চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের তিন উপজেলায় গতকাল ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালের দিকে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখা গেছে চা-শ্রমিকদের মাঝে। ভোটের দিন হওয়ায় কারখানার পাশাপাশি চা-পাতা তোলার কাজ ছিল বন্ধ। তাই দিনটিকে তারা কাজে লাগিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, তার একটি ভোট পছন্দের প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের কারণ হতে পারে। তাই নাগরিক অধিকার প্রয়োগের জন্য তারা ভোট দিতে এসেছেন। যদিও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও চা-শ্রমিক ছাড়া বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম।
জানা গেছে, জেলায় সাতটি উপজেলার মধ্যে প্রথম ধাপে ভোট হয়েছে কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখায়। জেলার এই তিন উপজেলায় চা-বাগান রয়েছে ৫৯টি। আর চা-বাগানের ভোটার সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার। এর মধ্যে কুলাউড়ায় রয়েছে ২৩টি চা-বাগান, সেখানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার; জুড়ীতে ১৬টিতে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার; বড়লেখায় ২০টি, যেখানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার।
ভোট দিতে আসা কয়েকজন চা-শ্রমিক জানান, ভোটের দিন চা-শ্রমিকদের চায়ের পাতা সংগ্রহ করা বা কারখানা সচল রাখা হয়নি। ভোটের জন্য দেওয়া হয়েছে ছুটি। এই ছুটি তারা পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছেন। কুলাউড়া উপজেলার গাজীপুর চা-বাগানের শ্রমিক সুমনা কুর্মি ও জীবন গোয়ালা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, ‘ভোট দেওয়া তো নাগরিক দায়িত্ব। আমি ভোট না দিলে আমার প্রার্থী জিতবে না, তাই ভোট দিতে আসলাম।’ শ্রমিকের সন্তান সজল কৈরী বলেন, ‘আমাদের ভোটে যেহেতু জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে, তাই এবার আমরা হিসেব করেই ভোট দিয়েছি।’ আরেক চা-শ্রমিকের সন্তান মিন্টু দেশোয়ারা বলেন, ‘বাগানে আজ (বুধবার) কাজ নেই। তাই চা জনগোষ্ঠীর ভোটাররা প্রায় সবাই ভোট দিতে এসেছেন। আমার কাছে এটা একটা উৎসব।’
সরেজমিনে দেখা যায়, তিন উপজেলার বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রই ছিল ফাঁকা। কেন্দ্রের বাহিরে প্রার্থীর সমর্থক ও কর্মীদেরও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে কেন্দ্রের ভেতরে ভোটারের লাইন একদমই ফাঁকা। যদিও চা-বাগান এলাকায় ভোটার ও উৎসুক জনতার ভিড় ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুপুর ১টা পর্যন্ত তিন উপজেলার চা-বাগান এলাকার ভোটকেন্দ্র ছাড়া অন্যান্য ভোটকেন্দ্রগুলোর বেশির ভাগই ছিল ফাঁকা। কুলাউড়ার নবীন চন্দ্র মডেল উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ইফতেখার হোসেন ভূঁইয়া জানান, ‘এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩৮ হাজার ২৭ জন। সকাল ১০টার দিকে ভোট পড়ে প্রায় ৫৫টি।’
জুড়ী উপজেলার তরুণ ভোটার তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসার ব্যাপারে অনীহা রয়েছে। আমি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখেছি, প্রার্থীদের সমর্থকরাই ভোট দিতে এসেছেন। সাধারণ ভোটারদের তেমন চোখে পড়েনি।’
গাজীপুর চা-বাগান বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪ হাজার ৩১৯ জন। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার জ্যোতিষ কান্তি দাস জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোট পড়ে মাত্র ২৮৫টি। জুড়ী দক্ষিণ জাঙ্গীরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার নরেন্দ্র বিকাশ চক্রবর্তী জানান, ওই ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার ৪ হাজার ৭০১ জন। বেলা ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়ে ৭০১টি।
এ ছাড়া বড়লেখার অনেক ভোটকেন্দ্র দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল অনেকটাই ভোটার শূন্য। তখন পর্যন্ত ২ থেকে ৪ হাজার ভোটারের ভোটকেন্দ্রে শতাধিকেরও বেশি ভোট পড়েনি।
জেলার তিনটি উপজেলার ২১৬টি কেন্দ্রের মধ্যে কুলাউড়ায় ১০৩টি, জুড়ীতে ৪৪টি এবং বড়লেখায় ৬৯টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এই তিন উপজেলার মোট ভোটার ৬ লাখ ১১ হাজার ৯৬৯ জন। এর মধ্যে কুলাউড়ায় ২ লাখ ৯০ হাজার ৬৪৮ জন, জুড়ীতে ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৫৫ জন এবং বড়লেখায় ২ লাখ ৩ হাজার ৫৬৬ জন।