ঢাকা ৯ মাঘ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশিদের সেবা দেবেন ত্রিপুরার হোটেলমালিকরা

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ পিএম
বাংলাদেশিদের সেবা দেবেন ত্রিপুরার হোটেলমালিকরা
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে আসা কোনো ব্যক্তিকে ত্রিপুরার হোটেলে রাখা হবে না- এমন সিদ্ধান্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শিথিল করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্যের কিছু হোটেল ব্যবসায়ী ও কর্মচারী জানিয়েছেন, ‘বড্ড বাড়াবাড়ি সিদ্ধান্ত ছিল’। তারা বলেছেন বিপুল ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছিল হোটেল ব্যবসা। নিষেধাজ্ঞাটি বাংলাদেশি রোগী বা তার পরিবারের সদস্যদের জন্য আর বলবৎ নেই।

হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের সদস্যরা হামলা করেছিল আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে। দূতাবাসে হামলার রেশ ধরে কূটনৈতিক পরিস্থিতি আরও গরম হয়। ভারত সরকার এতে দুঃখ প্রকাশ করে। এরপর ত্রিপুরার হোটেলে বাংলাদেশিদের থাকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। তবে ত্রিপুরার প্রধান বিরোধীদল সিপিআইএমের তরফে দূতাবাসে হামলার কড়া নিন্দা জানানো হয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহাও নিন্দা জানান।

এরপর আগরতলাসহ রাজ্যের অন্যান্য এলাকার হোটেলমালিকদের সিংহভাগ ‘বাংলাদেশিদের নিষিদ্ধ’ করার বার্তায় ব্যবসার ক্ষতির আশঙ্কায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

সংবাদপত্র ‘ত্রিপুরা দর্পণ-এর প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘শাসকদলের মদতপুষ্ট একটি প্রভাবশালী সংগঠনের চাপে পড়ে সারা রাজ্যে হোটেল এবং রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশিদের স্থান ও খাবার না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অল ত্রিপুরা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এই সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েন অ্যাসোসিয়েশনের অতি উৎসাহী কর্মকর্তারা। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে রাজ্যের বেশির ভাগ হোটেল ও রেস্টুরেন্টের মালিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।’

বাংলাদেশিদের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে বলেই জানিয়েছেন একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী ও কর্মী। তারা বলেছেন এ রাজ্যে বিগত বাম জমানায় এমন হয়নি। তারা বলেছেন, সবাই ভালো করেই জানেন, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার জন্য কোনো ভ্রমণ ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশ থেকে কোনো পর্যটক আসার প্রশ্নই উঠে না। বাংলাদেশ থেকে শুধু মেডিকেল ভিসা নিয়ে যারা ত্রিপুরায় আসছেন তাদের জন্য হোটেলে থাকা নিষিদ্ধ করার যুক্তি অমানবিক। তীব্র সমালোচনার মুখে বাংলাদেশিদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তটি শিথিল করতে বাধ্য হয় হোটেল অ্যাসোসিয়েশন।

জানা গেছে, হোটেলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে ত্রিপুরাজুড়েই ক্ষোভ ছড়াচ্ছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাসোসিয়েশন ঘোষণা করেছে মেডিকেল ভিসাধারী ব্যক্তিদের এখন স্বাগত জানানো হবে এবং পরিষেবা দেওয়া হবে।

ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৪ এএম
আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৫ এএম
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
ছবি: খবরের কাগজ

দেশের অন্যতম নৌরুট রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় ঘন কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রী, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) রাত ৩টা ৪০ মিনিট থেকে ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। 

জানা গেছে , ঘন কুয়াশার কারণে বুধবার সন্ধ‌্যা থে‌কেই এ রু‌টে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। পরে রাত ৩টা ৪০ মিনিটের পর থে‌কে কুয়াশার মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করলে ফেরি চলাচলের বিকন বাতি ও মার্কিং পয়েন্টের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। এ সময় দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য এই নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো.সালাউদ্দিন বলেন, এ রুটে বর্তমা‌নে ১২‌টি ফে‌রি চলাচল ক‌রে। দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। কুয়াশার মাত্রা কেটে গেলে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করা হবে। 

মেহেদী/

চুরি যাওয়া অর্থ ফেরাতে বিশ্বনেতাদের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:০৭ পিএম
আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১২ পিএম
চুরি যাওয়া অর্থ ফেরাতে বিশ্বনেতাদের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
ডব্লিউইএফ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

চুরি হয়ে যাওয়া অর্থ উদ্ধারে আন্তর্জাতিক মিত্রদেরকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (২২ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনের (ডব্লিউইএফ) দ্বিতীয় দিনে দেওয়া বক্তব্যে নেতাদের প্রতি তিনি এই আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা জার্মানির ফেডারেল চ্যান্সেলারির প্রধান ও ফেডারেল মিনিস্টার ফর স্পেশাল টাস্কস ওল্ফগ্যাং স্মিড, বেলজিয়ামের রাজা কিং ফিলিপ, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা, সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল ডিপার্টমেন্ট ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিস, দুবাই কালচার অ্যান্ড আর্টস অথরিটির চেয়ারপারসন শেখ লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। খবর ইউএনবির।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভার ফাঁকে অন্যান্যের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন।

প্রতি বছর জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের পার্বত্য শহর দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ড. ইউনূস অতীতে বহুবার এখানে এসেছেন। অতীতে তার আলোচনায় বেশির ভাগই ছিল সামাজিক ব্যবসার শক্তি, ক্ষুদ্রঋণ শিল্প এবং এটি কীভাবে বিস্ময়করভাবে কাজ করছে এবং একটি আত্ম-ধ্বংসাত্মক সভ্যতাকে বাঁচানোর জন্য তার দারুণ ‘থ্রি জিরোস’ তত্ত্ব তুলে ধরেছেন। সামাজিক ব্যবসা এখন ১ কোটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে, যা ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির প্রতিনিধিত্ব করে।

অধ্যাপক ইউনূস এখানে এবার ভিন্ন ভূমিকায় এসেছেন উল্লেখ করে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, তিনি এখন সরকারপ্রধান। তিনি এখনো এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় বক্তাদের একজন। তবে এবার তিনি খুব কমই তার মূল ভাবনা নিয়ে কথা বলেন, উল্লেখ করে আলম বলেন, ড. ইউনূস একটি নতুন বাস্তব জীবনের গল্প নিয়ে এসেছেন। কীভাবে বাংলাদেশের তরুণরা একটি ‘স্বৈরশাসক’কে হটিয়েছিল, কীভাবে তাদের চিন্তাধারা একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরি করছে এবং কীভাবে দেশ পুনর্গঠিত হচ্ছে।

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উপসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনামলে বাংলাদেশে কীভাবে ‘প্রকাশ্য দিবালোকে ডাকাতি’ সংঘটিত হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে শীর্ষ বিশেষজ্ঞ, থিংক ট্যাংক, সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। আজাদ মজুমদার জানান, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) লামিয়া মোরশেদ, জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

লুৎফে সিদ্দিকী চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সরকারের প্রচেষ্টা সম্পর্কে জার্মান মন্ত্রী ভোল্ফগ্যাং স্মিডকে অবহিত করে বলেন, সরকার এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে একটি সম্পদ পুনরুদ্ধার কমিটি এবং একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। তিনি বলেন, চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সরকার প্রাথমিকভাবে শীর্ষ ২০ অর্থ পাচারকারীকে টার্গেট করেছিল।

দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জার্মান মন্ত্রীকে বলেন, ‘আমরা যখন নতুন বাংলাদেশের কথা বলি, তখন পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের কথাও বলি।’ প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে জার্মানির সমর্থন কামনা করে দেশটির মন্ত্রীর সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্র নিয়েও আলোচনা করেন। জার্মান মন্ত্রী বলেন, আগামী এপ্রিলে জার্মানির একটি নতুন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নেপালের জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে ভারত, নেপাল ও ভুটানকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ একটি অর্থনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চায়। তিনি বলেন, ‘নেপাল বিদ্যুৎ বিক্রি করতে সত্যিই প্রস্তুত এবং বাংলাদেশ তাদের জন্য একটি ভালো বাজার। এটি প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে পারে।’

প্রধান উপদেষ্টা সুইস ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিসের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও জলবায়ু অর্থায়নসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে বাংলাদেশের কার্বন ধরে রাখার প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে সুইজারল্যান্ডকে অনুরোধ জানান। ড. ইউনূস সুইজারল্যান্ডকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগান। কারণ, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকই ২৭ বছরের কম বয়সী তরুণ।

জার্মান মন্ত্রী ও সুইস কাউন্সিলরের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা করেন। বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ এবং কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে অবহিত করা হয়, বেলজিয়ামের একজন যুবরাজের নেতৃত্বে একটি গ্রুপের চালু করা একটি ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি কীভাবে আফ্রিকার দেশটিতে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন সংরক্ষণের আকার প্রসারিত করতে সহায়তা করেছে। প্রিন্স ইমানুয়েল ডি মেরোডের প্রতিষ্ঠিত একটি গ্রুপ সংঘাতপ্রবণ কঙ্গোলিজ অঞ্চলে ক্ষুদ্রঋণ চালু করেছিল। তিনি বর্ণনায় বলছিলেন, সংঘাতের পরে কঙ্গোলিজ বন এখন ব্রিটেনের আকারের দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আর ক্ষুদ্রঋণ সেখানে ২১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ প্রাক্তন যোদ্ধা। তিনি বলেন, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি এ অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে বড় ভূমিকা পালন করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিনাওয়াত্রার সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট এবং জাহাজ চলাচলসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধান করতে চাই, কারণ আরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে।’ বিশ্বের অন্যতম কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী সিনাওয়াত্রা বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের পর দুই দেশের মধ্যে তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, থাই প্রধানমন্ত্রীর বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রা ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার বড় ভক্ত ছিলেন। দারিদ্র্য, সম্পদের কেন্দ্রীয়করণ, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে একটি আত্ম-বিধ্বংসী সভ্যতাকে বাঁচানোর ‘থ্রি জিরো’ ধারণা সম্পর্কে থাই প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা সিনাওয়াত্রাকে বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৫৮টি দেশে প্রায় ৫ হাজার থ্রি জিরো ক্লাব রয়েছে। থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছরের এপ্রিলে ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি বিমসটেকের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছেন। বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাতটি দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মায়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড নিয়ে বিমসটেক গঠিত।
এর আগে গত সোমবার বিমসটেক সদর দপ্তর তথ্য জানিয়েছে, এটি সাতটি বিস্তৃত খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা অনুসরণ করে। এগুলো হলো কৃষি ও খাদ্য সুরক্ষা, কানেক্টিভিটি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, নিরাপত্তা এবং বাণিজ্য-বিনিয়োগ ও উন্নয়ন। এই সহযোগিতাটি ৮টি উপ-ক্ষেত্রকেও অন্তর্ভুক্ত করে- ব্লু ইকোনমি, মাউন্টেন ইকোনমি, জ্বালানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, দারিদ্র্যবিমোচন, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়ন।

প্রধান উপদেষ্টা আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে এবং এর পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি থাইল্যান্ডের সমর্থন কামনা করেন।

ডব্লিউইএফ সম্মেলনে যোগ দিতে চার দিনের সরকারি সফরে গত সোমবার দাভোসে যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২৫ জানুয়ারি তার দেশে ফেরার কথা।

বৈষম্যবিরোধীদের দুই গ্রুপের মারামারি, আইনি প্রক্রিয়ায় যাবেন আহতরা

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৫ পিএম
বৈষম্যবিরোধীদের দুই গ্রুপের মারামারি, আইনি প্রক্রিয়ায় যাবেন আহতরা
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন জুলাই আন্দোলনে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) সহ-সমন্বয়ক তানযীদ মোহাম্মদ সোহরাব রেজা। ছবি: খবরের কাগজ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ের সামনে দুই গ্রুপের মারামারিতে নারী শিক্ষার্থীসহ আহত হন সাতজন। হামলার নিন্দা জানিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এই আন্দোলনের সম্মিলিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান জুলাই আন্দোলনে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) সহ-সমন্বয়ক তানযীদ মোহাম্মদ সোহরাব রেজা।

তিনি বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার সমন্বয়কদের উপস্থিতিতে দ্বিতীয়বারের মতো আমাদের ওপর হামলা হলো। তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের প্রেতাত্মা ভর করেছে। তারা তাদের বাইরে ভিন্ন মত নিতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের জায়গায় তারা তাদের রিপ্লেস করতে চায় কি না, সেটা তাদের পরিষ্কার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম কারও বাপের না। যদি তাই মনে করা হয়, বুঝতে হবে তারাও টিকতে পারবে না।’

সোহরাব রেজা বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। আমাদের ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদের ট্যাগ লাগানো হচ্ছে। আমরা নাকি সেখানে (কেন্দ্রীয় কার্যালয়) হামলা করতে গিয়েছি। আমরা হাসপাতালে প্রেস ব্রিফিং করার পর আমাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেকে যোগাযোগ করেন। আমাদের বলা হয়, যাতে মামলা না করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠকের জন্য বসতে বলা হয়। আমরা বোরহানউদ্দিন কলেজে বসতে চেয়েছি। পরে তারা রাত ১১টায় বোরহানউদ্দিন কলেজে আসবেন বলে জানান। তারা আসেন রাত ১২টার দিকে। ওই বৈঠকে আসার কথা কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের। আসেন আন্দোলনের সেল সম্পাদক জাহিদ, স্বাস্থ্য কমিটির তরিকুল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী কমিটির মুন্না। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে না চাওয়ায় সেই বৈঠক হয়নি। আমরা এখন আইনিভাবে লড়াই করে যাব।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি অর্নব হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে এর বিচার চাইব না। আমরা থানায় মামলা করব। যদি থানা মামলা না নেয় তাহলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।’ 

আহত আন্তা মীম, হাসিব মল্লিক, আল-আমীন তালুকদার এ সময় উপস্থিত ছিলেন। 

শিক্ষা কমিশন নয়, উপদেষ্টা পরিষদ হতে পারে: শিক্ষা উপদেষ্টা

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৩ পিএম
শিক্ষা কমিশন নয়, উপদেষ্টা পরিষদ হতে পারে: শিক্ষা উপদেষ্টা
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষা সংস্কার কমিশন নয়, শিক্ষা উপদেষ্টা পরিষদ হতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) সচিবালয়ে শিক্ষা বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ অভিমত প্রকাশ করেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “শিক্ষা প্রশাসনকে আগে অন্তত দুর্নীতি কমাতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কম্পোনেন্টে বহু কিছু মেরামত করতে হবে। তারপর আমি যদি থাকি তখন আমার শেষ দিকে সবগুলো মিলে একটা ‘শিক্ষা উপদেষ্টা পরিষদ’ হয়তো তৈরি করে দেব। তবে ‘শিক্ষা কমিশন’ বললেই আগের ব্যর্থ শিক্ষা কমিশনের কথা মনে হয়। তাই আমি এটাকে শিক্ষা কমিশন বলতে চাচ্ছি না।”

শিক্ষা প্রশাসনের দুর্নীতি এক দিনে সমাধান করা সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মন্ত্রণালয়ে একবার বলেছি, সেটাকে দুর্নীতি মুক্ত করতে চাই। মন্ত্রণালয়ের সবাই তা শুনেছে। কিন্তু শিক্ষার অধিদপ্তরগুলোতে যায়নি। সেখানে গিয়ে প্রথমে একটি সতর্কবার্তা দিতে হবে। তারপর দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে একটি উদাহরণ তৈরি করতে হবে।’

এ সময় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি থেকে বের হয়ে যাওয়া ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত আয় সরকার ফিরিয়ে নেবে বলেও জানান তিনি।

গাজীপুরে বেক্সিমকো শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, পরিবহনে আগুন

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪১ পিএম
আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৫ পিএম
গাজীপুরে বেক্সিমকো শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, পরিবহনে আগুন
বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে শ্রমিকদের এই তাণ্ডব চলে। ছবি: খবরের কাগজ

গাজীপুর মহানগরীর সারাব এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ হওয়া ১৬টি কারখানা চালুর দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। এ সময় সড়ক অবরোধ করে অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করে এবং এক পর্যায়ে একটি মাল ভর্তি ট্রাক ও তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে তারা।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকালে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলের ছবি তুলতে গিয়ে দুই সংবাদকর্মী হামলার শিকার হন। পাশাপশি সড়ক অবরোধের কারণে উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ওই পথে চলাচলকারীরা।

কারখানার শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ জানায়, গেল মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুর দুইটায় শ্রীপুর এলাকায় সান সিটির মাঠে প্রতিষ্ঠানটির ৪২ হাজার শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার জীবন ও জীবিকার সুরক্ষার স্বার্থে বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তারই ধারাবাহিকতার বুধবার বিকালে শ্রমিকরা সানসিটি মাঠে আবারও সমাবেশ শুরু করে। এ সময় শ্রমিকদেরই একটি পক্ষ চক্রবর্তী এলাকায় চন্দ্রা নবীনগর সড়ক অবরোধ করে গাছের গুড়ি, কাঠের লাকড়ি রাস্তায় ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

উত্তেজিত শ্রমিকরা সড়কের চলাচলরত অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে একটি মাল ভর্তি ট্রাক ও তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে। বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত শ্রমিকদের এই তাণ্ডব চলে। সড়ক অবরোধের খবর সংগ্রহ করতে গেলে দীপ্ত টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম, প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার কালিয়াকৈর প্রতিনিধি আবু সাইদ এবং বাংলা ভিশনের চিত্র সাংবাদিক আমির হোসেন হামলার শিকার হন। শ্রমিকরা তাদের একটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে।

খবর পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের প্রথমে বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুটতে থাকে। পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভোমরা-নবীনগর সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে এর আগে বিভিন্ন সময়ে কয়েক দফায় চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। সর্বশেষ গত ২১ ডিসেম্বর বিক্ষোভে শ্রমিকদের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর তারা আর কোনো বিক্ষোভ না করে শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দাবি আদায়ে গণসমাবেশের আয়োজন করেন তারা।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রফিকুল ইসলাম জানান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেক্সিমকোর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির সভার সিদ্ধান্তের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বন্ধের কারণ হিসেবে, কারখানাগুলোতে ক্রয়াদেশ না থাকা ও ব্যাংকে ঋণখেলাপি থাকায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় সরকার।

পলাশ/সিফাত/