
স্বেচ্ছামৃত্যুর যন্ত্র সারকো পডের (বেদনাহীন মৃত্যু ঘটানোর যন্ত্র) মাধ্যমে সংঘটিত বিশ্বের প্রথম স্বেচ্ছামৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক ফ্লোরিয়ান উইলেটও স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করে নিলেন।
৫ মে জার্মানিতে তিনি বিশেষ এই পদ্ধতিতে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৪৭ বছর।
মঙ্গলবার (৩ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সুইজারল্যান্ডের এক জঙ্গলে সারকো পডের মাধ্যমে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করেন ৬৪ বছর বয়সী এক নারী। সে সময় ঘটনাস্থলে ওই নারী ছাড়া উপস্থিত থাকা একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন ফ্লোরিয়ান উইলেট।
এ ঘটনায় সেসময় বেশ তোলপাড় তৈরি হয়। ঘটনার পরপরই উইলেটকে আটক করে সুইস পুলিশ। যদিও শেষ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আনেনি আদালত। তবে, তদন্তের জন্য তাকে ৭০ দিনের বিচারপূর্ব আটক রাখা হয়।
সারকো পড বা সুইসাইড পড হলো বিশেষভাবে নকশা করা ক্যাপসুল আকৃতির একটি যন্ত্র, যা ব্যবহার করে দ্রুত ও ‘বেদনাহীন’ মৃত্যু নিশ্চিত করা যায়।
এটি দেখতে একটি ছোট, ক্যাপসুলের মতো, যেখানে একজন ব্যক্তি শুয়ে থাকার মতো জায়গা রয়েছে। এটির মধ্যে নিয়ন্ত্রিত অক্সিজেনের পরিবেশ তৈরি করা হয়। ক্যাপসুলে ঢোকার পর ব্যবহারকারী একটি বোতাম চাপলেই ভেতরের অক্সিজেন দ্রুত কমিয়ে নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে পূর্ণ হয়ে যায়। এতে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে যেহেতু নাইট্রোজেন স্বাদ ও গন্ধহীন গ্যাস, তাই এতে ঘুমিয়ে পড়ার মতো মৃত্যু হয়—ব্যথাহীন, নিঃশব্দ ও দ্রুত—এমনটাই দাবি উদ্ভাবকের।
ডা. উইলেটের আত্মহত্যা-অধিকার সংগঠন দ্য রিসোর্ট এক বিবৃতিতে জানায়, আটক থাকার সময়ের মানসিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়েন তিনি। জীবনের শেষ সময়টুকু তীব্র মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে কেটেছে। মৃত্যুর আগে একবার একটি ভবনের তৃতীয় তলা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন।
পরে জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুস্থ হন। এ ঘটনার পর থেকেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একটি দলের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছিল তাকে।
পরবর্তীতে, ৫ মে জার্মানিতে সহায়ক মৃত্যুর মাধ্যমে তার জীবনাবসান ঘটে। সুইসাইড পডের উদ্ভাবক এবং বিশ্বব্যাপী স্বেচ্ছামৃত্যুর প্রবক্তা ফিলিপ নিটশকে বিবিসিকে বলেন, ‘জীবনের শেষ কয়েক মাসে ফ্লোরিয়ান উইলেট এমন সব মানসিক ভার বহন করেন, যা একজন মানুষের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও অসহনীয়।’
সুইস প্রসিকিউটর অফিস এখনো এই মৃত্যুর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
‘সার্কো পড’ নামে পরিচিত ওই যন্ত্রটি ড্রাগ কিংবা চিকিৎসকের সহায়তা ছাড়াই স্বেচ্ছামৃত্যু সম্ভব করে তোলে—এমনটাই দাবি নির্মাতাদের। তবে সমালোচকেরা আশঙ্কা করেন, প্রযুক্তিনির্ভর এই যন্ত্র আত্মহত্যাকে ‘আকর্ষণীয়’ করে তুলতে পারে এবং এতে চিকিৎসকদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া হয়, যা বিপজ্জনক।
সুইজারল্যান্ডে নির্দিষ্ট কিছু শর্তে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি থাকলেও তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। ইউরোপের অধিকাংশ দেশ এবং যুক্তরাজ্যে এখনো এই পদ্ধতি অবৈধ। তবু প্রতি বছর বহু মানুষ সুইজারল্যান্ডে গিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিচ্ছেন।
সুলতানা দিনা/