অনেক দিন পর দেশে এসেছিলেন নৃত্যশিল্পী ও শিক্ষক লায়লা হাসান। অংশ নিয়েছেন ঢাকার নবান্ন উৎসবে। যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার আগে প্রবাস জীবনে বাংলা সংস্কৃতির চর্চা, দেশের প্রতি প্রত্যাশাসহ নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাসেল মাহ্মুদ।
অনেক দিন পর দেশে এসে কেমন লাগল?
দেশের মাটিতে পা রেখে আনন্দে মনটা ভরে উঠল। মনে হলো বাংলার হাওয়া যেন আমাকে আলিঙ্গন করছে। নিজের দেশ বলে কথা! দেশ ছেড়ে আসলে বেশিদিন থাকা যায় না। অনেকের সঙ্গে দেখা হলো, নবান্ন উৎসবে অংশ নিলাম।
পয়লা বৈশাখে নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ারে আপনার নাচ ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল।
সেটা বাঙালির জীবনে এক অসাধারণ ঘটনা ছিল। প্রথমবারের মতো টাইম স্কয়ারে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছিল। ছায়ানটের মতো আয়োজন। সবাই শাড়ি পরে এসেছিল। নাচ-গান হলো। মাটির হাঁড়ি-পাতিলের মেলা, বাঙালি খাবার-দাবার... মোট কথা, দেশের মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল। বোস্টন থেকে নিউইয়র্কে গিয়ে মহিতোষ তালুকদার তাপস নিয়মিত গান শিখিয়ে আসত এই অনুষ্ঠানের জন্য।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে আমাদের সংস্কৃতিচর্চার প্রবণতা কেমন?
প্রবাসে বাঙালিদের জীবন অনেক কঠিন। কিন্তু তার মধ্যেও অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের গান শেখাচ্ছে, নাচ শেখাচ্ছে। তাদের আগ্রহ দেখলে মনে আশার সঞ্চার হয়। মনে হয়, আমাদের সংস্কৃতি সারা পৃথিবীতে এভাবেই ছড়িয়ে পড়বে।
আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে বিদেশিদের আগ্রহ আছে?
আমেরিকানরা বাংলা শিখতে চায়, গান করতে চায়। ওরাও আমাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছে। ওদের শেখার আগ্রহ আছে। বিশেষ করে আমাদের শাড়ি-টিপের প্রতি ওদের অনেক আগ্রহ। ওরাও শাড়ি পরতে চায়।
আপনি থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে। সেখানে কেমন আছেন আমাদের প্রিয় অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম?
তিনি আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন। তবে চলাফেরায় কষ্ট হয়, ওয়াকারে হাঁটতে হয়। এবার আমার সঙ্গে আসতে পারলেন না। ছেলের বৌ তার সেবা করে। ওনাকে যে ওষুধটা দিতে হয়, হাসপাতালে রেখেই দিতে হয়। শিগগিরই ওষুধটা হয়তো দেশেও আসবে।
তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। অথচ দেশ স্বাধীনের এত বছর পরও তাকে আমরা দেশে চিকিৎসা দিতে পারলাম না, এ নিয়ে আপনার দুঃখ হয় না?
এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। ডাক্তাররাও হয়তো খেয়াল করেননি। তিনি তো ভীষণ স্বাস্থ্যসচেতন। তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ছিলেন, আমিও ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে তার থেকেও অনেক বেশি অবদান রেখেছেন যারা রক্ত ও জীবন দিয়েছেন। তাদের রক্তের যে সম্মান, সেটা আমরা সেভাবে দিতে পারিনি, পারছি না। আমার ভীষণ দুঃখ হয়। পরের প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর দেশ আমরা দিতে পারলাম না। আমাদের আসলে একতাবদ্ধ থাকতে হবে। আমরাই তো এক নেই। সবারই কেন যেন ইচ্ছে থাকে কিছু পাওয়ার। আমাদের দেশটা আসলে অভাগা। মুঘল, ব্রিটিশ, পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়েও কেন যেন স্বাধীন হলো না দেশটা।
বাংলাদেশে নির্বাচন। কী প্রত্যাশা করেন?
যারা হাল ধরতে যাচ্ছে, তাদের আগে দেশের কথা ভাবতে হবে। বলতে দ্বিধা হয়, তবু বলতে হয়, দেশটাকে আমরা তেমনভাবে ভালোবাসি না, বাসলে আজ দেশটা এ রকম হতো না। উন্নতি হয়েছে অনেক, বর্তমান সরকার অনেক কাজ করেছে, বাংলাদেশের চেহারা বদলে দিয়েছে। কিন্তু সমাজের উন্নতি হয়নি। দেশকে একজন দুজন ভালোবাসলে হবে না, সবাই মিলে ভালোবাসতে হবে, দেশের জন্য কাজ করতে হবে। নিজের লাভের কথা কম ভেবে দেশের লাভের কথা ভাবতে হবে।
জাহ্নবী