ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের নতুন সহকারী বিশপ ও বাংলাদেশ বিশপ সম্মিলনির সঙ্গে যুক্ত হওয়া নতুন বিশপ সুব্রত বনিফাস গমেজের বিশপীয় অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ মে) সকাল ৯টায় মহাখ্রিষ্টযাগের মাধ্যমে আর্চবিশপ বিজয়ের নেতৃত্বে তার অভিষেক সম্পন্ন হয়। এর পর বিকেলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়।
বিশপ সম্মিলনীর চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ ওএমআই-এর নেতৃত্বে রমনা ক্যাথিড্রালে এই অভিষেক ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সরকারের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি, ঢাকায় ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ কেভিন র্যানডালসহ সকল ধর্মপ্রদেশের বিশপরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিশপীয় অভিষেকে আর্চবিশপ বিজয় বলেন, ‘ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী একটি ধর্মপ্রদেশ। এর পালকীয়, আধ্যাত্মিক, মানবিক সেবা ও প্রশাসনিক দায়িত্বের ব্যাপ্ততা বহুমুখী ও কিছুটা জটিল। ধর্মপ্রদেশের নিবেদিত, দক্ষ ও অভিজ্ঞ যাজকসমাজ ও বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সেবাকার্য বেশ ভালোভাবেই চলমান রয়েছে। তথাপি, বিশপীয় সেবাদায়িত্বকে আরেকটু সহভাগিতা ও এর বহুমুখী সেবা কার্যক্রমগুলো আরও শক্তিশালী, সুসংগঠিত এবং বেগবান করার লক্ষ্যে একজন সহকারী ধর্মপালের নিয়োগের আবেদন ভ্যাটিকানে করা হয়েছিল। তারই প্রেক্ষাপটে পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস ফাদার সুব্রত বনিফাস গমেজকে ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের সহকারী ধর্মপাল হিসেবে মনোনীত করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশপ সুব্রত বনিফাস গমেজ যাজক হিসেবে বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনির সহকারী সেক্রেটারি, সিবিসিবি সেন্টারের পরিচালক, পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারিতে বিভিন্ন দায়িত্বসহ বহুমুখী প্রশাসনিক ও পালকীয় সেবাদায়িত্ব পালনে বেশ আন্তরিকতা, বিশ্বস্ততা এবং দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি এক জ্ঞানী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন পরিচালক ও নেতা। অত্যন্ত সহজ, সরল, প্রার্থনাশীল, দায়িত্বশীল, বন্ধুবৎসল, গরিব দুঃখীদের প্রতি দরদি একজন ব্যক্তি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের সহকারী বিশপ হিসেবে তার এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আমাকে ও ধর্মপ্রদেশের সার্বিক মঙ্গলে বেশ শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে।’
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল বাংলাদেশ খ্রিষ্টমন্ডলীর কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং নতুন সহকারী বিশপ সুব্রতকে অভিনন্দন জানান।
এ সময় তিনি বিশপের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
এ ছাড়াও এদিন কার্ডিনাল, ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূতসহ সকল বিশপরা বিশপ সুব্রতকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তার পালকীয় কাজের জন্য মঙ্গল প্রার্থনা করেন।
সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত বিশপীয় অভিষেক অনুষ্ঠিত হয় এবং বিকাল ৫টায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, ধর্মীয় নেতারা, সাংগঠনিক নেতারাসহ খ্রিষ্টভক্তরা বিশপ সুব্রতকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
বিশপ সুব্রত বনিফাস গমেজ ১৯৬২ সালের ১৯ নভেম্বর গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর পুর্বপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা যোসেফ গমেজ ও মাতা মাগ্রেট পেরেরা। তিনি সেন্ট নিকোলাস উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং বিএ পাশ করেন। পরবর্তীতে ফিলিপাইনের ম্যানিলার সান্ত টমাস ইউনিভার্সিটি থেকে দর্শনশাস্ত্রে (এমএ) লাইসেন্সসিয়েট সম্পন্ন করেন।
বিশপ মাইকেল অতুল ডি’রোজারিও কর্তৃক ৪ ডিসেম্বর ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে ডিকন এবং ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ১৬ এপ্রিল আর্চবিশপ মাইকেল রোজারিও কর্তৃক নিজ ধর্মপল্লী রাঙ্গামাটিয়াতে যাজক হিসেবে অভিষিক্ত হন বিশপ সুব্রত।
যাজক হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার পর তেজগাঁও ধর্মপল্লীতেই প্রথম যাজক সহকারী যাজক হিসেবে দায়িত্ব পান। পরে বিভিন্ন ধর্মপল্লীসহ বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারির আধ্যাত্মিক পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে। পরে ২০১৯ সালে পুনরায় তেজগাঁও ধর্মপল্লীতেই প্রধান পাল-পুরোহিত হয়ে দায়িত্ব নেন। সেখানে পাল-পুরোহিত হিসেবে পালকীয় সেবাকাজ করার সময়ই গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের সহকারী বিশপ মনোনীত হন তিনি।
বিজ্ঞপ্তি/সাদিয়া নাহার/অমিয়/