
ছোট বেলায় মা-বাবা হারায় রফিকুল। এরপর থেকে চাচার কাছে বড় হয়। তাই চাচার পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে নিজের ভিটে-বাড়ি সব বিক্রি করে দালালদের হাতে ২০ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিল। কিন্তু ইতালিতে যাওয়ার আগেই লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে স্বপ্নের ইতি ঘটল রফিকুলের।
একই অবস্থা গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার আরও দুই যুবকের। অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার মোট তিন যুবকের সলিল সমাধি হয়েছে।
মৃত্যুর খবর জানার পর থেকে নিহত তিন যুবকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এ ছাড়াও সাইফুল ব্যাপারী নামে আরও এক যুবকের খোঁজ পাচ্ছে না পরিবারের সদস্যরা।
পরিবার নিহতদের মরদেহ ও নিখোঁজ যুবককে উদ্ধার করে দ্রুত দেশে আনার জন্য সরকারে নিকট দাবি জানিয়েছে।
নিহতরা হলেন- গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের চরপ্রসন্নদী গ্রামের ওহাব খন্দকারের ছেলে সাত্তার খন্দকার (৪০), একই গ্রামের মেহেদী শেখের ছেলে আরাফসান ইসলাম আশিক (১৮) ও মোল্লাদী গ্রামের আব্দুল মজিদ শেখের ছেলে রফিকুল শেখ (২৫)।
রফিকুল শেখ বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, ছোট বেলায় মা-বাবা হারায় রফিকুল। এরপর থেকে চাচার কাছে বড় হয়। তাই চাচার পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে নিজের ভিটে-বাড়ি সব বিক্রি করে দালালদের হাতে ২০ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিল। কিন্তু ইতালিতে যাওয়ার আগেই ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবে রফিকুলের মৃত্য হয়েছে।
রফিকুলের চাচা মো. জয়নাল শেখ জানান, স্বপ্ন পূরণ করতে ইতালি যাওয়ার জন্য নিজের ভিটে-বাড়ি সব বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা দিয়েছিল। কিন্তু সমুদ্রেই সলিল সমাধি হলো রফিকুলের। দ্রুত রফিকুলে মরদেহ দেশ আনার দাবি জানান তিনি।
একই অবস্থা আরাফসান ইসলাম আশিকের। নিহত আশিকের বাবা মেহেদী শেখ বলেন, ‘ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য লোন করে ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১৭ লাখ টাকা করি। পরে পাশের শ্রীজিতপুর গ্রামের রকমান হাওলাদারের ছেলে বাবু হাওলাদারকে দেই। লিবিয়া যাওয়ার পর কয়েকবার বার কথা হয়। পরে জানতে পারি লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে আমার ছেলে মারা গেছে। আমি দালাল বাবু হাওলাদারের বিচার চাই।’
ছাত্তার খন্দকারের স্ত্রী লাবনী খন্দকার বলেন, লিবিয়া পৌঁছানোর পর আমার কাছ থেকে তিন দফা টাকা নিয়েছে। ২৪ লাখ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও টাকা নিয়েছে ২৬ লাখ। আমি দ্রুত মরদেহ ফেরত পাওয়ার পাশাপাশি দালালদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।
বাদল সাহা/মাহফুজ