![ডিএসসিসির ৪৩ হাজার জন্মসনদ কাজে আসছে না](uploads/2024/05/19/dscc-1716099998.jpg)
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪৩ হাজারের বেশি জন্মনিবন্ধন সনদ কোনো কাজে আসছে না। এই সনদ জমা নিচ্ছে না কোনো সংস্থা। কারণ সরকারের কেন্দ্রীয় সার্ভারের সঙ্গে ডিএসসিসির সার্ভারটি যুক্ত নয়। ফলে তাদের দেওয়া জন্মসনদগুলো সরকারি সার্ভারে পাওয়া যাচ্ছে না।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদে গলদের কোনো শেষ নেই। দেশের ১৬ কোটি ৯৭ লাখ জনসংখ্যা হলেও জন্মসনদ ইস্যু করা হয়েছে ১৯ কোটি ৩৫ লাখ।
জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধক রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন পেতে জটিলতা তৈরি হওয়ায় ২০২৩ সালে তিন মাস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল। নিজস্ব সার্ভার তৈরি করে গত ১ অক্টোবর থেকে আবার শুরু হয় এই কার্যক্রম। তারপর করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের ডিএসসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো থেকে এসব সনদ দেওয়া হচ্ছে। অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়েছে তারা।
গত বছর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সিস্টেমে ধীরগতির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তখন নিজস্ব সার্ভার তৈরি করে কাজ শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
সেই সময়ে ডিএসসিসি এলাকার বাসিন্দারা খুব সহজে জন্মনিবন্ধন করতে পারছিলেন। কিন্তু সাময়িক সুবিধা পেলেও পরে ঘটে বিপত্তি। ১৮ বছরের কম বয়সী যাদের পাসপোর্ট করতে জন্মনিবন্ধন সনদ লাগে বা যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাদের ডিএসসিসির জন্মসনদ দিয়ে পাসপোর্ট করা যাচ্ছে না।
শুধু পাসপোর্টই নয়, শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন সেবা পেতে জন্মসনদের প্রয়োজন হয়। এই সেবাগুলো নেওয়ার জন্য ডিএসসিসিকে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে শুরু করে মোট ২২টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করতে হবে। এ ছাড়া জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের বিদ্যমান আইন-বিধিও সংশোধন করতে হবে। এই পদক্ষেপগুলো নেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদন লাগবে।
ডিএসসিসি এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, ১০ মাসের বেশি সময় ধরে ডিএসসিসির জন্মসনদ নিয়ে এ সমস্যা চলছে। যে কারণে এই এলাকার অনেকেই পাসপোর্টের প্রয়োজনে ডিএসসিসি এলাকার বাইরে গিয়ে ঠিকানা পাল্টে নতুন করে জন্মনিবন্ধন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
শিশুসন্তানের পাসপোর্ট করতে পারছিলেন না ইব্রাহিম (ছদ্মনাম) নামের একজন। তিনি বলেন, ‘ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, আমার সন্তানের জন্মসনদের নম্বর সিস্টেমে (সার্ভার) নেই। পরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করে ছেলের জন্মনিবন্ধন করেছি।’
কেন জন্মসনদে পাসপোর্ট হচ্ছে না
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন ডিএসসিসির জন্মসনদ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সিস্টেমে দেখা যায় না? কেন্দ্রীয়ভাবে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের তথ্য জমা হয় ‘রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন’ নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে। নিবন্ধন নম্বরের মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য এ কার্যালয়ের সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তযোগাযোগের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) আছে।
রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা সার্ভারের সঙ্গে ডিএসএসসির নিজস্ব সার্ভারের আন্তসংযোগ নেই। ফলে ডিএসসিসির নিজস্ব সার্ভারে নিবন্ধন করা ব্যক্তিদের তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে জমা হচ্ছে না। এ কারণে পাসপোর্ট করতে গেলে পাসপোর্ট অধিদপ্তর রেজিস্ট্রার জেনারেলের সিস্টেমে প্রবেশ করলে ডিএসসিসি থেকে দেওয়া সনদের তথ্য খুঁজে পায় না।
এদিকে নিজস্ব সিস্টেমে নতুন সনদ দিতে পারলেও পুরোনো সনদ সংশোধন করতে পারে না ডিএসসিসি। এ অবস্থায় পুরোনো সনদ সংশোধনে দক্ষিণ সিটির বাসিন্দাদের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের তথ্যভাণ্ডারের (ডেটাবেজ) হস্তান্তর চেয়ে গত বছরের ১৮ অক্টোবর রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়কে আলাদা চিঠি দিয়েছিল ডিএসসিসি।
ডিএসসিসি এলাকার অনেক বাসিন্দা কেন ঠিকানা বদলে পাসপোর্ট করছেন? এ প্রশ্ন করলে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের খবরের কাগজকে বলেন, জন্মসনদের বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য জানেন না। এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে বলেন জন্মসনদ নিয়ে কাজ করা রোকনের সঙ্গে। তবে যোগাযোগ করে রোকনের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক মো. সাইদুর রহমান খবরের কাগজকে জানান, রেজিস্ট্রার জেনারেলের কেন্দ্রীয় সিস্টেমে জন্মনিবন্ধন নম্বর না থাকলে পাসপোর্ট কার্যালয়ের সফটওয়্যারে তা আসবে না। ফলে পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়ার সফটওয়্যারে কিউআর কোড স্ক্যান করার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে পাসপোর্ট করা যাচ্ছে না।
রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. যাহিদ হোসেন জানান, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের কাজের এখতিয়ার রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের। দেশের সব সিটি করপোরেশন এই সিস্টেমে কাজ করছে। নিজস্ব সিস্টেমে নিবন্ধনের কাজ করা আইন ও বিধির ব্যত্যয়।