ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

দর্শকশূন্যতায় ডুবল দেশের ৫ সিনেমা

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৬ এএম
আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৬ এএম
দর্শকশূন্যতায় ডুবল দেশের ৫ সিনেমা

বাংলা সিনেমার দুর্দিনের কথা কম-বেশি সবারই জানা। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলে অনেকেই মনে করতে পারেন, হয়তো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশীয় সিনেমা। খোঁজ করলে দেখা যাবে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন সিনেমার শুটিং হচ্ছে দেশের আনাচে-কানাচে। সেগুলো আবার নিয়মিত মুক্তিও দেওয়া হচ্ছে প্রেক্ষাগৃহে। এতে কি ঢালিউডের মরচে পড়া কপাল থেকে শনির দশা কাটছে? এর সদুত্তর দিতে পারেননি কেউই। এসব সিনেমাসংশ্লিষ্টরা ঢাকাঢোল পিটিয়ে জানান দিচ্ছেন, তারা এবং তাদের সিনেমাই সেরা। অন্যদিকে সমালোচকরা এসব সিনেমাকে আবার সিনেমা বলতেও নারাজ। এসব তর্ক-বিতর্ক পেছনে রেখে দর্শক কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন মানহীন এই সিনেমাগুলো থেকে। এ কারণে সিনেমায় টাকা লগ্নি করে প্রযোজক পথে বসছেন। সিনেমা থেকে মোট খরচের একভাগও ফেরত পান না প্রযোজক। ভারাক্রান্ত মনে অনেকেই গণমাধ্যমকে তাদের নিঃস্ব হওয়ার কথা বলেছেন বহুবার। এ জন্য নতুন প্রযোজক এলেও একটি সিনেমার পর অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নেন ঢালিউড থেকে।

অনেক প্রযোজক এর আগে গণমাধ্যমে বলেছেন, সিনেমার পরিচালকরা নানান স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের সিনেমায় নিয়ে আসেন। পরে তাদের কথা ও কাজের কোনো মিল পাওয়া যায় না।

চলতি মাসে মুক্তি পেয়েছে দেশীয় পাঁচ সিনেমা ‘পেয়ারার সুবাস’, ‘ট্র্যাপ’, ‘ছায়াবৃক্ষ’, ‘শ্রাবণ জ্যোৎস্নায়’ ও ‘টালমাতাল’। ৯ ফেব্রুয়ারি নুরুল আলম আতিকের পরিচালনায় জয়া আহসান অভিনীত ‘পেয়ারার সুবাস’ মুক্তি পায় দেশের ২৭ প্রেক্ষাগৃহে। মুক্তির আগেই সিনেমার প্রিমিয়ার শোয়ে যোগ দিতে যাওয়ার সময় মারা যান অভিনেতা আহমেদ রুবেল। এরপর সিনেমাটির স্বাভাবিক প্রচারে বিঘ্ন ঘটে। শোক নিয়ে পরিচালক অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।

একই তারিখে মুক্তি পায় ‘ট্র্যাপ’। অপু বিশ্বাস ও জয় চৌধুরী জুটির দ্বিতীয় সিনেমা এটি। পরিচালনা করেছেন দ্বীন ইসলাম। এ সিনেমাটি একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। চা-শ্রমিকদের জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘ছায়াবৃক্ষ’। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে নির্মিত সিনেমাটির চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন বন্ধন বিশ্বাস। এতে জুটিবদ্ধ হয়েছেন নিরব ও অপু বিশ্বাস। এ সিনেমাটিও মুক্তি পায় ১৬ ফেব্রুয়ারি। সিনেমাটির প্রচার জোরালো হলেও মুক্তির পর দর্শকশূন্যতায় ডুবেছে এটি। একই তারিখে মুক্তি পায় দীঘি অভিনীত সিনেমা ‘শ্রাবণ জ্যোৎস্নায়’। আব্দুস সামাদ খোকন পরিচালিত সরকারি অনুদান পাওয়া সিনেমাটিতে দীঘির বিপরীতে রয়েছেন গাজী আবদুন নূর। কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের ‘শ্রাবণ জ্যোৎস্নায়’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়েছে ছবিটি। মুক্তির এক সপ্তাহও চলেনি অধিকাংশ প্রেক্ষাগৃহে। কোনো কোনো সিনেমা হল থেকে মুক্তির দুদিন পরই নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মোট ৭ সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে ‘টালমাতাল’। হাবিব খানের পরিচালনায় এতে অভিনয় করেছেন কাজী হায়াৎ, দেশ ইসলাম, জারা প্রমুখ। প্রচার ছাড়াই নীরবে মুক্তি দেওয়া হয়েছে ছবিটি। দর্শক তো দূরের কথা, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিনেমাসংশ্লিষ্টরাও এ ছবি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না।

চলতি মাসে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশি পাঁচ সিনেমা নিয়ে কথা বলেছেন দেশের বিভিন্ন সিনেমা হল মালিক এবং ব্যবস্থাপকরা। এসব সিনেমা নিয়ে ব্যবসা প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে তারা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। শ্যামলী সিনেমা হলের ম্যানেজার আহসানুল্লাহ বলেন, ‘পেয়াবার সুবাস’, ‘শ্রাবণ জ্যোৎস্নায়’ সিনেমাগুলো তেমন চলেনি। আমাদের সিনেমায় দুদর্শা চলছে। ব্যবসায়িক সিনেমা এখন আসছে না। এখন শ্যামলীতে পুরাতন ছবি ‘প্রিয়তমা’ চালাচ্ছি। তবে পুরাতন ছবি আর কত রিপিট করা যায়? প্রথম কদিন ‘পেয়ারার সুবাস’ ভালোই চলেছে। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহ টানতে পারেনি। আর ‘শ্রাবণ জ্যোৎস্নায়’ এক সপ্তাহও চালাতে পারিনি। দুদিন পর সেটি নামিয়ে ‘প্রিয়তমা’ চালাচ্ছি।’

খুলনা সংগীতা সিনেমা হলের ম্যানেজার বাবু বলেন, ‘ট্র্যাপ এক সপ্তাহ চালিয়েছি। সেল রিপোর্ট একদমই ভালো না। খবরে দেখেছি, অনেক হল থেকেও দু-তিনদিন পরই ছবিটা নামিয়ে ফেলা হয়েছে। এই রকম ছবি দর্শক কেন দেখবে! একমাত্র অপু বিশ্বাস ছাড়া আর কোনো ভালো আর্টিস্ট নাই এখানে। আর যদি নায়ক ভালো না হয়, তাহলে দর্শক কীভাবে সিনেমা দেখবে? ‘প্রিয়তমা’ কিন্তু আমরা আট সপ্তাহ চালিয়েছি। ‘পরান’, ‘হাওয়া’ অনেক সপ্তাহ চালিয়েছি। ছবিতে আসলে জোর থাকতে হয়। সিনেমা যদি নাটক, টেলিফিল্মের মতো হয়, তাহলে সমস্যা। এসব ছবি দর্শক দেখতে চায় না। ‘ট্র্যাপ’ এক সপ্তাহ চালিয়ে মাত্র ২০ হাজার টাকা তুলেছি। বিদ্যুৎ বিলের খরচও ওঠেনি। ২০ হাজার টাকার মধ্যে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে ছবির প্রযোজক, মাইকিং, পোস্টারিংয়ে খরচ হয়েছে ৩ হাজার। আটজন স্টাফ আছে, বাকি ৭ হাজার টাকায় কীভাবে খরচ ওঠে?  সিনেমা হল এ জন্যই বন্ধ করে দেই আমরা। খুব কষ্টে আছি। এগুলো জাতের কোনো ছবি না। সবচেয়ে বেশি খারাপ হচ্ছে, সরকারের কাছে অনুদান নিয়ে যে সিনেমা বানাচ্ছে এগুলো। সরকারের কাছে টাকা নিয়ে তাইরে-নাইরে করে আবোল-তাবোল দিয়ে ছবি বানিয়ে সিনেমা হলে রিলিজ করে। এসব ছবি কেউ দেখে না। দুই চারটা হলে চালিয়ে সরকারকে দেখায়।’

চট্টগ্রাম সুগন্ধা সিনেমা হলের কর্ণধার সাইফ বলেন, “আমার সিনেমা হলে এখন ‘মুজিব’ চলছে। এ মাসে ‘পেয়ারার সুবাস’ ও ‘ছায়াবৃক্ষ’ দুইটা নতুন সিনেমা চালিয়েছি। সিনেমা দুটি ভালো চলে নাই। ভালো চললে দুই সপ্তাহ চালাতাম। আমাদের খরচও ওঠেনি।”

কেরানীগঞ্জ লায়ন সিনেমাস কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘ছায়াবৃক্ষ ও শ্রাবণ জ্যোৎস্নায় সিনেমা দুটি চলছে আমাদের এখানে। আমাদের কালেকশন ওভাবে কাউকে বলি না। তবে আনফরচুনেটলি যদি বলতে হয়, সিনেমা দুটি তেমন চলছে না। বাংলা সিনেমা নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা অনেক, কিন্তু সিনেমা দুটি দাঁড়াতেই পারেনি। আমাদের আশা পূরণ হয়নি।’

চলতি মাসে মুক্তি পাওয়া দেশের এই সিনেমাগুলো দর্শক তো টানতেই পারেনি, বরং হতাশ হয়েছেন বাংলা সিনেমার দর্শকরা। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে দেশীয় সিনেমা একসময় স্মৃতি হয়ে যাবে।

জাহ্নবী

 

স্টাইলিশ এক তারকার বিদায়

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৯ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৯ পিএম
স্টাইলিশ এক তারকার বিদায়

বাংলাদেশে যত গানের ব্যান্ড রয়েছে তার মধ্যে ‘মাইলস’ অনন্য নাম। যার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গানপ্রিয় মানুষের হৃদয় থেকে হৃদয়ে আছে মাইলসের গান। যদিও তিনি প্রিয় মাইলস ব্যান্ড ছেড়েছিলেন বেশ আগেই। নতুন করে গড়ে তুলেছিলেন ব্যান্ড ‘ভয়েস অব মাইলস’। তবুও মাইলস ব্যান্ডের গান মানেই শাফিন আহমেদকে বোঝেন, মানেন ও জানেন শ্রোতারা। কারণ মাইলসের প্রায় ৯০ ভাগ জনপ্রিয় গানই গেয়েছেন কিংবদন্তি এই ব্যান্ড তারকা।

হঠাৎ করেই দূরদেশ থেকে ভেসে এল একটি দুঃসংবাদ। জানা গেল, দেশের প্রাচীন এবং জনপ্রিয় এই ব্যান্ডের অন্যতম গায়ক ও গিটারিস্ট শাফিন আহমেদ আর নেই।

শাফিন আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন কয়েকটি কনসার্টে অংশ নিতে। সেখানেই নিভে গেল তার প্রাণপ্রদীপ। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় সেনটারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই তারকা। এই খবর নিশ্চিত করেছেন শাফিন আহমেদের বড় ভাই ব্যান্ড তারকা হামিন আহমেদ। মৃত্যুকালে শাফিন আহমেদের বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন।

হামিন আহমেদ জানান, কনসার্টে অংশ নিতে শাফিন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে যান। গত শনিবার ভার্জিনিয়ায় তার কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কনসার্টের আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তা বাতিল করা হয়। অসুস্থ শাফিনকে শনিবারই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অর্গানগুলো অকার্যকর হতে শুরু করলে শাফিনকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় চিকিৎসকরা শাফিনকে মৃত ঘোষণা করেন।

শাফিন আহমেদের অসুস্থতার কথা প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানান দেশের আরেক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী। তিনিও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। গত বুধবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে ফেসবুক এক পোস্টে সামিনা চৌধুরী লেখেন, ‘আহারে জীবন…সেই জীবনের কোথায় কখন কী হতে যাচ্ছে আমরা কেউই জানি না। দেশের এই পরিস্থিতি মানতে কষ্ট হচ্ছে…তার মধ্যে আরেক দুঃখের খবর। এখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) অনুষ্ঠান করতে এসে আগের দিন শাফিন ভাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। দেশের সম্পদ শাফিন আহমেদের জন্য আমাদের সবার দোয়া প্রয়োজন। দয়া করে সবাই শাফিন ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন। পরের দিন সকালে সামিনা চৌধুরী এক আবেগঘন স্ট্যাটাসে এই তারকার মৃত্যুর খবরও জানান।

শাফিন আহমেদের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভারতের কলকাতায়। তার বাবা উপমহাদেশের কিংবদন্তি সুরকার ও সংগীতশিল্পী কমল দাশগুপ্ত এবং মা নজরুল সংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী ফিরোজা বেগম।

শাফিন আহমেদ ছোটবেলা থেকেই সংগীত সাধনা শুরু করেন। বাবার কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নেওয়ার পাশাপাশি মায়ের কাছে শেখেন নজরুল গীতি।

এরপর যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করতে গিয়ে পাশ্চাত্য সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন এই তারকা গায়ক। ১৯৭৯ সালে বড় ভাই হামিন আহমেদকে নিয়ে ‘মাইলস’ ব্যান্ডে যোগ দেন। এই ব্যান্ডের ভোকাল ও বেইজ গিটারিস্ট ছিলেন তিনি।

বাংলা গানের পাশাপাশি ইংরেজি ও হিন্দি গানও গেয়েছেন এই তারকা। এ ছাড়া তার জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘পথিকার’ নামের একটি গ্রন্থও। এটি লিখেছেন লেখক সাজ্জাদ হুসাইন। ‘পথিকার’ বই সম্পর্কে শাফিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের মিউজিকের সঙ্গে পরিচিত হতে হতে একসময় ব্যান্ড মিউজিকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া। এবং মাইলস ব্যান্ডের সঙ্গে কয়েক যুগের পথ চলা। বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিকের শুরু খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। নানান ঘটনা আর অভিজ্ঞতার জীবন অবশেষে লিপিবদ্ধ হয়েছে পথিকার নামে।’

শাফিন আহমেদ মাঝে রাজনীতিতে জড়িয়েছিলেন নিজেকে। জাতীয় পার্টির হয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় আর ভোট করা হয়নি তার। রাজনীতিতে সরব না থাকলেও গানে কখনো ছেদ পড়েনি তার। নতুন গান প্রকাশের পাশাপাশি স্টেজ শোতেও ছিলেন নিয়মিত। গানের মতোই শাফিন আহমেদ ভক্তদের আকৃষ্ট করেছেন তার নিজস্ব স্টাইল দিয়ে। মাথায় ক্যাপ, চোখে কালো সানগ্লাস যেন শাফিন আহমেদের নিত্যসঙ্গী ছিল। স্টেজ থেকে স্টেজে পরিপাটি পোশাক পরে কণ্ঠ ও সুরে মাত করেছেন প্রতিনিয়ত। একজন শাফিন আহমেদের মৃত্যুতে বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের ভিত কেঁপে উঠেছে যেমন, তেমনি শোকে পাথর প্রায় প্রতিটি ব্যান্ডের সদস্যসহ শ্রোতারাও।

জাহ্নবী

শাফিন আহমেদের জনপ্রিয় গান

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৭ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৭ পিএম
শাফিন আহমেদের জনপ্রিয় গান

আশি আর নব্বইয়ের দশকে কিশোর-তরুণ শ্রোতাদের কাছে ভালোবাসা আর বিরহের গান মানেই ছিল মাইলসের গান। আর মাইলস মানেই শাফিন আহমেদ। পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে ছোটবেলা থেকেই গানের আবহে বেড়ে উঠেছেন এই সংগীত তারকা। বাবার কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত আর মায়ের কাছে শিখেছেন নজরুলগীতি। বড় ভাই হামিন আহমেদসহ ইংল্যান্ডে পড়তে গিয়ে পশ্চিমের সংগীতের সঙ্গে সখ্য হয় শাফিনের। শুরু হয় তার ব্যান্ড সংগীতের যাত্রা।

১৯৭৯ সালে মাইলস ব্যান্ডে যোগ দেওয়ার পর প্রথম কয়েক বছর তারা বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেলে ইংরেজি গান গাইতেন। পরে মাইলসের বাংলা গানের প্রথম অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’ বের হয় ১৯৯১ সালে। অবশ্য তার আগে প্রকাশিত হয় দুটি ইংরেজি গানের অ্যালবাম ‘মাইলস’ ও ‘আ স্টেপ ফারদার’।

‘প্রতিশ্রুতি’ অ্যালবামের জনপ্রিয়তার পর বিটিভিতে বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠানে দেখা যেতে থাকে মাইলসকে। ধীরে ধীরে মাইলস দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড দলে পরিণত হয়।

শাফিন আহমেদের গাওয়া তুমুল জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে ‘আজ জন্মদিন তোমার’, ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘জ্বালা জ্বালা অন্তরে’, ‘ফিরিয়ে দাও হারানো প্রেম’, ‘ফিরে এলে না’, ‘হ্যালো ঢাকা’, ‘জাতীয় সংগীতের দ্বিতীয় লাইন’ প্রভৃতি।

জাহ্নবী

‘মাইলস’ কেন ছেড়েছিলেন শাফিন

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৬ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৬ পিএম
‘মাইলস’ কেন ছেড়েছিলেন শাফিন

থেমে গেল শাফিন আহমেদের কণ্ঠস্বর। নতুন কোনো গান আর গিটারে তুলবেন না তিনি। গিটারের ছয়টি তার আর স্পর্শ করবে না এই ব্যান্ড তারকার আঙুল। কারণ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ‘মাইলস’। এই ব্যান্ডের অধিকাংশ জনপ্রিয় গানই ছিল শাফিন আহমেদের গাওয়া। বড় ভাই হামিন আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৭৯ সালে ‘মাইলস’ গড়ে তুলেছিলেন প্রয়াত এই তারকা। এই ব্যান্ডের ভোকাল ও বেইজ গিটারিস্টও ছিলেন শাফিন আহমেদ। ‘মাইলস’–এর শুরুটা তার হাত ধরে হলেও এক সময় তিনি এই ব্যান্ড থেকে সরে দাঁড়ান।

২০১০ সালের শুরুর দিকে একবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ব্যান্ড থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন শাফিন। তবে কয়েক মাস পর আবারও মাইলসে ফেরেন এই তারকা। কয়েক বছর আবারও মাইলসের হয়ে স্টেজ মাতিয়েছেন শাফিন। এরপর ২০১৭ সালের অক্টোবরে আবারও তিনি মাইলস ছাড়ার কথা জানান। দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বের কথা জানা যায় সে সময়। দ্বন্দ্ব ভুলে আবারও শাফিন ফিরেছিলেন। সর্বশেষ ২০২১ সালের নভেম্বরে একটি ভিডিও বার্তায় শাফিন আহমেদ জানান, তিনি মাইলস থেকে আলাদা হয়ে গেছেন। সে সময় তিনি বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ব্যান্ডের সব কার্যক্রম বন্ধের দাবিও করেন।

এরপর নতুন ব্যান্ড গড়ে তোলেন শাফিন আহমেদ। ব্যান্ডের নামকরণ করেন ‘ভয়েস অব মাইলস’। এই ব্যান্ড নিয়েই নিয়মিত বিভিন্ন কনসার্টে অংশ নিয়েছিলেন এই তারকা। নতুন ব্যান্ড নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শাফিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘‘৪০ বছর ধরে ‘মাইলস’ ব্যান্ডের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। তিন বছর আগে আমাকে ‘মাইলস’ থেকে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সেটার সঠিক সমাধান আমি এখনো খুঁজে পাইনি। পরে আমি শাফিন আহমেদ নামেই যাত্রা করেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম, ‘মাইলস’ নামটা যেন আর ব্যবহৃত না হয়। একটি ব্যান্ড সম্মানিত জায়গায় পৌঁছার পর সেটি আর সমালোচনার মুখে না পড়ুক। সেই জায়গা থেকেই আমার চাওয়া ছিল, আমরা যেন কেউই ‘মাইলস’ নামটা ব্যবহার না করি।’’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘যেভাবে চার দশক ধরে মানুষ মাইলসকে চিনে এসেছে, যেভাবে মানুষ আমাকে দেখেছে। অনেকে বলেছে, ‘ভয়েস অব মাইলস’ বলতে শাফিন আহমেদকে চিনি। শাফিন আহমেদ ও মাইলস সমার্থক হয়েছে। এই নামের পেছনে আমার পরিশ্রম, সাধনা রয়েছে; সেটা যদি কেউ ব্যবহারের যোগ্যতা রাখে, সেটা হওয়া উচিত আমার। আমি বিবাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বলছি না; আমি বলছি, নামটার পেছনে আমারও অধিকার রয়েছে। সেই অধিকারের জায়গা থেকে আমি এটাকে পুরোপুরি ‘মাইলস’ বললাম না। আমি নিজেকে ‘মাইলস’ বলে সংশয় তৈরি করতে চাইছি না। কিন্তু ‘ভয়েস অব মাইলস’ বলতেই পারি; এইটুকু অধিকার আমার রয়েছে। ওই জায়গা থেকেই ‘ভয়েস অব মাইলস’ নামটা এসেছে।’’

জাহ্নবী

শাফিন আহমেদের মৃত্যুতে তারকাদের শোক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৫ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৫ পিএম
শাফিন আহমেদের মৃত্যুতে তারকাদের শোক

ব্যান্ড লিজেন্ড শাফিন আহমেদের মৃত্যুতে শোকাহত দেশের প্রতিটি ব্যান্ডের সদস্য থেকে শুরু করে তারকাশিল্পী ও ভক্তরা। শাফিন আহমেদকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি তারকারা শোকবার্তা দিয়েছেন গণমাধ্যমেও।

ব্যান্ড তারকা সুরকার ও সংগীত পরিচালক নকীব খান বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠেই যখন খবরটি পেলাম, আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। সারা দিন আমার মনটা খারাপ হয়ে আছে। শাফিন আহমেদ বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন উচ্চমানের মিউজিশিয়ান। শুধু মিউজিশিয়ান নন, তিনি ছিলেন কমপ্লিট একজন মিউজিশিয়ান। শাফিন আহমেদ একাধারে গান লিখতেন, সুর করতেন আবারও বেইজ গিটার বাজিয়ে স্টেজে পারফর্মও করতেন। তার সঙ্গে অনেক স্মৃতি। আমরা একমঞ্চে কত পারফর্ম করেছি। এই মানের একজন ব্যান্ড তারকার মৃত্যুতে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। আমি খুবই ভারাক্রান্ত। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’

শাফিন আহমেদের দীর্ঘদিনের সহযাত্রী ও ব্যান্ড মেম্বার মানাম আহমেদ মন খারাপের সুরে বলেন, ‘শাফিন চলে যাওয়াতে যে ক্ষতি হলো তা পূরণ করার মতো নয়। সবারই আলাদা আলাদা কোয়ালিটি থাকে। শাফিনেরও ছিল। আমরা সেটা মিস করব। শাফিনের গায়কিটাও মিস করব। তার অনেক ভক্ত ছিল। সবাই তাকে অনেক ভালোবাসত। আমার কষ্টটা হচ্ছে, আমি আমার জীবনে যত গান সুর করেছি, সব শাফিনের গলায় গাওয়া। যেহেতু শাফিন নেই, সামনে এ ধরনের গায়ক পাব কি না, যাকে দিয়ে এমন গান গাওয়াতে পারব। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।’

জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা নগরবাউল জেমস বর্তমানে কানাডায় রয়েছেন। কয়েকটি কনসার্টে অংশ নিতেই কানাডায় গিয়েছেন এই রক লিজেন্ড। সেখান থেকে শাফিন আহমেদের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন তিনি। প্রিয় মানুষের চলে যাওয়ায় আবেগে আপ্লুত জেমস।

কানাডা থেকে এক খুদে বার্তার মাধ্যমে শোক জানিয়ে খবরের কাগজকে জেমস বলেন, ‘মাইলস ব্যান্ডের অন্যতম প্রধান ভোকালিস্ট এবং সদস্য শাফিন আহমেদের মৃত্যুতে আমি অত্যন্ত শোকাহত। বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের ইতিহাসে শাফিন আহমেদ একটি অধ্যায়। যে কয়েকজন ব্যান্ড তারকা বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতকে প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ব্যক্তিত্ব। শাফিন আহমেদের এই মৃত্যু সত্যিই অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তার পরিবার ও সব ভক্ত-শ্রোতার প্রতি রইল আমার গভীর সমবেদনা। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’

এর আগে নগরবাউল জেমস তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শাফিন আহমেদের ছবি এবং তার গাওয়া ‘চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি’ গানের ৪ লাইন পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, ‘বিনম্র শ্রদ্ধা বাংলাদেশের মাইলস ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদের প্রতি।’

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী তার ফেসবুকে শাফিন আহমেদকে নিয়ে লেখেন, ‘‘এইমাত্র রবিন এবং ভার্জিনিয়ার স্বপ্নবাজের অনুষ্ঠানের আয়োজকদের একজন পল্লব জানালো শাফিন ভাই আর নেই। তিন দিন আগে কথা বলে দেখে এলাম। বারবার আমাকে আর স্বপনকে থাকতে বলছিলেন। স্বপনকে বললেন, ‘স্বপন আমাকে ছেড়ে যেও না দয়া করে। আমার সঙ্গে গল্প কর। আমার অনেক ব্যথা হচ্ছে কোমরে। স্বপন তোমাকে কিছু বলব, আমার রুমে বসো।’ স্বপন পানি খাওয়াল শাফিন ভাইকে। তারপর তাকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হলে আয়োজকরা আমাদের চলে আসতে বললেন। কী বলতে চেয়েছিলেন শাফিন ভাই, কে জানে? দেশের আরেকটি সম্পদ, আরেকটি মেধার বিয়োগ হলো সেই কথা চোখে ভাসছে শুধু। ‘তোমরা যেও না প্লিজ, আমাকে আর পাবা না’।’’

জাহ্নবী

লাইফ সাপোর্টে জুয়েল

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৮:৪১ পিএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৮:৪২ পিএম
লাইফ সাপোর্টে জুয়েল
ছবি: সংগৃহীত

নন্দিত সংগীতশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছেন তিনি। দেশ-বিদেশে চলছিল তার চিকিৎসা। এবার জানা গেল, ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন তিনি। গত ২৩ জুলাই রাতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে হাসপাতালে নেওয়া হয় এই সংগীতশিল্পীকে। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেন।

গণমাধ্যমকে এ বিষয়টি জানিয়েছেন জুয়েলের স্ত্রী উপস্থাপিকা ও সংবাদপাঠিকা সঙ্গীতা। তিনি বলেন, ‘জুয়েলের প্লাটিলেট কমে গেছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে গেছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে মঙ্গলবার রাত থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। দোয়া করবেন সবাই। জুয়েল যেন লাইফ সাপোর্ট থেকে ফিরে আসতে পারে।’ 
জুয়েলের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে তার লিভার ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর ফুসফুস এবং হাড়েও ক্যানসার সংক্রমিত হয়। তখন থেকেই দেশে ও দেশের বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার।

ব্যান্ডসংগীতের জনপ্রিয়তার সময়ে ভিন্নধর্মী গান দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেন জুয়েল। বাবার চাকরি সূত্রে শৈশব-কৈশোরে দেশের নানা জায়গায় কাটিয়েছেন তিনি। 
১৯৮৬ সালে ঢাকায় আসেন জুয়েল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিকেন্দ্রিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। এভাবেই একসময় গানে জড়িয়ে যান তিনি। ১৯৯২ সালে বের হয় তার প্রথম অ্যালবাম। এরপর বেশ কিছু অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ‘এক বিকেলে’ অ্যালবামটি বেশি জনপ্রিয়তা পায়। অ্যালবামের অধিকাংশ গানের সুরকার ছিলেন প্রয়াত ব্যান্ডতারকা আইয়ুব বাচ্চু।