পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে মাসখানেকের বেশি সময় ধরে নিম্নমুখী মসলা পণ্যের দাম। তবে এর প্রভাব খুচরা বাজারে না পড়ায় সাধারণ ক্রেতারা সুফল পাচ্ছেন না। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে খুচরা পর্যায়ে বাড়তি অর্থ গোনায় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসায়িক পরিবেশ ভালো থাকা এবং বিশ্ববাজারে মসলা পণ্যের দাম কমায় এবার মসলার আমদানি বেড়েছে। এ কারণে খাতুনগঞ্জে এ বছর সরবরাহ ভালো থাকায় ঈদের আগে মসলার বাজার চড়া হয়নি। কিন্তু এর প্রভাব খুচরা বাজারে পড়ছে না।
খাতুনগঞ্জে বর্তমানে প্রতি কেজি গোলমরিচ ১ হাজার ৪০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ২৪০, জয়ত্রী ২ হাজার ৬৫০, জিরা ৬০০, দারুচিনি ৩৯০, ধনে ১৫০, স্টার ৭৮০ ও এলাচ ৪ হাজার ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া পাইকারি এই বাজারে প্রতি কেজি শুকনা মরিচ মানভেদে ১২০ থেকে ১৭০ টাকা, ভারতীয় মরিচ ২১০ থেকে ২৫০, দেশি হলুদ ১৯০ থেকে ২০০, ভারতীয় হলুদ ২৩০, তেজপাতা ১৩০ থেকে ১৪০, মেথি ১২০, কালিজিরা ৩৭০ ও জায়ফল ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তা ছাড়া পাইকারি বাজারটিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ আকারভেদে ৪৫ টাকা, চায়না রসুন ১৩০ ও কেরালা আদা ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ অন্যান্য মসলা পণ্যের দাম অনেক কম। এবার দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন ও সরবরাহ বেশ ভালো। পুরো বাজারে দেশি পেঁয়াজ রাজত্ব করছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে আদা, রসুনসহ অন্যান্য মসলা পণ্যের আমদানি ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তাই এবার কোরবানির মৌসুমে মসলা পণ্যের দাম না বেড়ে উল্টো কমে গেছে।’
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘শুধু মসলা পণ্য নয়, খাতুনগঞ্জে অধিকাংশ পণ্যের দাম অনেকটাই নিম্নমুখী। পর্যাপ্ত আমদানি ও সরবরাহের কারণে সরবরাহ ভালো থাকায় এবার দাম বাড়েনি। সে তুলনায় আমাদের এখানে বেচা-কেনা কম।’
এদিকে পাইকারি বাজারে দাম কমার প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে। বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দরে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি গোলমরিচ ১ হাজার ১০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৪০০, জয়ত্রী ৩ হাজার ৩০০, জিরা ৭৫০, দারুচিনি ৫৮০, ধনে ১৬৫ ও এলাচ ৪ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা, চায়না রসুন ১৬০ ও কেরালা আদা ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নগরের উত্তর আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘খুচরা বাজারে সব ধরনের মসলা পণ্যের দাম বাড়তি। এভাবে সুযোগ পেয়ে বাড়তি দাম নিয়ে ভোক্তাকে ঠকানোর কোনো মানেই হয় না।’
নগরের হালিশহর এলাকায় আল মদিনা স্টোরের মালিক মো. শোয়েব বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে মসলা পণ্য কিনে আনতে গাড়ি ভাড়া, শ্রমিকের মজুরি দিতে হয়। আমাদের সীমিত লাভ করতে হয়। তাই পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরায় সব সময় পণ্যের দাম একটু বাড়তি থাকে।’
উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৮০ টন মসলা পণ্য আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে রসুন ৯৯ হাজার ৮৫৮ টন, এলাচ ১ হাজার ৬১৪, দারুচিনি ১০ হাজার ৫৪৩, জিরা ৩ হাজার ৭০২, লবঙ্গ ২ হাজার ১৫৪, জয়ত্রী ২৯০, কালিজিরা ৭, গোলমরিচ ১ হাজার ৯, মেথি ৭২, আদা ২১ হাজার ১৯, পেঁয়াজ ১৪ হাজার ৬৩ ও শুকনো মরিচ ১৭৯ টন রয়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, শুধু মসলা পণ্য নয়। পাইকারি বাজারে যেকোনো পণ্যের দাম কমলেও এর প্রভাব খুচরা পর্যায়ে পড়ে না। যথাযথ বাজার তদারকি ব্যবস্থা না থাকায় খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফার সুযোগ পাচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘খুচরা দোকানের সংখ্যা তো কম নয়। তবুও আমরা পাইকারি, খুচরা পর্যায়ে আমাদের সাধ্যমতো অভিযান পরিচালনা করছি। কেউ প্রতারণা বা হয়রানির শিকার হলে আমাদের কাছে অভিযোগ দিতে পারেন। আমরা অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’