
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রায় ২০ কোটি বই এখনো ছাপা ও বাঁধাই করা বাকি। শিক্ষাবর্ষ শুরুর মাস পার হলেও দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে সব বই সরবরাহ করা যায়নি। অনলাইনে পিডিএফ ভার্সনের বই পাওয়া গেলেও প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এর সুফল পাচ্ছে না। আবার পিডিএফ থেকে পড়াতে গিয়েও শিক্ষকরা নানান ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কম থাকায় তৈরি হচ্ছে শিখন ঘাটতি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানুয়ারির মধ্যে সব বই দেওয়ার টার্গেট নিলেও সেটি এখন ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাঁধাইকারক না থাকায় বই সরবরাহ করতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘মোটামুটি ২৩-২৪ কোটি বই চলে গেছে। ৩-৪ কোটি বই প্রিন্ট হয়েছে। প্রকাশকদের ব্যাংক লোন, কাগজ আমদানিসহ সবক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা করেছি। এখন নতুন সংকট শুরু হয়েছে। বাঁধাইকারক পাওয়া যাচ্ছে না। তারা নোট-গাইড বই বাঁধাইয়ের কাজ করছেন। এ কারণে আমরা কয়েক জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। এই কাজও এনসিটিবিকে করতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বই ছাপার ক্ষেত্রে কোনো সংকট হতো না, যদি আমরা বিগত বছরের মতো কোয়ালিটির দিক থেকে কমপ্রোমাইজ করতাম। আমরা মানের দিক থেকে কোনো ছাড় দেব না। খারাপ কাগজ দিচ্ছি না বলে তাদের (প্রকাশকদের) মনে কষ্ট। তারা যেকোনো মূল্যে সংকট সৃষ্টি হলে সুযোগ নেওয়ার জন্য তৈরি থাকেন। এবার না পেরে তারা প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করছেন।’
শিখন ঘাটতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘কারিকুলাম, মূল্যায়ন পদ্ধতির কারণে আগেই শিখন ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। এরপরে জুলাই আন্দোলন। বার্ষিক পরীক্ষায় আমরা পরিবর্তন এনে কিছুটা দূর করার চেষ্টা করেছি। বেশি ঘাটতিতে ছিল দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। তাই তাদের জন্য আলাদা করে আর্মি প্রেস দিয়ে এক কোটি বই সরবরাহ করেছি। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি এবং ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নবম শ্রেণির বই দেওয়ার টার্গেট রয়েছে। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করছি।’
এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৩৪ লাখ। তাদের জন্য এনসিটিবি ৪০ কোটির বেশি বই ছাপার পরিকল্পনা নেয়। কারিকুলাম পরিবর্তন, বই পরিমার্জন, ওয়ার্ক অর্ডারসহ নানা কারণে বই ছাপার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর সময় এনসিটিবি জানুয়ারির মধ্যে সব বই ছাপা ও বিতরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু মাস পার হলেও সব বই সরবরাহ করা যায়নি।
এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক আবু নাসের টুকু গত বুধবার খবরের কাগজকে বলেন, প্রাথমিকের ৮০ শতাংশ বই ছাপা হয়েছে। অর্থাৎ ৯ কোটি ১৯ লাখ বইয়ের মধ্যে ৭ কোটি ৬৩ লাখ বই ছাপা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিতরণ নিয়ন্ত্রক হাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘মঙ্গলবার পর্যন্ত মাধ্যমিকের ১২ কোটি ১০ লাখ বই ছাপানো হয়েছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বই সরবরাহ করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা জানা গেছে, পাঠ্যবই না পেয়ে তাদের মধ্যে পড়ালেখার প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে এখনো একটি বইও পায়নি এ রকম শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষকরা ক্লাসে পিডিএফ দেখে পড়াচ্ছেন। কিন্তু তাতে শিক্ষার্থীরা খুব একটা মনোযোগ দিচ্ছে না। অনেক শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ছে তারা।
রাজধানীর কুর্মিটোলা হাইস্কুলের একজন অভিভাবক খবরের কাগজকে বলেন, অনলাইন কপির চেয়ে হার্ডকপির বইয়ে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বেশি থাকে। শুরুতে পাঠ্যবই না পাওয়ায় তারা পিছিয়ে পড়ছে।