্তু একই সময়ে ভারত এবং আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উগ্রবাদ নিয়ে মিত্র হয়। যে কারণে বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। একই সময়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ও হেফাজতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। চারদলীয় জোটের সময় বিএনপিকে ধর্মান্ধতার ট্যাগ দেওয়া হয়। জামায়াত থাকায় স্বাধীনতাবিরোধী ট্যাগও দেওয়া হয়। কিন্তু ভোটের রাজনীতির কারণে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়েনি। ৫ আগস্ট নতুন বাস্তবতায় বিএনপি সবদিক রক্ষা করে ক্ষমতায় যেতে চায়। তাই বিএনপি ভারত কিংবা যুক্তরাষ্ট্র অসন্তুষ্ট হতে পারে, এ রকম কর্মকাণ্ড বা পলিসিতে যাবে না। 

সার্বিক বিষয়ে বাংলা একাডেমির সভাপতি ও রাষ্ট্রচিন্তক অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম ফজলুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটা একটা চাপ হিসেবে আসছে। সরকারকে কঠোর বিধিবিধান করতে হবে ধর্মীয় উগ্রপন্থা নিয়ে, যা আইন আছে তার প্রয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা অনেক শক্তিশালী। এনএসআই, ডিজিএফআই, সিআইডিকে কাজে লাগাতে হবে। তারা যদি কাজ করে তাহলে ধর্মীয় উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমাদের দেশের জন্য জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ খুবই ক্ষতিকর। ইসলামের নামে তারা জঙ্গিবাদ করে, যেটা খাঁটি ইসলাম নয়।’

অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন: দুপক্ষেরই পাল্টাপাল্টি যুক্তি

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০১:১৬ পিএম
আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ০১:১৭ পিএম
অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন: দুপক্ষেরই পাল্টাপাল্টি যুক্তি
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গত ১০ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘অধ্যাদেশের মাধ্যমেও সংবিধান সংশোধন করা সম্ভব, অতীতে বাংলাদেশে এটা হয়েছে।’ তার এই বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টসহ আইন অঙ্গন এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের একটি বক্তব্য আবার সামনে এসেছে। গত নভেম্বরে দেওয়া ওই বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অধ্যাদেশ আকারে সবকিছু করা যাবে, শুধু সংবিধান সংশোধন ছাড়া।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৪ মার্চ অধ্যাপক আলী রীয়াজ দৈনিক খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ কথার মাধ্যমে আমি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চার বছরের সব প্রোক্লেমেশনকে বুঝিয়েছি। যার কয়েকটি সংবিধানের পরিবর্তন বিষয়েও ছিল। এগুলো পরবর্তী সময়ে সংসদে সংবিধানের সংশোধনী হিসেবে গৃহীত হয়।’

ওই সময় সংবিধান বহাল ছিল না। এখন সংবিধান বহাল আছে। সংবিধান বহাল থাকা অবস্থায় অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন নিয়ে আইন অঙ্গনে ভিন্নমত আছে। বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে আলী রীয়াজ বলেন, ‘তখনকার বিষয়গুলো পরবর্তী সময়ে সংসদে সংবিধানের সংশোধনী হিসেবে গৃহীত হয়। বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে সংসদ থেকে এটিও সংবিধানে গৃহীত হতে সমস্যা হওয়ার কথা না।’

অধ্যাপক আলী রীয়াজের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমার বক্তব্য টুইস্ট করা হয়েছে। মিডিয়া মনগড়া হেডলাইন দিয়ে আমার বক্তব্য প্রকাশ করেছে। তাই আমি কোনো বিষয়েই কোনো মিডিয়াকে বক্তব্য দেব না। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি।’

আরেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার নাকি পুনর্লিখন হবে, এই নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয়েছে উনাকে (আলী রীয়াজ)। কিন্তু এই কমিশন করার আগেই উনি সংবিধান পুনর্লিখনের পক্ষে উনার অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ থাকার কারণে তাদের মতামত শুনছেন। তাই উনারা কী বলছেন, সেটি অত বেশি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার কিছু নেই। আশা করব মিডিয়াও উনাদের কার্যক্রম অত বেশি গুরুত্বের সঙ্গে নেবে না।’

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রথমে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা করা হয়। পরে তা পরিবর্তন করে গত ৭ অক্টোবর অধ্যাপক আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আলী রীয়াজের দেওয়া গত ১০ মার্চের ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে শাহদীন মালিক বলেন, ‘আমি গণমাধ্যমে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিচ্ছি না। এখনো দেব না।’

এ বিষয়ে রিটায়ার্ড জাজেজ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহজাহান সাজু বলেন, ‘অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করা যায় না। অতীত উদাহরণ দেখিয়ে অধ্যাদেশের মাধ্যমে যদি সংবিধান সংশোধন করা হয় বা আইন সংশোধন করা হয়- যাই করা হোক না কেন, তা রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে করতে হবে। না হয় পরবর্তী সংসদ যদি তা পাস না করে, তাহলে তো সব অর্থহীন হয়ে যাবে।’

ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম মিয়া বলেন, ‘অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করা যাবে না। শুধু আইন সংশোধন করা যাবে। তাও যদি তা জনস্বার্থে হয়। সুতরাং যা করা হচ্ছে, তা যে জনস্বার্থে করা হচ্ছে, এই বিষয়টিও নিশ্চিত হতে হবে।’

উল্লেখ্য সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘[সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় অথবা উহার অধিবেশনকাল ব্যতীত] কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট আশু ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে বলিয়া সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে তিনি উক্ত পরিস্থিতিতে যেরূপ প্রয়োজনীয় বলিয়া মনে করিবেন, সেইরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করিতে পারিবেন এবং জারি হইবার সময় হইতে অনুরূপভাবে প্রণীত অধ্যাদেশ সংসদের আইনের ন্যায় ক্ষমতাসম্পন্ন হইবে।’

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার অধীন কোনো অধ্যাদেশে এমন কোনো বিধান করা হইবে না, যাহাতে এই সংবিধানের কোনো বিধান পরিবর্তিত বা রহিত হইয়া যায়।’

প্রসঙ্গত গত ১০ মার্চ জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনা শুরু করতে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছে একটি ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করতে চায় কমিশন।
সম্মেলনে আলী রীয়াজ জানান, সংস্কারের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামত চেয়েছে কমিশন। দলগুলোর মতামত পাওয়ার পর শুরু হবে আলোচনা। আলোচনার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। যখন যে দলের মতামত পাওয়া যাবে, সে সময় থেকেই আলোচনার শুরু হবে।

সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর প্রতি যত দ্রুত সম্ভব মতামত জানাতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই। এই প্রক্রিয়ার পরের ধাপ রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করছে। আমরা চাই দ্রুত আলোচনা করতে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঐকমত্যে পৌঁছে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে।’

এদিকে গত ১৬ নভেম্বর ‘কেমন সংবিধান চাই’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে আইন, বিচার, সংবিধান ও মানবাধিকারবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে, যাদের রক্তের বিনিময়ে এখানে দাঁড়িয়ে সংবিধান সংশোধনের কথা বলা হচ্ছে, এটা তাদের প্রতি একধরনের শ্রদ্ধা জানানো। কিন্তু সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও চিন্তায় রাখতে হবে। কারণ, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে আছি বলে মনে হয়।’

অ্যাটর্নি জেনারেল সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বলেন, ‘এই প্রস্তাবগুলো বর্তমান সরকারের জায়গা থেকে সংবিধান সংশোধনের কোনো উদ্যোগ নিতে পারবে কি না, তা ভেবে দেখা দরকার। সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অধ্যাদেশ আকারে সবকিছু করা যাবে। শুধু সংবিধান সংশোধন ছাড়া।’

বেশি বয়সে সন্তান জন্মে ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকি

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০২:০০ পিএম
বেশি বয়সে সন্তান জন্মে ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকি
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

ডাউন সিনড্রোম একটি জেনেটিক রোগ। এটি হয় অতিরিক্ত ক্রোমোজোমের কারণে। এতে আক্রান্তদের বয়সের তুলনায় বুদ্ধির বিকাশ অনেক কম হয়। শরীরেও থাকে নানা ধরনের সমস্যা। শারীরিক বৃদ্ধি কম হওয়া, কানে কম শোনা, কথা দেরিতে বলা, বেখেয়ালি, নাক চ্যাপ্টা, চোখের মনি ওপরের দিকে ওঠানো থাকে, হাতের তালুতে একটি রেখা, হাত পা নরম হয়, শিশু অবস্থায় সর্দি লেগেই থাকে। এ ছাড়া অনেকের হার্টের সমস্যা, থাইরয়েডর সমস্যা, রক্তের রোগ, ক্যানসার, নিউমোনিয়া হয়। এসব শিশু দেখলেই বোঝা যায় তারা স্বাভাবিক নয়। 

পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে এমন রোগী রয়েছে অন্তত দুই লাখ। বিশ্বে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশি বয়সে সন্তান জন্মদানে ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকি বেশি। তাই তাদের পরামর্শ, কম বয়সে সন্তান জন্ম দেওয়ার। তারা বলছেন, ৩০ বছর বয়সের মধ্যে সন্তান ধারণ করলে সেই সন্তানের ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকি কম থাকে। 

বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। গর্ভকালীন সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। ৩৫-৪০ বছরের পর গিয়ে সন্তান জন্ম না দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এই বয়সের পর সন্তান জন্ম দিলেই তাদের ডাউন সিনড্রোমের আশঙ্কা থাকে।’

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানজিদা আহমেদ বলেন, ‘ধারণা করা হয়, দেশে প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে একজনের ডাউন সিনড্রোম। ৩৫ বছরের পর সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে ৩৫০ শিশুর একজনের এবং ৪০ বছরের পর প্রতি ১০০ শিশুর একজনের ডাউন সিনড্রোমের আশঙ্কা থাকে। সবচেয়ে কম আশঙ্কা থাকে ২০ বছরে সন্তান জন্মদানে। ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে সন্তান জন্মদানে ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকি কম থাকে। এ ছাড়া কারও যদি ডাউন সিনড্রোম সন্তান জন্ম নেয়, তারপরের সন্তানদেরও ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকি থাকে।’ 

তিনি বলেন, ‘ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত শিশুদের জন্মের পর তিন-চার বছর খুব ভালোভাবে পরিচর্যা করতে হবে। ডাক্তারের ফলোআপে থাকতে হবে। তাহলে জটিলতা অনেকটা কম হয়। যাদের একই সঙ্গে অন্য সমস্যা থাকবে, যেমন থাইরয়েড, হার্টের সমস্যা, রক্তের রোগ, তাদের সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।’

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেসের (নিনস) পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইয়ামিন শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন, ‘আমরা প্রায়ই ডাউন সিনড্রোমের রোগী পাই। এসব রোগীর যে সমস্যা বেশি হয়, সেটি হলো তাদের বুদ্ধির বিকাশ কম হয়। শারীরিক অনেক বিষয় শুরুতে চিকিৎসায় অনেকটা স্বাভাবিক করা গেলেও বুদ্ধির দিকটা পুরোপুরি ঠিক হয় না। জন্মের পর চোখ-নাক, কান দেখেই এসব শিশু শনাক্ত করা যায়। তাদের কান ছোট থাকে। নাক চ্যাপ্টা থাকে। হাতের তালুতে একটা রেখা থাকে। আরও কিছু প্যারামিটার আছে। যেগুলো দেখে চিকিৎসকরা নিশ্চিত হতে পারেন। তারপর পরীক্ষা করা হয়। বারডেম এবং বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার পর কিছু থেরাপি আছে সেগুলো নিয়ে অনেকটা উন্নতি করা যায়। আগের তুলনায় এসব মানুষের গড় আয়ু অনেকটা বেড়েছে। আগে যেখানে তারা ২০-৩০ বছর বাঁচতেন এখন সেখানে ৫০-৫৫ বছর বাঁচে থাকেন।

ক্রোমোজোম-সংক্রান্ত রোগের মধ্যে ডাউন সিনড্রোম প্রথম সারির একটি রোগ। ২০১৩ সালে ডাউন সিনড্রোমের রোগী ছিল প্রায় ৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন এবং মৃত্যুবরণ করে ২৭ হাজার জন। যেখানে ১৯৯০ সালে মারা গিয়েছিল ৪৩ হাজার জন। 

চিকিৎসকরা জানান, মানুষের শরীরে ৪৬টি ক্রোমোজোম থাকে। ৪৬টি ক্রোমোজমের মধ্যে ২৩টি মায়ের এবং ২৩টি বাবার কাছ থেকে আসে। একটি ক্রোমোজোম বেশি হলে অর্থাৎ ৪৭টি হলেই ডাউন সিনড্রোম হয়। ২১তম ক্রোমোজোমে ট্রিপ্লিকেশন থাকে; যার কারণে ডাউন সিনড্রোম হয়। এ কারণেই ডাউন সিনড্রোমকে ট্রাইসোমি ২১ও বলা হয়। 

আজ ২১ মার্চ বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রতিবছর ২১ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। ২১তম ক্রোমোজোমের ত্রিভুজের (ট্রাইসোমি) স্বাতন্ত্র্য বোঝাতে ২১ মার্চ (বছরের তৃতীয় মাস) দিনটি বেছে নেওয়া হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর এটি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জন ল্যাংডন ডাউন নামে এক ব্রিটিশ ডাক্তার ১৮৬৬ সালে প্রথমবার এ রোগের পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা দেন, তাই তার নামে এই রোগের নামকরণ করা হয়।