ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে বরিশাল সদর উপজেলা থেকে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় এস এম জাকির হোসেনের। তিনি বছরে আয় করেন প্রায় ২৪ লাখ টাকা। আর ডাবল স্নাতকোত্তর পাস করেছেন মাহমুদুল হক খান মামুন। তিনি অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি পাস করেছেন।
অন্যদিকে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভূমির মালিক সদ্য পদত্যাগকারী চরকাউয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম। তার কৃষি-অকৃষি মিলিয়ে ৫৪০ দশমিক ১৫ শতাংশ জমির রয়েছে। সবচেয়ে কম আয়ের প্রার্থী আবদুল মালেক। কর্মহীন প্রার্থী ভাইস চেয়ারম্যান মাহাবুবর রহমান মধু। নির্বাচন কমিশনের দাখিল করা সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
হলফনামায় উল্লিখিত প্রার্থীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী স্নাতক পাস এস এম জাকির হোসেন পেশায় একজন ব্যবসায়ী। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে জমিসংক্রান্ত তিনটিসহ মোট চারটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ আরও দুটি মামলা ছিল।
বছরে তিনি বিভিন্ন খাত থেকে আয় করেন ২৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯২৮ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে ১৭ লাখ ১৯ হাজার ৯২৮ টাকা, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে সম্মানী বাবদ ৪ লাখ ৮০ হাজার এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে ২ লাখ টাকা আয় করেন।
ডাবল স্নাতকোত্তর মাহমুদুর রহমান খান মামুনের বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলা না থাকলেও পূর্বে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা ছিল। পেশায় তিনি একজন ঠিকাদার। ব্যবসা থেকে কোনো আয় না থাকলেও কৃষি খাত থেকে বছরে আয় করেন ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জমি বিক্রি থেকে ৯৬ হাজার ৮১২ টাকা আয় করেন।
স্নাতকোত্তর পাস বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মাহাবুবর রহমান মধুর আয়ের কোনো উৎস না থাকলেও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে সম্মানী ভাতা বাবদ বছরে আয় করেন ৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
এইচএসসি পাস মো. মনিরুল ইসলাম ছবি পোশায় একজন ব্যবসায়ী। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকলেও অতীতে দুটি মামলা ছিল তার। বিভিন্ন খাত থেকে বছরে তার আয় ২০ লাখ ৪৬ হাজার ২৫০ টাকা। এর মধ্যে কৃষি থেকে ৬০ হাজার, পরিবহন ও ইটভাটা ব্যবসা দিয়ে ১৮ লাখ ৬৬ হাজার ২৫০ এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে ১ লাখ ২০ টাকা।
অন্যদিকে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে নির্বাচনি প্রচারে সরকারি গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার বিশারকান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পরিষদের সরকারি গাড়ি নিয়ে নির্বাচনি প্রচার চালান তিনি। বানারীপাড়া উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক। আসন্ন ৫ জুন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী।
স্থানীয়রা জানান, চতুর্থ দফায় বানারীপাড়া উপজেলা পরিষদের তফসিল ঘোষণা হলেও গোলাম ফারুক সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নিয়মিত নির্বাচনি গণসংযোগসহ প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। শুক্রবার বিকেলে সরকারি গাড়ি নিয়ে উপজেলার বিশারকান্দি, ইলুহার, উদয়কাঠী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও জনসমাবেশ করেন।
এ বিষয়ে বানারীপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম ফারুকের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠানো হলে তিনি তা দেখে এর কোনো উত্তর দেননি।
বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অন্তরা হালদার বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের সরকারি গাড়িটি চেয়ারম্যান এখনো জমা দেননি। গাড়িটি তার কাছে রয়েছে। এ বিষয়ে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করব।’
বরিশালের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘যেহেতু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, সেহেতু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নির্বাচনি প্রচার করতে পারবেন না। নির্বাচনি প্রচারে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেছেন এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া যেসব উপজেলার চেয়াম্যানরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের কাছে থাকা গাড়িগুলো ডিসি পুলে জমা দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।’