![হাসপাতালে মাদকের আখড়া](uploads/2024/02/27/1709009142.Dhamrai-Hospital-(1).jpg)
ঢাকার ধামরাইয়ে অর্থ বাজেট ও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২০ শয্যার সরকারি হাসপাতাল ধ্বংসের মুখে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে পলেস্তারা, দরজা, জানালা। নির্মাণের ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও চিকিৎসাসেবার সুফল পাননি স্থানীয় সাধারণ জনগণ। নষ্ট হচ্ছে সরকারের কোটি টাকা মূল্যের আধুনিক ভবন।
জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৩ নভেম্বর ৪ একর জায়গার ওপর নির্মিত হয়েছে হাসপাতালটি। বর্তমানে চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। হাসপাতালে নেই কোনো ডাক্তার, নার্স। নেই কোনো চিকিৎসাপত্র। রোগী আসে না, এলেও কোনো চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সুযোগ নেই। হাসপাতালে কোনো ওষুধ নেই। নিরাপত্তার জন্য নেই কোনো নিরাপত্তা প্রহরী। সব সময় হাসপাতালটির প্রধান ফটকের ছোট গেট খোলা থাকে। হাসপাতালের সামনেই স্থানীয়দের গোবর শুকাতে দেখা যায়। মাঠে দেখা যায় গবাদিপশু চরছে। ডাক্তারদের আবাসিক ভবনের সামনে রয়েছে ময়লা আবর্জনা ও গোবর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল বা সন্ধ্যা হলেই মাদকসেবীদের আড্ডা চলে। স্থানীয়রা বিষয়টি দেখার পরও কিছু বলতে সাহস পান না।
এমন দৃশ্য দেখা যায়, উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল রোয়াইল ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর এলাকায়। ২০০৬ সালের ৩ নভেম্বর ওই ২০ শয্যার হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থাপনা ইউনিটের প্রধান প্রকৌশলী কর্নেল মো. ফজলুর রশিদ মৃধা। তিনি ওই গ্রামেরই সন্তান।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২০ শস্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালটি বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। আলমগীর হোসেন নামে একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োজিত রয়েছেন। তিনিও নিয়মিত আসেন না। প্রতি সপ্তাহে এক-দু দিন আসেন। আবার দু-এক ঘণ্টা থাকার পর চলে যান। নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় যে কেউ অনায়াসে হাসপাতালের ভেতর ঢুকতে পারেন। মূল হাসপাতালটির দরজার গ্লাস ভেঙে পড়ছে, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও বাল্ব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার নার্সদের থাকার আবাসিক ভবনগুলোর ভেতরে চলে মাদকের আড্ডা।
একটি আবাসিক ভবনের ভেতর দেখা যায়, বিড়ি-সিগারেটের প্যাকেট, মদের বোতল ও ইনজেকশনের সিরিজ। ভবনের ভেতর থেকে বেশির ভাগ বৈদ্যুতিক পাখা, তার ও বাল্ব নিয়ে গেছে দুষ্কৃতকারীরা।
কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা অনেক দূরে গিয়ে পড়াশোনা করি। হাসপাতালটি চালু না হলে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়, তাহলেও অনেক উপকার হবে। তা ছাড়া এই হাসপাতাল ধ্বংস হয়ে যাবে, পরিণত হবে মাদকসেবীদের আড্ডাখানা। আমরা মানুষের সেবার জন্য জায়গা দিয়েছি। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত কোনো সেবা ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও পাইনি।’
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ বলেন, ‘হাসপাতালের কোনো কার্যক্রম নেই। একজন লোক সপ্তাহে দু-এক দিন আসেন। কিছু সময় থেকে চলে যান। চিকিৎসা নিতে গেলে বলেন, আপনারা এখানে আসেন কেন? কোনো ওষুধপত্র নেই। যারা আসেন তারা বলেন, আমরা শুধু উপস্থিতি দেখানোর জন্য আসি। না হলে চাকরি চলে যাবে।’
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম ইফাত বলেন, ‘হাসপাতাল থাকার দরকারটা কী, যদি চিকিৎসাই দিতে না পারে? তার বদলে স্কুল করে দিলে আমরা পড়াশোনা করতে পারব।’
৭০ বছরের বৃদ্ধ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতাল নির্মাণের পর আজও চালু হয়নি। এভাবেই পড়ে আছে। ডাক্তার আসেন, কোনো চিকিৎসা দেন না। এসেই চলে যান।’
স্থানীয় শহিদুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালটি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজও চালু হয়নি। হাসপাতালটি চালু হলে সাধারণ জনগণকে আর সাভার, মানিকগঞ্জ গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে না। আর চালু না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করা হোক। তারপরও যেন কোটি টাকার হাসপাতালটি ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায়।’
স্থানীয় আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বিকেলের দিকে বহিরাগত লোকজন আসে। রাত পর্যন্ত থাকে। মাদকের আড্ডা বসে। সব জানার পরও স্থানীয়রা কেউ কোনো কথা বলতে সাহস পায় না। ডাক্তারদের থাকার যে ভবনগুলো রয়েছে, সেখানে শুধু মাদকের চিহ্ন রয়েছে।’
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আলমগীর হোসেন বলেন, হাসপাতাল ও ওষুধপত্রের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। নেই কোনো নিরাপত্তা প্রহরী। চারপাশের দেয়ালের নিচে দিয়ে লোকজন ভেতরে চলে আসে। তদারকির লোকজন না থাকায় মাদকসেবীদের আড্ডার জায়গা হয়ে উঠেছে। যদি হাসপাতালটি চালু করা যেত, একদিকে কোটি টাকার ভবন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেত। অপরদিকে স্থানীয় গরিব অসহায় লোকজনের জন্য চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যেত। কৃষ্ণনগর গ্রামের লোকজন সঠিক চিকিৎসা পেত। অর্থ বাজেট না থাকায় কোনো ওষুধ দিতে পারি না। তবে ডাক্তার আসার কথা স্বীকার করলেও চিকিৎসা দিতে পারেন না বলে স্বীকার করেন আলমগীর হোসেন।
মাদকের বিষয়টি তিনি স্বীকার করে জানান, গেটে পাহারাদার না থাকায় লোকজন অবাধে বিচরণ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফফাত আরা বলেন, আন্তবিভাগের জন্য বরাদ্দ না থাকায় আন্তবিভাগ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু আউটডোর চালু আছে।