ছবি : সংগৃহীত
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানি হবে আগামী রবিবার (২১ জুলাই)।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুই শিক্ষার্থীর লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। বিষয়টি প্রধান বিচারপতি ওয়াবদুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চে শুনানির জন্য কার্যতালিকার ৩ নম্বরে রয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, রবিবার শুনানি এগিয়ে আনার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করবে। কিন্তু একই বিষয়ে আরেকটি লিভ টু আপিলের প্রেক্ষাপটে আদালত রবিবার শুনানির জন্য ধার্য করেছেন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বিকেলে লিভ টু আপিল করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুই শিক্ষার্থী। আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেয়ে গত মঙ্গলবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি ১৪ জুলাই বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। রায়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত ২০১৮ সালের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ২৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা পরিপত্রটি আইনগত কৃর্তত্ববহির্ভূত, ভিত্তিহীন ও অবৈধ ঘোষণা করা হলো। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা বলবৎ রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো। এ ছাড়া ২০১২ সালে করা ২৩৫ নম্বর রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় ও আদেশ; ২০১৩ সালের ২০৬২ নম্বর লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগে রায়ে তা বহাল ও সংশোধিত আদেশ এবং ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারির সরকারি অফিস আদেশ (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনির কোটা) অনুসারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি-নাতনি, জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কোটাসহ (যদি অন্যান্য থাকে) সব কোটা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে পরিপত্র প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হলো।
রায়ে হাইকোর্ট আরও বলেছেন, নির্ধারিত শ্রেণিগুলোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কোটা পরিবর্তন ও হার কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে এই রায় বিবাদীদের (সরকারের) জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্যপদ পূরণ করার ক্ষেত্রে বিবাদীদের (সরকারের) স্বাধীনতা থাকবে।
২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা নিয়ে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সাতজন সন্তান। চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৫ জুন নির্দেশনাসহ রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেন। এ রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরই মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে দুজন ৯ জুলাই আপিল বিভাগে এ মামলায় পক্ষভূক্ত হন। ১০ জুলাই শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা ঘোষণা করে পরবর্তী শুনানি ৭ আগস্ট ধার্য করেন।