উৎফুল্ল চা জনগোষ্ঠীর ভোটাররা । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

উৎফুল্ল চা জনগোষ্ঠীর ভোটাররা

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ১১:০৬ এএম
উৎফুল্ল চা জনগোষ্ঠীর ভোটাররা
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার গাজীপুর চা-বাগানের শ্রমিকরা ভোট দিতে এসেছেন। খবরের কাগজ

চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের তিন উপজেলায় গতকাল ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালের দিকে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখা গেছে চা-শ্রমিকদের মাঝে। ভোটের দিন হওয়ায় কারখানার পাশাপাশি চা-পাতা তোলার কাজ ছিল বন্ধ। তাই দিনটিকে তারা কাজে লাগিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, তার একটি ভোট পছন্দের প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের কারণ হতে পারে। তাই নাগরিক অধিকার প্রয়োগের জন্য তারা ভোট দিতে এসেছেন। যদিও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও চা-শ্রমিক ছাড়া বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম।

জানা গেছে, জেলায় সাতটি উপজেলার মধ্যে প্রথম ধাপে ভোট হয়েছে কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখায়। জেলার এই তিন উপজেলায় চা-বাগান রয়েছে ৫৯টি। আর চা-বাগানের ভোটার সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার। এর মধ্যে কুলাউড়ায় রয়েছে ২৩টি চা-বাগান, সেখানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার; জুড়ীতে ১৬টিতে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার; বড়লেখায় ২০টি, যেখানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার।

ভোট দিতে আসা কয়েকজন চা-শ্রমিক জানান, ভোটের দিন চা-শ্রমিকদের চায়ের পাতা সংগ্রহ করা বা কারখানা সচল রাখা হয়নি। ভোটের জন্য দেওয়া হয়েছে ছুটি। এই ছুটি তারা পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছেন। কুলাউড়া উপজেলার গাজীপুর চা-বাগানের শ্রমিক সুমনা কুর্মি ও জীবন গোয়ালা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, ‘ভোট দেওয়া তো নাগরিক দায়িত্ব। আমি ভোট না দিলে আমার প্রার্থী জিতবে না, তাই ভোট দিতে আসলাম।’ শ্রমিকের সন্তান সজল কৈরী বলেন, ‘আমাদের ভোটে যেহেতু জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে, তাই এবার আমরা হিসেব করেই ভোট দিয়েছি।’ আরেক চা-শ্রমিকের সন্তান মিন্টু দেশোয়ারা বলেন, ‘বাগানে আজ (বুধবার) কাজ নেই। তাই চা জনগোষ্ঠীর ভোটাররা প্রায় সবাই ভোট দিতে এসেছেন। আমার কাছে এটা একটা উৎসব।’

সরেজমিনে দেখা যায়, তিন উপজেলার বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রই ছিল ফাঁকা। কেন্দ্রের বাহিরে প্রার্থীর সমর্থক ও কর্মীদেরও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে কেন্দ্রের ভেতরে ভোটারের লাইন একদমই ফাঁকা। যদিও চা-বাগান এলাকায় ভোটার ও উৎসুক জনতার ভিড় ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুপুর ১টা পর্যন্ত তিন উপজেলার চা-বাগান এলাকার ভোটকেন্দ্র ছাড়া অন্যান্য ভোটকেন্দ্রগুলোর বেশির ভাগই ছিল ফাঁকা। কুলাউড়ার নবীন চন্দ্র মডেল উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ইফতেখার হোসেন ভূঁইয়া জানান, ‘এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩৮ হাজার ২৭ জন। সকাল ১০টার দিকে ভোট পড়ে প্রায় ৫৫টি।’

জুড়ী উপজেলার তরুণ ভোটার তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসার ব্যাপারে অনীহা রয়েছে। আমি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখেছি, প্রার্থীদের সমর্থকরাই ভোট দিতে এসেছেন। সাধারণ ভোটারদের তেমন চোখে পড়েনি।’
গাজীপুর চা-বাগান বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪ হাজার ৩১৯ জন। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার জ্যোতিষ কান্তি দাস জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোট পড়ে মাত্র ২৮৫টি। জুড়ী দক্ষিণ জাঙ্গীরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার নরেন্দ্র বিকাশ চক্রবর্তী জানান, ওই ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার ৪ হাজার ৭০১ জন। বেলা ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়ে ৭০১টি।

এ ছাড়া বড়লেখার অনেক ভোটকেন্দ্র দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল অনেকটাই ভোটার শূন্য। তখন পর্যন্ত ২ থেকে ৪ হাজার ভোটারের ভোটকেন্দ্রে শতাধিকেরও বেশি ভোট পড়েনি।

জেলার তিনটি উপজেলার ২১৬টি কেন্দ্রের মধ্যে কুলাউড়ায় ১০৩টি, জুড়ীতে ৪৪টি এবং বড়লেখায় ৬৯টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এই তিন উপজেলার মোট ভোটার ৬ লাখ ১১ হাজার ৯৬৯ জন। এর মধ্যে কুলাউড়ায় ২ লাখ ৯০ হাজার ৬৪৮ জন, জুড়ীতে ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৫৫ জন এবং বড়লেখায় ২ লাখ ৩ হাজার ৫৬৬ জন। 

আজও পিছিয়ে চা-শ্রমিকরা, রক্তঝরা ‘মুল্লুক চলো’ দিবস আজ

আজও পিছিয়ে চা-শ্রমিকরা, রক্তঝরা ‘মুল্লুক চলো’ দিবস আজ
রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন বাগানে চা পাতা তোলেন শ্রমিকরা। ছবিটি সিলেটের লাক্কাতুড়া চা-বাগান থেকে তোলা। ছবি: মামুন হোসেন

উন্নত জীবনের আশায় জন্মভিটা ছেড়ে চা বাগানে কাজ করতে আসেন একদল মানুষ। কিন্তু কাজে এসে তাদের সেই সোনালি স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যায়। স্বপ্নভঙ্গের জ্বালা নিয়ে তারা ফিরতে চান নিজের দেশে। শতবর্ষ আগের চা-শ্রমিকদের স্বভূমিতে ফিরে যাওয়ার আন্দোলনই ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয় ‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলন হিসেবে।

বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯২১ সালের ২০ মে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা সিলেট থেকে পায়ে হেটে চাঁদপুরের মেঘনা স্টিমার ঘাটে পৌঁছান। তারা জাহাজে চড়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইলে ব্রিটিশ গোর্খা বাহিনীর সৈনিকরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করে মেঘনা নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয়। যারা পালিয়ে এসেছিলেন তাদেরও আন্দোলন করার অপরাধে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ফলে চা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা পাননি ফিরে স্বভূমির অধিকার।

এরপর থেকেই প্রতিবছর ২০ মে নিজেরাই চা-শ্রমিক দিবস হিসেবে দিনটি পালন করে আসছেন, নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত শোষণ-বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার চা-শ্রমিকরা।

আরও জানা যায়, ১৮৫৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগানে চাষ শুরু করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সে সময় চা বাগান তৈরির জন্য ভারতের আসাম, ওড়িশা, বিহার, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের স্থানান্তর করা হয়। ‘গাছ হিলেগা, রুপিয়া মিলেগা’ (গাছ নড়লে টাকা মিলবে) এমন প্রলোভনে শ্রমিকদের নিয়ে এলেও তাদের ভুল বুঝতে বেশি সময় লাগেনি। বিশাল পাহাড় পরিষ্কার করে চা বাগান করতে গিয়ে হিংস্র পশুর কবলে পড়ে অনেক চা-শ্রমিকের জীবন অকালে ঝড়েছে। এর সঙ্গে ছিল ব্রিটিশদের অব্যাহত অত্যাচার। নির্যাতনের প্রতিবাদে তৎকালীন চা-শ্রমিক নেতা পণ্ডিত গঙ্গাচরণ দীক্ষিত ও পণ্ডিত দেওসরন ‘মুল্লুকে চলো’ (মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার) আন্দোলনের ডাক দেন।

ওই ঘটনার ১০৩ বছর পর কেমন আছেন চা শ্রমিকরা? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাওয়া হয় শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানে। দেখা গেল ভাঙাচোরা কাঁচা মাটির ঘরে শুয়ে আছেন বৃদ্ধা সীতা বাউড়ি। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চা-শ্রমিক দিবস আবার কী? দিনে একবেলা খেতেই পাই না, আমাদের আবার দিবস? কয়েকদিন ধরে আমি অসুস্থ, কিন্তু বাগানের মধ্যে যে হাসপাতাল রয়েছে তা সাইনবোর্ডসর্বস্ব। ডাক্তার-ওষুধ কোনোটাই পাওয়া যায় না। অধিকাংশ সময় হাসপাতাল তালাবদ্ধ থাকে। চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী কাউকে সার্বক্ষণিক নিয়োগ দেওয়া হয় না। বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়াকে তারা নিয়তি হিসেবে মেনে নেন।’

কয়েকটি চা বাগানে শ্রমিকদের বাসস্থানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। চুক্তি কিংবা খাতাপত্রে শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্যের প্রথম শর্ত হিসেবে একটি পরিকল্পিত বাসস্থান নির্মাণের কথা থাকলেও বাস্তবে এর কোনো নজির পাওয়া যায় না। ছন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি ছোট ছোট ঘরে গাদাগাদি করে শ্রমিকদের পরিবার নিয়ে থাকতে হয়। ঝড়বৃষ্টিতে ঘরে বসে থেকে তাদের ভিজতে হয়। টিনের চাল দিলে আর এ অসুবিধা হতো না। বিষ্ণু রাজু নামের এক শ্রমিক জানান, স্ত্রী-সন্তানসহ তার পরিবারের সদস্য নয়জন। অথচ চা বাগান মালিকপক্ষ থেকে যে ঘর তুলে দেওয়া হয়েছে সেখানে দুই থেকে তিনজন বসবাস করতে পারেন। বাকিরা উঠানে ঘুমান। বৃষ্টি হলে তখন এক ঘরে গাদাগাদি করে সবাইকে ঘুমাতে হয়।

শ্রীমঙ্গলসহ দেশের প্রায় ১৬৫টি চা বাগানের শ্রমিকরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। প্রায় ২০০ বছর ধরে মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে বংশপরম্পপরায় কাজ করছেন চা শ্রমিকরা। তাদের শ্রমে এই শিল্পের উন্নয়ন হলেও শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। দৈনিক একজন শ্রমিকের মজুরি ১৭০ টাকা। আর সেই সঙ্গে সপ্তাহ শেষে তিন কেজি আটা।

চা জনগোষ্ঠীর সদস্য মিন্টু দেশোয়ারা বলেন, আমরা আমাদের অধিকারের জন্য লড়ছি। আজ ১০০ বছর পরও মনে হচ্ছে আমরা আগের চেয়ে আরও বঞ্চিত হচ্ছি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে।

চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মনু ধলাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, চা বাগানের শ্রমিকদের ভাগ্যে আজও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এমনকি মৌলিক অধিকারও ভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন না চা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের প্রধান উপদেষ্টা রাম ভজন কৈরী জানান, চা-শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি মালিকপক্ষকে লিখিত দেওয়ার পর কয়েক দফা দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে। তবে মালিকপক্ষ কালক্ষেপণ করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

নির্বাচনি সভায় যাওয়ার পথে ২ জনকে হাতুড়ি পেটার অভিযোগ

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ১০:১০ এএম
নির্বাচনি সভায় যাওয়ার পথে ২ জনকে হাতুড়ি পেটার অভিযোগ

রাজবাড়ীতে প্রতিপক্ষের সমর্থকদের বিরুদ্ধে দুজনকে হাতুড়ি পেটা করার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনি কর্মিসভায় যাওয়ার পথে গত শনিবার রাতে বালিয়াকান্দিতে তাদের আক্রমণ করা হয়। আহতরা হলেন নবাবপুর ইউনিয়নের তেকাটি গ্রামের সালাম মণ্ডল ও জাহাঙ্গীর হোসেন। তাদের বালিয়াকান্দি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা আবুল কালাম আজাদের সমর্থক। আগামী ২১ মে বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হবে। আনারস প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও মোটরসাইকেল প্রতীকে এহসানুল হাকিম সাধন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

শনিবার সন্ধ্যার পর সোনাপুর বাজারে আবুল কালাম আজাদের পথসভা ছিল। সেখানে যাচ্ছিলেন আবদুস সালাম ও জাহাঙ্গীর হোসেন। বেরুলি বাজার কবরস্থানের পাশে পৌঁছালে হামলাকারীরা আবদুস সালাম ও জাহাঙ্গীর হোসেনকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পালিয়ে যান। 

বালিয়াকান্দি হাসপাতালের চিকিৎসক সৌরভ শিকদার বলেন, ‘আহত দুজনকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। আহতদের মধ্যে একজনের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আরেকজনের বাম হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’ 

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নির্বাচনকে অস্থিতিশীল করতে আমার কর্মীদের ওপর বারবার হামলা করা হচ্ছে।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে এহসানুল হাকিমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।  

বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, পথসভায় যোগ দিতে যাওয়ার সময় আনারস প্রতীকের দুই সমর্থকের ওপর হামলা করা হয়েছে। আহতরা হামলাকারীদের চিনতে পারেননি। হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

বজ্রাঘাতে তিন জেলায় ৫ জন নিহত

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ০৯:৫৯ এএম
বজ্রাঘাতে তিন জেলায় ৫ জন নিহত
ছবি : খবরের কাগজ

বজ্রাঘাতে ফেনী, কুমিল্লা ও সাতক্ষীরায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রবিবার (১৯ মে) এই তিন জেলায় নিহতরা হলেন- ফেনীর মাহাদি হাসান ও শাহীন মাহমুদ অভি, কুমিল্লার আনোয়ারুল হক ও রিমন এবং সাতক্ষীরার মাসুম বিল্লাহ। মাহাদি হাসান ছাগলনাইয়ার রাধানগর ইউনিয়ন উত্তর কুহুমা গ্রামের বাসিন্দা। সে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করেছে। 

অপরদিকে শাহীন মাহমুদ অভি একই উপজেলার দক্ষিণ লাঙ্গল মোড়া ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সে নিজকুঞ্জরা ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার ১০ম শ্রেণির ছাত্র।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ২টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে মাহাদি ও অভি মাঠে গরু আনতে যায়। সেখানেই হঠাৎ বজ্রপাতে তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারাফ হোসেন  বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ তাদের বাড়িতে গিয়েছেন। সন্তানের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গোপাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, ‘মৃত্যুর খবর শুনে আমি গিয়ে হাসপাতালে কথা বলে তার দাফনের জন্য লাশ বাড়িতে পাঠিয়েছি।’ 

এ ব্যাপারে ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান ইমাম বলেন, ‘দুপুরে বজ্রাঘাতে দুই তরুণের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

অন্যদিকে, রবিবার দুপুরে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের খিরনশাল-লনিশ্বর মাঠে বজ্রাঘাতে আনোয়ারের মৃত্যু হয়। এ সময় মুজিবুর রহমান নামে আরেকজন আহত হন। আহত মজিবুর রহমান বলেন, ‘লনিশ্বর গ্রামের মাওলানা দেলোয়ার হোসেনের কৃষি জমিতে সকাল থেকে আমরা ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক মাটি কাটার কাজ করছিলাম। দুপুরে হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে থেমে থেমে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এ সময় বজ্রপাত আনোয়ারুল হকসহ আমাদের কয়েকজনের ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই আনোয়ারুলের মৃত্যু হয়।’
 
অপরদিকে বিকেলে কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকায় মাঠে খেলতে গিয়ে বজ্রাঘাতে নিহত হয় পলিটেকনিকেল কলেজের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী রিমন। নিহত রিমনের প্রতিবেশী মহিউদ্দিন জানান, বিকেলে কোটবাড়ি মাঠে খেলতে যায় রিমন। এ সময়ে বজ্রপাত হলে সে মাঠে লুটিয়ে পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় রিমনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

অপরদিকে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নে বজ্রাঘাতে মাসুম বিল্লাহ নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকেলে রায়পুর মাঠে এ ঘটনা ঘটে। 

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি মামলা

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ০৯:৫০ এএম
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি মামলা

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঢাকার ধামরাইয়ে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে থানায় মামলা করেছেন। গত শনিবার ওই দুই প্রার্থী থানায় মামলা করেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের চর সুঙ্গর এলাকায় আনারসের প্রার্থী আব্দুল লতিফের ক্যাম্প ভেঙে ক্যাম্পে তালা ঝুলিয়ে দেয় মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী খালেদ মাসুদ খান লাল্টুর কর্মী-সমর্থকরা। 

গত ১৪ মে মঙ্গলবার প্রথমে মোটরসাইকেলের কর্মী-সমর্থকরা আনারসের লোকজনকে মারধর করে। ওই দিনই আনারসের প্রার্থী আব্দুল লতিফ তার নির্বাচনি প্রচারের ক্যাম্প দেখতে গেলে খালেদ মাসুদ খান লাল্টুর লোকজন তাদের ওপর চড়াও হয়। দেশীয় অস্ত্র, বাঁশের লাঠি, গাছের লাঠি দিয়ে হামলা চালায়। এতে আনারসের সমর্থক ছামের আলীকে ধাওয়া করলে তিনি নিজের বাড়িতে আশ্রয় নিলে সেখানে গিয়েই হামলা চালায় মোটরসাইকেলের লোকজন। এ সময় ছামের আলীর অন্তঃসত্ত্বা বোন সানজিদা আক্তার বাধা দিলে তাকেও মারধর করে মোটরসাইকেলের কর্মীরা। সানজিদা আহত হয়ে বর্তমানে ধামরাই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

অপরদিকে মোটরসাইকেলের প্রার্থী খালেদ মাসুদ খান লাল্টুর লোকজনও ওই দিন হামলার ঘটনায় আহত হয়েছেন। এ ঘটনার ৫ দিন পর ধামরাই থানায় উভয় পক্ষই মামলা করে।

আনারসের প্রার্থী ঢাকা উত্তরের সাবেক যুবলীগের সদস্য আব্দুল লতিফ নিজে বাদী হয়ে মাহবুবুর রহমান মনি, ইউপি সদস্য সাহাবুর রহমান, আব্দুল হালিম, আব্দুল করিমসহ মোট ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। 

আব্দুল লতিফ মামলায় উল্লেখ করেছেন, ‘আমার নির্বাচনি ক্যাম্পে মোটরসাইকেলের প্রার্থী খালেদ মাসুদ খান লাল্টুর লোকজন হামলা করে আমার কর্মীদের মারধর করেছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীকেও বাদ দেয়নি। অপরদিকে ক্যাম্প ভেঙে প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি করেছে এবং ৭৫ লাখ টাকার আসবাবপত্র নিয়ে গেছে মোটরসাইকেলের সন্ত্রাসী বাহিনীরা।’ 

অপরদিকে মোটরসাইকেলের প্রার্থী ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ মাসুদ খান লাল্টুর সমর্থক সাহাবুর রহমান বাদী হয়ে সেলিম খান, শুকুর আলী, মাহবুব, ইসলাম মিয়াসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।

দুই প্রার্থীর মামলাই ঘটনার ৫ দিন পর গত শনিবার ধামরাই থানায় রেকর্ড হয়েছে। উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে হামলার ঘটনায় এলাকায় সাধারণ ভোটারের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

হামলার ঘটনায় আনারসের প্রার্থী আব্দুল লতিফ বলেন, ‘প্রতিবাদ আমরা করতে পারি। কিন্তু আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কোনো ঝগড়ায় যাব না। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য মোটরসাইকেলের প্রার্থী খালেদ মাসুদ খান লাল্টুর লোকজন এমন কাজ করেছে।’

এ বিষয়ে মোটরসাইকেলের প্রার্থী খালেদ মাসুদ খান লাল্টুর সমর্থক সাহাবুর রহমান বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ আনারসের প্রার্থী আব্দুল লতিফের কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে বসে নির্বাচনি কাজ করছিলাম। তখন আনারসের লোকজন এসে আমাদের  ওপর হামলা চালায়। এতে কয়েকজন আহতও হয়েছে।’  

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আতাউল বাবু বলেন, ‘আনারস ও মোটরসাইকেলের দুই প্রার্থীই মামলা করেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটিতে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ০৯:৩০ এএম
পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটিতে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা
ছবি : সংগৃহীত

বগুড়ার বিভিন্ন কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়েছে পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। 

রবিবার (১৯ মে) বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. চিত্তরঞ্জন মিশ্র। 

অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য দেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) চেয়ারম্যান এবং টিএমএসএসের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ‘জীবনে বড় হতে হলে শুধু মেধা দিয়ে হবে না, পরিশ্রমীও হতে হবে।’ এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের সময়ের মূল্য সম্পর্কে সচেতন ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারে আরও অধিক সতর্ক এবং যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন। 

উপাচার্য আরও বলেন, ‘পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটি আগামী দিনে স্মার্ট নাগরিক গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’ 

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও কলেজগুলোর অধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি