সিলেট নগরীর কাজিটুলা এলাকার জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী সুমন। একটি একতলা বিল্ডিং ও তিনটি টিনশেডের ঘরের জন্য ১২০০ টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স দিয়েছেন তিনি। নতুন অ্যাসেসমেন্টে তার এই চার বাসার হোল্ডিং ট্যাক্স তিন মাসের জন্য নির্ধারণ কর হয় ৪ হাজার ৩৫০ টাকা।
জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী সুমন খবরের কাগজকে বলেন, ‘যেখানে আমি এক বছরে ১ হাজার ২০০ টাকা ট্যাক্স দিতাম, সেখানে এখন তিন মাসের জন্য ৪ হাজার ৩৫০ টাকা দিতে হবে। তার মানে এক বছরে আমাকে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হবে। এটা কীভাবে সম্ভব? প্রতিদিনই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল বাড়ছে। কিন্তু আমাদের আয় বাড়ছে না। এখন এভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়ে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা দিয়েছেন সিসিক মেয়র। আগামী ১৪ তারিখ পর্যন্ত আপিলের সময় দেওয়া হয়েছে।
আমি আপিল করব। তখন হয়তো কিছুটা কমবেশি করা হবে। কিন্তু অযৌক্তিকভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়ে কেন নগরীর বাসিন্দাদের হয়রানি করা হচ্ছে। তাই আমরা আন্দোলন করব।’
জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী সুমনের মতো সিলেট সিটি করপোরেশনের সব বাসিন্দা হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন। বাসার মালিকরা বলছেন, এই হোল্ডিং ট্যাক্স ভৌতিক ও অযৌক্তিক। আর ভাড়াটিয়ারা বলছেন, এভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর প্রভাব সরাসরি ভাড়াটিয়াদের ওপর পড়বে। এর ফলে মালিকপক্ষ বাসার ভাড়া বাড়িয়ে দেবেন।
এদিকে সিটি করপোরেশনের নতুন অ্যাসেসমেন্টের ওপর ভিত্তি করে নগরবাসীর ওপর হোল্ডিং ট্যাক্স আরোপ করেছে, তা অযৌক্তিক, গণবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন সিলেটের প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও ভুক্তভোগী নাগরিকরা। গত সোমবার রাত ৮টায় নগরীর জিন্দাবাজারে সিলেট নজরুল একাডেমিতে গণতান্ত্র পার্টির সভাপতি মো. আরিফ মিয়ার সভাপতিত্বে ও বাসদ সিলেট জেলার আহ্বায়ক আবু জাফরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় নেতারা এসব কথা বলেন।
সভায় নেতারা নতুন অ্যাসেসমেন্টের ওপর ভিত্তি করে হোল্ডিং ট্যাক্স আরোপের প্রক্রিয়া বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দেশে অর্থনৈতিকসংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। প্রতিদিন বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। মানুষের জীবন নাভিশ্বাস হয়ে উঠছে। ঠিক এই সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের এমন অযৌক্তিক হোল্ডিং ট্যাক্স আরোপ পুরো নগরবাসীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে।’
এ সময় বক্তারা সিটি করপোরেশন আরোপিত অযৌক্তিক হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিলের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। সভায় আগামী বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘২০১৯-২০ সালে ভবনগুলোর আয়তন ও ধরন অনুযায়ী নতুনভাবে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কারও আপত্তি থাকলে তারা তা আবেদন করে জানাতে পারবেন। আবেদন রিভিউ বোর্ডে শুনানির মাধ্যমে যৌক্তিকভাবে নিষ্পত্তি করা হবে।’
নতুন আরোপিত কর নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক মেয়রের প্রস্তাব মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়ে সেটি প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা রিভিউ বোর্ড গঠন করে নগরবাসীর সঙ্গে আলোচনা করব। বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে।’
এ সময় সভায় বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা সিপিবির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য, জাসদের জেলা সভাপতি লোকমান আহমেদ, সিলেট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্ল্যাহ শহিদুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ব্রজগোপাল, সিপিবি জেলা সভাপতি সৈয়দ ফরহাদ হোসেন, বাসদের (মার্কসবাদী) জেলা আহ্বায়ক উজ্জ্বল রায়, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি সিকান্দর আলী, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের জেলা সভাপতি সিরাজ আহমদ ও বাসদের জেলা সদস্য সচিব প্রণবজ্যোতি পাল প্রমুখ।