ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

অটোচালকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় জামায়াতের উদ্বেগ

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ০৯:০৩ পিএম
আপডেট: ২০ মে ২০২৪, ০৯:০৩ পিএম
অটোচালকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় জামায়াতের উদ্বেগ

রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অটোচালকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

সোমবার (২০ মে) এক বিবৃতিতে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। 

তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার সড়কে হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান ও থ্রি-হুইলার চলাচল করে। এই পেশার সাথে কয়েক লাখ মানুষ জড়িত। অটোচালকদের প্রায় সকলেই অশিক্ষিত ও অদক্ষ। তাদের চাকুরি করার তেমন কোনো সুযোগ নেই। তাই বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করে অটোরিকশা বন্ধ করা হলে শতশত পরিবার পথে বসবে। তাদের না খেয়ে থাকতে হবে। অনেকেই ঋণ করে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান ও থ্রি-হুইলার রাস্তায় নামিয়েছেন। তাদের ঋণের কিস্তিও বন্ধ হয়ে যাবে। এই অবস্থায় তারা মহাবিপদে পড়বে।

তিনি বলেন, তারাও মানুষ, সমাজের অন্যান্যদের মতো তাদেরও পরিবার-পরিজন নিয়ে সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাই তাদের ন্যায্য দাবিগুলো অবশ্যই বিবেচনার দাবি রাখে। অটোচালকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের ন্যায়সংগত দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির অবসান ঘটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গ, গত রবিবার সকালে বিকল্প ব্যবস্থা না করে অটোরিক্সা বন্ধের ঘোষণায় বিক্ষুব্ধ অটো শ্রমিকরা মিরপুরের ১০ নম্বর গোল চত্বরে এসে জড়ো হয় এবং সড়ক অবরোধ করে। এই সময় পুলিশ অটোচালকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ অটোচালকরা পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।

শফিক/এমএ/

জাতীয় ঐক্যের আহ্বান বিএনপির

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৯ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৯ এএম
জাতীয় ঐক্যের আহ্বান বিএনপির
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

ন্যূনতম একদফা, অবৈধ, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের দাবিতে সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য "জাতীয় ঐক্যের” আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে, লুণ্ঠিত গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, অধিকারহীন জনগণের ও জাতির মুক্তির লক্ষ্যে আমরা উপরোক্ত ন্যূনতম একদফার ভিত্তিতে এবং দাবিতে দেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, ব্যক্তি ও শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি "জাতীয় ঐক্য" গঠনের আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনের সকল শরিকদল ও জোট, বাম-ডান সকল রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক ও সকল ইসলামী রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের প্রতিও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, সময় ও যোগাযোগের প্রতিবন্ধকতার কারণে বিবৃতির মাধ্যমে সম্মতি প্রদান করা যেতে পারে। শীঘ্রই সম্মতিপ্রাপ্ত সকলের স্বাক্ষরে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা হবে। জাতীয় ঐক্যের এই ঐতিহাসিক ঘোষণা ও দলিল দেশ ও জাতির মুক্তি ত্বরান্বিত করবে ইনশাআল্লাহ।

সবুজ/এমএ/

বামপন্থি দলগুলোর শোক সমাবেশ আন্দোলন জনতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১:২৩ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১:২৩ পিএম
আন্দোলন জনতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ
ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর জনগণের মনে যে ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়েছে, তারই বহিঃপ্রকাশ সারা দেশ দেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন বামপন্থি দলগুলোর নেতারা। দেশব্যাপী যে চরম সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তাকে ‘জনতার আন্দোলন’ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন তারা।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং নিরপরাধ মানুষকে হত্যার দায়ে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা ও বাংলাদেশ জাসদ শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে দেশব্যাপী শোক সমাবেশ ও মিছিল করেছে। ঢাকার পুরানা পল্টনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ-সমাবেশে বাম দলগুলোর নেতারা সরকারের কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন। বাম দলগুলোর নেতা-কর্মীরা কালো পতাকা হাতে নিয়ে কালো ব্যাজ ধারণ করে সমাবেশ ও শোক মিছিলে শরিক হন। নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। 

বামপন্থি নেতারা বলেন, পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ২০৬ জন মানুষ হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। সর্বশেষ কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী নামিয়ে দমন-পীড়ন চালাতেও তারা কুণ্ঠাবোধ করেনি। এখন চলছে নির্বিচার গণগ্রেপ্তার। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গণগ্রেপ্তার কর্মসূচির নিন্দা জানিয়ে বাম নেতারা বলেন, সরকার যদি ভাবে এভাবে দমন-পীড়ন চালিয়ে তারা আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে পারবে, তবে তারা ভুল পথে হাঁটছে। এই আন্দোলন কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা শুরু করলেও বাস্তবে এ আন্দোলন সরকারের দুর্নীতি-লুটপাট, স্বৈরাচারী নীতি ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে জনতার দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকা পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ। আন্দোলনের যে আগুন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, তা দমন-পীড়ন করে বন্ধ করা যাবে না। 

সরকারের পদত্যাগ দাবি করে তারা বলেন, সরকার কোনোভাবেই এই হত্যাযজ্ঞ ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতির দায় এড়াতে পারে না। এই হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞের দায় নিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

শোক সমাবেশ থেকে নানা দাবি উত্থাপন করেন বাম নেতারা। এ দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে কারফিউ প্রত্যাহার করে সেনাবাহিনী-বিজিবিকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া, ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত হামলায় জড়িতদের বিচার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হতাহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ করা। 

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার বেলাল চৌধুরী ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। 

কোটা সংস্কার আন্দোলন হত্যা ও পঙ্গুত্বের সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশের দাবি বিএনপির

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৫:৩২ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৫:৩২ পিএম
হত্যা ও পঙ্গুত্বের সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশের দাবি বিএনপির

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গত কয়েকদিনে কতজন নিরীহ মানুষকে হত্যা ও পঙ্গু করা হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। সেই সঙ্গে জনগণের টাকায় কেনা কী পরিমাণ গোলাবারুদ, টিয়ার সেল, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে তার হিসাবও জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে দলটি। 

শুক্রবার (২৬ জুলাই) এক বিৃবতিতে এ দাবি জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

বিএনপি ও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার, কারান্তরীণ ও জুলুম-নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এ বিবৃতি দেন তিনি। 

মির্জা ফখরুল বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে হামলা চালিয়ে ইতিহাসে হতাহতের যে বর্বরোচিত নজির স্থাপন করেছে তা দেশ-বিদেশের সব স্বৈরাচারের নির্মম নিষ্ঠুরতাকেও হার মানিয়েছে। রাষ্ট্রের টাকায় কেনা হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নেবে। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, অবৈধ সরকার নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্যর্থতা আড়াল করতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার, নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজকে গ্রেপ্তার এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির গ্রেপ্তারকৃত সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকনকে তিন দিন পর আদালতে তোলা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, অব্যাহত গতিতে দেশব্যাপী বিরোধী দলের নেতাকর্মী বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি হচ্ছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বাসাসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বাসায় তল্লাশি চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তারকৃত নেতৃবৃন্দকে গুম করে রেখে নির্যাতন চালিয়ে তিন/চার কিংবা পাঁচ দিন পর আদালতে হাজির করা হচ্ছে, যা আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। দেশের নাগরিকদেরকে গুম করে রাখার ভয়াবহ সংস্কৃতি চালু রেখে মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করা হচ্ছে। সরকারকে এ ধরণের লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড পরিহারের আহ্বান জানাচ্ছি।

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, এই নির্মম অত্যাচারে দেশের জনগণ হতবাক ও ক্ষুদ্ধ হয়েছে এবং কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে এবং সারা দেশে কর্মসূচিও পালন করেছে। কিন্তু সরকার মরিয়া হয়ে রাষ্ট্রের সকল বাহিনীসহ দলীয় সন্ত্রাসীদেরকে সাধারণ মানুষ, বিএনপি নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে ব্লক রেড দিয়ে গ্রেপ্তার করছে। এখন পর্যন্ত তাদের হিসাবে প্রায় ৩ হাজার গ্রেপ্তার করছে। যা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জার।

ফখরুল ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে দমন করার জন্য সেনাবাহিনীকে ব্যবহার কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই অবৈধ সরকারকে বলব- অবিলম্বে পদত্যাগ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করার লক্ষ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিন। এই গণহত্যা, নির্যাতন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সকল দেশ প্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভয়াবহ ফ্যাসীবাদী শাসকগোষ্ঠীকে পরাজিত করে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের দূর্বার সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

শফিক/এমএ/

প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে : ওবায়দুল কাদের

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০২:৫২ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:১২ পিএম
প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে : ওবায়দুল কাদের
ওবায়দুল কাদের

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 

শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু কামনা করি না। প্রতিটি হত্যার বিচার হবে। যারা সহিংসতায় জড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা দেশের মানুষ মেনে নেবে না। অচিরেই দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের সম্পূর্ণ দায় বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসরদের। এ দায় থেকে মুক্তি পেতে তারা আন্তর্জাতিক তদন্ত চাইছে। দেশ ও দেশের মানুষের ওপর তারা আস্থা রাখে না। এবারও তাদের সেই সন্ত্রাসী চরিত্র উন্মোচিত হওয়ায় এ দায় থেকে মুক্তি পেতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ চাইছে।’ 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সরকার হটানোর অপচেষ্টা সফল হতে দিতে পারি না। এই অশুভ চক্রান্ত ব্যর্থ হবে ইনশাআল্লাহ। একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কায়দায় লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। সরকার হটাতে এখনো সক্রিয় দেশি-বিদেশি কুচক্রী মহল।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখনো যারা আন্দোলনের ডাক দিয়ে যাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য দেশকে ধ্বংস করা, দেশের অর্থনীতিকে আরও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া, পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া। বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডাররা আবারও হামলা চালানোর চেষ্টা করতে পারে। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান, যেখানেই আক্রমণকারী দেখবেন সেই খবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে সহযোগিতা করবেন।’

দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহিংসতাকারীদের ধ্বংসাত্মক কাজ জাতির সামনে উপস্থাপন করে সত্য প্রকাশ করুন। আওয়ামী লীগকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপক্ষ বানানোর চেষ্টা সফল হবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, আহমাদ হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।

রাজু/সালমান/

ঢাকা মহানগরের নেতা-কর্মীরা দিশেহারা

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:৩৩ এএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪১ এএম
ঢাকা মহানগরের নেতা-কর্মীরা দিশেহারা
বিএনপি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘কমপ্লিট শাট ডাউন’ কর্মসূচি শুরুর পর থেকে ঢাকা মহানগর বিএনপিতে আবারও মামলা-হামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্ক ভর করেছে। সেই আতঙ্কে ঘরে ফিরতে পারছেন না নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ এখনো স্বাভাবিক না হওয়ায় সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তারা কী করবেন তাও বুঝে উঠতে পারছেন না। 

জানা গেছে, পালিয়ে বেড়ানো বিএনপি নেতা-কর্মীরা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। কারণ দেশব্যাপী তুমুল সহিংসতার পরে এখন অলিগলিতে চলছে পুলিশি তল্লাশি। এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের মোবাইল ট্র্যাক করে গ্রেপ্তার করতে পারে, এমন আতঙ্কে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনেকে মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন। এতে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা ঢাকা মহানগরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। 

ঢাকা মহানগরের শীর্ষ তিন নেতা সাইফুল ইসলাম নীরব, রফিকুল ইসলাম মজনু ও আমিনুল হক এখন কারাগারে বন্দি। অপর শীর্ষ নেতা তানভীর আহমেদ রবিন বাইরে থাকলেও এখনো আত্মগোপনে। তারও ফোন বন্ধ রয়েছে। অন্য যারা আছেন মোবাইল ট্র্যাকের ভয়ে অভ্যন্তরীণভাবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত হওয়া দূরে থাক; এক ধরনের অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ ঢাকা মহানগর বিএনপি ও ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়গুলোও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। নয়াপল্টন কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও গ্রেপ্তার এড়াতে গা-ঢাকা দিয়েছেন। বতর্মান পরিস্থিতি জানতে ঢাকা মহানগরের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার মোবাইলে ফোন দিয়ে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও তারা কোনো উত্তর দেননি। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্যরা জানান, ঢাকাসহ সব মহানগরের নেতাকর্মীদের কমবেশি সবারই মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ রয়েছে। দলের নেতা-কর্মীরা এখন নতুন করে ঘরছাড়া। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের জানা মতে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ সারা দেশ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীরা যদি আন্দোলনে জড়িত থাকে তাহলে তাদের কেন ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়নি? এতেই প্রমাণিত, এরা কেউই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নন।’ 

তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় না পেয়ে তাদের সন্তান বা পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার ও অশালীন আচরণসহ বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হচ্ছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান খবরের কাগজকে গতকাল বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখছেন বিএনপির হাইকমান্ড। দলের অবস্থান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব নিয়মিত ব্রিফিং করছেন।’ এর বাইরে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। 

ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগরের শীর্ষ চার নেতা ছাড়াও উত্তর বিএনপির সদ্য সাবেক আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দলীয় নেতা এস এম জাহাঙ্গীরসহ মহানগরের প্রায় এক হাজারের মতো নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

ডিএমপির তথ্য বলছে, কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে শুধু রাজধানীতে ২০১টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ হাজার ২০৯ জনকে। এসব মামলার আসামিরা অধিকাংশই অজ্ঞাতনামা। 

বিএনপির দেওয়া তথ্য মতে, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আওতায় ২৫টি থানা ও ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণের ২৫টি থানা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু ৬ সদস্যবিশিষ্ট আগের ওই আহ্বায়ক কমিটিকে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলা হয়েছিল দক্ষিণে। ন্যূনতম ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ২৫টি থানা কমিটিতে ১২৫ জন নেতা রয়েছেন। এ ছাড়াও ন্যূনতম ১৩১ সদস্যবিশিষ্ট ওয়ার্ড কমিটিতে রয়েছেন ৯ হাজার ৮২৫ জন নেতা-কর্মী। 

অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর উত্তরের ২৬টি থানায় ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ও ৫৬ ওয়ার্ড কমিটি সক্রিয় রয়েছে। থানা কমিটিতে ৮০৬ জন নেতা-কর্মী রয়েছেন। ১৩১ সদস্যবিশিষ্ট ওয়ার্ড কমিটিতে ৭ হাজার ৩৩৬ জন নেতা-কর্মী রয়েছেন। সেই হিসেবে ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীর সংখ্যা ১৮ হাজারের বেশি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান চিরুনি অভিযানে এই নেতাকর্মীদের অধিকাংশ এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে। 

একইভাবে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী রংপুর, খুলনা ও বরিশাল মহানগরের নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে গেছেন। নেতা-কর্মী শূন্য এসব মহানগর বিএনপির কার্যালয়গুলো। এতে ছন্দ হারিয়েছে মহানগর বিএনপির রাজনীতি। 

বর্তমান পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের সাহস জুগিয়ে রাজপথে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। জানা গেছে, ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতারা নিজ নিজ এলাকার কর্মীদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করছেন। যারা মামলার শিকার হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদের এখন জামিন নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন শীর্ষ নেতারা। যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছেন তাদেরকে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। 

মহানগর বিএনপি নেতাদের দাবি, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরে যে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু তাদের আসামি করা হয়েছে, চলছে তল্লাশি। সারা দেশেও একইভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামি করা হচ্ছে। 

তারা বলেন, পাশাপাশি হতাহতের ঘটনা আড়াল করতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে ‘ট্যাগ’ দিয়ে ছাত্র আন্দোলন ভিন্ন দিকে নিতে চাইছে আওয়ামী লীগ সরকার। চলমান আন্দোলনে সারা দেশে দুই শতাধিকের মতো মানুষ মারা গেছে। এত মানুষের হতাহতের ঘটনা আড়াল করতেই এখন বিএনপির ওপর দোষারোপের রাজনীতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। 

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক ১ নম্বর সদস্য তাবিথ আউয়াল খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। অবৈধ সরকার বিএনপিকে নানাভাবে দমন করতে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে মহানগরের নেতা-কর্মীরা মোটেও বিচলিত নয়। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পথে আছি। আন্দোলন এখনো থেমে যায়নি, আমরা সবকিছু মোকাবিলা করেই সামনের দিকে এগিয়ে যাব।’