জুতা, চটি বা পাদুকা যাই হোক না কেন, বস্তুটি মানুষ পায়ে দেয় পা সুরক্ষিত রাখার জন্য। মানুষের জুতা আবিষ্কারের পেছনে অন্যতম কারণ এটি। কারও কাছে জুতা ফ্যাশনের বস্তু, আবার কারও কাছে জুতা পা-কে ধুলোবালি থেকে রক্ষা করার জিনিস। তাই জুতা মানুষের নিত্যদিনের অনুষঙ্গ। কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি গ্রাম আছে যেখানে জুতা পরেন না কেউ। এমনকি সেখানে জুতা পরা রীতিমতো নিষিদ্ধ।
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের চিতুর জেলার ২০ কিলোমিটার দূরে ভেমানা গাড়ি ইন্দলু গ্রাম অবস্থিত। আধুনিক যুগে এসে এই গ্রামে কেউ জুতা পায়ে দেয় না। এমনকি বাইরের কেউ এই গ্রামে প্রবেশ করার আগে জুতা খুলে ফেলতে হয়। গ্রামের বাসিন্দাদের মতে, এটা তাদের ঐতিহ্য। যাতায়াতের সময় তারা খালি পায়েই চলাফেরা করেন। গ্রামটিতে প্রায় ২৫টি পরিবার আছে। তাদের সম্প্রদায় যখন থেকে সে গ্রামে বসবাস শুরু করে, তখন থেকে তারা এই রীতি মেনে চলে। শুধু তাই নয়, এই গ্রামের বাসিন্দারা বাইরের গ্রামের কোনো খাবার মুখে তোলেন না। অসুস্থ হলে হাসপাতালেও যান না তারা। বাইরে কোথাও বেড়াতে গেলেও পানি পান করেন না। অন্ধ্রপ্রদেশে বসবাসকারী গোত্রটির নাম ‘পালভেকারি’। তারা তামিলনাড়ু থেকে আসা। এই গোত্রের মানুষরা নিজেদের মধ্যে আত্মীয়তা করে।
ভারতের আরেক রাজ্য তামিলনাড়ুতেও একটি গ্রাম আছে, যেখানে জুতা পরা নিষিদ্ধ। চেন্নাই থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে আন্দামান নামক এই গ্রামেও কেউ জুতা পরে না।
আন্দামান গ্রামে জুতা না পরার পেছনে আছে কিছুটা ধর্মীয় কারণ। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী এই গ্রামে বসবাসরত এক দেবীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা জুতা পায়ে দেন না। প্রচলিত আছে, এই গ্রামে কেউ জুতা পায়ে দিলে অদ্ভুত জ্বরে আক্রান্ত হয়। তাই বহু বছর ধরে ভয় থেকেই গ্রামের বাসিন্দারা এই রীতি মেনে আসছেন। প্রচণ্ড গরমে পিচঢালা রাস্তায়ও তারা খালি পায়ে যাতায়াত করেন। তবে বাইরের বাসিন্দাদের এখানে খালি পায়ে থাকতে জোর করা হয় না। যেখানে ভেমানা ইন্দলু গ্রামে মন্ত্রী-এমপিদেরও জুতা খুলে প্রবেশ করতে হতো।
আবার তামিলনাড়ুর জঙ্গলে আরেকটি গ্রাম আছে, যেখানেও জুতা পরা নিষিদ্ধ। ভেল্লাগাভি নামের এই গ্রামে ১০০টির মতো পরিবার বসবাস করে। গ্রামের প্রবেশপথেই সাইনবোর্ড দেওয়া থাকে- ‘জুতা খুলে প্রবেশ করুন।’ এই গ্রামে বাড়ির চেয়ে বেশি মন্দির রয়েছে। তাই বাসিন্দারা প্রাচীনকাল থেকেই এখানে খালি পায়েই চলাচল করেন। এই গ্রামে প্রবেশ করতে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়। বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে প্রবেশ করা পর্যটকদের স্বাগত জানান সেখানকার বাসিন্দারা।
তারেক