গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিযোগিতামূলক ভর্তিযুদ্ধ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। গুচ্ছভুক্ত ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১০ মে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে এ এবং বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষায় শেষ সময়ে পরীক্ষার্থীরা কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন, সে বিষয়ে লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ (ওএসএল) বিভাগের শিক্ষার্থী লাবিব হাসান রাব্বি এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন
প্রস্তুতির বিকল্প নেই
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় গোছানো প্রস্তুতির বিকল্প নেই। কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনে প্রয়োজন বিষয়ভিত্তিক যথাযথ প্রস্তুতি এবং মূল পরীক্ষায় তা প্রয়োগ করা। সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় হিসাববিজ্ঞান এবং ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ভালো প্রস্তুতির জন্য পাঠ্যবইয়ের বিকল্প নেই। তাছাড়া বিগত বছরের প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি। কেননা প্রতিবছর প্রায় একই প্যাটার্নের প্রশ্ন কিছুটা পরিবর্তিত রূপে ভর্তি পরীক্ষায় থাকে।
পরীক্ষায় উত্তর করার ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক ক্রম অনুসরণ করা জরুরি। অর্থাৎ এমন কোনো বিষয় দিয়ে পরীক্ষা শুরু করবেন না, যে বিষয়ে আপনি দুর্বল বা যে বিষয়ে উত্তর দিতে অধিক সময় প্রয়োজন হয়। যেসব বিষয় আপনি খুবই ভালো পারেন সেসব বিষয় দিয়েই উত্তর লেখা শুরু করবেন। পরীক্ষার শুরুর দিকে কোনোভাবেই কঠিন প্রশ্ন নিয়ে ভাববেন না বরং পরবর্তী প্রশ্নের উত্তর লেখা শুরু করবেন। পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রথমে পুরো প্রশ্নপত্রটি পড়বেন, এরপর যেসব প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা আছে সেগুলো লিখবেন।
আবেদনকারী, আসনসংখ্যা ও নম্বর বিভাজন
২০২৪ সালের গুচ্ছভুক্ত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেছেন ৪০ হাজার ১১৬ শিক্ষার্থী। গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য বিভাগের জন্য আসন রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৫০টি আসন রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাড়ে ৩ হাজার আসনের প্রতিটি আসনের জন্য ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেবেন প্রায় ১২ জন শিক্ষার্থী।
সি ইউনিটের ক্ষেত্রে চারটি বিষয়ে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। হিসাববিজ্ঞানে ৩৫, ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনায় ৩৫, ইংরেজিতে ১৫ এবং বাংলা বিষয়ে ১৫ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি
হিসাববিজ্ঞান
হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে ভালো প্রস্তুতির জন্য অনুশীলনের বিকল্প নেই। প্রতিবছর হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের কিছু প্রশ্ন রিপিট হয়, ফলে বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করার মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে রাখতে হবে। হিসাববিজ্ঞানে সাধারণত কয়েকটি অঙ্ক সমাধান করতে দেওয়া হয়। এ ছাড়া অঙ্ক-সম্পর্কিত প্রশ্ন থাকে আরও ৪-৫টি। এর বাইরে অধিকাংশ প্রশ্নই থাকে তত্ত্বীয়।
পরীক্ষায় গাণিতিক সমস্যা দ্রুত সমাধান করার জন্য বাসায় বারবার অনুশীলন করতে হবে এবং শর্টকাট নিয়ম জেনে রাখতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ইউনিটের বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধানে গুরুত্ব দিতে হবে।
হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে বিশেষ পারদর্শিতা না থাকলে পরীক্ষায় উত্তর করা কষ্টকর হয়ে যায়। যেহেতু হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে হয়, তাই হিসাববিজ্ঞানে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা যাবে না।
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ভালো করার জন্য পাঠ্যবইয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিটি টপিক সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। সবগুলো অধ্যায় সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। এই বিষয়ের কিছু তথ্য প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। সাম্প্রতিক দেশীয় বা বৈদেশিক ব্যবসা প্রবাহ থেকে কিছু প্রশ্ন আসে। এজন্য এসব বিষয় সম্পর্কিত সাম্প্রতিক তথ্য নিয়মিত পড়তে হবে।
বাংলা
ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমে উত্তর করার জন্য বাংলা একটি আদর্শ বিষয়। বাংলা প্রথম পত্রে ভালো প্রস্তুতির জন্য মূল বই গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। গদ্যগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আয়ত্তে রাখতে হবে, কাব্যের ভাবার্থ বুঝে পড়তে হবে। উপন্যাস ও নাটক থেকেও প্রশ্ন থাকে, এজন্য সহপাঠেও ভালো প্রস্তুতি থাকা জরুরি। প্রথম পত্রের প্রায় সবগুলো গদ্য, পদ্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য কোনো গদ্য বা পদ্য পড়ার ক্ষেত্রে অবহেলা করা যাবে না। বিশেষত গদ্য, কবিতা এবং উপন্যাসের মূল বিষয়, লেখক পরিচিতি, তার সাহিত্যকর্ম, জীবনী পড়তে হবে।
বাংলা প্রথম পত্রে যেসব গুরুত্বপূর্ণ গদ্য বা পদ্য রয়েছে তার মধ্যে অপরিচিতা, আমার পথ, বায়ান্নর দিনগুলো, রেইনকোট, নেকলেস, ঐকতান, সাম্যবাদী, তাহারেই পড়ে মনে, সেই অস্ত্র, ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ উল্লেখযোগ্য। এই গদ্য ও পদ্যগুলো আয়ত্ত করতে পারলে, প্রথম পত্রে ভালো করা যাবে। ব্যাকরণ অংশের জন্য ৯-১০ শ্রেণির ব্যাকরণ বই অপরিহার্য। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক চাকরি পরীক্ষায়ও এই বই থেকে হুবহু প্রশ্ন থাকে। এজন্য এই বইয়ের সবগুলো টপিক সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। তবে কিছু টপিক যেমন: ভাষা, বাংলা ভাষা, ব্যাকরণ, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, কারক, সমাস, সন্ধি, বিভক্তি, বচন, বাক্য সংকোচন, বাগধারা, উপসর্গ, অনুসর্গ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করতে হবে এবং বাংলা বিষয়ের যেসব টপিকে দুর্বলতা রয়েছে তা খুঁজে বের করে ওইসব টপিকে আলাদা নজর দিতে হবে।
ইংরেজি
অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ইংরেজি-ভীতিতে ভুগে এবং ইংরেজি বিষয়ে দুর্বলতার কারণে আশানুরূপ ফল অর্জন করতে পারে না। এজন্য ইংরেজি বিষয়ে আগে থেকেই ভালো প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। সি ইউনিটের ক্ষেত্রে অধিকাংশ প্রশ্ন ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র থেকে হয়ে থাকে। এজন্য এই অংশে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ইংরেজি ব্যাকরণ অংশে ভালো প্রস্তুতির জন্য ‘TOEFL’ বইটি বেশ কার্যকর।
বইটি সহজ ইংরেজিতে লেখা। এই বইয়ে প্রতিটি টপিক খুবই সুন্দরভাবে বর্ণনা করা আছে এবং অধ্যায়ে শেষে প্র্যাকটিস করারও সুযোগ আছে। দ্বিতীয় পত্রের যে বিষয়গুলোর প্রতি জোর দিতে হবে তা হলো- Parts of speech, Article, Tense, Voice, Sentence Correction, Spelling, Right form of verb, Preposition, Translation, Synonyms, Antonyms, Idiom, Joining sentence, Comprehension। ইংরেজিতে ভালো করতে আপনাদের নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ‘ওয়ার্ড স্মার্ট ও I & II’ বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ শব্দসমূহ এবং ‘ব্যারনস-এর গুরুত্বপূর্ণ ৩০০ শব্দ’ বইটি পড়বেন। তাছাড়া ইংরেজি প্রথম পত্র সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে। ইংরেজিতে ভালো করার জন্য অবশ্যই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করতে হবে।
কলি