লোকমুখে গল্পটা ছড়িয়ে পড়েছিল। এক বিদেশিনীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেম! অমর সেই প্রেম নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমা ‘থিংকিং অব হিম’, বানিয়েছেন আর্জেন্টিনার খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার পাবলো সিজার। সেখানে ভারতীয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নায়ক, আর্জেন্টাইন লেখিকা ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো নায়িকা। অভিনয়ও করেছেন যথাক্রমে এক ভারতীয় ও এক আর্জেন্টাইন অভিনয়শিল্পী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকীতে ছবিটা মুক্তি পেয়েছিল।
ভ্রমণপিপাসু রবীন্দ্রনাথ যাচ্ছিলেন পেরু, দেশটির স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপনে। ১৯২৪ সালের কথা। পথে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাকে রাখা হয় ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর বাড়িতে। ‘গীতাঞ্জলি’র ফরাসি অনুবাদ পড়া ওকাম্পো ততদিনে কবির গভীর অনুরাগী হয়ে উঠেছিলেন। কবিকে কাছে পাওয়া যেন এই নারীর জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। ৬৩ বছর বয়সী কবির সেবাযত্ন করে তাকে সুস্থ করে তোলেন ৩৪ বছরের ওকাম্পো। তার জীবনবোধ, দর্শন, সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গি সমৃদ্ধ করে তোলে এই নারীকে। দুই মাসের অতিথিকে সারা জীবনের জন্য হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন ওকাম্পো। দুজনার মধ্যে গড়ে ওঠে একটি নির্ভরশীলতার সম্পর্ক। কবি ওকাম্পোর নাম দেন বিজয়া। পরে তো তাকে নিয়ে লেখেন ‘পূরবী’ কাব্যগ্রন্থটি। একে কি প্রেম বলা যায়? এ নিয়েই সিনেমা ‘থিংকিং অব হিম’।
সিনেমাটি এরই মধ্যে দেখে ফেলেছেন অনেকেই। যারা দেখেননি, আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী হতে পারে ছবিটি দেখার দারুণ এক উপলক্ষ। সেখানে দেখা যাবে, এখনকার আর্জেন্টিনার এক তরুণ স্কুলশিক্ষককে। যিনি শান্তিনিকেতনে গিয়ে কবির প্রবর্তন করা শিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে তার গল্প শুরু করেন। রঙিন বর্তমান থেকে ফ্ল্যাশব্যাকে কাহিনি চলে যায় অতীতে। সেখানে রাইমা সেনকে পাওয়া যাবে কমলি নামের একটি চরিত্রে। ছবিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ভারতীয় অভিনেতা ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ওকাম্পোর ভূমিকায় আর্জেন্টাইন অভিনেত্রী এলিওনোরা ওয়েক্সলার। নায়ক-নায়িকাকে সেখানে নিকটবর্তী হতে দেখা যায়নি। বরং দেখা গেছে, কবিগুরুর আন্তর্জাতিক চিন্তা, সামাজিক ভাবনা, প্রকৃতির সঙ্গে কবিতার যোগ, জীবনের সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্ক নিয়ে কথায় মুগ্ধ হয়েছেন ওকাম্পো।
ছবিটি দেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে সমালোচকদের কেউ কেউ লিখেছেন, বারবার অতীত-বর্তমানের ভ্রমণ দর্শককে সিনেমা দেখায় ছন্দাহত করতে পারে। যেহেতু সিনেমায় ‘প্রেম’ বলতে সে রকম কিছুই দেখানো হয়নি, তাই দুজনার সম্পর্কের রসায়ন দৃশ্যমান করতে রাখা যেন আরও অনেক কিছুই। বয়সের দীর্ঘ ব্যবধানে যে প্রেম, নির্মাতা সেটাকে দেখিয়েছেন যেন গুরু-শিষ্যর সম্পর্কের আদলে। সেখানে কয়েকবার আবেগাপ্লুত হয়ে তাদের পরস্পরকে আলিঙ্গন করতে দেখা গেছে। জাহাজে ওঠার আগে বিদায়ের সময় কবিরূপী ভিক্টর সস্নেহে চুমু দিয়েছেন ওকাম্পো চরিত্রের এলিওনোরার কপালে।
‘থিংকিং অব হিম’ ভারতের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় তার দ্বিতীয় সিনেমা। ছবিটি শেষ করতে প্রায় পাঁচ বছর সময় নিয়েছিলেন তিনি।
কলি