ঢাকা ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

যেখানে জুতা পরেন না কেউ

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৫ এএম
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২১ পিএম
যেখানে জুতা পরেন না কেউ
ছবি: সংগৃহীত

জুতা, চটি বা পাদুকা যাই হোক না কেন, বস্তুটি মানুষ পায়ে দেয় পা সুরক্ষিত রাখার জন্য। মানুষের জুতা আবিষ্কারের পেছনে অন্যতম কারণ এটি। কারও কাছে জুতা ফ্যাশনের বস্তু, আবার কারও কাছে জুতা পা-কে ধুলোবালি থেকে রক্ষা করার জিনিস। তাই জুতা মানুষের নিত্যদিনের অনুষঙ্গ। কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি গ্রাম আছে যেখানে জুতা পরেন না কেউ। এমনকি সেখানে জুতা পরা রীতিমতো নিষিদ্ধ।

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের চিতুর জেলার ২০ কিলোমিটার দূরে ভেমানা গাড়ি ইন্দলু গ্রাম অবস্থিত। আধুনিক যুগে এসে এই গ্রামে কেউ জুতা পায়ে দেয় না। এমনকি বাইরের কেউ এই গ্রামে প্রবেশ করার আগে জুতা খুলে ফেলতে হয়। গ্রামের বাসিন্দাদের মতে, এটা তাদের ঐতিহ্য। যাতায়াতের সময় তারা খালি পায়েই চলাফেরা করেন। গ্রামটিতে প্রায় ২৫টি পরিবার আছে। তাদের সম্প্রদায় যখন থেকে সে গ্রামে বসবাস শুরু করে, তখন থেকে তারা এই রীতি মেনে চলে। শুধু তাই নয়, এই গ্রামের বাসিন্দারা বাইরের গ্রামের কোনো খাবার মুখে তোলেন না। অসুস্থ হলে হাসপাতালেও যান না তারা। বাইরে কোথাও বেড়াতে গেলেও পানি পান করেন না। অন্ধ্রপ্রদেশে বসবাসকারী গোত্রটির নাম ‘পালভেকারি’। তারা তামিলনাড়ু থেকে আসা। এই গোত্রের মানুষরা নিজেদের মধ্যে আত্মীয়তা করে। 

ভারতের আরেক রাজ্য তামিলনাড়ুতেও একটি গ্রাম আছে, যেখানে জুতা পরা নিষিদ্ধ। চেন্নাই থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে আন্দামান নামক এই গ্রামেও কেউ জুতা পরে না।
আন্দামান গ্রামে জুতা না পরার পেছনে আছে কিছুটা ধর্মীয় কারণ। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী এই গ্রামে বসবাসরত এক দেবীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা জুতা পায়ে দেন না। প্রচলিত আছে, এই গ্রামে কেউ জুতা পায়ে দিলে অদ্ভুত জ্বরে আক্রান্ত হয়। তাই বহু বছর ধরে ভয় থেকেই গ্রামের বাসিন্দারা এই রীতি মেনে আসছেন। প্রচণ্ড গরমে পিচঢালা রাস্তায়ও তারা খালি পায়ে যাতায়াত করেন। তবে বাইরের বাসিন্দাদের এখানে খালি পায়ে থাকতে জোর করা হয় না। যেখানে ভেমানা ইন্দলু গ্রামে মন্ত্রী-এমপিদেরও জুতা খুলে প্রবেশ করতে হতো।

আবার তামিলনাড়ুর জঙ্গলে আরেকটি গ্রাম আছে, যেখানেও জুতা পরা নিষিদ্ধ। ভেল্লাগাভি নামের এই গ্রামে ১০০টির মতো পরিবার বসবাস করে। গ্রামের প্রবেশপথেই সাইনবোর্ড দেওয়া থাকে- ‘জুতা খুলে প্রবেশ করুন।’ এই গ্রামে বাড়ির চেয়ে বেশি মন্দির রয়েছে। তাই বাসিন্দারা প্রাচীনকাল থেকেই এখানে খালি পায়েই চলাচল করেন। এই গ্রামে প্রবেশ করতে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়। বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে প্রবেশ করা পর্যটকদের স্বাগত জানান সেখানকার বাসিন্দারা।

 

তারেক

একই চেহারার সাতজন রয়েছে পৃথিবীতে !

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২০ এএম
আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
একই চেহারার সাতজন রয়েছে পৃথিবীতে !
দেখতে একই রকম মনে হলেও দুইজন আসলে ভিন্ন ভিন্ন মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

যমজ সন্তান নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে বেশ কৌতূহল। কেন যমজ সন্তান জন্ম নেয়, সেটি নিয়েও রয়েছে নানারকম আলোচনা। সাধারণত সব যমজ সন্তানের চেহারাই একরকম হয় না। তবে কোনো কোনো যমজ সন্তান দেখতে হুবহু একই রকম হয়।

আপনার কোনো যমজ নেই আপনি নিশ্চিত। কিন্তু তারপরও সোশ্যাল মিডিয়া ঘাঁটতে গিয়ে কিংবা রাস্তায় চলার পথে নিজের মতোই কাউকে দেখতে পেলে ভড়কে যেতে পারেন। ভাবতে পারেন-বাবা-মা ও দেশ আলাদা হলেও হুবহু আপনার মতোই দেখতে আরেকটা মানুষ এল কীভাবে!

নিশ্চয়ই শুনেছেন এই বিশ্বে নাকি একই রকম দেখতে সাতজন মানুষ আছেন। কিন্তু এটা কি আদৌ সম্ভব? গবেষণার রিপোর্টমতে, একই চেহারার দুজন মানুষ অবশ্যই হয়। এদের বলা হয় ডোপেলগ্যাঙ্গার। এ ধরনের মানুষের মধ্যে কোনো জৈবিক সম্পর্ক থাকে না। তবু তারা দেখতে এতটাই একরকম হয় যে, মনে হয় যেন যমজ।

কিছু সংস্কৃতিতে ডোপেলগ্যাঙ্গারকে বলা হয় ইভিল টুইন; ভূতুড়ে বা অলৌকিক ধরা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, একরকম দেখতে দুজন মানুষের সংখ্যা প্রতি ট্রিলিয়নে একজনেরও কম। অর্থাৎ প্রতি ট্রিলিয়নে একজনেরও কম মানুষের ডোপেলগ্যাঙ্গার থাকতে পারে।

এবার প্রশ্ন হলো, একই রকম দেখতে ৭ জন মানুষ হয় কি না। পৃথিবীতে প্রায় ৭০০ কোটি মানুষের বাস। একজন মানুষ কেমন দেখতে হবে, তা নির্ভর করে বাবা-মায়ের ডিএনএ, জিন, ক্রোমোজোমের ওপর। প্রতিটি মানুষের মধ্যে ২৩ জোড়া ক্রোমোজম থাকে। প্রতিটি ক্রোমোজোম ২টি ভাগে বিভক্ত। একটি শিশু বাবা ও মা- দুজনের কাছ থেকেই একজোড়া করে ক্রোমোজম পায়। প্রতি জোড়া ক্রোমোজোম নিজেদের মধ্যে কিছু অংশ বিনিময় করে নতুন ক্রোমোজোম তৈরি করে। এই জেনেটিক ক্রসিং ওভারের জন্য মানুষের চেহারা ও আচরণ একে অপরের থেকে আলাদা হয়। তাই এই পৃথিবীতে একই চেহারার ৭ জন মানুষ থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

অনেক বিখ্যাত মানুষের সঙ্গে চেহারার মিল আছে এমন অনেক মানুষকে দেখা যায়। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এই ব্যাপারটি প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে সেলিব্রিটিদের। যেমন- শাহরুখ খান, সালমান খানের মুখাবয়বের কাছাকাছি দেখতে অখ্যাত তরুণদের ছবি প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়। ঐশ্বরিয়া রাইয়ের সঙ্গে স্নেহা উল্লাল কিংবা ক্যাটরিনা কাইফের সঙ্গে জেরিন খানের মুখের সাদৃশ্যও খুঁজে পান অনেকে।

তবে এই চেহারার মিল থাকার কারণে বিপদেও পড়েছেন কেউ কেউ। যেমন- ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় চলে এসেছিলেন এই কারণে। কলম্বিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইভান ডুকের হেলিকপ্টার লক্ষ করে হামলা হয়। সেই হামলার ঘটনায় দুজন সন্দেহভাজনের স্কেচ প্রকাশ করে পুলিশ। দুজনের একজন দেখতে অবিকল জাকারবার্গের মতো।

তারেক

শাস্তি হিসেবে চোরকে খেয়ে ফেলে যে আদিবাসীরা

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৫ এএম
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০১ পিএম
শাস্তি হিসেবে চোরকে খেয়ে ফেলে যে আদিবাসীরা
ছবি: সংগৃহীত

চুরি করে ধরা পড়লে শাস্তি হবে এটা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। কিন্তু চুরি করলে শাস্তি হিসেবে চোরকে খেয়ে ফেলতে হবে- এমন কথা সভ্যসমাজে কেউ কোনোদিন শুনেছে বলে মনে হয় না।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, কোরোবাই নামে পাপুয়া নিউগিনির এক আদিবাসী গোষ্ঠী চুরির শাস্তি হিসেবে চোরকে খেয়ে ফেলে! এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি মার্কিন অভিযাত্রী ও ব্লগার ড্রিউ বিনস্কি পাপুয়া নিউগিনির নরখাদক কোরোবাই আদিবাসীদের খোঁজে পৃথিবীর সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন জঙ্গল হিসেবে পরিচিত একটি এলাকায় যান।

নির্জন জঙ্গলে কোরোবাই উপজাতির মানুষরা প্রস্তর যুগের মানুষদের মতো জীবনযাপন করেন। কেউ কেউ পোশাক পরেন না; আবার কেউ কেউ স্বল্পবসন ধারণ করেন। তারা ধনুক এবং তীর ব্যবহার করে শিকার করেন। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত নৃতাত্ত্বিকরা ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ পাপুয়া ও হাইল্যান্ড পাপুয়া প্রদেশে যাওয়ার আগে কোরোবাইরা জানতই না, তারা ছাড়া পৃথিবীতে অন্য কোনো মানুষ আছে।

ড্রিউ বিনস্কি এর আগে কোরোবাইদের নিকটতম প্রতিবেশী মমুনা উপজাতির সঙ্গেও কিছুদিন ছিলেন। তাদের কাছ থেকেই হিংস্র কোরোবাই মানুষদের সম্পর্কে জানতে পারেন।

তিনি জানতে পারেন, ‘কোরোবাইরা ক্ষুধা বা পুষ্টির জন্য মানুষ খায় না। মূলত কাউকে শাস্তি দিতে তারা এটা করে।’

কোরোবাইদের মতে, মানুষ খাওয়ার বিষয়টি উপভোগ বা পুষ্টির জন্য নয়। এটি শাস্তির জন্য করা হয়।

বিনস্কি বলেন, ‘আপনি যদি কোনো কিছু চুরি করেন, তা হলে তারা আপনাকে আগুনে ছুড়ে মারবে ও খেয়ে ফেলবে।’ কোরোবাইদের ধারণা, খাকুয়া নামে একটি দুষ্ট রাক্ষস মানুষের ভেতরে ঢুকে সেই মানুষটিকে ভেতর থেকে খেতে শুরু করে। এক সময় ওই মানুষটি ডাইনি বা খারাপ মানুষে পরিণত হয়। আর এই খারাপ মানুষ আরও কারও ওপর ভর করতে পারে। এমনকি তারা বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের মতো ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে।

ফলে কেউ চুরি করলে তার ওপর খাকুয়া ভর করেছে বলে বিশ্বাস করে কোরোবাইরা। এ জন্য এমন কাউকে পেলে নিজেদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় অনুষ্ঠান করে ওই অপরাধীকে খেয়ে ফেলে তারা।

কোরোবাইদের ভাষ্য, ‘মানুষের মাংসের স্বাদ অনেকটা বুনো শূকরের মতো। এই উপজাতিরা মানুষের চুল, নখ ও যৌনাঙ্গ ছাড়া শরীরের প্রতিটি অংশ খায়।’

‘তবে ১৩ বছরের কম বয়সীরা এই মাংস খেতে পারে না। কারণ কোরোবাইদের ধারণা, খাকুয়া খেলে শিশুদের শরীরে এটি ভর করতে পারে।’

এর আগে বিচ্ছিন্ন ওই জঙ্গলে কর্নেলিয়াস নামে এক গাইড কোরোবাইদের কাছাকাছি গিয়েছিলেন বলে জানা যায়। তিনি তখন জানান, এক রাতে কোরোবাইরা মানুষের এক টুকরো মাংস তাকে দিয়ে জানায় এই মাংস খেলেই তিনি সেখানে থাকতে পারবেন। না হয় তাকে ওই এলাকা ছাড়তে হবে।

কর্নেলিয়াস সেই মাংস খেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি মানুষের ওই মাংসের টুকরাটি খেয়েছিলাম। তারপর থেকে তাদের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছি।’

 

তারেক

মাছের কেরামতি!

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১০ এএম
মাছের কেরামতি!
ছবি: সংগৃহীত

মাছ আবার শব্দ করতে পারে নাকি! যদি বলি পারে, তা হলে হয়তো অবাকই হবেন। তবে সত্য ঘটনা হচ্ছে, বায়ুপূর্ণ ড্রিলের চেয়েও জোরে শব্দ করতে পারে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট আকৃতির মাছগুলোর একটি। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, এ প্রজাতির মাছ ১৪০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ তৈরি করতে সক্ষম, যার শব্দের মাত্রা বায়ুপূর্ণ ড্রিলের চেয়েও বেশি।

‘ট্রান্সলুসেন্ট ড্যানিয়েনেলা সেরিব্রাম’ নামের এই ছোট আকৃতির মাছটি মাত্র ১২ মিমি লম্বা। পাশাপাশি এটি মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের ছোট মাছ হিসেবে পরিচিত।

মাছের এমন শব্দ করার বিষয়টি প্রথম লক্ষ করেন জার্মানির বার্লিনে মাছের প্রজাতি নিয়ে গবেষণা করা বিজ্ঞানীরা। একটি জলাশয়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাছগুলোর এমন শব্দ শুনতে পান তারা।

এর পর এ শব্দের উৎসের কারণ খুঁজে বের করতে জলাশয়ের মধ্যে উচ্চগতির ক্যামেরা স্থাপন করেন তারা।

এ গবেষণার প্রধান লেখক ভেরিটি কুক বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল নিউ সায়েন্টিস্টকে বলেছেন, ‘এ মাছগুলো এতই জোরে শব্দ করে যে, জলাশয়ের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় যে কেউই এদের আওয়াজ শুনতে পাবেন।’

মাছগুলোর দেহের পাঁজরের একটি অংশকে সাঁতারের সময় মাছের মূত্রথলিতে টেনে নেওয়া হলে এ ধরনের শব্দ উৎপন্ন হতে পারে, যা ‘ঢাক বাজানোর মতো শব্দ’ তৈরি করে।

গবেষণা অনুসারে, কেবল পুরুষ মাছগুলোই এমন আওয়াজ করে থাকে। তবে এর কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। তবে কুকের ধারণা বলছে, মাছগুলো একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ বা ঘোলা পানিতে একে অপরকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে করতে পারে এটি।

‘কেবল পুরুষ মাছের এমন শব্দ করার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। হয় তারা অন্যান্য পুরুষ মাছের প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ প্রকাশে এ শব্দ করতে পারে, অথবা নারী মাছদের আকর্ষণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে।’

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস’-এ।

 

তারেক

পিৎজা জনপ্রিয় হলো যেভাবে

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১০ এএম
পিৎজা জনপ্রিয় হলো যেভাবে
ছবি: সংগৃহীত

ইতালির একটি শহর নেপলস। আঠারো শতকের দিকে এই শহরের দরিদ্র মানুষরা তুলনামূলক সস্তা এবং তাড়াতাড়ি তৈরি করে ফেলা যাবে, এমন ধরনের এক প্রকার খাবার তৈরির উদ্যোগ নেয়। সেই উদ্যোগ থেকেই জন্ম হয় পিৎজার।

আজও ইতালির অন্যান্য শহরের বাসিন্দারা পিৎজাকে গরিবের খাবার বলেই মনে করে থাকেন। এমনকি সেই সময়কার লেখকরা এই খাবারকে ‘জঘন্য’ হিসেবে তাদের লেখায় উপস্থাপন করেছিলেন। ভাগ্যের কী পরিহাস, সেই তথাকথিত জঘন্য খাবারটিই আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত!

গত বছর খননকাজ চলাকালীন পম্পেই নগরীর একটি বাড়ির দেয়ালে ফ্রেসকো আবিষ্কৃত হয়। সেই চিত্রকর্মে দেখা যায়, একটি সিলভারের প্লেটে গোলাকার ফ্ল্যাটব্রেড এবং সেই সঙ্গে তাজা ও শুকনো ফলমূল, যেমন- ডালিম, খেজুর সাজিয়ে রাখা হয়েছে এবং একটি পানপাত্রে রেড ওয়াইন রাখা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রায় ২০০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের নিচে চাপা পড়ে যাওয়া এই চিত্রকর্ম আসলে বিখ্যাত ‘ইতালিয়ান পিৎজা’র পূর্বসূরি!

পিৎজা প্রথমে রাস্তার পাশে বিক্রি হতো। এমনই জৌলুসহীন ছিল এই খাবারটি। কিন্তু এই অবহেলিত খাবারটি জনপ্রিয় হলো কীভাবে? ১৮৮৯ সালের কথা। ইতালির রানি মার্গেরিতা তার স্বামী রাজা প্রথম উমবের্তোকে নিয়ে নেপলস শহর পরিদর্শনে আসেন এবং তখন তিনি ভিন্ন স্বাদের কোনো খাবার টেস্ট করতে চাইলে তাকে সাহস করে পিৎজা পরিবেশন করা হয়। রানি মার্গেরিতা পিৎজা খেয়ে তার স্বাদে বিমোহিত হয়ে পড়েন। রানির বদৌলতেই পথের ধারে বিক্রি করা দরিদ্রদের এই খাবারটি পায় রাজকীয় সম্মান!

রানির সম্মানার্থে তার নামেই সেই পিৎজার নামকরণ করা হয় ‘মার্গেরিতা পিৎজা’। কোনো কোনো স্থানে এটি ‘মার্গারিটা পিৎজা’ নামেও পরিচিত। সময়ের পরিক্রমায় পিৎজার এখন অনেক রকমফের হলেও সেদিন মার্গেরিতা পিৎজায় টপিংস হিসেবে দেওয়া হয়েছিল শুধু সফট হোয়াইট চিজ, টমেটো এবং পুদিনা পাতা। ইতালির পতাকার রঙের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে সাদা, সবুজ ও লাল রঙের উপাদানে সজ্জিত টপিংস দেওয়া পিৎজাটিকে রানি তার ‘প্রিয় আইটেম’ বলে আখ্যা দেন এবং হঠাৎ করেই এটি নেপলস শহরে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

রানি মার্গেরিতার জন্য পিৎজা আলাদা সম্মান পেলেও ইতালীয়দের দ্বারা তা বিশ্বে জনপ্রিয়তা পায়নি, পেয়েছিল আমেরিকানদের দ্বারা। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে নেপলসের মানুষরা যখন কাজের সন্ধানে আমেরিকায় পাড়ি জমান, তখন তাদের মাধ্যমে এই খাবারটি সেখানে জনপ্রিয় হতে শুরু করে।

সর্বপ্রথম ইতালিয়ান পিৎজেরিয়া ‘দ্য পিয়েত্রো’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৮০ সালে নেপলসে। আউটলেটটি পরে ‘পিৎজেরিয়া ব্রান্দি’ নামে পরিচিতি লাভ করে এবং এই আউটলেটের মালিক রাফায়েল এসপোজিতোই ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি রানি মার্গারিটার নেপলস সফরের সময় তাকে পিৎজা বানিয়ে খাইয়েছিলেন। অন্যদিকে নিউইয়র্কের পিৎজা আউটলেট লোম্বারদি’স চালু হয় ১৯০৫ সালে। ১৯৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ ইতালিয়ান অধ্যুষিত এলাকাতেই পিৎজেরিয়া গড়ে ওঠে এবং একই সঙ্গে তৈরি হতে থাকে বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি পিৎজা।

যে সময় পিৎজা দূরদেশে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছিল- সেই সময়, ভাবা যায় তখন ১৯১৮ সাল অবধি ইতালির কোনো পত্রপত্রিকায় এই খাবারটিকে নিয়ে কোনো কথাই হয়নি। ইতালির অন্য রাজ্যের মানুষরা তখন অবধি পিৎজা নামক খাবারটির সঙ্গে ঠিকঠাকভাবে পরিচিতই হয়নি। পরবর্তী সময়ে পরিচিত হলেও এ খাবারটিকে অন্য রাজ্যের মানুষরা আপন করে নিতে পারেনি। 

১৯৩০ সালের পর পিৎজা টেকঅ্যাওয়ের জন্য বিশেষ কার্ডবোর্ডের বাক্স ব্যবহার করা শুরু হলো এবং ষাটের দশকের শেষভাগে ফ্রোজেন পিৎজা ব্যবস্থাও জনপ্রিয় হয়ে উঠল। তোতিনো’স এখন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রোজেন পিৎজা ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ব্র্যান্ড, যা রোজ এবং জিম তোতিনো মিলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

লন্ডনে ১৯৩৪ সাল থেকে পিৎজার প্রচলন শুরু হলেও পিটার বোয়জো ১৯৬৫ সালে ওয়েস্ট লন্ডনের ওয়াডু স্ট্রিটে চালু করেন জনপ্রিয় পিৎজা ব্র্যান্ড ‘পিৎজা এক্সপ্রেস’-এর প্রথম আউটলেট। তিনি নেপলস থেকে একটি পিৎজা ওভেন আমদানি করেন এবং ওয়াডুর স্ট্রিটে দুই শিলিংয়ের বিনিময়ে এক স্লাইস পিৎজা বিক্রি করতেন। 

অন্য জনপ্রিয় পিৎজা ব্র্যান্ড ‘পিৎজা হাট’ ১৯৭৩ সালে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় নর্থ লন্ডনে এবং ডমিনো’জ-এর প্রথম আউটলেট চালু হয় ১৯৮৫ সালে লন্ডনের আরেক শহর লুটনে। বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও রয়েছে ডমিনো’জ, পিৎজা হাটের মতো বিখ্যাত পিৎজা ব্র্যান্ডের শাখা। এসব আউটলেটে ক্ল্যাসিক মার্গেরিতা, পিৎজা মার্গেরিতা, বারবিকিউ পিৎজা, পিৎজা ডায়াভোলা, ফোর সিজনস পিৎজাসহ বিভিন্ন ধরনের পিৎজা পাওয়া যায়।

 

তারেক

পাঠকের গল্প : শহর একটা টেলিভিশন

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০১ পিএম
আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
পাঠকের গল্প : শহর একটা টেলিভিশন

রাত বারোটা। শহরের ফাঁকা রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছি টিএসসির দিকে আমরা চারজন। দুজন গায়ক, আর একজনের অবস্থান ঠিক পুরোপুরি জানি না। গায়ক দুজন ভালো গান করে, যদিও তারা কোনো পেশাদার শিল্পী নন। আমরা চারজনই সিগারেট টানছি আর হাঁটছি।

গায়ক আকাশ ভাই মাঝেমধ্যে মৃদু স্বরে গেয়ে যাচ্ছেন- ‘ভালোবাসার এই কিরে খাজনা, দিয়ে ফাঁকি ওরে পাখি যতই ডাকি আর ফেরে না’। আমি নিজের সঙ্গে নিজে বিড়বিড় করে বলছি- ‘আছেন কোথায় স্বর্গপুরে কেহ নাহি তার ভেদ জানে, কেনো জিজ্ঞাসিলে খোদার কথা দেখায় আসমানে’।  হেঁটে যাচ্ছি চারজন। শহরটাকে মনে হচ্ছে কত চেনা, কত আপন। ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলো এবং রাস্তার পাশের কাঠবাদাম গাছের পাতাগুলো যেন আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে- শব্দহীনতায় এই শহরের কোনো মূল্য নেই, শব্দই শহরের প্রাণ। গান বন্ধ করে আকাশ ভাই থমকে দাঁড়ান, সঙ্গে আমরাও। 

বারো-তেরো বছরের একটা ছেলে, রাস্তার পাশে ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে কী জানি লিখছে। আচমকা আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ছেলেটি বোকা হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে হাতের খাতা-কলমটি ছাপিয়ে নেয়। আকাশ ভাই প্রশ্ন করে—

তুমি কী করছো এখানে?
ছেলেটি মিহি স্বরে উত্তর দেয়— 
- এই যে বসে আছি।
- তোমার নাম কী?
- আমার নাম কোলাহল।
- তুমি এত রাতে এখানে কী করছো?
- এই যে বসে আছি।
- যাবে কোথায়?
- কোথাও না।
- মানে! রাতে থাকবে কোথায়?
- এখানেই।
- এখানেই থাকবে?
- হ্যাঁ।
- খাওয়া-দাওয়া করো কোথায়? পড়াশোনা করো?
- খাওয়া-দাওয়া করি ওইখানে, ওই টিএসসির মোড়ে, আর ওইখানেই পড়ি।
- তোমার বাবা-মা নাই?
- বাবা নাই, মা আছে।
- মা কোথায়? 
- মা গেছে গা।
- কোথায় গেছে?
- অন্য বেটার সাথে। 
- তোমার আর ভাই-বোন নাই?
- না, জানি না।
- তো তুমি এখানে কীভাবে থাকবে, বিছানা কোথায়? 
- বিছানা নাই, একটা গামছা ছিল। কে জানি নিয়া গেছে। বলেই ফিক করে হেসে উঠল ছেলেটি।

আমরা সবাই এতক্ষণ ওর সব কথা শুনছিলাম। আমি একটু অবাক হলাম- গামছাটা কে জানি নিয়ে গেছে বলে আর হেসে ওঠা দেখে! ‌‘জীবনে যার কিছুই নাই সেই সবচেয়ে সুখী, শূন্যতার মাঝেই চমৎকার আনন্দ।’ এটা আমি এখন উপলব্ধি করলাম। শূন্যতার মাঝে আনন্দ না থাকলে, ছেলেটির কিছুই নাই। সর্বশেষ ছিল একটি গামছা, সেটাও কে জানি নিয়ে গেছে তা এত আনন্দের সঙ্গে বলতে পারত না। আমি বললাম-
- খাতায় কী লিখছিলে?
- না, কিছু না।
- কিছু তো একটা।
- না, কবিতা লিখছিলাম।
- কবিতা! আমি ভয়ংকরভাবে অবাক হলাম। আমি খাতাটা নিয়ে উচ্চৈঃস্বরে কবিতাটা পড়তে লাগলাম।
মা, আমি তোমার মাসুম বাচ্চা
কেন গেলা ছাইড়া?
আমি এখন রাস্তায় থাকি
তোমার আপন ছিলাম আমি
তুমি কেমন মা? কেমন মা?

এলোমেলো কাটাছেঁড়া লাইনগুলো আমি পড়ে ভীষণ আহত হলাম। ‘কবিতা কোনো আবেগ নয়, হৃদয়ের তাজা রক্ত।’

আকাশ ভাই ছেলেটিকে কিছু টাকা দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আমি শেষবারের মতো পেছন ফিরে আর একবার ছেলেটাকে দেখে নিলাম। ল্যাম্পপোস্টের বাতিটা মায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে ওর মাথার ওপর আলো নিয়ে, কাঠবাদাম গাছটি শহরটাকে শীতল করে দিতে চাচ্ছে প্রতিনিয়ত।  
শহর একটা টেলিভিশন, যেখানে প্রতিনিয়ত জীবন্ত মুভি প্রচার হয়।

 

ফকির শাহিন শাহ্

ঠিকানা পাওয়া যায়নি

 

তারেক