ভারতের ২১ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ছাড়া অন্যান্য স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর এসেছে।
শুক্রবার ভোট হয় অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, রাজস্থান, সিকিম, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরা, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, পশ্চিমবঙ্গ, আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ, জম্মু ও কাশ্মীর, লাক্ষাদ্বীপ ও পদুচেরিতে।
পশ্চিমবঙ্গে অস্থিরতা
পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার-জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ারে চলে ভোট গ্রহণ। ওই তিন আসন থেকে নির্বাচন কমিশনে জমা পড়ে সাড়ে চার শরও বেশি অভিযোগ। বেলা ২টা পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে মোট ৪৬৮টি অভিযোগ জমা পড়ে।
ভোট শুরুর আগে থেকেই সংঘাতের খবরও সামনে আসে। তিন কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয় কোচবিহারে। কোচবিহার থেকেই কমিশনের দপ্তরে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে বেলা ২টা পর্যন্ত অভিযোগের সংখ্যা ছিল ২১৮। এ ছাড়া আলিপুরদুয়ার কেন্দ্র থেকে ১৫০টি অভিযোগ এসেছে। আর জলপাইগুড়ি কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ১০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে।
কমিশনের কাছে বিজেপির মণ্ডল এলাকার সহসভাপতি দ্বিজেন চন্দ্র দাস অভিযোগ করেন, কোচবিহারের ৪৩ নম্বর বুথে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির কর্মকর্তাদের অপহরণ করছে। তাদের বাইক ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বিজেপির ক্যাম্পও ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তাদের ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না। কমিশনের পক্ষ থেকেও এসব বিষয় জানতে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
অন্যদিকে বারোকোদালি গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপি বুথ সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তারা অভিযোগে বলেছে, তৃণমূল কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আবার জলপাইগুড়ির ডাবগ্রামের ফুলবাড়ির ৭৩-৭৬ নম্বর বুথে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল অভিযোগ করেছে, গেরুয়া শিবিরের কর্মীরা তৃণমূল কর্মীদের অপহরণ করেছে। তবে কোনো রকম অপহরণের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।
নির্বাচনে প্রথম দফায় ১৬ কোটি ৬৩ লাখের বেশি ভোটার প্রায় দুই লাখ নির্বাচনি কেন্দ্রে ভোট দেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। ভারতের বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গাদকারি, ভূপেন্দ্র ইয়াদভ, কিরেন রিজিউ, জিতেন্দ্র সিং, অর্জুন রাম মেঘওয়াল ও সারবানান্দ সনোওয়াল প্রথম ধাপে লড়েন। কংগ্রেসের গৌরব গগোই, ডিএমকের কানিমোঝি ও বিজেপি তামিলনাড়ুর প্রধান কে আন্নামালাইও নির্বাচনি লড়াইয়ের প্রথম ধাপে অংশ নেন।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) ৪০০ আসন পাওয়ার আশা করছে। অন্যদিকে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া এ নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে।
শুক্রবার যে ১০২ আসনে লড়াই হয়েছে, সেই আসনগুলোর ২০১৯ সালের হিসাব ছিল ভিন্ন। সে সময় এনডিএ জিতেছিল ৪১টি। আর সে সময়ের বিরোধী জোট ইউপিএ জিতেছিল ৪৫টি।
কংগ্রেস শুক্রবার দাবি করেছে, পশ্চিম উত্তর প্রদেশে মোদি সরকারের ব্যর্থতার কারণে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আখচাষিদের অবহেলা করেছে মোদি সরকার। এ ছাড়া প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনাও ঘটেছে।
ইন্ডিয়া জোট ২৭২ আসন জিতবে
কংগ্রেস নেতা শচিন পাইলট বলেছেন, বিরোধী জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে, ২৭২ আসন পাবে লোকসভা নির্বাচনে। রাজস্থানে বিজেপির চেয়েও বেশি আসন পাবে কংগ্রেস।
তিনি বলেন, ‘আমি যা দেখছি তাতে পুরো দেশ ও রাজ্যগুলোতে পরিবর্তনের আবহাওয়া বিরাজ করছে। আমি মনে করছি কংগ্রেসের ফলাফল আগের চেয়ে ভালো আসবে এবং ৪ জুন ইন্ডিয়া জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। ২০০, ৩০০, ৪০০, ৫০০ আসন পারের নিশ্চয়তা দেওয়ার কোনো মানে হয় না। শুধু বলতে চাই রাজস্থানে আমরা বিজেপির চেয়ে বেশি আসন পাব এবং ইন্ডিয়া জোট ২৭২ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ধাপ পার করবে।’
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেছেন, বিজেপি চার শটিরও বেশি আসনে জয়লাভ করবে। কংগ্রেসের ৪০টি আসন পেতেই কষ্ট হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘কংগ্রেস আজ আগের মতো ব্যালট পেপারে ফিরে যেতে চায়, কারণ তখন নির্বাচনি কেন্দ্রে ডাকাতি হতো। জাল ভোট দেওয়া হতো। কিন্তু আজ ইভিএমের কল্যাণে স্বচ্ছতা রয়েছে। কোন সরকার তা ব্যাপার না, নির্বাচন কমিশন সব সময়ই ভালো কাজ করেছে...আর এটিই আমাদের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি।’
কেরালায় পাঁচ নির্বাচন কর্মকর্তা বরখাস্ত
এদিকে কেরালায় পাঁচ নির্বাচন কর্মকর্তাকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে। সিপিআই-এম-এর এক পোলিং এজেন্ট ৯২ বছর বয়সী এক নারীকে বাড়ি থেকে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। সেটিরই জেরে বরখাস্ত হয়েছেন ওই ৫ জন। ভারতের নির্বাচনি বিধি অনুসারে, ৮৫ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ বাড়ি থেকে ভোট দিতে পারবেন, কিন্তু কোনো পোলিং এজেন্ট বা দল কোনো ভোটারকে ভোটাধিকার প্রয়োগে সহায়তা করতে পারবে না।
চিনদুয়ারার মেয়রের সুর পরিবর্তন
চিনদুয়ারার মেয়র ভিকরাম আহাকে সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি এখন কংগ্রেসের নকুল নাথকে ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। সামাজিক মাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার পরপরই আমি দমবন্ধ অবস্থা অনুভব করেছি। আমার মনে হয়েছে চিনদুয়ারা গড়ে তোলায় ভূমিকা রেখেছে এমন ব্যক্তির প্রতি আমি ন্যায্য আচরণ করছি না।’
আহাকে আরও বলেন, ‘আমি জানি না আমার কী হয়েছে। কিন্তু আমি যদি আমার নেতা কামাল নাথ ও নকুল নাথের পাশে না দাঁড়াই… তারা আমার জন্য অনেক করেছেন… আমরা ভোটারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যাতে তারা নকুল নাথের (এবং তার বাবা কামাল নাথ) বিপুল ব্যবধানে বিজয় নিশ্চিত করেন।’