ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সংহতি ও আগ্রাসী ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে রাজধানীতে গণপ্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি। গণপ্রতিবাদ সমাবেশ থেকে গাজায় গণহত্যা বন্ধ ও আগ্রাসী ইসরায়েলকে রুখে দিতে বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।
এবি পার্টি ঢাকা মাহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসেইনের সঞ্চালনায় শনিবার (১৮ মে) সকাল ১১টায় বিজয় নগরের বিজয়-৭১ চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম নাজমুল হক।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক কর্ণেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, বিএলডিপির মহাসচিব ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও কলামিস্ট রুবী আমাতুল্লাহ, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাহবুব হোসেন, এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, যুবপার্টির আহ্বায়ক এবিএম খালিদ হাসান ও সহকারী সদস্যসচিব ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি।
বক্তাগণ বলেন, দীর্ঘ সাতমাস ধরে ইসরায়েল সরকার গাজায় সাধারণ নিরস্ত্র মানুষের উপর বর্বরোচিত গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, যার অধিকাংশ নারী ও শিশু। এই নির্বচার গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। আজ পৃথিবীজুড়ে মানবাতাবাদী মানুষ ইসরায়েলের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছে, দেশে দেশে ছাত্ররা বিক্ষোভ করছে। পৃথিবী এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, একভাগে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষের মানুষ আর অন্য পক্ষে অন্যায় আর জুলুমবাজ মানুষ। সমাবেশ থেকে গাজায় আগ্রাসী ইসরায়েলকে রুখে দিতে বিশ্ববাসীকে আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বক্তব্যে ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ বলেন, আমি ফিলিস্তিনি নই কিন্তু তার প্রতি প্রতিটি আঘাত আমার প্রতিই আঘাত বলে মনে করি। আমি গাজায় নিহত-আহত প্রতিটা শিশুর মুখে বাংলাদেশের শিশুদের মুখ দেখতে পাই। গাজার ভূমি দখল করা হচ্ছে কারণ এই ভূমিতে প্রাচুর্য আছে। যে ভূমিতে প্রাচুর্য থাকে সেখানেই হিংস্রদের হাত পড়ে। বাংলাদেশের সাগরেও তেল গ্যাস দেখা দিচ্ছে, সামনে ক্ষমতাসীন বিশ্ব এখানে কী করবে সেটাও আমাদের দেখতে হবে। তিনি বলেন, ফিলিস্তিন অবশ্যই একদিন মুক্ত হবে সেই সঙ্গে আমরাও মুক্ত হবো ইনশাআল্লাহ।
মিয়া মশিউজ্জামান বলেন, প্রতিনিয়ত ইসরায়েল গাজায় বোমা বর্ষণ করে হাজার হাজার নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে নৃশংসভাবে হত্যা করছে। অতীতে ফিলিস্তিনের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের যুবকদের অংশ নেওয়ার ইতিহাস রয়েছে। আমরা আবার সেই সুযোগ নিতে চাই।
মানবাধিকার কর্মী রুবী আমাতুল্লাহ বলেন, ফিলিস্তিনের মাটিতে হাজার বছর ধরে মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের একসাথে বসবাসের ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু ইহুদীবাদ যখন থেকে মাথাচাড়া দিয়েছে তখন থেকেই এই বিদ্বেষ জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সকল অন্যায় যা মানুষের বিরুদ্ধে ঘটছে সবকিছুরই প্রতিবাদ করতে হবে।
শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ফিলিস্তিনের গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। তিনি পশ্চিমা বিশ্বকে বলেন, অন্যায়কে সমর্থন করে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়া যাবে না। মানবতার কথা বলে গণহত্যার পক্ষ নিলে নেতৃত্বের আসনে থাকতে পারবেন না।
আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ইসরায়েল আজ অন্যায়ভাবে গণহত্যা চালিয়ে হাজার বছর ধরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের নিজভূমি থেকে বিতাড়িত করছে। অবিলম্বে এই গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।
মেজর (অব.) মিনার বলেন, এই সরকার মুখে ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বললেও বাস্তবে তারা ইসরায়েল দোসর। এরা পাঠ্যপুস্তকে ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিব বাদ দিয়ে জেরুজালেম ঢুকিয়ে দিয়েছে অথচ জেরুজালেম ফিলিস্তিনের রাজধানী।
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম এই ইহুদিবাদী রাষ্ট্র পুরো ফিলিস্তিনকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে অভিযোগ করে বলেন; তারা নারী ও শিশুদের হত্যাকরে উল্লাসে মেতে উঠছে। তিনি বলেন, ইসরায়েলের বর্বর প্রধানমন্ত্রী গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে আর পশ্চিমা বিশ্ব তাদের অনবরত অস্ত্র সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। মানবতার কথা বলে এই ধরনের হত্যাকাণ্ডে সহায়তা চলতে পারে না।
ববি হাজ্জাজ বলেন, ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি আমরা সংহতি জানাচ্ছি। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধেই আমরা সরব থাকবো। সকল অবিচার বিরুদ্ধে আমাদের একসাথে লড়তে হবে।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ইসরায়েল যেভাবে ইহুদিবাদের নামে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিক তেমনিভাবে আমাদের প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রে এখন হিন্দু ধর্মকে কলঙ্কিত করে উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাজেই ধর্মে ধর্মে বিভেদ হঠিয়ে আমাদের সাধারণ মানুষকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। মানবতার উপর যে নির্মমতা তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, পৃথিবী এখন স্পষ্টতই দুই ভাগে বিভক্ত একটি হচ্ছে শোষক, দখলদার আর জালিমের পক্ষ অন্যটি শোষিত, নিপীড়িত, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষ।
গণপ্রতিবাদে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির সিনিয়র সহকারী সদস্যসচিব আব্দুল বাসেত মারজান, সহকারী সদস্যসচিব শাহ আব্দুর রহমান, শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, হাদিউজ্জামান খোকন, মাসুদ জমাদ্দার রানা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হালিম খোকন, গাজী নাসির, মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব সেলিম খান, ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক মোহাম্মদ প্রিন্স, দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব সফিউল বাসার, কেফায়েত হোসেন তানভীর, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুলতানা রাজিয়া, সুমাইয়া শারমিন ফারহানা, মশিউর রহমান মিলু, আব্দুল হালিম নান্নু, শাহীনুর আক্তার শীলা, সিএমএইচ আরিফ, রনি মোল্লা, ছাত্রনেতা সাব্বির উদ্দিন রিয়ন, সাইফুদ্দিন খালিদ, তানজিনা জুই সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি