হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের মধ্যপ্রাচ্য সফর চলাকালে ইসরায়েলের ট্যাংক ও জঙ্গিবিমান শনিবার (১৮ মে) রাতভর গাজা উপত্যকা ও সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
হোয়াইট হাউস সূত্র জানায়, রবিবার ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুলিভানের বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা। সেখানে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে ব্যাপক হামলার পরিবর্তে হামাসের নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলার পরামর্শ দিতে পারেন সুলিভান।
রাফাহ শহরকে হামাসের শেষ শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করে ইসরায়েল সেখানে হামলা জোরদার করেছে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের অনেকেই হামলার ভয়ে শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া গুটিকয়েক স্থানের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গাজার উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়া শহরের অলিগলিতে অভিযান জোরদার করেছে ইসরায়েল। সংঘর্ষ চলাকালে এর আগে এই এলাকাটি একবার খালি করেছিল বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, জাবালিয়ায় তাদের সামরিক অভিযান সুনির্দিষ্ট এবং এর লক্ষ্য শহরটি হামাসের পুনর্নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা। গাজায় আটটি ঐতিহাসিক শরণার্থী শিবিরের একটি জাবালিয়া।
ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রবিবারের সংঘর্ষে দুজন সৈন্য নিহত হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্যকর্মী ও হামাস জানিয়েছে, রবিবারের হামলায় কমপক্ষে ২৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় গাজা উপত্যকার নুসেইরাত এলাকার একটি বাড়িতে হামলায় ওই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
গাজা সিভিল ইমার্জেন্সি সার্ভিস এক বার্তায় জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি সৈন্যদের হামলায় নিহত ১৫০ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। একই সময়ে ইসরায়েলের বিমান ও স্থল হামলায় কমপক্ষে ৩০০ বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা অবশ্য লাশ গণনায় বেসামরিক ব্যক্তি ও যোদ্ধাদের মধ্যে কোনো প্রভেদ করেননি।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৩৫ হাজার ৩৮৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সাহায্য সংস্থার পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে, গাজায় ব্যাপক দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং স্বাস্থ্যসামগ্রী ও জ্বালানির সংকট দেখা দিতে পারে।
ইসরায়েলের যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর পদত্যাগের হুমকি
এদিকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বেনি গান্টজ সতর্ক করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকার জন্য যুদ্ধপরবর্তী পরিকল্পনা প্রকাশ না করলে তিনি পদত্যাগ করবেন।
বেনি গান্টজ ছয়টি ‘কৌশলগত লক্ষ্য’ অর্জনের পরিকল্পনার জন্য ৮ জুন সময়সীমা নির্ধারণ করেন। এর মধ্যে রয়েছে গাজায় হামাস-শাসনের অবসান এবং এই অঞ্চলের জন্য একটি বহুজাতিক বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
বেনি গান্টজ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘আপনি যদি ব্যক্তির ওপরে জাতিকে স্থান দেন, তাহলে এই সংগ্রামে আমাদের অংশীদার হিসেবে পাবেন, আর যদি ধর্মান্ধতার পথ বেছে নিয়ে দেশকে তলানির দিকে নিয়ে যান, তাহলে আমরা পদত্যাগে বাধ্য হব।’
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অবশ্য বেনি গান্টজের মন্তব্যকে ধোঁয়াশাপূর্ণ বলে বাতিল করে দিয়ে বলেছেন, এর মানে হলো ইসরায়েলের জন্য পরাজয়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়ভ গ্লন্তের বক্তব্যের কয়েক দিনের মধ্যে গান্টজ এ মন্তব্য করলেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে প্রকাশ্যে জানাতে হবে যে গাজায় সামরিক বা বেসামরিক শাসন কর্তৃত্ব হাতে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা ইসরায়েলের নেই।
দ্রুত ত্রাণ সরবরাহের আহ্বান
এদিকে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরএডব্লিউ শনিবার সতর্ক করে বলেছে, গাজায় স্থলপথে নিরাপদ ত্রাণ সরবরাহ রুট পুনরায় খুলতে ব্যর্থ হলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি দেখা দেবে। তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু এ কথা জানিয়েছে।
ইউএনআরএডব্লিউ কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজ্জারিনি বলেছেন, গাজা ক্রসিং পুনরায় খোলা না হলে শরণার্থীদের বঞ্চনা ও মানবিক বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো সম্ভব হবে না।