![বেসরকারি শিক্ষকদের অবসরকালীন সুবিধা ৬ মাসের মধ্যে দিতে হবে](uploads/2024/02/22/1708602239.High-court.gif)
এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫ লাখের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারীকে অবসরের ছয় মাসের মধ্যে অবসরকালীন সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজি জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
আদালত বলেন, শিক্ষকদের রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট (অবসরকালীন সুবিধা) পেতে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। এই হয়রানি থেকে তারা কোনোভাবেই পার পান না। একজন শিক্ষক কত টাকা বেতন পান, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। এজন্য তাদের অবসরভাতা ছয় মাসের মধ্যে দিতে হবে।
এই অবসরভাতা পাওয়ার জন্য শিক্ষকরা বছরের পর বছর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে পারেন না বলেও মন্তব্য করে আদালত।
অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া বলেন, 'সারাদেশে এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় ৫ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী অবসরকালীন সুবিধা পেতে ২০১৯ সালে একটি রিট দায়ের করেছিলাম। রিটে বলা হয়, ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন থেকে ছয় শতাংশ কেটে নেওয়া হতো। সেই কর্তনকৃত টাকাসহ সুবিধা অবসরের পর দেওয়া হতো। এই অবস্থায় ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন করে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হলেও ছয় শতাংশের যে সুবিধা দেওয়া হতো সেটাই বহাল রাখা হয়। যে কারণে আমরা রিট দায়ের করে বলেছি, যাতে ১০ শতাংশের সুবিধা দেওয়া হয়। এরপর এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সেই রুলের শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ের আদালত বলেছেন, ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হলেও তাদের যেন বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে অবসরের ছয় মাসের মধ্যে যেন অবসরকালীন সুবিধা দেওয়া হয়।'
ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া বলেন, 'বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধানমালা, ১৯৯৯-এর প্রবিধান-৬ এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা, ২০০৫ এর প্রবিধান-৮ অনুযায়ী শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের দুই শতাংশ এবং চার শতাংশ কাটার বিধান ছিল। যার বিপরীতে শিক্ষকদের ট্রাস্টের তহবিল থেকে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কিছু আর্থিক সুবিধা দেওয়া হতো। কিন্তু ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল উল্লিখিত প্রবিধানমালাগুলোর শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের দুই শতাংশ এবং চার শতাংশ কাটার বিধানগুলো সংশোধনপূর্বক চার শতাংশ এবং ছয় শতাংশ করে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের দুই শতাংশ এবং চার শতাংশ কাটার পরিবর্তে চার শতাংশ এবং ছয় শতাংশ কাটার বিধান করা হলেও উক্ত অতিরিক্ত অর্থ কাটার বিপরীতে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কোনো বাড়তি আর্থিক সুবিধার বিধান করা হয়নি। পরে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারীদের এপ্রিল-২০১৯ মাসের বেতন থেকে ছয় শতাংশ এবং চার শতাংশ টাকা অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টে জমা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন। ফলে অতিরিক্ত অর্থ কাটার বিপরীতে কোনো আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি না করেই শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ছয় শতাংশ এবং চার শতাংশ টাকা কাটার আদেশের কারণে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক ও কর্মচারীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত অর্থ কাটার আদেশ বাতিল করার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শিক্ষক ও কর্মচারীরা ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন।'
অমিয়/