ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

প্রিয় মেহ্জাবীন

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২০ পিএম
আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২০ পিএম
প্রিয় মেহ্জাবীন

মেহজাবীনের চোখে জল! এ রকম দৃশ্য দেখলে অনেকেরই বুক ভেসে যায়। টিভি পর্দায় তাকে হাসতে দেখলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হেসে ওঠে ভক্তমন। তারকা থেকে এভাবে একসময় শিল্পী হয়ে উঠেছিলেন ঢাকার মেহজাবীন চৌধুরী। আজ বিনোদনের দুনিয়া টেলিভিশন, ইউটিউব, ওটিটির রানি হয়ে বসে আছেন তিনি। অভিনয় অনেকেই করেন। মেহজাবীন হয়ে ওঠেন চরিত্র। পার্থক্য এতটুকু, অন্যদের দেখে বোঝা যায় – অভিনয় করছে। মেহজাবীনকে দেখলে মনে হয়, অভিনয় না, মেহজাবীন সত্যিই পর্দায় দেখা নারীটি। তার ভ্রু, চোখ, ঠোঁট, মুখমন্ডল সত্যিকারের প্রেম, আনন্দ কি বা যাতনার বার্তা দিচ্ছে। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন কোটি মানুষের প্রিয় মেহজাবীন। আজ তার জন্মদিন।

বিজয়ের আগের বিজয়

এই যে মেহজাবীন এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। এই বিজয়ের আগে তাকে জয় করতে হয়েছে আরও এক যুদ্ধ। ২০০৯ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার হয়ে বিনোদন অঙ্গনে পা রেখেছিলেন মেহজাবীন। তারপর পেছনে ফিরে দেখার আর সুযোগ হয়নি তার। অভিনয় করে দিনের পর দিন নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। দেশে উৎসবের এমন দিনও এসেছে, মেহজাবীনহীন টিভিপর্দা ভাবা মুশকিল ছিল। কীভাবে এই পর্যায়ে নিজেকে তুলে আনলেন তিনি? একবার জানতে চাইলে বলেছিলেন, ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার সময় একটা গ্রুমিং হয়েছিল। সেটা আমার ভীষণ কাজে এসেছিল। যে কোনো কাজ শুরু করার আগে কাজটাকে ভালোবাসতে হবে, কাজটি সম্পর্কে জানতে হবে, জানার জন্য ছোটবড় প্রশিক্ষণ নিতে হবে, তারপর সেটা শুরু করতে হবে।’ যদি ব্যর্থ হতেন? ‘হতাশ হতাম না। অন্য কোনো কাজ খুঁজে নিতাম, যেটা আমি ভালো পারব।’ 

সেরা করদাতা 

অভিনয় একটি পেশা! এ থেকে আয় করা যায়? সরকারকে কর দেওয়া যায়? আবার সেরা করদাতা হিসেবে স্বীকৃতিও পাওয়া যায়! বাংলাদেশে এমনটি ভেবেছিল কেউ? ২০২২ সালে সেরা করদাতার তালিকায় ছিল মেহজাবীনের নাম। অবশ্য কবি নির্মলেন্দু গুণ যে বছর কর দিয়েছিলেন, ঘটনাটি সাড়া ফেলে দিয়েছিল। তবে একজন কবি ও একজন রূপবতী অভিনেত্রীর কর দেওয়ার মধ্যে পরের ঘটনাটি বেশি আলোড়ন জাগায়। পাশাপাশি অভিনেত্রীর কাজের পরিমাণও ইঙ্গিত করে। 

ইফতেখার আহমেদ ফাহমি পরিচালিত ‘তুমি থাকো সিন্ধুপারে’ দিয়ে খাতা খুলেছিলেন মেহজাবীন। এ নাটকে তার বিপরীতে ছিলেন মাহফুজ আহমেদ। এরপর একে একে মেহজাবীনকে দেখা যায় ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’, ‘কল সেন্টার’, ‘আজও ভালোবাসি মনে মনে’, ‘আনলিমিটেড হাসো’সহ বহু নাটকে। সেসবের মধ্যে ২০১৩ সালে শিখর শাহনিয়াত পরিচালিত ‘অপেক্ষার ফটোগ্রাফি’ তার ক্যারিয়ারের বাঁক বদলে দেয়। ২০১৭ সালের ঈদুল আজহায় মিজানুর রহমান আরিয়ানের পরিচালনায় ‘বড় ছেলে’তে অভিনয় করে রীতিমতো আলোচনার ঝড় তোলেন তিনি। দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয় মেহজাবীন ও জিয়াউল ফারুক অপূর্ব অভিনীত ‘বড় ছেলে’। এ ছাড়া আলোচিত হয়েছিল মেহজাবীন অভিনীত ‘কাজলের দিনরাত্রি’, ‘পুনর্জন্ম’র মতো বেশ কিছু নাটক।

একসময় এল সেই দিন, ভিন্ন কোনো নারী চরিত্রের কথা ভাবলে নির্মাতারা প্রথম যার কথা ভাবেন, তিনি মেহজাবীন। তালিকায় যুক্ত হলো – মনের মতো মন, ভুল ঠিকানায় যাত্রা, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেমের গল্প, ফ্রেন্ডশিপ, লাভ এন্ড সামথিং মোর, মরীচিকার রঙ, ও রাঁধা ও কৃষ্ণ, সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, বাঘিনী, সাহেব মেমসাহেব-এর মতো শতকস্পর্শী সংখ্যার নাটক। বিভিন্ন সময়ে তিনি হয়ে উঠলেন প্রীতি, মেহু, রূম্পা, নিতু, সিমি, ইরিনা, নীলা, স্নেহা, রোকেয়া, জরিনা, তিথি, রায়া, আরিশা, বন্যা, রুবির মতো চরিত্র। 

বাছবিচারিক মানুষ

এত কাজ! এত কাজ! কীভাবে সম্ভব? মেহজাবীন বাছবিচারিক শিল্পী। গণহারে কাজ করা তার ধাতে নেই। কোনো এক উৎসবে যদি দশটি নাটকের প্রস্তাব পান, সবগুলোতে সাড়া দেন না তিনি। তার ভাষায়, ‘যদি কোনো উৎসবে আমার ছয়টা নাটক থাকে, চেষ্টা করি চিত্রনাট্যগুলো বাছাই করে নাটকগুলোর প্রস্তাবে সাড়া দিতে। সেগুলোর মধ্যে হয়তো একটা থাকতে পারে ফানি, একটা সিরিয়াস, একটা সামাজিক বার্তাসমৃদ্ধ। এই বৈচিত্র্য রাখার জন্য অনেক সময় অনেক নির্মাতার কাজ আমার করা হয়ে ওঠে না। এতে অনেকে হয়তো মনক্ষুন্ন হন, কিন্তু আমার নিজের মান ও সংখ্যা ধরে রাখার তাগিদ থাকে।’ 

চিত্রনাট্য বাছাইয়ের কাজটি অনেক পরিশ্রমের। সেকথা স্মরণ করে মেহজাবীন বলেন, ‘হয়তো ৬০-৭০টি চিত্রনাট্য বেছে আমাকে ১০টা কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিদিন কাজও করতে হয়, স্ক্রিপ্ট পড়তে হয়। এটা খুব কঠিন একটা কাজ। আমার কোনো ম্যানেজার নেই যে, আমাকে স্ক্রিপ্ট পড়ে ভালো-মন্দ যাচাই করে কাজটা করার পরামর্শ দেবে। আমাকেই আমার স্ক্রিপ্ট পড়তে হচ্ছে। আবার কখনও কখনও এমনও হয় যে, খুব ভালো একটা সিনোপসিস, যখন স্ক্রিপ্ট হয়ে আসছে, তখন দেখা যায় ততটা ভালো কিছু না। ১৬ ঘণ্টা কাজ করি, বাকিটা সময় কীভাবে স্ক্রিপ্ট পড়া যায়?’

শিল্পীর কর্মতৃষা

২০২১ সালের কথা। সে বছরও খুব ভালো একজন অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে দেখতে চেয়েছিলেন মেহজাবীন। টিভি নাটকে তখন তার অবস্থান রীতিমতো মধ্যগগনে। তবু তৃষ্ণা ফুরোয় না তার। আরও ভালো করতে চেয়েছেন। মনে হয়েছে, তার সামনের সারিতে আছেন আরও কয়েকজন অভিনেত্রী। মনে হয়েছিল, তাকে আরও অনেক দূর এগোতে হবে তাকে। এক সাক্ষাৎকারে সে বছর মেহজাবীন বলেন, ‘তারা দূর্দান্ত কাজ করেন, তাদের দ্বারা আমি ভীষণ অনুপ্রাণিত হই।’ একজন শিল্পীর জন্য এই তৃষ্ণা, এই আকাঙ্ক্ষা অত্যন্ত জরুরি, সেটা স্বীকার করবেন যে কেউ। মেহজাবীনের লক্ষ্য, দিনে অন্তত একটি ভালো সিকোয়েন্স করা। তার এই কর্মতৃষা তাকে আগের চেয়ে ভালো একটি সিকোয়েন্সের জন্য তাড়া করে। ফলাফল – দর্শক দেখতে পান পর্দায়।

ছোট্ট আক্ষেপ

পৃথিবীর কোথাও হয়তো আর্টিস্টকে কস্টিউম নিয়ে ভাবতে হয় না। মেহজাবীনদের ভাবতে হচ্ছে। শিল্পী শুটিং সেটে যাবেন, মনোযোগ দিয়ে শেষবারের মতো চোখ বুলিয়ে নেবেন চিত্রনাট্যে তারপর শুরু করবেন সংলাপ! এ রকম কি হচ্ছে? আক্ষেপ নিয়ে মেহজাবীন বলেন, ‘আমাদের শুটিংয়ে যেতে হচ্ছে, স্ক্রিপ্ট বাছাই করতে হচ্ছে, চুল ঠিক করতে হচ্ছে, কস্টিউম ঠিক করতে হচ্ছে, আবার কাউকে অ্যাক্টিং শিখিয়ে দিতে হচ্ছে, কখনও শিখে নিতে হচ্ছে। সাপোর্টিং আর্টিস্টেরও এখানে ঘাটতি আছে।’

ঘাটতির এখানে শেষ নেই। চিত্রনাট্যকারকে বলে দেওয়া হয়, একদিনের মধ্যে যেন শুটিং শেষ করতে পারি, সে রকম একটা স্ক্রিপ্ট লিখতে হবে। হাসপাতালের দৃশ্য হবে, কিন্তু হাসপাতালে শুট করা হবে না। স্টুডিওর ভেতরেই হাসপাতাল বানানো হবে। রেলস্টেশনের দৃশ্য আছে, কিন্তু সেখানে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যাবে না। দৃশ্যটা করতে হবে বাসস্টপেজে। প্রোডাকশন ম্যানেজারকেও এ রকম নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। এভাবে কেউই নিজের শতভাগ শ্রম ও মেধা কাজের ভেতর দিতে পারে না। একজন শিল্পীর সঙ্গেও এ রকম ঘটনা ঘটে। মেহজাবীন বলেন, ‘এই লিমিটেশনের মধ্যেই এখানে সবাই কাজ করে যাচ্ছে। এরা সবাই সুপারম্যান। মন থেকে যদি এই পেশাটাকে ভালো না বাসতো, তারা এত কিছু করতে পারতেন না।’ 

যেখানে আক্ষেপ নেই

চলচ্চিত্রে অভিনয় করা বা না করা নিয়ে মেহজাবীনের কোনো আক্ষেপ নেই। পর্দায় যা চলমান, সেটাই তার কাছে চলচ্চিত্র। তার ভাষায়, ‘প্রতিদিন একটা ব্যতিক্রম চরিত্র করে মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারছি, হাসাতে-কাঁদাতে-ভাবাতে পারছি এতেই আমি তৃপ্ত। সুতরাং সিনেমা, ওটিটি, বড় পর্দা এসব নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।’ যদিও সিনেমা বলতে যা বোঝায়, সে রকম কাজ এরই মধ্যে তিনি করে ফেলেছেন। শিহাব শাহীনের ‘নীল জলের কাব্য’, ভিকি জাহেদের ‘আমি কী তুমি’, আশফাক নিপুনের ‘সাবরিনা’সহ আরও বেশ কিছু ওয়েব ফিল্মে তাকে দেখেছেন দর্শক। তবে আর আক্ষেপ থাকতে আছে? ওটিটি নিয়ে ইতিবাচক ভাবনা এই শিল্পীর। তার মত, ‘ওটিটিতে একটু সময় নিয়ে কাজ করা যায়, ভালো কাজের সুযোগ হয়। সেখানে গল্প বলার স্বাধীনতা আছে, সবকিছু নিয়ে একটু নিরীক্ষা করা যাচ্ছে। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে আমি তো নিরীক্ষাধর্মী কাজ করতে চাই। সবচেয়ে বড় কথা, ওটিটিতে এখন পরিকল্পিত কাজ হচ্ছে। সে কারণে ওটিটিতে আমার আগ্রহ বেড়েছে।’

গোপন সংসার 

ভাইরাল কয়েকটি ছবি সাক্ষ্য দেয়, নাটক ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা আদনান আল রাজিবের সঙ্গে গোপন সংসার পেতেছেন মেজহাবীন চৌধুরী। এই অঙ্গনের অন্দরমহলের মানুষ যারা, বিষয়টি কেবল তারাই জানেন। বাকিরা গুঞ্জনে ভর করে এ বিষয়ক সিদ্ধান্তে এক পা এগোন, দুই পা পেছান। সে রকম একটি ছবিতে দেখা গেছে, আদনান আল রাজিব ও মেহজাবীন মোনাজাত ধরেছেন। একই ভঙ্গিতে একটু দূরে মোনাজাত ধরে দাঁড়িয়ে আছেন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির বর্তমান প্রধান নির্বাহী রেদওয়ান রনি, নির্মাতা আশফাক নিপুনসহ কয়েকজন নারী, ছবিতে যাদের চেনা যায় না। 

আরও একটি ছবিতে পারিবারিক আবহে আধশোয়া অবস্থায় দেখা গেছে মেহজাবীন ও আদনানকে, খুব কাছাকাছি। দুজনার মাঝে একটি ৫-৬ বছরের শিশুও রয়েছে। শিশুটি তাদের নয়, সেটা ওর ভঙ্গিই বলে দিচ্ছিল। বিয়ে নিয়ে কেন এই রাকঢাক? মেহজাবীনকে যখনই বিয়ে প্রসঙ্গে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তখনই তিনি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সেটা এড়িয়ে গেছেন। কখনও বলেছেন, ‘আমার কি বিয়ের বয়স হয়েছে?’ কখনও বলেছেন, ‘আরও পাঁচ বছর পর বিয়ের খবর দেব।’ কথাটা মিথ্যে লাগেনি শুনতে। বিয়ে তিনি করেছেন, সেই খবরটি একটু দেরিতে দেবেন, তাতে কী? হয়তো তাতে গণপরিসরে বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করতে হবে না।

স্টাইলিশ এক তারকার বিদায়

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৯ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৯ পিএম
স্টাইলিশ এক তারকার বিদায়

বাংলাদেশে যত গানের ব্যান্ড রয়েছে তার মধ্যে ‘মাইলস’ অনন্য নাম। যার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গানপ্রিয় মানুষের হৃদয় থেকে হৃদয়ে আছে মাইলসের গান। যদিও তিনি প্রিয় মাইলস ব্যান্ড ছেড়েছিলেন বেশ আগেই। নতুন করে গড়ে তুলেছিলেন ব্যান্ড ‘ভয়েস অব মাইলস’। তবুও মাইলস ব্যান্ডের গান মানেই শাফিন আহমেদকে বোঝেন, মানেন ও জানেন শ্রোতারা। কারণ মাইলসের প্রায় ৯০ ভাগ জনপ্রিয় গানই গেয়েছেন কিংবদন্তি এই ব্যান্ড তারকা।

হঠাৎ করেই দূরদেশ থেকে ভেসে এল একটি দুঃসংবাদ। জানা গেল, দেশের প্রাচীন এবং জনপ্রিয় এই ব্যান্ডের অন্যতম গায়ক ও গিটারিস্ট শাফিন আহমেদ আর নেই।

শাফিন আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন কয়েকটি কনসার্টে অংশ নিতে। সেখানেই নিভে গেল তার প্রাণপ্রদীপ। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় সেনটারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই তারকা। এই খবর নিশ্চিত করেছেন শাফিন আহমেদের বড় ভাই ব্যান্ড তারকা হামিন আহমেদ। মৃত্যুকালে শাফিন আহমেদের বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন।

হামিন আহমেদ জানান, কনসার্টে অংশ নিতে শাফিন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে যান। গত শনিবার ভার্জিনিয়ায় তার কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কনসার্টের আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তা বাতিল করা হয়। অসুস্থ শাফিনকে শনিবারই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অর্গানগুলো অকার্যকর হতে শুরু করলে শাফিনকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় চিকিৎসকরা শাফিনকে মৃত ঘোষণা করেন।

শাফিন আহমেদের অসুস্থতার কথা প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানান দেশের আরেক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী। তিনিও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। গত বুধবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে ফেসবুক এক পোস্টে সামিনা চৌধুরী লেখেন, ‘আহারে জীবন…সেই জীবনের কোথায় কখন কী হতে যাচ্ছে আমরা কেউই জানি না। দেশের এই পরিস্থিতি মানতে কষ্ট হচ্ছে…তার মধ্যে আরেক দুঃখের খবর। এখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) অনুষ্ঠান করতে এসে আগের দিন শাফিন ভাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। দেশের সম্পদ শাফিন আহমেদের জন্য আমাদের সবার দোয়া প্রয়োজন। দয়া করে সবাই শাফিন ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন। পরের দিন সকালে সামিনা চৌধুরী এক আবেগঘন স্ট্যাটাসে এই তারকার মৃত্যুর খবরও জানান।

শাফিন আহমেদের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভারতের কলকাতায়। তার বাবা উপমহাদেশের কিংবদন্তি সুরকার ও সংগীতশিল্পী কমল দাশগুপ্ত এবং মা নজরুল সংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী ফিরোজা বেগম।

শাফিন আহমেদ ছোটবেলা থেকেই সংগীত সাধনা শুরু করেন। বাবার কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নেওয়ার পাশাপাশি মায়ের কাছে শেখেন নজরুল গীতি।

এরপর যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করতে গিয়ে পাশ্চাত্য সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন এই তারকা গায়ক। ১৯৭৯ সালে বড় ভাই হামিন আহমেদকে নিয়ে ‘মাইলস’ ব্যান্ডে যোগ দেন। এই ব্যান্ডের ভোকাল ও বেইজ গিটারিস্ট ছিলেন তিনি।

বাংলা গানের পাশাপাশি ইংরেজি ও হিন্দি গানও গেয়েছেন এই তারকা। এ ছাড়া তার জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘পথিকার’ নামের একটি গ্রন্থও। এটি লিখেছেন লেখক সাজ্জাদ হুসাইন। ‘পথিকার’ বই সম্পর্কে শাফিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের মিউজিকের সঙ্গে পরিচিত হতে হতে একসময় ব্যান্ড মিউজিকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া। এবং মাইলস ব্যান্ডের সঙ্গে কয়েক যুগের পথ চলা। বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিকের শুরু খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। নানান ঘটনা আর অভিজ্ঞতার জীবন অবশেষে লিপিবদ্ধ হয়েছে পথিকার নামে।’

শাফিন আহমেদ মাঝে রাজনীতিতে জড়িয়েছিলেন নিজেকে। জাতীয় পার্টির হয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় আর ভোট করা হয়নি তার। রাজনীতিতে সরব না থাকলেও গানে কখনো ছেদ পড়েনি তার। নতুন গান প্রকাশের পাশাপাশি স্টেজ শোতেও ছিলেন নিয়মিত। গানের মতোই শাফিন আহমেদ ভক্তদের আকৃষ্ট করেছেন তার নিজস্ব স্টাইল দিয়ে। মাথায় ক্যাপ, চোখে কালো সানগ্লাস যেন শাফিন আহমেদের নিত্যসঙ্গী ছিল। স্টেজ থেকে স্টেজে পরিপাটি পোশাক পরে কণ্ঠ ও সুরে মাত করেছেন প্রতিনিয়ত। একজন শাফিন আহমেদের মৃত্যুতে বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের ভিত কেঁপে উঠেছে যেমন, তেমনি শোকে পাথর প্রায় প্রতিটি ব্যান্ডের সদস্যসহ শ্রোতারাও।

জাহ্নবী

শাফিন আহমেদের জনপ্রিয় গান

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৭ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৭ পিএম
শাফিন আহমেদের জনপ্রিয় গান

আশি আর নব্বইয়ের দশকে কিশোর-তরুণ শ্রোতাদের কাছে ভালোবাসা আর বিরহের গান মানেই ছিল মাইলসের গান। আর মাইলস মানেই শাফিন আহমেদ। পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে ছোটবেলা থেকেই গানের আবহে বেড়ে উঠেছেন এই সংগীত তারকা। বাবার কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত আর মায়ের কাছে শিখেছেন নজরুলগীতি। বড় ভাই হামিন আহমেদসহ ইংল্যান্ডে পড়তে গিয়ে পশ্চিমের সংগীতের সঙ্গে সখ্য হয় শাফিনের। শুরু হয় তার ব্যান্ড সংগীতের যাত্রা।

১৯৭৯ সালে মাইলস ব্যান্ডে যোগ দেওয়ার পর প্রথম কয়েক বছর তারা বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেলে ইংরেজি গান গাইতেন। পরে মাইলসের বাংলা গানের প্রথম অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’ বের হয় ১৯৯১ সালে। অবশ্য তার আগে প্রকাশিত হয় দুটি ইংরেজি গানের অ্যালবাম ‘মাইলস’ ও ‘আ স্টেপ ফারদার’।

‘প্রতিশ্রুতি’ অ্যালবামের জনপ্রিয়তার পর বিটিভিতে বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠানে দেখা যেতে থাকে মাইলসকে। ধীরে ধীরে মাইলস দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড দলে পরিণত হয়।

শাফিন আহমেদের গাওয়া তুমুল জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে ‘আজ জন্মদিন তোমার’, ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘জ্বালা জ্বালা অন্তরে’, ‘ফিরিয়ে দাও হারানো প্রেম’, ‘ফিরে এলে না’, ‘হ্যালো ঢাকা’, ‘জাতীয় সংগীতের দ্বিতীয় লাইন’ প্রভৃতি।

জাহ্নবী

‘মাইলস’ কেন ছেড়েছিলেন শাফিন

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৬ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৬ পিএম
‘মাইলস’ কেন ছেড়েছিলেন শাফিন

থেমে গেল শাফিন আহমেদের কণ্ঠস্বর। নতুন কোনো গান আর গিটারে তুলবেন না তিনি। গিটারের ছয়টি তার আর স্পর্শ করবে না এই ব্যান্ড তারকার আঙুল। কারণ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ‘মাইলস’। এই ব্যান্ডের অধিকাংশ জনপ্রিয় গানই ছিল শাফিন আহমেদের গাওয়া। বড় ভাই হামিন আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৭৯ সালে ‘মাইলস’ গড়ে তুলেছিলেন প্রয়াত এই তারকা। এই ব্যান্ডের ভোকাল ও বেইজ গিটারিস্টও ছিলেন শাফিন আহমেদ। ‘মাইলস’–এর শুরুটা তার হাত ধরে হলেও এক সময় তিনি এই ব্যান্ড থেকে সরে দাঁড়ান।

২০১০ সালের শুরুর দিকে একবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ব্যান্ড থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন শাফিন। তবে কয়েক মাস পর আবারও মাইলসে ফেরেন এই তারকা। কয়েক বছর আবারও মাইলসের হয়ে স্টেজ মাতিয়েছেন শাফিন। এরপর ২০১৭ সালের অক্টোবরে আবারও তিনি মাইলস ছাড়ার কথা জানান। দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বের কথা জানা যায় সে সময়। দ্বন্দ্ব ভুলে আবারও শাফিন ফিরেছিলেন। সর্বশেষ ২০২১ সালের নভেম্বরে একটি ভিডিও বার্তায় শাফিন আহমেদ জানান, তিনি মাইলস থেকে আলাদা হয়ে গেছেন। সে সময় তিনি বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ব্যান্ডের সব কার্যক্রম বন্ধের দাবিও করেন।

এরপর নতুন ব্যান্ড গড়ে তোলেন শাফিন আহমেদ। ব্যান্ডের নামকরণ করেন ‘ভয়েস অব মাইলস’। এই ব্যান্ড নিয়েই নিয়মিত বিভিন্ন কনসার্টে অংশ নিয়েছিলেন এই তারকা। নতুন ব্যান্ড নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শাফিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘‘৪০ বছর ধরে ‘মাইলস’ ব্যান্ডের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। তিন বছর আগে আমাকে ‘মাইলস’ থেকে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সেটার সঠিক সমাধান আমি এখনো খুঁজে পাইনি। পরে আমি শাফিন আহমেদ নামেই যাত্রা করেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম, ‘মাইলস’ নামটা যেন আর ব্যবহৃত না হয়। একটি ব্যান্ড সম্মানিত জায়গায় পৌঁছার পর সেটি আর সমালোচনার মুখে না পড়ুক। সেই জায়গা থেকেই আমার চাওয়া ছিল, আমরা যেন কেউই ‘মাইলস’ নামটা ব্যবহার না করি।’’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘যেভাবে চার দশক ধরে মানুষ মাইলসকে চিনে এসেছে, যেভাবে মানুষ আমাকে দেখেছে। অনেকে বলেছে, ‘ভয়েস অব মাইলস’ বলতে শাফিন আহমেদকে চিনি। শাফিন আহমেদ ও মাইলস সমার্থক হয়েছে। এই নামের পেছনে আমার পরিশ্রম, সাধনা রয়েছে; সেটা যদি কেউ ব্যবহারের যোগ্যতা রাখে, সেটা হওয়া উচিত আমার। আমি বিবাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বলছি না; আমি বলছি, নামটার পেছনে আমারও অধিকার রয়েছে। সেই অধিকারের জায়গা থেকে আমি এটাকে পুরোপুরি ‘মাইলস’ বললাম না। আমি নিজেকে ‘মাইলস’ বলে সংশয় তৈরি করতে চাইছি না। কিন্তু ‘ভয়েস অব মাইলস’ বলতেই পারি; এইটুকু অধিকার আমার রয়েছে। ওই জায়গা থেকেই ‘ভয়েস অব মাইলস’ নামটা এসেছে।’’

জাহ্নবী

শাফিন আহমেদের মৃত্যুতে তারকাদের শোক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৫ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৫ পিএম
শাফিন আহমেদের মৃত্যুতে তারকাদের শোক

ব্যান্ড লিজেন্ড শাফিন আহমেদের মৃত্যুতে শোকাহত দেশের প্রতিটি ব্যান্ডের সদস্য থেকে শুরু করে তারকাশিল্পী ও ভক্তরা। শাফিন আহমেদকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি তারকারা শোকবার্তা দিয়েছেন গণমাধ্যমেও।

ব্যান্ড তারকা সুরকার ও সংগীত পরিচালক নকীব খান বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠেই যখন খবরটি পেলাম, আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। সারা দিন আমার মনটা খারাপ হয়ে আছে। শাফিন আহমেদ বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন উচ্চমানের মিউজিশিয়ান। শুধু মিউজিশিয়ান নন, তিনি ছিলেন কমপ্লিট একজন মিউজিশিয়ান। শাফিন আহমেদ একাধারে গান লিখতেন, সুর করতেন আবারও বেইজ গিটার বাজিয়ে স্টেজে পারফর্মও করতেন। তার সঙ্গে অনেক স্মৃতি। আমরা একমঞ্চে কত পারফর্ম করেছি। এই মানের একজন ব্যান্ড তারকার মৃত্যুতে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। আমি খুবই ভারাক্রান্ত। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’

শাফিন আহমেদের দীর্ঘদিনের সহযাত্রী ও ব্যান্ড মেম্বার মানাম আহমেদ মন খারাপের সুরে বলেন, ‘শাফিন চলে যাওয়াতে যে ক্ষতি হলো তা পূরণ করার মতো নয়। সবারই আলাদা আলাদা কোয়ালিটি থাকে। শাফিনেরও ছিল। আমরা সেটা মিস করব। শাফিনের গায়কিটাও মিস করব। তার অনেক ভক্ত ছিল। সবাই তাকে অনেক ভালোবাসত। আমার কষ্টটা হচ্ছে, আমি আমার জীবনে যত গান সুর করেছি, সব শাফিনের গলায় গাওয়া। যেহেতু শাফিন নেই, সামনে এ ধরনের গায়ক পাব কি না, যাকে দিয়ে এমন গান গাওয়াতে পারব। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।’

জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা নগরবাউল জেমস বর্তমানে কানাডায় রয়েছেন। কয়েকটি কনসার্টে অংশ নিতেই কানাডায় গিয়েছেন এই রক লিজেন্ড। সেখান থেকে শাফিন আহমেদের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন তিনি। প্রিয় মানুষের চলে যাওয়ায় আবেগে আপ্লুত জেমস।

কানাডা থেকে এক খুদে বার্তার মাধ্যমে শোক জানিয়ে খবরের কাগজকে জেমস বলেন, ‘মাইলস ব্যান্ডের অন্যতম প্রধান ভোকালিস্ট এবং সদস্য শাফিন আহমেদের মৃত্যুতে আমি অত্যন্ত শোকাহত। বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের ইতিহাসে শাফিন আহমেদ একটি অধ্যায়। যে কয়েকজন ব্যান্ড তারকা বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতকে প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ব্যক্তিত্ব। শাফিন আহমেদের এই মৃত্যু সত্যিই অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তার পরিবার ও সব ভক্ত-শ্রোতার প্রতি রইল আমার গভীর সমবেদনা। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’

এর আগে নগরবাউল জেমস তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শাফিন আহমেদের ছবি এবং তার গাওয়া ‘চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি’ গানের ৪ লাইন পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, ‘বিনম্র শ্রদ্ধা বাংলাদেশের মাইলস ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদের প্রতি।’

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী তার ফেসবুকে শাফিন আহমেদকে নিয়ে লেখেন, ‘‘এইমাত্র রবিন এবং ভার্জিনিয়ার স্বপ্নবাজের অনুষ্ঠানের আয়োজকদের একজন পল্লব জানালো শাফিন ভাই আর নেই। তিন দিন আগে কথা বলে দেখে এলাম। বারবার আমাকে আর স্বপনকে থাকতে বলছিলেন। স্বপনকে বললেন, ‘স্বপন আমাকে ছেড়ে যেও না দয়া করে। আমার সঙ্গে গল্প কর। আমার অনেক ব্যথা হচ্ছে কোমরে। স্বপন তোমাকে কিছু বলব, আমার রুমে বসো।’ স্বপন পানি খাওয়াল শাফিন ভাইকে। তারপর তাকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হলে আয়োজকরা আমাদের চলে আসতে বললেন। কী বলতে চেয়েছিলেন শাফিন ভাই, কে জানে? দেশের আরেকটি সম্পদ, আরেকটি মেধার বিয়োগ হলো সেই কথা চোখে ভাসছে শুধু। ‘তোমরা যেও না প্লিজ, আমাকে আর পাবা না’।’’

জাহ্নবী

লাইফ সাপোর্টে জুয়েল

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৮:৪১ পিএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৮:৪২ পিএম
লাইফ সাপোর্টে জুয়েল
ছবি: সংগৃহীত

নন্দিত সংগীতশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছেন তিনি। দেশ-বিদেশে চলছিল তার চিকিৎসা। এবার জানা গেল, ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন তিনি। গত ২৩ জুলাই রাতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে হাসপাতালে নেওয়া হয় এই সংগীতশিল্পীকে। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেন।

গণমাধ্যমকে এ বিষয়টি জানিয়েছেন জুয়েলের স্ত্রী উপস্থাপিকা ও সংবাদপাঠিকা সঙ্গীতা। তিনি বলেন, ‘জুয়েলের প্লাটিলেট কমে গেছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে গেছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে মঙ্গলবার রাত থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। দোয়া করবেন সবাই। জুয়েল যেন লাইফ সাপোর্ট থেকে ফিরে আসতে পারে।’ 
জুয়েলের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে তার লিভার ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর ফুসফুস এবং হাড়েও ক্যানসার সংক্রমিত হয়। তখন থেকেই দেশে ও দেশের বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার।

ব্যান্ডসংগীতের জনপ্রিয়তার সময়ে ভিন্নধর্মী গান দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেন জুয়েল। বাবার চাকরি সূত্রে শৈশব-কৈশোরে দেশের নানা জায়গায় কাটিয়েছেন তিনি। 
১৯৮৬ সালে ঢাকায় আসেন জুয়েল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিকেন্দ্রিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। এভাবেই একসময় গানে জড়িয়ে যান তিনি। ১৯৯২ সালে বের হয় তার প্রথম অ্যালবাম। এরপর বেশ কিছু অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ‘এক বিকেলে’ অ্যালবামটি বেশি জনপ্রিয়তা পায়। অ্যালবামের অধিকাংশ গানের সুরকার ছিলেন প্রয়াত ব্যান্ডতারকা আইয়ুব বাচ্চু।