‘একশ সাংবাদিক হইয়া গেছে, নির্বাচনে আর সাংবাদিক লাগবে না’ । খবরের কাগজ
ঢাকা ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪

‘একশ সাংবাদিক হইয়া গেছে, নির্বাচনে আর সাংবাদিক লাগবে না’

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৫ পিএম
‘একশ সাংবাদিক হইয়া গেছে, নির্বাচনে আর সাংবাদিক লাগবে না’
আমতলী উপজেলা নির্বাচন ও রিটানিং কর্মকর্তা সেলিম রেজা। ছবি : খবরের কাগজ

বরগুনার আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের নির্বাচনে সাংবাদিকদের পর্যবেক্ষকের কার্ড না দিয়ে ‘একশ সাংবাদিক হইয়া গেছে, নির্বাচনে আর সাংবাদিক লাগবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন আমতলী উপজেলা নির্বাচন ও রিটানিং কর্মকর্তা সেলিম রেজা।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকালে আমতলী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিকরা পর্যবেক্ষকের কার্ডের আবেদন নিয়ে গেলে তিনি এমন মন্তব্য করে অফিস থেকে বেরিয়ে যান।

তার বক্তব্যের এমন কোন বিধান বা কারণ সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং একজন অফিস সহকারীকে দেখিয়ে বলেন, 'এটাও কি আমি বলবো, যার কাছে ইচ্ছা জিজ্ঞেস করেন'।

পর্যবেক্ষকের কার্ড নিতে এসে বিড়ম্বনায় পড়েন খবরের কাগজ, ঢাকাপোস্ট, দীপ্ত টেলিভিশন, বার্তা টুয়েন্টিফোর, দ্যা ফিনান্সিয়াল পোস্টসহ একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিনিধি। 

বার্তা টোয়েন্টিফোরের সোহাগ হাফিজ বলেন, এই ইউনিয়ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী হত্যা মামলায় জেলেও আছেন। সহিংসতার শঙ্কা রয়েছে এখনও। আবার ঘুষ নিয়ে পোলিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগেরও অভিযোগ রয়েছে আমতলী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানিং কর্মকর্তা সেলিম রেজার বিরুদ্ধে। হয়তো তাই মূলধারার গণমাধ্যম কর্মীদের পর্যবেক্ষকের কার্ড দিতে চাচ্ছেন না এই কর্মকর্তা।

এ বিষয় জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হাই আল হাদী খবরের কাগজকে বলেন, ১০০ সাংবাদিক কার্ড পেয়েছেন বলে অন্যরা পাবেন না এমন কোন বিধান নেই। আপনারা বসেন, আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখছি।

বরগুনার আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহন উপলক্ষে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুসারে রবিবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে।

আমতলী সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। তবে এ নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান ঘোড়া প্রতীকের মোতাহার উদ্দিন মৃধা ও নির্বাচনী সহিংসতায় দায়ের করা হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা আটোরিকশা প্রতীকের নয়ন মৃধার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে জানান স্থানীয় ভোটাররা।

আমতলী উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভোটগ্রহণ উপলক্ষে নয়টি ভোট কেন্দ্রে ২৩ হাজার ৩০০ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে সাত স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিন প্লাটুন বিজিবি, পুলিশ, আনসার, র‌্যাব, স্টাইকিং ফোর্স, নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষন টিম ও প্রত্যেক কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। 

মহিউদ্দিন অপু/এমএ/ 

 

মা দিবসে জিপিএ-৫ মাকে উৎসর্গ

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ০৯:৫৫ এএম
মা দিবসে জিপিএ-৫ মাকে উৎসর্গ
এসএসসির ফলাফল ঘোষণার পর যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের উচ্ছ্বসিত মা ও শিক্ষার্থীরা

‘প্রত্যাশার প্রাপ্তি মিলেছে। আমার সাফল্যের কারিগর শিক্ষকের পাশাপাশি আমার মা। বাবা নেই। তাই মা-ই আমাকে সবসময় পড়াশোনায় দেখভাল করেছেন। প্রেরণা জুগিয়েছেন, সাহস দিয়েছেন। বন্ধুর মতো সবসময় মা আমার পাশে ছিলেন। আজ মা দিবসে আমার জিপিএ-৫ মাকে উৎসর্গ করছি।’ 

রবিবার (১২ মে) এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করে যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া সেমন্তি হাসান শ্রেষ্ঠা। 

একই বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস হিয়া ফলাফলে খুশি হয়েছে। সে বলে, ‘আজ আমাদের দুটি বিশেষ দিন। একটি হচ্ছে ফলাফল প্রকাশ ও অন্যটি হচ্ছে মা দিবস। এই বিশেষ দিনে জিপিএ-৫ পেয়ে আমি উচ্ছ্বসিত। আমার প্রাপ্তি আমার মাকে উৎসর্গ করছি। মা দিবসে মাকে দেওয়া আমার শ্রেষ্ঠ উপহার জিপিএ-৫।’ 

গতকাল রবিবার দুপুরে সারা দেশে এসএসসি-২০২৪ এর ফল প্রকাশ করা হয়। অনেক শিক্ষার্থী ঘরে বসে ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে পেরেছে। তারপরও আবার অনেকে আগ্রহ নিয়ে নিজ বিদ্যালয়ে গিয়ে রেজাল্ট বোর্ডে নিজের ফলাফল দেখেছে।

যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাইমা ইসলাম সুমি বলে, ‘জিপিএ-৫ পেয়েছি। অনেক ভালো লাগছে। করোনার পর এবারই আমরা পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। গণিত বিষয়ে একটু কঠিন প্রশ্ন মনে হয়েছিল। তবুও আমরা সবাই ভালো ফলাফল করতে পেয়ে আনন্দিত।’

আরেক শিক্ষার্থী নাজিফা আক্তার বলে, ‘শিক্ষাজীবনে মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। শিক্ষকরা যেমন স্কুলে গাইড দেন, তেমনি বাসায় মা গাইড দিতেন। শিক্ষক এবং মা-বাবার অবদানেই আজ ভালো ফলাফল হয়েছে। আমার ইচ্ছা আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব। ব্যারিস্টার হবো।’

যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হাসান পারভেজ বলেন, ‘আমরা সবসময় অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করেছি। সব মিলিয়ে আমাদের শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদের অবদানের কারণে আজ আমরা সেরা, যশোর বোর্ড সারা দেশে সেরা।’

ফের স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল যশোর

দুই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এসএসসির ফলাফলে স্বমহিমায় ফিরে এসেছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হারে বোর্ডটি দেশের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। এবার যশোর বোর্ডের পাসের হার ৯২.৩৩ শতাংশ। এর আগে ২০২২ সালে ৯৫.১৭ শতাংশ পাসের হার নিয়ে দেশসেরা সাফল্য অর্জন করেছিল বোর্ডটি। এর মধ্যে দিয়ে এই বোর্ডের ফলাফল অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছিল। তবে ২০২২ সালের চেয়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা এবার কমেছে। ওই বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩০ হাজার ৮৯২ শিক্ষার্থী, এ বছর পেয়েছে ২০ হাজার ৭৬১ জন। আর করোনাকালে ২০২১ সালে পাসের হার ছিল ৯৩.০৩ শতাংশ। তবে ওই বছর খুবই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু স্বাভাবিক পরীক্ষায় এর আগে রেকর্ড ছিল ২০১৩ সালে ৯২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। 

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সমন্বিত উদ্যোগকে পাসের হারে দেশের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রধান কারণ জানিয়ে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহীন আহমেদ বলেন, ‘গত বছর বোর্ডের ফলাফল আগের তুলনায় খারাপ হওয়ার বিষয়টি মাথায় নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের নিয়ে বিশেষ ইতিবাচক কর্মসূচি নেওয়া হয়। বোর্ডের উদ্যোগে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালা করানো হয়। বিশেষ করে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উন্নতমানের প্রশ্ন ব্যাংকের মাধ্যমে অর্ধবার্ষিকী ও নির্বাচনি পরীক্ষা নেওয়া হয়।’ 

তিনি বলেন, ‘এর আগে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়। শিক্ষার্থীদের জাগিয়ে তোলা হয়। ফলে তাদের মূল বইয়ের প্রতি নির্ভরতা বাড়ে। শিক্ষার্থীদের জাগরণের কারণে আজকের এই সাফল্য। এ ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদের বিশেষ কর্মসূচি চলমান থাকবে।’ 

শীর্ষে সাতক্ষীরা, তলানিতে মেহেরপুর  

যশোর শিক্ষা বোর্ডের দেওয়া তথ্য মতে, খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার মধ্যে এবারও শীর্ষে রয়েছে সাতক্ষীরা। এ জেলায় পাসের হার ৯৬.১২ শতাংশ। তবে সবচেয়ে কম পাস করেছে মেহেরপুরে ৮৪.৯৬ শতাংশ। বোর্ডে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে খুলনা। এ জেলায় পাসের হার ৯৪.৬০ শতাংশ। আর যশোর জেলা ৯৪.২২ শতাংশ পাসের হার নিয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। এ ছাড়া নড়াইলে পাসের হার ৯৩.২৪, কুষ্টিয়ায় ৯১.৩৫, বাগেরহাটে ৯১.২৭, মাগুরায় ৯১ .০৯, চুয়াডাঙ্গায় ৯০.৮২ ও ঝিনাইদহ জেলায় পাসের হার ৮৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। 

অনেক অপ্রাপ্তিতেও দমেনি ওরা, শিশু পরিবারের ৮ পরীক্ষার্থী

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ০৯:৫০ এএম
অনেক অপ্রাপ্তিতেও দমেনি ওরা, শিশু পরিবারের ৮ পরীক্ষার্থী
চট্টগ্রাম নগরীর রউফাবাদ সরকারি শিশু পরিবারের শিক্ষকদের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কয়েকজন শিক্ষার্থী/ খবরের কাগজ

২০২৩ সালে ছুটি কাটানোর কথা বলে মনীষা মজুমদারের মা তাকে গ্রামের বাড়ি রাউজানে নিয়ে যান। তখন মনীষা নবম শ্রেণির ছাত্রী। ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার সুযোগে তাকে জোর করে বাল্যবিবাহ দেওয়া হয়। কিন্তু মনীষার মন পড়ে থাকে স্কুলে। তাইতো শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে আবার স্কুল যায় মনীষা। কিন্তু আগের প্রতিষ্ঠানটি তাকে আর ক্লাস করতে দেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে মনীষার থাকা-খাওয়া নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। এরপর আলোচনার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মনীষাকে দেওয়া হয় নগরীর রউফাবাদ সরকারি শিশু পরিবারে। সেখানে থেকেই সে এবার জিপিএ ৩.৪৪ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। 

মনীষার মতোই কষ্টের জীবন জান্নাতুল, উয়ইসিং মার্মা, সামি, নাইমা, বিথী, অ্যানি ও নিশির। তাদের কারও বাবা নেই, কারও মা। ভাইবোনদেরও চেনে না কেউ কেউ। স্বজনদের সঙ্গে কারও যোগাযোগ নেই। ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের স্নেহবঞ্চিত ওরা। পায়নি ভাইয়ের আদর, বোনের শাসন। গ্রামের মেঠোপথে দলবেঁধে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি অনেকের। এক কথায় ছোটবেলা থেকেই তারা পরিবার হারা। পরিবারের কাউকে না দেখেই সরকারি শিশু পরিবার, ছোটমণি নিবাস ও বিভিন্ন এতিমখানায় কেটে যায় জীবনের অনেক বছর। এত সব না পাওয়া তাদের জীবনে বাধা হতে পারেনি। গতকাল তারা মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে। 

গতকাল বেলা ১১টা। রউফাবাদ সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) থেকে অংশ নেওয়া আট শিক্ষার্থী ফলাফলের অপেক্ষায় ছিল। জাতীয়ভাবে ঘোষণার পরই তারা শিক্ষকদের সহযোগিতায় এসএসসির ফল জানতে শুরু করে। প্রথমে খুদেবার্তায় নিজের নামের পাশে ‘পাশড’ শব্দটি দেখতে পেয়ে খুশিতে মেতে ওঠে জান্নাতুল ফেরদৌস। এরপর রেজাল্ট জিপিএ ৪.৫৬ জানতে পেরে চোখে-মুখে আনন্দের বহির্প্রকাশ। 

তখনো নিজের ফল সম্পর্কে জানে না উয়ইসিং মার্মা। অল্প কিছুক্ষণ পর তার রেজাল্টও ‘পাশ’ আসে। পায় জিপিএ ৪.৫০। এভাবে একজন একজন করে ফল যাচাইয়ের পর সবারই পাস আসে। ইসফাকুন নেছা সামি ৪.১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়, জান্নাতুল নাইমা পায় ৩.৯৩, বিথী আক্তার ৩.৯৪, অ্যানি আক্তার ৩.৭২, মনীষা মজুমদার ৩.৪৪ আর নিশি তংচঙ্গ্যা জিপিএ ২.৮৯ পেয়ে এসএসসি পাস করেছে। খানিক আগে সবার চেহারায় চিন্তার ছাপ থাকলেও ফল শুনে তারা সবাই মেতে ওঠে বাঁধভাঙা আনন্দে।

সরকারি শিশু পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বিথীকে ২০০৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর মাত্র আড়াই বছর বয়সে প্রতিষ্ঠানটিতে আনা হয়। ওই সময় পুলিশ এসে তাকে সেখানে দিয়ে যায়। তার গ্রামের বাড়ি ভোলায়। ছোট থেকেই সে এখানে বেড়ে উঠেছে। তবে পরিবারের সদস্যরা এখন তার খোঁজ নিলেও দায়িত্ব নেওয়ার সামর্থ্য নেই। বাবা বহু বছর আগে মাকে ছেড়ে চলে গেছেন।

রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটার জান্নাতুল ফেরদৌসের বয়স তখন ৯ বছর। সেই বয়সে তার মা নিজেই পরিবারের অসহায়ত্ব তুলে ধরে মেয়েকে সরকারি শিশু পরিবারে রেখে যান। এরপর থেকে তার দায়িত্ব নেন সেখানকার শিক্ষকরা। তার স্বপ্ন বড় হয়ে সে সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক হবে। 

উয়ইসিং মার্মার গল্প একই। বান্দরবানে গ্রামের বাড়ি হলেও সেখানে যাওয়া হয় না। গতকাল বিকেলে কথা হলে বলে, ‘পরিবারের কথা মনে এলে চোখে পানি চলে আসে। সবাই পরীক্ষার সময় মা-বাবার দোয়া নিলেও আমরা নিতে পারি না। কারণ তাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয় না। তখন মনে হয় এ পৃথিবীতে আমার কেউই নেই। কিন্তু শিশু পরিবারের সবাই আমাদের সেই কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। বড় হয়ে সে নার্স হতে চায়।’ 

সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক তাসনিম আখতার বলেন, ‘আজকে আমাদের সবচেয়ে খুশির দিন। কারণ মেয়েদের খুশি দেখতে পাচ্ছি। ওদের ভরণপোষণ, পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু দেওয়ার চেষ্টা করি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে ওদের ভালোমন্দ দেখি। অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, এর পরও আমরা বেসরকারি সহযোগিতা নিয়ে হলেও তাদের আলাদা কেয়ার নেওয়ার উদ্যোগ নিই।’ 

চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক উর্বশী দেওয়ান বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও আমাদের আন্তরিকতা দিয়ে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা আটজন আজ শিক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ অতিক্রম করল। তাদের জন্য শুভকামনা রইল।

অনন্ত বিজয় স্মরণ পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার ও রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ০৯:৪৪ এএম
পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার ও রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি
ছবি : খবরের কাগজ

বিজ্ঞান লেখক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকর ও সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে।

রবিবার (১২ মে) অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকাণ্ডের ৯ বছরে তার স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা এ দাবি জানান।

২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকায় প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখক অনন্ত বিজয় দাশকে। এরপর ওই এলাকায় প্রয়াত যুবনেতা মঈনুদ্দিন আহমদ জালালের উদ্যোগে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। প্রতিবছর ১২ মে ওই স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সিলেটের প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, লেখক, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মীসহ অনন্ত বিজয়ের সহযোদ্ধারা।

রবিবার দুপুর ১২টায় পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অনন্ত বিজয়ের স্মৃতি রক্ষার্থে তাকে হত্যার স্থানে স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণেরও দাবি জানান বক্তারা। গণজাগরণ মঞ্চ, সিলেটের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘অনন্ত হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পর এই মামলায় রায় হয়। তবে রায় ঘোষণার দুই বছর কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত কার্যকরের কোনো উদ্যোগ নেই। এ ছাড়া মামলার রায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও তিনজন এখনো পলাতক রয়েছেন।’

বক্তারা পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার ও রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘অনন্তসহ বেশ কয়েকজন ব্লগার ও মুক্তমনা লোকদের হত্যার মাধ্যমে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। তাই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের স্বার্থেই এই হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকর ও সব আসামিকে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় জঙ্গিরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।’

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, শাবিপ্রবির অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী, পরিবেশকর্মী আব্দুল করিম কিম, আশরাফুল কবির, সম্মিলিত নাট্যপরিষদ সিলেটের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ, অনন্তর ভগ্নিপতি অ্যাডভোকেট সমর বিজয় সী শেখর, লেখক ডা. এনাম আহমদ, প্রগতিশীল রাজনৈতিককর্মী নিরঞ্জন সরকার অপু, বাসদ নেতা প্রণব জ্যোতি পাল, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক মাহবুব রাসেল, রাজীব রাসেল, দেবজ্যোতি দেবু, অরূপ বাউল, উজ্জ্বল চক্রবর্তী, রনি দাশ প্রমুখ।

পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বিজয় দাশ ‘যুক্তি’ নামের একটি বিজ্ঞানমনস্ক ম্যাগাজিন সম্পাদনা করতেন। তিনি মুক্তমনাসহ বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখি করতেন। ২০১৫ সালের ১২ মে সকালে বোনকে সঙ্গে নিয়ে অফিসে যাওয়ার সময় সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকার দস্তিদার দীঘির পাশে তার ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে একদল যুবক। পরে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। সেই রাতেই সিলেটের বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন অনন্ত বিজয় দাশের ভাই রত্নেশ্বর দাশ। ২০২২ সালের ৩০ মার্চ সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল সিলেটের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব এই হত্যা মামলার রায়ে চারজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও একজনকে খালাস দেন।

গৌরীপুরে বিশ্ব মা দিবস উদযাপিত

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ০৯:৩৯ এএম
গৌরীপুরে বিশ্ব মা দিবস উদযাপিত
ছবি : খবরের কাগজ

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বিশ্ব মা দিবস উদযাপিত হয়েছে।

রবিবার (১২ মে) বেলা ১১টায় দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের উদ্যোগে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নিলুফার আন্জুম পপি।

গৌরীপুর উপজেলা সভাকক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকারের সভাপতিত্বে ও উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রেহানা আক্তার খাতুনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন চন্দ্র রায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হেলাল উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরা বেগম, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নন্দন দেবনাথ, উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইকবাল আহমেদ নাসের, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আনোয়ার রহমান প্রমুখ।

অমিয়/

দিনাজপুরের ৪টি বিদ্যালয় থেকে পাস করেনি কেউ

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ০৯:৩৫ এএম
দিনাজপুরের ৪টি বিদ্যালয় থেকে পাস করেনি কেউ
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ বছর চারটি স্কুলের কোনো শিক্ষার্থী পাস করেনি। বিদ্যালয়গুলো হলো দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার চৌমহনী মডেল স্কুল, গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গোগোয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার শেখ ফজিলাতুনন্নেছা মুজিব বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এবং কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার পুরবাসুখাতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি।

এদিকে চৌমহনী মডেল স্কুল থেকে ছয়জন, গোগোয়া বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৪ জন, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে দুজন এবং পুরবাসুখাতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।  

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় এ বছর পাসের হার ৭৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ১০৫ জন শিক্ষার্থী। এবার পাসের হারসহ জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়েছে মেয়েরা। গতকাল রবিবার দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মীর সাজ্জাদ আলী এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত বছর এই বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক স ম আব্দুস সামাদ আজাদ জানান, যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি, সে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে মন্ত্রণালয় আগে যেমন ব্যবস্থা নিয়েছিল তেমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় ২ লাখ ৪৪৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ৯৮ হাজার ১৮৪ জন ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়। অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৬০ জন। এ বছর ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৩৫ জন ছাত্রছাত্রী পাস করেছে। পরীক্ষায় উপস্থিত ছাত্রের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩৬২ জন, ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৯৭ হাজার ৮২২ জন।

এ বছর এই বোর্ডে পাস ও জিপিএ-৫-এর সংখ্যায় এগিয়ে ছাত্রীরা। ছাত্রীদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ২৪৬ জন ছাত্রী আর ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮ হাজার ৮৫৯ জন। বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৬৬ জন। আর ৭৭টি স্কুলের শতভাগ ছাত্রছাত্রী পাস করেছে। ২৭৮ কেন্দ্রে ২ হাজার ৭৩০টি স্কুলের শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়।