আগামী ১ জুন (বাংলাদেশ সময় ২ জুন ভোর সাড়ে ৬টা) পর্দা উঠবে ২০২৪ মেন্স টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। টুর্নামেন্টের নবম সংস্করণের যৌথ আয়োজক ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ছোট ফরম্যাটের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশ নেবে সর্বোচ্চ ২০ দল। সরাসরি খেলবে ১২ দল। এ ছাড়া বাছাইয়ের বাধা টপকে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে আফ্রিকার নামিবিয়া, উগান্ডা, এশিয়ার নেপাল, ওমান, ইউরোপের আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, আমেরিকার কানাডা এবং পূর্ব এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের পাপুয়া নিউগিনি। টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাওয়া দলগুলোর বিশ্লেষণ নিয়ে খবরের কাগজের বিশ্বকাপের বিশেষ আয়োজন। আজ থাকছে উগান্ডা দল।
মানুষ উগান্ডাকে নিয়ে কেন বেশি ট্রল করে? এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই। অল্প শব্দে বলতে হলে বলা যায়- সামাজিক ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশটির মাধ্যমে খাটো করা হয় অন্যদের। কৃষ্ণাঙ্গ জাতিটি তাদের মাথা উঁচু করেছে ক্রিকেটকে পুঁজি করে। আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে ২২ নম্বরে থেকে খেলবে ২০ দলের বিশ্বকাপে। আইসিসির যেকোনো ফরম্যাটের বিশ্বকাপে এটাই তাদের প্রথম অংশগ্রহণ।
বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ দেশগুলোর একটি উগান্ডা। যেখানে ক্রিকেট তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তার একটি বিশেষ স্থান তৈরি করতে পারেনি। সেই অর্থে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিশ্চিত করায় তাদের জন্য বেশ বড় কীর্তি। ফুটবল, রাগবি সেভেনস এবং নেটবল জনপ্রিয়তা আধিপত্য বিস্তার করলেও ব্রায়ান মাসাবার দল বৈশ্বিক ইভেন্ট নিশ্চিত করে ইতিহাস রচনা করেছে। উগান্ডায় ক্রিকেট তার শিকড় খুঁজে পায় ১৯ শতকের শেষের দিকে, ১৮৯০ সালে মিশনারিদের দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছিল। অতীব ধীরগতিতে খেলাটি সেখানে বেড়ে উঠতে সময় লেগেছে ১০০ বছরের বেশি। এখনো ওয়ানডে স্ট্যাটাস নেই তাদের। টি-টোয়েন্টিতে পথচলা শুরু ২০১৯ সালে। এরই মাঝে ম্যাচ খেলে ফেলেছে ৯১টি। আবার অল্প সময়েই খুলেছে বিশ্বকাপের দুয়ার। উগান্ডা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (ইউসিএ) চেয়ারম্যান মাইক নুওয়াগাবার মতে, মাত্র তিন বছরের পরিকল্পনায় এই উচ্চতায় তারা।
এখন বিশ্বমঞ্চে ছাপ ফেলার প্রত্যাশায় ৩২ বছর বয়সী অধিনায়ক মাসাবা, যিনি বোলিং অলরাউন্ডার। তার দলে আছে ফ্রাঙ্কো সুবুগা। টি-টোয়েন্টিতে যারা অন্তত ১০০ ওভার বল করেছেন তাদের মধ্যে তার ইকোনমি রেট সেরা (৪.৭৮)। উগান্ডা স্কোয়াডে আছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত রনক প্যাটেল এবং পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বিলাল হাসান। স্পিন ভাগের চালকাশক্তি আলপেশ রামজানি এবং হেনরি সেনিওন্ডো।
প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ক্রিকেটার নিয়ে আফ্রিকা অঞ্চলের উগান্ডা বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে জিম্বাবুয়ের মতো টেস্ট খেলুড়ে দলকে হারিয়ে। বিশ্বকাপের ‘সি’ গ্রুপে তাদের লড়তে হবে নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান এবং পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে। এর মধ্যে শুধু মাত্র পাপুয়ার নিউগিনির বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলার রেকর্ড রয়েছে তাদের। সেটাতেও জুটেছে হার। অর্থাৎ স্বপ্নপূরণের পর এবার অগ্নিপরীক্ষার সামনে উগান্ডা। আগামী ৪ জুন আফগানিস্তান ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে তারা।
আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত সুবুগা
বয়স ৪৩ বছর। ২৭ বছর ক্রিকেটে উৎসর্গ। ফ্রাঙ্কো সুবুগার আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। খেলবেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। শুধু তাই নয়, ইতিহাসের সাক্ষী হতে চলেছেন এই অফস্পিন অলরাউন্ডার। ক্রিকেটের ছোট সংস্করণের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হতে চলেছেন তিনি। যদিও এটা তার আত্মত্যাগের তুলনায় সামান্য বটে!
১৯৯৭ আইসিসি ট্রফিতে মাত্র ১৭ বছর বয়সে আইসিসি ইভেন্টে প্রথমবার উগান্ডার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সুবুগা। এটা ১৯৯৯ বিশ্বকাপের বাছাই টুর্নামেন্ট ছিল। যে আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ করে নিয়েছিল। ২৭ বছর পর ফের আন্তর্জাতিক ইভেন্টে তিনি। এখন তার ঝুলিতে ৫৪ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা। আগামী আগস্টে ৪৪-এ পা ফেলতে যাওয়া সুবুগার নামের পাশে রয়েছে ৫৫ উইকেট এবং ১৫৮ রান।
স্পিন পাওয়ারহাউস
অভিজ্ঞ সুবুগার দলে রয়েছে তরুণ প্রতিভাও। তারা হলেন- স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার আলপেশ রামজানি এবং বাঁহাতি স্পিনার হেনরি সেনিওন্ডো। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক বর্ষপুঞ্জিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তারা দুজনে। ইতিহাস গড়েছেন গত বছর। ৩০ ম্যাচে ৫৫ উইকেট শিকার করে ‘২০২৩ আইসিসি মেন্স টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার অব ইয়ার’ ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়েছিলেন রামজানি। তার সতীর্থ সেনিওন্ডো সমান ম্যাচে পেয়েছিলেন ৪৯ উইকেট। তাদের উপস্থিতিতে উগান্ডা যেন ‘স্পিন পাওয়ারহাউস’। স্পিন শক্তিতে বলবৎ দলটির ব্যাটিং লাইনআপে ভরসার কেন্দ্রে রিয়াজত আলী শাহ এবং দিনেশ নাকরানি।
টি-টোয়েন্টিতে উগান্ডার অভিষেক ২০ মে ২০১৯
ম্যাচ: ৯১
জয়: ৬৯
হার: ১৯
পরিত্যক্ত: ৩
অভয় শর্মা, প্রধান কোচ
বিগত ১২ মাসে ক্রিকেটে উগান্ডা দল ভালো পারফরম্যান্স করেছে। যদিও কিছু জায়গা রয়েছে, বিশেষ করে ফিল্ডিং, সেখানে আমাদের উন্নতি করতে হবে। বিগত সময়ে আমরা মাঠে কিছু সুযোগ হাতছাড়া করেছি। সেই সুযোগগুলো হাতছাড়া করার পরও আমরা বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছি। ভাবুন, আমরা যদি এই ভুলগুলো শুধরে নিতে পারি তাহলে আমরা কতটা ভালো পারফর্ম করতে পারি। মানসিক দৃঢ়তার সঙ্গে আমরা যেকোনো দিনে বিশ্বের সেরা দলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি।
উগান্ডা দল: ব্রায়ান মাসাবা (অধিনায়ক), রিয়াজত আলি শাহ, কেনেথ ওয়াইসওয়া, দিনেশ নাকরানি, ফ্রাঙ্কো সুবুগা, রোনাক প্যাটেল, রজার মুসাকা, কোমমাস কিয়েউতা, বিলাল হাসুন, ফ্রেড আচেলাম, রবিনসন ওবুয়া, সাইমন সেসাজি, হেনরি সেনিওন্ডো, আলপেশ রামজানি এবং জুমা মিয়াজি। রিজার্ভ প্লেয়ার্স- রোনাল্ড লুটায়া এবং ইনোসেন্ট এমওয়েবাজ।