
দ্বিতীয় অধ্যায় : সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর-৪
উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ।
শিল্পবিপ্লবের ফলে উৎপাদনব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন হওয়ার পাশাপাশি জটিল ও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বহুমুখী সমস্যা সৃষ্টি হয়, যা অর্থ ও বস্তুগত সেবার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব হচ্ছিল না। শিল্পবিপ্লবোত্তর আধুনিক সমাজব্যবস্থায় সৃষ্ট এ সমস্যা সমাধানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর ও বুদ্ধিভিত্তিক পেশাদার সেবা কার্যক্রমের প্রয়োজন দেখা দেয়।
ক. প্রথম ‘শিল্পবিপ্লব’ প্রত্যয়টির নামকরণ করেছিলেন কে?
খ. সমাজকর্ম শিক্ষা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে শিল্পবিপ্লবের ফলে কোন পেশার উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পেশাটির বিকাশে শিল্পবিপ্লবের ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর: ক. প্রথম ‘শিল্পবিপ্লব’ প্রত্যয়টির নামকরণ করেছিলেন Arnold Toynbee.
খ. সমাজকর্ম শিক্ষা বলতে সাধারণত সমাজকর্মের ওপর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণকে বোঝায়। একজন পেশাদার সমাজকর্মী হওয়ার জন্য যে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন হয় তাকে সমাজকর্ম শিক্ষা বলে। সমাজকর্ম শিক্ষা দুটি অংশের সমন্বয়। পাঠ গ্রহণ ও তত্ত্বাবধায়কের অধীনে মাঠ পর্যায়ের প্রশিক্ষণ।
আরো পড়ুন : সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অধ্যায়ের ১টি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর, ৪র্থ পর্ব
গ. উদ্দীপকে শিল্পবিপ্লবের ফলে সমাজকর্ম পেশার উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে।
প্রাক-শিল্প যুগে মানুষের চাহিদা ছিল সীমিত এবং সমস্যাও ছিল সরল ও অর্থনির্ভর। দানশীলতা, মানবতাবোধ ও ধর্মীয় অনুশাসন তথা সনাতন সমাজকল্যাণের দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করা হতো। কিন্তু শিল্পবিপ্লবের ফলে সমাজজীবনে সৃষ্টি হয় বহুমুখী জটিল সমস্যার। এ ধরনের সমস্যার সমাধানে ধর্মীয় মূল্যবোধ, দানশীলতা ও মানবতাবোধ দিয়ে অনুপ্রাণিত স্বেচ্ছামূলক কার্যক্রম ব্যর্থ হলে বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণে নতুনভাবে চিন্তা ও গবেষণা শুরু হয়। এ বিজ্ঞানভিত্তিক ও বাস্তবসম্মত সেবা কার্যক্রমের মাধ্যমেই সমাজকল্যাণ আধুনিক রূপ ধারণ করে। জন্ম হয় পেশাদার সমাজকর্মের। সমস্যার জটিলতা থেকে উদ্ভব হয় সমাজকর্ম পেশার পদ্ধতিসমূহের। যথা- ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিগত সমাজকর্মের। কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রয়োজন হয় প্রশিক্ষণ। উদ্ভব হয় সমাজকর্ম শিক্ষার। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, পদ্ধতি ও কলাকৌশলকে কেন্দ্র করে বিকাশ লাভ করে সমাজকর্ম পেশা। সুতরাং সমাজকর্ম পেশার উদ্ভব এবং বিকাশের ভিত্তি হিসেবে শিল্পবিপ্লব মূল ভূমিকা পালন করে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সমাজকর্ম পেশাটির বিকাশে শিল্পবিপ্লবের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
সমাজকর্ম পেশার পটভূমি রচিত হয় শিল্পবিপ্লবের হাত ধরে। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানবতাবোধ দিয়ে পরিচালিত স্বেচ্ছামূলক কার্যক্রম শিল্পবিপ্লবের ফলে সৃষ্ট জটিল সমাজব্যবস্থা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এ কারণে বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণে নতুনভাবে চিন্তা ও গবেষণা শুরু হয়। জন্ম হয় পেশাদার সমাজকর্মের। শিল্পবিপ্লবের ফলে উদ্ভূত বহুমুখী ও জটিল সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে সমাজকর্মীরা অনুধাবন করতে সক্ষম হন যে, সমস্যা তিন পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করে। ফলে উদ্ভব হয় সমাজকর্মের মৌলিক তিনটি পদ্ধতির। যথা- ব্যক্তি সমাজকর্ম, দল সমাজকর্ম ও সমষ্টি উন্নয়ন ও সমষ্টি সংগঠন। শিল্পায়নের ফলে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে নতুন পরিস্থিতিতে নতুন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, দক্ষ ও উৎসাহী সমাজকর্মীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় সমাজকর্ম শিক্ষা কর্মসূচি চালু করা হয়। জটিল সমস্যা সমাধানে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়া শিল্পবিপ্লবের ফলেই সম্ভব হয়। সর্বোপরি সমাজকর্ম পেশাকে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, পদ্ধতি ও কলাকৌশলের ওপর প্রতিষ্ঠায় শিল্পবিপ্লবের অবদান সুস্পষ্ট। সুতরাং উদ্দীপকে উল্লিখিত সমাজকর্ম পেশার বিকাশে শিল্পবিপ্লবের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য।
লেখক : প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ
শের-ই-বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
কবীর