ঢাকা ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, শনিবার, ০১ জুন ২০২৪

বজ্রপাতে পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজায় ত্রুটি

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ১২:১৭ পিএম
বজ্রপাতে পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজায় ত্রুটি
ছবি : খবরের কাগজ

পদ্মা সেতুর মাওয়া টোলপ্লাজায় বজ্রপাতে কারিগরি ত্রুটিতে টোল আদায়ে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। টোলস্কেলে বিদ্যুৎ না থাকায় মাওয়া প্রান্তে টোল দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বহু গাড়ি। এতে প্রায় তিন কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়।

মঙ্গলবার (৭ মে) সকালে দেখা যায়, সেতু পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় শত শত যানবাহন। সবচেয়ে বেশি যানবাহন ছিল ট্রাক লেনে।

কারিগরি ত্রুটির বিষয়টি নিশ্চিত করে পদ্মা সেতু সাইট অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আমিরুল হায়দার চৌধুরী জানান, রাত ৩টা থেকে ৪টার দিকে বজ্রপাত হয়। এতে টোলস্কেলে মাদারবোর্ডে সমস্যা হয়েছিল। তবে সকালে সেটি ঠিক করা হয়েছে। ট্রাক লেনে কিছুটা চাপ ছিল। এটি বড় ধরনের কোনো বিষয় নয়। বজ্রপাতে ইলেকট্রিক শর্টসার্কিটের বিষয়।

মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ জিয়াউল হায়দার খবরের কাগজকে জানান, সকালের দিকে টোলস্কেলে সাময়িক সমস্যা দেখা দেয়। এতে টোল আদায়ে বিঘ্ন ঘটায় গাড়ি এসে জমতে থাকে টোলপ্লাজার সামনে। এক থেকে দেড় ঘণ্টার মতো যানজট ছিল। তবে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে টোল আদায় শুরু হওয়ায় এখন সড়কের চিত্র স্বাভাবিক।

মঈনউদ্দিন সুমন/জোবাইদা/অমিয়/

পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের পাচারে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ১০:৫২ পিএম
পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের পাচারে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি
ছবি : খবরের কাগজ

পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের চীনে পাচারে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করা সচেতন জুম্ম সমাজ। শুক্রবার (৩১ মে) বেলা ১১টায় নগরীর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে তারা এ দাবি জানান। এ সময় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন অংশ নেন।

মানববন্ধনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপক জিনবোধি মহাথেরো বলেন, ‘পাহাড়ে শিক্ষার হার কম। বেশির ভাগ নিরক্ষর। আর ওই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির মানুষ সেখানকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের লোভের ফাঁদে ফেলছে। মূলত তারা বিয়ের কথা বলে চীনে পাচার করে দিচ্ছে। সেখানে নেওয়ার পর তাদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ অবস্থা দূর করতে হলে সরকারের জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন।’

ত্রিপুরা শ্রমিক ফেডারেশনের অর্থ সম্পাদক উপামোহন ত্রিপুরা বলেন, ‘একটি দালাল চক্র অর্থ ও ভালো থাকার প্রলোভন দেখিয়ে পাহাড়ি মেয়েদের বিয়ের নামে পাচার করে দিচ্ছে। চক্রটি অফলাইন ও অনলাইনে এসব কারবার করছে। ওই চক্রে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার করতে হবে।’ 

বিশ্বমৈত্রী বৌদ্ধবিহার আগ্রাবাদের সাধারণ সম্পাদক সুশোভন চাকমা বলেন, ‘পাহাড়ের নারীদের পণ্য বানিয়ে বিদেশে পাঠানোর বন্দোবস্ত করছে দালাল চক্র। অভাবের তাড়নায় অনেক মা-বাবা ওই ফাঁদে পা দিচ্ছে। প্রশাসনকে কঠোরভাবে এটি বন্ধ করতে হবে।’

অরুণ জয় চাকমার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন নারী সংঘের সভাপতি পিংকি চাকমা, স্বধর্ম রক্ষা কমিটি পাহাড়তলীর সাংগঠনিক সম্পাদক উজ্জ্বলময় চাকমা, কিকো দেওয়ান প্রমুখ।

সিলেটের ঐতিহ্য নিয়ে রানওয়ে ম্যানিয়াকের ফ্যাশন শো

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০৯:৩৬ পিএম
সিলেটের ঐতিহ্য নিয়ে রানওয়ে ম্যানিয়াকের ফ্যাশন শো
ছবি : খবরের কাগজ

সিলেটে রানওয়ে ম্যানিয়াকের মডেল এজেন্সির ৭ম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন ইতিহাস ঐতিহ্যের থিমে ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফ্যাশন শোর প্রথম পর্বে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে পহেলা বৈশাখ, বসন্ত, অমর একুশে, ঈদ, পূজা, স্বাধীনতা ও বিজয়কে তুলে ধরা হয়। 

দ্বিতীয় পর্বে সিলেটকে উপস্থাপন করতে মরমী কবি হাসন রাজা, প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহ, সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা, সাঁওতাল, মাঝি, সুরমা পারের মেয়ে, পর্যটক, পুরনো বিয়ের চিত্র, ভাইফোঁটার কার্যক্রম নিয়ে ফ্যাশন শো করা হয়। 

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাত ৮টা নগরীর সারদা স্মৃতি ভবনে রানওয়ে ম্যানিয়াকের আয়োজনে ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় নতুন মডেলদের নিয়ে দুইটি পর্বে ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়।

রানওয়ে ম্যানিয়াকের চেয়ারম্যান হিতাংসু দাশ ইমনের সভাপতিত্বে ও রুবেল রাজের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. ফারুক উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে গুণীজন সম্মাননা প্রদান করা হয় একুশে পদকপ্রাপ্ত লোকসংগীত শিল্পী সুষমা দাশকে, আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় রানওয়ে ম্যানিয়াকের উপদেষ্টা বিজিত চৌধুরীকে, সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয় প্রথম আলো'র দেশসেরা আলোকচিত্রী আনিস মাহমুদকে, অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ভূমিকা রাখায় সম্মাননা দেয়া হয় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্করকে, তরুণ ছাত্রনেতা হিসেবে সম্মাননা দেয়া হয় সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভকে।

অনুষ্ঠানে ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন চট্টগ্রামের দেশীয়ানোর সত্ত্বাধিকারী সানজিদা আফরোজ। পোশাকে ছিলেন চারু চট্টগ্রামের প্রয়াত প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার শিমুল খালেদ। তরুণ ডিজাইনার হিসেবে ছিলেন পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র তন্ময় বড়ুয়া, শাহরিয়ার, পুনম দাশ, সাবরিনা চৌধুরী, আবু বকর সিদ্দীক। কস্টিউমস ডিজাইন করেন নিলুফা ইয়াসমিন। ফ্যাশন কোরিওগ্রাফার ছিলেন ফ্যাশন ডিরেক্টর আলমগীর হোসেন আলো, মেকআপে ছিলেন রিজান আহমেদ রুমেল ও আবীর হাসান। পুরো অনুষ্ঠানে মডেল কো-অর্ডিনেটর ছিলেন জয়ন্ত কুমার দাস।

শাকিলা ববি/এমএ/

বন্যায় পানিবন্দি জীবন, এক মোমবাতির দাম ৩০ টাকা

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০৯:২৮ পিএম
বন্যায় পানিবন্দি জীবন, এক মোমবাতির দাম ৩০ টাকা
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাও ইউনিয়নের শিয়ালা হাওর গ্রাম থেকে তোলা। ছবি : মামুন হোসেন

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের শিয়ালা হাওর গ্রামের বাসিন্দা ইসলাম আলী আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি। তিনি বলেন, ‘পানি আসার পর এক সপ্তাহ ধরি বিদ্যুৎ নাই। আমরা দোকান থাকি ৩০ টাকা করি মোমবাতি আইন্না জ্বালাই। এই বন্যার সময় আমাদের কোনো রুজি-রোজগারও নাই। ধান বেছিয়া যা টাকা পাইছিলাম, তা দিয়া এখন চলতাছি। ঘরবাড়িও ভাইঙ্গা লইয়া গেছে।’

ইসলাম আলীর মতো একই অবস্থা শিয়ালা হাওর গ্রামের প্রায় ২০টি পরিবারের। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে পানি এসেছে তাদের এলাকায়। গত বুধবার রাত ১২টায় তাদের ঘরে পানি ঢোকে। তখন পানির স্রোতের কারণে পাশের স্কুলে আশ্রয় নিতেও যেতে পারেননি কেউ কেউ। প্রত্যন্ত এই অঞ্চলের বাসিন্দারা কোনো সতর্কবার্তাও পাননি। এমনকি এই পানিবন্দি অবস্থায় তাদের কেউ কোনো শুকনো খাবারও দিতেও যাননি। তাদের এলাকায় একটিমাত্র মুদি দোকান আছে। তাই বাধ্য হয়ে রাত কাটানোর জন্য মাত্র ৫-১০ টাকার মোমবাতি এখন তাদের ২০ থেকে ৩০ টাকা পিস হিসাবে কিনে আনতে হচ্ছে। 

শিয়ালা হাওর গ্রামের আয়তারা বেগম বলেন, ‘রাতে যখন ঘরে পানি আসে, আমরা ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করি। পানির স্রোতের কারণে নৌকা নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রেও যেতে পারিনি। তাই বারবার আল্লারে ডাকছি পানি কমানোর জন্য। আমরা গরিব মানুষ, অন্য জায়গায় গিয়ে ঘরবাড়ি করার সামর্থ্য আমাদের নাই। তাই বাধ্য হয়ে এখানেই থাকি। এখন পর্যন্ত কেউ একটু খোঁজখবর নিতেও আসেনি।’ 

প্রসঙ্গত, ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেটের সীমান্তবর্তী সাতটি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আরও দুটি উপজেলা। এ নিয়ে বন্যায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। পানিবন্দিদের মাঝে যারা প্রত্যন্ত এলাকায় আছেন, তারা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বন্যাকবলিত উপজেলাগুলো হলো জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ।

শাকিলা ববি/এমএ/

জাহাজভাঙা শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২০ হাজার টাকা করার দাবি

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০৮:০১ পিএম
জাহাজভাঙা শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২০ হাজার টাকা করার দাবি
ছবি : খবরের কাগজ

জাহাজভাঙা শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করে শ্রমিকদের মাসিক নিম্নতম মজুরি ২০ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকনেতারা। একই সঙ্গে আগামী ১০ জুনের মধ্যেই বেতনসহ ঈদুল আজহার বোনাস পরিশোধ ও আসন্ন বাজেটে শ্রমিকদের জন্য রেশনিংব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।

শুক্রবার (৩১ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর প্রেস ক্লাব চত্বরে জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরাম আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে এসব দাবি জানানো হয়। 

মানববন্ধনে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালার বিধি ১১১(৫) অনুসারে জাহাজভাঙা শ্রমিকদের আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে মূল বেতনের সমপরিমাণ উৎসব বোনাস, মে মাসের পূর্ণ বেতন এবং জুন মাসের আংশিক বেতন ১০ জুনের মধ্যে পরিশোধ করার জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। 

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জাহাজভাঙা শ্রমিকরা যে মজুরি পান, তা দিয়ে তাদের জীবন নির্বাহ কষ্টকর হয়ে পড়েছে। উপরন্তু জাহাজভাঙা সেক্টরে ২০১৮ সালে ঘোষিত নিম্নতম মজুরি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ইতোমধ্যে নিম্নতম মজুরি ঘোষণার পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ায় শ্রম আইন অনুসারে নতুন মজুরি বোর্ড ঘোষণার সময় হয়ে গেছে। তাই অবিলম্বে নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করে জাহাজভাঙা শ্রমিকদের নিম্নতম মাসিক মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণা করতে হবে। 

পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য রোধের স্থায়ী এবং দীর্ঘ মেয়াদে সমাধানকল্পে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও জাহাজভাঙা শ্রমিকসহ সব খাতের শ্রমিকদের জন্য ন্যায্যমূল্যে রেশনিংব্যবস্থা প্রণয়ন এবং সারা দেশে শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকায় টিসিবির অধীনে ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু করার জন্য আসন্ন বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দের দাবি জানানো হয়। সমাবেশে জাহাজভাঙা শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বিশেষজ্ঞ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এবং জাহাজভাঙা শিল্পাঞ্চলে সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক অ্যাম্বুলেন্স রাখার জোর দাবি জানানো হয়। 

ফোরামের সভাপতি তপন দত্তের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব ফজলুল কবির মিন্টুর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক এ এম নাজিম উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ ম জামাল, জাতীয় শ্রমিক লীগ সীতাকুণ্ড আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মাহাবুবুল আলম, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবসার, জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের কোষাধ্যক্ষ রিজওয়ানুর রহমান খান, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হক শিমুল, বাংলাদেশ মেটাল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মো. আলী প্রমুখ। 

সিলেটের সাড়ে ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০৭:৪২ পিএম
সিলেটের সাড়ে ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি
ছবি : খবরের কাগজ

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী সাতটি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি উপজেলার অবস্থা ভয়াবহ। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাত উপজেলায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন বাসিন্দা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। আর আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ৪ হাজার ৮০২ জন। শুক্রবার (৩১ মে) সকাল পর্যন্ত পানিবন্দি ও আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠা লোকজনের সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে জানা গেছে। পানিবন্দিদের তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে সিলেট নগরী। 

সিলেট নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে চলা সুরমা নদীর পানি বেড়ে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর থেকে নগরীর তালতলা, মেন্দিবাগ, মাছিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করে। শেষ রাতে নগরীর সুবহানিঘাট, ঘাসিটুলা, শামিমাবাদ, কানিশাইল, তালতলা, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, যতরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এসব এলাকার কারও ঘরে হাঁটুপানি, আবার কারও উঠানে হাঁটুপনি প্রবেশ করে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর তালতলায় একটি ছড়ার পানি উপচে সিলেটের ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ে প্রবেশ করে। তাৎক্ষণিক দমকলের কর্মীরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেন।

গতকাল নগরীর বন্যায় প্লাবিত সুবহানিঘাট, ঘাসিটুলা, শামিমাবাদ, কানিশাইল, তালতলা, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, যতরপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বাসা থেকে মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ঘরের শিশু ও বয়স্কদের নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠাচ্ছেন। যাদের ঘরে পানি উঠেছে তারা খাবার রান্না করতে পারছেন না। কিন্তু বেলা ২টা পর্যন্তও এসব এলাকায় সিলেট সিটি করপোরেশনের কেউ যাননি।

নগরীর সুবহানিঘাট এলাকার নিয়তি দেব বলেন, ‘গতকাল রাত থেকে ঘরে পানি। ঘরের বেশির ভাগ মালামাল পানিতে ডুবেছে। কিছু আসবাবপত্র এখন আরেকজনের বাসায় নিয়ে রাখছি। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত রান্নাও করতে পারিনি। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও পেটে কারোরই এখনো খাবার পড়েনি।’

একই এলাকার আরেক বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ‘এই পুরো এলাকায় প্রায় ৪০০ মানুষ পানিবন্দি আছেন। এখানে অনেক নিম্নবিত্ত পরিবার আছে, যারা কলোনিতে বাস করে। যাদের সম্পদ বলতে কাঁথা, বালিশ, হাঁড়িপাতিল। এসব মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে।’ 

এদিকে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, গতকাল সিলেটের নদনদীর পানি কিছুটা কমেছে। গতকাল সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে কুশিয়ারা দুটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে অমলসিদ পয়েন্টে ২০৭ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে।

এ ছাড়া ভারতের মেঘালয় ও আসামের পাহাড়ি এলাকায় টানা ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে বন্যা দেখা দেয়। সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, লোভা, ধলাই ও পিয়াইন নদীর বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে পড়ে ওই পাঁচ উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে কুশিয়ারা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বেড়ে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থান দিয়ে প্রবেশ করলে এ দুই উপজেলাও বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। 

এদিকে সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. মখলিছুর রহমান কামরানের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার বিকেলে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনস্বার্থে সিলেট সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়। সভায় নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে ওই ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসাসামগ্রী প্রেরণ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় উদ্ধার কাজের জন্য নৌকার ব্যবস্থা, নিম্নাঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্র, উপকেন্দ্রগুলো বন্যার পানিতে যাতে ডুবে না যায়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সহযোগিতা প্রদান, নগরবাসীর জরুরি সেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম চালুসহ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে রান্না করা খাবার পরিবেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, সিসিক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করায় তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরানের সঙ্গে আলোচনা করে জরুরি সভা আহ্বানের নির্দেশনা প্রদান করেন এবং ইতোমধ্যে জরুরি ত্রাণব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ ছাড়া তিনি সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় বিশেষ মোনাজাত-প্রার্থনা করার জন্য নগরবাসীর কাছে অনুরোধ জানান। সিসিক মেয়রের দপ্তর থেকে জানানো হয়, ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে তিন টন চিড়া, তিন টন মুড়ি, গুড়, খাওয়ার পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং ওরস্যালাইন কেনা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহায্যের জন্য ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম (০১৯৫৮-২৮৪৮০০) অথবা ভারপ্রাপ্ত মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

শাকিলা ববি/এমএ/