একসময় আমদানি করে ফ্যানের পুরোটাই চাহিদা মেটাতে হতো। কিন্তু যুগের হাওয়া পাল্টে গেছে। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত ফ্যানেই ৮০-৯০ শতাংশ চাহিদা মেটানো হচ্ছে। বর্তমানে দেশে উন্নতমানের ফ্যান তৈরি হচ্ছে এবং রপ্তানির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকার পোশাক, পাটসহ অন্যান্য শিল্পে যেভাবে প্রণোদনা দিচ্ছে, তেমনি এই খাতে প্রণোদনা দিলে ফ্যান রপ্তানি করে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার সুযোগ রয়েছে। সম্প্রতি গরম বেড়ে যাওয়ায় প্রচুর ফ্যানের চাহিদা বেড়ে গেছে। সঙ্গে দামও বাড়ছে। ফ্যান শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে বাংলাদেশ ইলেকট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি খন্দকার গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিবিসিআইয়ের পরিচালক খন্দকার রুহুল আমিনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর আলম।
খবরের কাগজ: বছরে ফ্যানের চাহিদা কত? সব চাহিদা পূরণের সক্ষমতা আছে কি বাংলাদেশের?
খন্দকার রুহুল আমিন: অন্য পণ্যের মতো বাংলাদেশে ফ্যানের চাহিদা বাড়ছে। বছরে প্রায় ৫ লাখ পিস চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদা পূরণের সক্ষমতাও বাংলাদেশ অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, চাহিদার দ্বিগুণ অর্থাৎ ১০ লাখ পিস উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
খবরের কাগজ: বাংলাদেশে কত কোম্পানির ফ্যান রয়েছে? সবচেয়ে জনপ্রিয় কোন কোম্পানির ফ্যান।
খন্দকার রুহুল আমিন: বাংলাদেশের নামিদামি বিভিন্ন কোম্পানিসহ ৩০০-৪০০টি কোম্পানি ফ্যানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে নাম করা হলো যমুনা গ্রুপের যমুনা ফ্যান, বিআরবি গ্রুপের বিআরবি ফ্যান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ক্লিক, ভিশন এবং খন্দকার গ্রুপের খন্দকার সিলিং ফ্যান। এ ছাড়া আরও কিছু গ্রুপের ফ্যান বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তারাও ভালো করছে।
খবরের কাগজ: দেশের চাহিদা মিটিয়ে অন্য পণ্যের মতো ফ্যান রপ্তানি হচ্ছে কি? না হলে সমস্যা কোথায়?
খন্দকার রুহুল আমিন: অন্যান্য পণ্যের মতো দেশে এখন ভালো ভালো কোম্পানির ফ্যান উৎপাদন হচ্ছে। দেশের চাহিদাও মেটানো হচ্ছে। কিন্তু রপ্তানি করা যাচ্ছে না। এর কারণ হলো প্রণোদনা না দেওয়া। বর্তমানে উৎপাদন পর্যায়ে যে খরচ তাতে লাভ থাকে না। তাই প্রণোদনা দিলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা সম্ভব। বর্তমানে সিলিং ফ্যান, স্ট্যান্ড ফ্যানের মতো চার্জার ফ্যানও উৎপাদন করে ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।
খবরের কাগজ: এই খাতে অনেক বড় বড় কোম্পানি চলে এসেছে। সব মিলে বিনিয়োগ কত হবে। সবচেয়ে বেশি কোন কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে।
খন্দকার রুহুল আমিন: গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে মানুষকে একটু স্বস্তি দিতে এই খাতের বিনিয়োগ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা হবে। ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সম্ভাবনাও রয়েছে। একসময় পাকিস্তানি ফ্যান জিএফসি আমদানি হতো। সেই জায়গায় এখন দেশি বিএফসি চাহিদা পূরণ করছে। বিআরবি গ্রুপ সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে।
খবরের কাগজ: হঠাৎ করে গরম বেড়ে যাওয়া ফ্যানের দামও বেড়ে গেছে। এর কারণ কী?
খন্দকার রুহুল আমিন: এবারে ফ্যানের বিক্রি বেড়েছে। দামও বেড়েছে, এটা ঠিক। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানি করা প্রায় জিনিসের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। আগের ৬৮০ টাকার কপার ১ হাজার ২২০ টাকায় কিতে হচ্ছে। তবে ডলারের মূল্য যেভাবে বেড়েছে, সে তুলনায় ফ্যানের মূল্য বাড়েনি।
খবরের কাগজ: নবাবপুরের অনেক পাইকারি বিক্রেতা বিদেশি ফ্যান বিক্রি করার সময় মেমো দিচ্ছেন না। যে যার মতো দাম নিচ্ছেন। এটা কেন হচ্ছে।
খন্দকার রুহুল আমিন: কেউ পণ্য বিক্রি করলে অবশ্যই তাকে মেমো দিতে হবে। এটা আইনে আছে। তা মানতে হবে। কেউ না মানলে ভোক্তা অধিদপ্তর তাদের শান্তির আওতায় আনুক। আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে নজর রাখা হবে। ধরতে পারলে তার সদস্যপদ বাতিল করা হবে।
খবরের কাগজ: এই খাতের সম্ভাবনা কেন রয়েছে? তা কাজে লাগা সম্ভব কি?
খন্দকার রুহুল আমিন: তৈরি পোশাকশিল্পের মতো এই খাতেরও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। কারণ এই অল্প সময়ে ৮০-৯০ শতাংশ চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে। বিআরবি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কেবল রপ্তানি করছে। অন্যরাও অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমানে কাঁচামালে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, দেশীয় শিল্পকে বাঁচাতে শুল্কহার জিরো করতে হবে। অন্যদিকে প্রস্তুতকৃত ফ্যান আমদানিতে শুল্কহার বাড়াতে হবে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতে যাচ্ছি। এ যাত্রায় আমদানি-নির্ভরতা কমিয়ে দেশকে ফ্যানে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। এ খাতে বর্তমানে বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার টার্নওভার হচ্ছে।