চারবার মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি রাজবাড়ী ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালের নির্মাণকাজ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বারবার গণপূর্ত বিভাগকে তাগাদা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় পুরাতন ভবনে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বিড়ম্বনা ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নতুন আটতলা ভবনের বেজমেন্ট ফ্লোরে থাকবে গাড়ি পার্কিং, স্টোর রুম, মরচুয়ারি, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, ফার্নিচার রুম ইত্যাদি। এ ছাড়া আইসিইউ, সিসিইউ, সিটি স্ক্যান, মেমোগ্রাফির ব্যবস্থা থাকবে।
রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আটতলা ভবন নির্মাণের কাজ করছে জিকেবিপিএল ও এসসিএল নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের জুন মাসে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও পর পর তিনবার মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাসে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এবারেও ভবন নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এ কারণে আগস্ট মাস পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ৮ তলা ভবনটির সামনে রড, সিমেন্ট, বালু, ইট, পাথরসহ নির্মাণসামগ্রীর স্তূপ। শ্রমিকরা কাজ করছেন। ভেতরে বাইরে অনেক কাজ বাকি। লিফটের কাজ শুরুই হয়নি। বাকি রয়েছে বৈদ্যুতিক কাজও।
নির্মাণকাজের তদারকি করছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী স্বজন সাহা। তিনি জানান, হাসপাতালের কাজে তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো গাফিলতি নেই। কাজ প্রায় শেষের পথে। রং, বিদ্যুৎ, টাইলসসহ আনুষঙ্গিক কাজ চলছে।
কাজ পরিদর্শনে আসা রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ভেতরে কিছু কাজ বাকি আছে। রাস্তা, ড্রেন নির্মাণকাজ চলছে।
কাজ সম্পন্ন হতে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে কিছু দিন কাজ বন্ধ ছিল। এ ছাড়া প্রথমে ছয়তলা ভবন করার কথা থাকলেও পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আটতলা ভবন করার চাহিদা দেয়। এ কারণে নকশা পরিবর্তন করতে হয়েছে। সময় মতো নির্মাণসামগ্রী না পাওয়াও দেরি হওয়ার একটি কারণ ছিল।’
রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম ইফতেখার মজিদ জানান, কিছু সমস্যার কারণে সময়মতো হাসপাতালের কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে।
এদিকে পুরনো ভবনের অভ্যন্তরে গিয়ে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে শত শত রোগী চিকিৎসার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ ওষুধ নিচ্ছেন। ভিড়ের কারণে হাঁটার জায়গাই নেই। আন্তবিভাগে ভেতরে রোগীতে পরিপূর্ণ। অনেক রোগীর ঠাঁই হয়েছে বারান্দার মেঝেতে। দ্বিতীয়তলায় পুরুষ ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝেতে একজন রোগী ঘুমিয়ে ছিলেন। তার মাথার কাছে হাতে স্যালাইন লাগিয়ে বসেছিলেন এক ব্যক্তি। যে কেউ ধরে নেবে তারা একই পরিবারের।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের গোপালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মিঠু সরদার নামে ওই ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, যে ঘুমিয়ে আছেন, তিনি তার কেউ নন। পেটে ব্যথা নিয়ে সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু এখনো সিট পাননি। জায়গা না পেয়ে তার মাথার কাছে বসেছেন।
হাপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শহীদ মোল্লা জানান, ঘাড়ব্যথা নিয়ে সকালে ভর্তি হয়েছেন। শয্যা পাননি। তাই বারান্দায় বিছানা পেতে দিয়েছে। মানুষ হাঁটাচলা করলে ধুলো উড়ে আসে। মাঝে মধ্যে দুর্গন্ধও আসে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এসএমএ হান্নান বলেন, ১০০ শয্যার হাসপাতালে রোগীদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আন্তবিভাগ ও বহির্বিভাগে রোগীদের অনেক কষ্ট করতে হয়। জায়গার অভাবে রোগীদের গরমে কষ্ট করতে হয়। নতুন ভবনের কাজ শেষ হলে রোগীরা খোলামেলা জায়গা পাবেন। তারাও লোকবল বেশি পাবেন। রোগীদের বেশি বেশি সেবা দিতে পারবেন। মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।
পাঁচটি উপজেলা, তিনটি পৌরসভা আর ৪২টি ইউনিয়ন নিয়ে রাজবাড়ী জেলার জনসংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। এ জেলার বেশির ভাগ মানুষই দরিদ্র। এদের অসুখ বিসুখে রাজবাড়ীর বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। সদর হাসপাতালটি তাদের ভরসাস্থল। ১০০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন রোগীদের ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু চিকিৎসার সব সুবিধা না থাকায় একটু জটিল রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকা অথবা ফরিদপুর। জেলার মানুষের চিকিৎসাসুবিধা বাড়ানোর কথা ভেবে ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ জন্য হাসপাতালের পূর্বদিকে আটতলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এটি বাস্তবায়ন করছে রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগ। ২০২০ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়।