দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় সমম্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের ৮৭ শতাংশ মজলুম জনগণের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করা। আর তা করার জন্য মানব সৃষ্টির মহান উদ্দেশ্য প্রতিপালন করা, সকল ধর্মের অনুশাসন মেনে চলা জরুরি। পাশাপাশি ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ,’ ‘দেশকে গড়তে হলে সবার আগে নিজকে গড়ো’, ‘নিজকে শুদ্ধ করি-দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ি’, ‘দুর্নীতি করব না, কাউকে দুর্নীতি করতে দিব না’ ইত্যাদি অনুশাসন মেনে চলা দরকার।
তিনি বলেন, পরকালীন মুক্তির কথা চিন্তা করে দেশের এই ক্রান্তিকালে নিজের ঘর, পরিবার, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, পরিচিত দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করা, দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে সম্পর্ক বর্জন করা প্রতিটি মানুষের ঈমানি দায়িত্ব।
শনিবার (৩ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সবার আগে দেশ। মজলুম জনগণের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা দুর্নীতিমুক্ত বিশ্বমানের বাংলাদেশ গড়ার অন্তরায় দ্বিধা-দ্বন্ধ, বিভক্তি-বিভ্রান্তি, অপব্যাখ্যা-অপপ্রচার, পারস্পরিক কাদা-ছোড়াছুড়ি ও দলীয় কোন্দল, জেদ-অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ বর্তমানে মহামারি রূপ ধারণ করেছে। বেঈমানি আমাদের ঈমানের নূরকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। স্বার্থপরতা হলো মানবজাতির নিকৃষ্টতম অপরাধ।
সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, লোভ, মোহ, আত্মপ্রীতি, স্বজনপ্রীতি, আত্মগরিমা, আত্মগৌরব, আত্মঅহংকার প্রভৃতি রোগে যেন সকল মানুষ আক্রান্ত। পুরো শরীরে পচন ধরেছে, যার দুর্গন্ধ গোটা সমাজ রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে।
সংস্কারের বিরোধীগণ নিজেদের সংস্কার থেকে পর্যুদস্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশৃঙ্খলাপূর্ণ ও ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দায়িত্বশীল দেশপ্রেমিকদের বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমে বারবার জীবন দিয়ে স্বৈরশাসক পরিবর্তন করার চেয়ে পুরো শাসন ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে এমনভাবে পরিবর্তন করা যেন স্বৈরশাসক তৈরিই হতে না পারে। মাত্র ১৩ শতাংশ সুযোগসন্ধানী, দালাল, চাটুকার, লুটেরা, মাফিয়া-সিন্ডিকেট, অন্ধ দলদাস, চাঁদাবাজ, ধান্দাবাজ, দুর্বৃত্তদের থেকে দেশ বাঁচাতে ৮৭ শতাংশ মজলুম জনগণকে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য জরুরি।
তিনি বলেন, চিরদিনের জন্য স্বৈরশাসকমুক্ত নৈতিক মানবিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তির বিধান, সরকার পদ্ধতির সংস্কার, রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার, ভোটার ক্লাবের মাধ্যমে প্রশাসনমুক্ত স্বচ্ছ ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, আইন ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন করা, শিক্ষাব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নের জন্য জাতীয় শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন, সংবিধান সংশোধন ও সংস্কার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তকরণ, সম্পূর্ণ স্বাধীন দুর্নীতিদমন মন্ত্রণালয় গঠন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার ও পুনর্গঠন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন সংস্কার ও পূর্নগঠন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ দুর্নীতিমুক্ত করা, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইকে বিশ্বমানের গঠনে রূপান্তর করা, গণমাধ্যমের সংস্কার এবং কলমীলতা মার্কেট ও ভাসানটেক প্রকল্পের সমস্যা সমাধানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদের মো. আব্দুর রহিমের সভাপতিত্বে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ (ঢাকা) মো. রফিকুল ইসলাম, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, অধ্যাপক সৈয়দ মো. শামসুদ্দিন, নুরুল হুদা চৌধুরী মিলু, মহান মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র গেরিলা কমান্ডার ড. শফিকুল ইসলাম কানু, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. প্রকৌশলী লুৎফর, ড. প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, মেজর (অব.) আমিন আহমেদ আফসারী, মেজর (অব.) নুরুল ইসলাম নূর, অধ্যক্ষ এমআর করিম, নুরতাজ আরা ঐশীসহ প্রমুখ।বিজ্ঞপ্তি